গত শুক্রবারের ঘটনা
কালের কন্ঠে জয়েন করার পর অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায় প্রতিদিন বিশ্বরোড থেকে বাস ধরে কাওরান বাজার নেমে সামান্য একটু হেটে বাসায় ফিরি। অন্য সবগুলো রুটে যাতায়াত করে দেখলাম, এই পথ দিয়েই সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। আজ বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম প্যান্টের পকেটে রাখা টাকা, তিনটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সহ মানিব্যাগটি উধাও!
ফোনে দুই সুহৃদ ভাইদ্বয়ের সহায়তায় ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের হটলাইন নম্বর যোগার করে সেগুলো ইনেকটিভ করার জন্য বাস থেকে নেমে ফোন দিলাম। কল সেন্টারে কল করে ব্যাংক এশিয়ার ভদ্রলোককে একাউন্ট নম্বরটা বললাম (সেলফোনে ব্যাংকের মেসেজে নম্বরটা ছিল বলে)। তিনি জন্ম তারিখ জানতে চাইলে তাও বললাম। কার্ড দিয়ে লেনদেন অপশনটি বন্ধ করা হয়েছে জানালো। একই ভাবে প্রাইম ব্যাংকের কল সেন্টারে কল করে বন্ধ করলাম। সবচেয়ে তীক্ত অভিজ্ঞতা হলো ইসলামী ব্যাংকের বেলায়....!
ইসলামী ব্যাংকের কল সেন্টারে কল দিলে ভয়েস আসলো বাংলায় শুনতে চাইলে ১ এবং ইংরেজিতে শুনতে চাইলে ২ চাপুন। আমি বাংলায় গান গাই, তাই বাংলায় শুনতে চাই..। ওমা, এক বিদেশী মাইয়া পটাপট ইংরেজি (রেকর্ডকৃত) কওয়া শুরু করলো যার আগামাথা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না (চাইলাম বাংলায় হইলো ইংলিশ)। বোঝা যা গেল তা হলো- অপারেটর অন্য কাস্টমারের সাথে বিজি আছেন, আমি যেন অপেক্ষা করি...। এভাবে কমপক্ষে ২০ বার একই ভয়েস, আমিও আছি লাইনে। ১০ মিনিট পর এক ভদ্রলোক (মো: ইকবাল আহমেদ) হ্যালো বললে, আমি সমূহ সমস্যার কথা জানালে তিনি একাউন্ট নম্বর বলতে বললেন। আমি বললাম. ভাই, এই ব্যাংকে তেমন লেনদেন করি না- এ মুহুর্তে নম্বরটিও মনে নেই। এগুলো আমার দেশ এর কর্পোরেট একাউন্ট, আমার নাম দিয়ে সার্চ দিলেই পাবেন। তিনি বললেন, এক নামে তো অনেক একাউন্ট থাকতে পারে। আমি কইলাম, ভাই সারা পৃথিবীতে এই নামে আর কোন একাউন্ট নেই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। তিনি এবার একটু অপেক্ষা করতে বলে কয়েক মিনিট পর জানালেন, উনি নাকি সার্চ অপশনটা খুঁজে পাচ্ছেন না !!! বরং সে বলল, পাসওয়ার্ড ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারবে না (মনে হয় আমি বুঝি এসব জানিনা)। বরং সে বিরক্ত হয়েই বললো, আমিতো বাড়ী গিয়ে একাউন্ট দেখে তাকে কল করতে পারতাম। আমার মেজাজ এমনিতেই তিরিক্ষি, ভদ্রলোকের এই কথা শুনে বললাম, লাগবেনা ভাই, ওকে ঠিক আছে...।
হায়রে কাস্টমার সেবা...!!!
গতকাল শনিবারের ঘটনা
শনিবার একজন ফোন করে জানালো, আমার গতকালকের হারানো মানিব্যাগটি নাকি সে এক ঝোপে পেয়েছে! সে নাকি স্টুডেন্ট। ওখানে আমার ডেবিট কার্ড ও ভিজিটং কার্ড দেথে আমাকে কল দিয়েছে। সে রেডিশন হোটেলের পাশে থাকে (ওখানেই পকেটমার হয়েছিল গতকাল)। আমি জানালাম, আগামীকাল ওখান থেকে সংগ্রহ করে নিবো। বুঝতেছিনা, ক্যামনে কি....!
আজ রবিবারের ঘটনা...
সকল জল্পনা-কল্পনা্র অবসান শেষে আজ ফিরে পেলাম গত পরশু পকেটমার কর্তৃক মেরে দেওয়া আমার মানি ব্যাগটি। তবে মানি ছাড়া...।
ঘটনা জানার পর ফেসবুকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি যাতে একা না যাই। এমনকি আমার স্ত্রীও বারবার বারণ করছিল একা মানিব্যাগ ফেরত না নিতে। কিন্তু সাহস নিয়ে একটু জেদি হয়ে একাই দেখা করলাম দুইটি ছেলের সাথে রেডিশন হোটেল সংলগ্ন এমআইএস বাস স্টপেজে। নেমে কল দিতেই দেখলাম ১৪-১৫ বছর বয়সী দুটি ছেলে (একজনের হাতে আমার একটা ছবি) আমার দিকে আসছে মানিব্যাগটা দিতে।
আমি ফেরত পেয়ে দেখলাম, টাকা ছাড়া আমার মানিব্যাগে থাকা তিনটি ডেবিট কার্ডসহ অন্যান্য সব কাগজপত্র ঠিকই আছে। তবে একটি সিমকার্ড নেই যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু নম্বর ছিল। যাক, ছেলে দুইটিকে দেখে আমার যা ধারনা তা-ই হলো। নেহায়তই ভদ্র ঘরের সন্তান। জিজ্ঞেস করে জানলাম, তারা দু'জন মিরপুর আদর্শ স্কুলে পড়ে। একজনের বাবা সেনাবাহিনী থেকে এখন র।্যাব হেড কোয়ার্টারে কর্মরত। অারেক জনের বাবা সদ্য রিটায়ার্ড করেছেন। তারা দুজনই ক্যান্টনমেন্টে পরিবারসহ থাকে। ক্যামেরায় তাদের ছবি তুলতে চাইলে নি:সঙ্কোচে দাড়িয়ে গেল পোজ নিয়ে...গুড গুড। ছবিও তুলে নিলাম কয়েকটা। বললাম, ছোট ভাইরা যোগাযোগ রেখ।
পরশু রাতে রাস্তার ধারে মানিব্যাগটি পরে থাকতে দেখে সেটি নিয়ে আমার ভিজিটং কার্ড দেখে আমাকে কল করেছিল। কোন কারনে ফোন বন্ধ পাওয়ায় তারা আমার মানিব্যাগে থাকা অন্যান্য ভিজিটিং কার্ড দেখে অন্য কয়েকজনকেও নাকি কল দিয়েছিল! কী করে তাদেরকে ধন্যবাদ দিব! জাতি এমন সন্তানই চায়।
তবে পুরো ঘটনাটি আমার ২০ বছরের ঢাকার জীবনে এক অন্যরকম নতুন অভিজ্ঞতা।
মানিব্যাগ ফেরত দেওয়া মিথু ও রাশেদ এখন আমার ফেসবুক বন্ধু।
প্রতিটি ভাল কাজের পুরষ্কার আছে। আমার পক্ষে সে পুরষ্কার দেয়া হয়তো সম্ভব হয়নি, কিন্তু একদিন নিশ্চয় তা পেয়ে যাবে বাস্তবে। আল্লাহ তোমাদের সহায় হোন। আমিন।