somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাক্ষাৎকারঃ আন্দ্রেই জিভাগিন্সতেভ

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাক্ষাৎকারঃ আন্দ্রেই জিভাগিন্সতেভ
ভাষান্তরঃ অরণ্য


১৯৬৪ সালে সাইবেরিয়ায় জন্ম নেয়া এই পরিচালক এখন পর্যন্ত চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা পরিচালনা করেছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি নোভোসিব্রিকস থিয়েটার স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি মস্কোতেই ছিলেন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ‘রাশিয়ান এ্যাকাডেমী অব থিয়েটার আর্ট’ এ অধ্যায়ন করেছেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন থিয়েটার ও সিনেমায় অভিনেতা হিসেবে কাজ করার পর, ২০০০ সালে রাশিয়ান রেন টিভির জন্য ‘ব্ল্যাক রুম’ নামে একটি সিরিজের তিনটি পর্ব পরিচালনার মাধ্যমে নির্দেশনায় আসেন। ২০০৩ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘দ্য রিটার্ন’ মুক্তি পায়। সিনেমাটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গুরুত্ব¡পূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচক মন্ডলীসহ দর্শকদের নজর কেড়েছে, যার দরুণ এটি গোল্ডেন লায়ন এ বেস্ট ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড ও ইউরোপিয়ান ফিল্ম একাডেমি এ্যাওয়ার্ড জেতে, এবং গোল্ডেন গ্লোব এ বেস্ট ফরেন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম হিসেবে নির্বাচিত হওয়া সহ অন্যান্য সম্মানিত পুরস্কার জিতে নেয়। সবচেয়ে উলে­খযোগ্য ঘটনা এই, তারকোভস্কির পর ১৯৬২ সাল হতে এখন পর্যন্ত তিনিই প্রথম রাশিয়ান সিনেমা পরিচালক যিনি গোল্ডেন লায়ন পুরস্কারটি পেলেন। তার পরবর্তী দুটো সিনেমাও ‘দ্য ব্যানিসমেন্ট (২০০৭)’ ও ‘এলেনা (২০১১)’ যথেষ্ট প্রশংসিত হয় এবং দুটোই কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যথাক্রমে ‘বেস্ট মেল রোল’ ও ‘স্পেশাল জুরি প্রাইজ’ জেতে।

‘দ্য রিটার্ন’ সিনেমার প্রেক্ষাপট শুরুই হয় আকস্মিভাবে, যেখানে ‘ইভান’ ও ‘আন্দ্রেই’ নামের দুই ভাই প্রতিবেশী বালকদের সাথে মারামারি করে ঘরে ফিরে দেখে যে, তাদের ১২ বছর ধরে নিখোঁজ পিতা ফিরে এসেছে, যাকে তারা এতদিন একটি অস্পষ্ট ছবির মধ্যে আবছাভাবে চিনেছে। যদিও বালকদের মনে অচেনা এই মানুষটিকে পিতা হিসেবে মেনে নিতে সংশয় তৈরী হয়, তারপরও তারা পিতার সাথে অজানা যাত্রায় ঘুরতে বের হয়। এই ভ্রমণের সাথে নানাবিধ ঘটনা পরিক্রমায় এগিয়ে যাওয়া সিনেমাটি শেষ হয় জনমানবহীন দ্বীপে করুণতম ট্রাজেডীর মাধ্যমে, আর সমগ্র সিনেমা জুড়ে পিতার সাথে থাকা রহস্যময় বাক্সটি, যার মধ্যে কী আছে তা জানার জন্য আমাদের যে সীমাহীন আগ্রহ, তাও মিয়ম্রাণ হয়ে পড়ে সিনেমাটির সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত সমাপ্তিতে।

পরিচালক তার এই অনবদ্য সিনেমাটি নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন উৎসবে আর সেইসব মূল্যবান আলাপতারিতা থেকে পাঠকের সুবিধার্তে দুটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয় অংশগুলোর ভাষান্তর এখানে একত্রে দেয়া হলো, যার একটি নিয়েছেন, ইন্ডিওয়্যার এর পক্ষে ‘এরিকা এবিল’ এবং অপরটি নিয়েছেন রাশিয়ার দৈনিক পত্রিকা কোমারসান্ত পত্রিকার এর পক্ষে ‘আলেক্সেই কারাখান’।

এরিকা এবিলঃ কীভাবে আপনি সিনেমা পরিচালনায় এলেন?

আমার মনে আছে, দশম শ্রেণী শুরুর সময় আমি চেয়েছিলাম থিয়েটারে এ কাজ করতে এবং একজন অভিনেতা হতে। সে জন্য আমি সাইবেরিয়ার অভিনয় স্কুলে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে কোনো ভবিষ্যত ছিল না, আর আমি ছিলাম উচ্চাভিলাষী, ফলে মস্কোর স্টেট থিয়েটার স্কুলের অভিনয় বিভাগে ভর্তি হলাম, আর সেখানে থিয়েটার ল্যাবে অভিনয়ের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক থিয়েটারে এসেছিলাম।

এরিকা এবিলঃ কখন আপনি থিয়েটার থেকে সিনেমায় এলেন?

‘পেরেস্ত্রোইকা’ (৮০র দশকে রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক আন্দোলন) পরবর্তী সময়ে রাশিয়ায় ১৯৯৩ সালটি ছিল বাজে এবং আমার কাজ খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছিল। সুতরাং আমি একটি ফার্নিচার স্টোরের জন্য বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন তৈরীর কাজ নিয়েছিলাম। সেখান থেকেই শুটিং এর কলা-কৌশল বোঝার মাধ্যমে বিষয়টি রপ্ত করেছিলাম। মূলত ‘লেস এ্যাভেনচুরা’ সিনেমাটি আমাকে বিস্ময়াভিভূত করেছিল এবং ‘রকো এ্যান্ড হিজ ব্রাদার’ কিংবা ‘রোহমার’ এর মতো ৬০এর দশকের সিনেমাগুলো গোগ্রাসে গিলছিলাম।

এরিকা এবিলঃ কীভাবে আপনি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন থেকে চলচ্চিত্রে আসতে সমর্থ হলেন?

আমাকে আবিস্কার করেছিলেন আমার প্রযোজক দিমিত্রি লেনেভস্কি, যিনি ছিলেন রাশিয়ান রেন-টিভির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আমার কাছে তিনি ধর্মপিতার মতো। তিনি আমাকে ‘ব্ল্যাক রুম’ নামের একটি রাশিয়ান টিভি সিরিজের তিনটি পর্ব পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।

এরপর তিনি আমার তৈরী ‘দ্য রিটার্ন’ এর চিত্রনাট্য হতে সিনেমা বানানোর জন্য বললেন। এটা ছিল থ্রিলার জেনরের সিনেমা। আমি মূলত দর্শককে সময় কাটানোর মতো অনুভব দিতে চেয়েছিলাম, ফলে সাত দিনে বিভক্তির বিষয়টি এতে যুক্ত করেছিলাম। মূল চিত্রনাট্যে পিতার বাক্সটি ছিল এমন এক বস্তু,যার উপর দস্যুদের নজর ছিল আর শেষ পর্যন্ত দর্শকরা জানতে পারে যে, এর মধ্যে কী ছিল। পটভূমি এখানে কৌশলে বিশুদ্ধ নাটকীয়তার উপর প্রাধান্য পায়। লেনেভস্কি আমাকে চিত্রনাট্য নিয়ে ইচ্ছে মাফিক কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

এরিকা এবিলঃ কীভাবে আপনি সিনেমার বালক দুটিকে খুঁজে পেলেন?

ছয় মাস ধরে আমি সেন্ট পিটার্সবুর্গ ও মস্কোতে স্ক্রীন টেস্ট নিয়েছিলাম। আন্দ্রেই চরিত্রের বালকটির আমি জন্য চিন্তিত ছিলাম, কেন না সে ছিল মোটর দুর্ঘটনায় আক্রান্ত এবং অমনোযোগি,অথচ তাকে নির্বাচন করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলাম। আর পিতার চরিত্রের জন্য আমি একজন অডবল অভিনেতাকে খুঁজে পেয়েছিলাম, যে স্টেজে অভিনয় করতে লজ্জা পাবার দরুণ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল, আর এই বিষয়টিই আমাদের কাছাকাছি এনেছিল, কেন না আমি নিজেও একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে এসেছিলাম, যার ফলে থিয়েটারে আমার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এরিকা এবিলঃ সিনেমায় যে বালকটি আন্দ্রেই চরিত্রে অভিনয় করেছে, সে সিনেমাটি প্রথমবার প্রদর্শনের ঠিক পূর্বেই ২৫শে জুন একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ডুবে মারা যায়! আপনি কি এই ঘটনায় রহস্যজনক কিছু খুঁজে পান?

২০০২ এ যেদিন আমরা সিনেমার শুটিং শুরু করেছিলাম, সেই তারিখটিও ছিল ২৫ শে জুন, সুতরাং তারিখটি একটি রহস্যময় সংখ্যার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছি। যখন আমরা সমাপ্ত সিনেমাটি দেখার জন্য ইমেলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলাম, বালকটি তখন দেশে গিয়েছিল। সে নৌকা হতে লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিল এবং তাকে আর কখনোই দেখা যায়নি। এটা ছিল কোনোরূপ পূর্বাভাস ছাড়াই ভয়াবহ রকমের শোকার্ত বাস্তবতা।

এরিকা এবিলঃ সিনেমাটির অনুপ্রেরণা কী ছিল?

এটা তেমন বিষয়, যা আমার উদ্দীপনা ও কল্পনা শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখে, যার সম্পর্কে আমি কথা বলতে নারাজ। আমি বরং এই বলতে চাই, ‘আপনি কি সেই ব্যক্তির অবস্থা আন্দাজ করতে পারেন, যে একটি সিনেমা বানানোর জন্য দশটি বছর অপেক্ষা করেছে’?

এরিকা এবিলঃ পিতাটি কি আসল পিতা ছিল? তাকে দেখতে হুমকী প্রদর্শন মূলক ও ভীতিকর লাগছিল।

আপনার কি মনে হয়েছে যে, সে দৃশ্য থেকে কোনো ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল? অথবা সে হয়ত কখনোই সেখানে ছিল না? আপনি আসলে কী বলতে চাইছেন?

এরিকা এবিলঃ কিছু সময় তাকে আমার নকল পিতা মনে হয়েছে, যে বালকদের অনিষ্ট করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি না যে একজন সত্যিকারের পিতা তার সন্তানকে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় রেখে যেতে পারে।

সম্ভবত আপনি ভুল। এমন পিতাও হয়ত আছে যে কাজটি করতে পারে। টিম রথের ‘দ্য ওয়্যার জোন’ সিনেমার পিতাটি তার কন্যাকে ধর্ষণ করে। সেই পিতাটি ছিল বাস্তবিক এক পিশাচ।

এরিকা এবিলঃ মানলাম, কিন্তু কেন পিতাটি ফিরে এসেছিল?

যদি আমি তা বলি, তবে কি তা আপনাকে সিনেমাটি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেবে?

এরিকা এবিলঃ হয়ত তা সিনেমাটি সম্পর্কে আমাকে আরও অধিক স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে।

আমি শংকিত যে, এমন কোনো যোগসূত্র সেখানে নেই, আর বিষয়টি আপনি হয় উপলব্ধি করতে সক্ষম কিংবা নন। কিছু কিছু বিষয় আছে যার কোনো উত্তর নেই এবং এমন কেউ-ই নেই যে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে পারে। এই বিষয়গুলো হয় আমরা অনুভব ও উপলব্ধি করি, কিংবা করি না।কিছু কিছু সময় আমরা তা এড়িয়ে যাই, কিংবা লেগেই থাকি। এটাই স্বাভাবিক। আর এই বিষয়ে সেই সব দর্শকদের আমি খুব বেশি সাহায্য করতে করতে পারি না, যারা সিনেমাটির বিশেষ কিছু বিষয় বুঝতে পারেনি। এটা একজন মানুষকে অন্য সেই মানুষ সম্পর্কে বলার মতো বিষয়, যে মানুষটিকে সে ইতিমধ্যে নিজেই দেখছে।

শিল্প কোন কিছু বোঝার ব্যাপারে নির্দেশনা দেবার মতো বিষয় নয় বরং তা নিজেই সম্পূর্ণরূপের একটা বিষয়। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিত্রকল্প, ভাবনা নয়।

এরিকা এবিলঃ তারপরও আপনি সিনেমাটিকে ‘মানব জীবনের দিকে পৌরাণিক দৃষ্টিপাত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন,এই বিষয়টি কি বিস্তারিতভাবে বলা যাবে?

মনে হচ্ছে আপনি দৈনন্দিন জীবন-যাপনের অবস্থান থেকে সিনেমাটি দেখেছেন। এটা ভুল, কেন না তা আরও অধিক সম্প্রসারিত বিষয় এবং এর রহস্য সিনেমাটি নিজে আপনার কাছে উন্মোচিত করবে না। (আমার হতাশাজনক অভিব্যক্তিতে) কেউ অবশ্যই চিৎকার করে পবিত্র কিছু কিংবা গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহতার বিষয়ে কথা বলবে না, কারণ যেই মাত্র সে ওভাবে কথা বলা শুর করবে, যা কিছু রহস্যময় ও পবিত্র তা মুহূর্তেই বাষ্পীভূত হবে। অবশ্যই কেউ না কেউ প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইঙ্গিত দেবে আর আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি আমার এই সিনেমাতে ।

এরিকা এবিলঃ যাই হোক, যদি আপনাকে সিনেমাটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে বলা হয়…

আমি এই বলব যে , এটা মা হতে পিতাতে আত্মা সঞ্চালন বিষয়ক বিমূর্ত অবতার।

এরিকা এবিলঃ সাসপেন্স তৈরী করার জন্য আপনি কোন ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন?

যেহেতু এটা আমার প্রথম সিনেমা সুতরাং কৌশল বিষয়ে কথা বলা আমার জন্য কিছুটা অপরিপক্কতার বিষয়। আমার অনেক বন্ধুরাই, যাদের আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল, যেন আমি পিতার বাক্সটি মধ্যে কি আছে তা দর্শককে দেখাই। কিন্তু, আমার অন্তর্জ্ঞান কাজটি করতে চায়নি বরং আমি অনুভব করেছিলাম যে, এটা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।

এরিকা এবিলঃ রাশিয়ায় কি এখন কোনো সমৃদ্ধ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে?

এই বিষয়ে কথা বলা আমার পক্ষে কঠিন , কারণ আমি মূল ধারার সিনেমাতে নেই। আমি সিনেমা স্কুলে যাইনি, বরং থিয়েটারে ছিলাম। সেখানের আমার শিক্ষক ছিলেন ‘আলেক্সেই জার্মান’, যিনি রাশিয়া ও বহির্বিশ্বে সমান বিখ্যাত এবং জর্জিয়ার ‘ওটার লোসেলিয়ানি’, যিনি ফ্রান্সেই অধিংকাশ সময় কাজ করেছেন।

এরিকা এবিলঃ সমালোচকরা ‘দ্য রিটার্ন’ এ তারকোভস্কির অনুরণন খুঁজে পেয়েছেন। কীভাবে তিনি আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছেন?

সময়ের ছন্দ ও গতিময়তার বিষয়ে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা যেন স্বপ্নের মতো এগিয়ে চলা। ব্রেশন, সিনেমা ও চিত্রনাট্যকে এভাবে তুলনা করেছেন, সিনেমা দেখায় আর চিত্রনাট্য আমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে কিছু সঞ্চারিত করে। তারকোভস্কি জানতেন কীভাবে তা করতে হয়। সিনেমা বিভিন্ন দৃষ্ঠিকোণ, দ্রুত স্থান পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে থাকে, কিন্তু সিনেমা পরিচালকরা, যেমন উইম ওয়েন্ডারস, কোনো দৃষ্ঠিকোণ পরিবর্তন ছাড়াই নিজেদের একটি বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত রাখেন, আর তাতে দর্শকদেরও সম্পৃক্ত হবার সুযোগ তৈরী করে দেন। তারা কোনোরূপ তড়িঘড়ি ছাড়াই একটি ফ্রেমের মধ্যে গভীর চিন্তা-ভাবনার জন্য এক শ্রেণীর দর্শক তৈরী করেন।

আলেক্সেই কারাখানঃ ‘দ্য রিটার্ন উৎসব’- এর আলোকে কীভাবে আপনি সিনেমাটির সাড়া জাগানো সাফল্যকে ব্যাখ্যা করবেন?

কেন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের নির্বাচক মন্ডলীর কাছে সিনেমাটি এত জনপ্রিয় ছিল তা আমার পক্ষে বলা কষ্টকর। কিন্তু, আপনার কাছে এমন কি কারণ থাকতে পারে, যার দরুণ এই অভূতপূর্ব সৃষ্টির গুরুত্বকে মাত্রারিক্তভাবে মূল্যায়ন না করে, কেবলমাত্র অবমূল্যায়ন করবেন। এমন ঘটনা সম্ভবত জীবনে একবারই ঘটে। বর্তমানে আমি সুখোকর অনুভূতিতে পূর্ণ, যা এসেছে সম্পূর্ণ অনভিপ্রেতভাবে। যখন আমরা সিনেমাটি বানাচ্ছিলাম, সবসময়ই আশা করেছি যে, এটা কোনো না কোনো বড় উৎসবে নির্বাচিত হবে, এবং মাঝে মাঝে আমি আমার কলা-কুশলী ও দলের সদস্যদেরও বলতাম- ‘আমরা এত কঠোর পরিশ্রম করছি কারণ একদিন আমরা কানস এ পৌঁছাব’।

আলেক্সেই কারাখানঃ তাহলে কি এই বলতে চান যে, উৎসবের সাফল্যতা পূর্বেই ধারণা করা হয়েছিল?

না, বিষয়টা এমন ছিল না। যদিও আমরা সবসময়ই বলতাম যে, আমরা শিল্পকলার গভীর অনুরাগ সম্বলিত একটি সিনেমা পরিচালনা করেছি, যা পশ্চিমে বেশ জনপ্রিয়। এটা ছিল আমার নিজস্ব পছন্দের প্রতিফলন এবং উৎসবের নির্বাচক মন্ডলীদের খুশি করার ন্যূনতম প্রয়াস মাত্র, আর আমি আশা করি যে, আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন, যারা সিনেমাটি পছন্দ করেছেন অথবা দেখেছেন, তারা কেবল কেবলমাত্র পিতা-পুত্রের ব্যক্তিগত নাটকীয়তার জন্যই তা করেনি বরং এর গভীর অর্থবহতার জন্যও করেছেন।

আলেক্সেই কারাখানঃ আপনার সিনেমাতে কোন গভীর অর্থবহতার দিক তুলে ধরেছেন?

আমার সিনেমাতে আমি কী দেখতে পাই সে সম্পর্কে কথা না বলার ব্যাপারে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি। আমি দর্শকের কাছেই সিনেমাটি ছেড়ে দেব। আমি চাই তারাই নির্ধারণ করুক যে তারা সিনেমাটিতে কী অপছন্দ করে, তারা কী বোঝে যা পিতার চরিত্রে নেই,কেন তারা তাকে পছন্দ করে-আর আমার মন্তব্য যেন এই ব্যাপারে তাদের প্রভাবিত করতে না পারে।

আলেক্সেই কারাখানঃ সিনেমাটি প্রদর্শনের পর সেখানের অনেক সমালোচকরাই এটাকে তারকোভস্কির কাজের সাথে তুলনা করেছেন, এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?

একজন রাশিয়ান চিত্র পরিচালক হিসেবে তারকোভস্কির ছেয়ে থাকা প্রভাব অনুভব না করা অসম্ভব । সম্ভবত এ জন্য যে তিনি আমাদের সিনেমার মহানতম ব্যক্তিত্ব। সুতরাং, আমি আহ্লাদিত হয়েছিলাম যখন সমালোচকরা এই সাদৃশ্যতার কথা উল্লেখ করেন -হয়ত তা ছিল আমার সিনেমায় সময়ের বিশেষ গতিময়তার বিষয়ে, সে যাই হোক, না আমি তাঁকে অনুকরণ করেছি, না তাঁর থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি।

আলেক্সেই কারাখানঃ আপনার কি ধারণা অপরিণামদর্শী এই পিতার প্রত্যাবর্তনের কোনো তাৎপর্য রয়েছে এবং তা আপনার সিনেমার চরিত্রদের সাহায্য করেছে?

এখানে পরিচয় না ঘটার বিষয়টি নিতান্তই অর্থহীন। যদি পরিচয় ঘটা জরুরী না-ই হতো, তবে এর জন্য অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া ছিল খুবই স্বাভাবিক। গল্পটি কেবল ব্যক্তিগত গন্ডিতে আবদ্ধ নয়, বরং তা এলামেলোভাবে কোনো কিছু সংঘটিত হবার বিষয়টি সমর্থন করে। এখানে সবকিছুরই অর্থ রয়েছে, সবকিছুই এখানে পূর্বনিধারিত। এই পরিচয় ঘটার ব্যাপারটি কারও জন্য শুভ কিছু বয়ে এনেছিল? যখন আমরা পরিচয় ঘটার বিষয়টির দিকে এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকাই, যা পবিত্র,তখন সেটা সবার জন্যই সমানভাবে জরুরী হয়ে পড়ে। আমরা পশ্চিমা প্রথার সমান্তরাল কিছু সৃষ্টি করতে পারতাম: যেখানে একটি পরিচয় শিক্ষকের সাথে ছাত্রের পরিচয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সত্য বলতে, আমি এই বিষয়ে আর এগুতে চাই না। আমাকে বরং সেই সব প্রশ্ন করুন, যার উত্তরের জন্য আমরা হয় সামনে এগুবো, নয় গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হব, যা সিনেমাটির আরও গভীরে নিয়ে যাবে, আর আমি পূর্বেই বলেছি যে, কাজটি আমি স্বেচ্ছায় করব না।

আলেক্সেই কারাখানঃ তাহলে আপনাকে একটি হালকা প্রশ্ন করি যা আমার মাথায় এলো, সেই বাক্সটিতে কী ছিল যা পিতা-পুত্রদের যাত্রায় গন্তব্যের প্রতিনিধিত্ব করে?

এটা গোপনীয় এবং বাস্তবিক অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। মূলত, সেটা এক প্রকার গোপনীয়তা ধারণ করে, যা রহস্যময় পিতার সাথে সাথেই অন্তর্হিত হয়।


সূত্রঃ
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×