- আমি অনার্স এ সর্বসাকুল্লে ৩ এর কাছাকাছি একটা সি.জি.পি এ পেয়েছিলাম। আর পড়াশোনা করব, এই রকম জোর মনের মধ্যে ছিল না। অনার্স শেষ করে কোনমতে একটা চাকরি করে চলছিল দিনকাল। এই ভাবেই প্রায় এক দেড় বছর কেটেছিল। একদিন আব্বু ফোন করে বলল- কিরে এম.বি.এ তে ভর্তি হবি না? আমি নয় ছয় করে বললাম আর কয়দিন পড়েই ভর্তি হব। আসলে আমার অনার্স এর রেজাল্ট তো উনি জানেই না। রেজাল্ট এর সময়টাও আমি নয় ছয় করে উনাকে বুঝিয়েছি যে আমি ভাল রেজাল্ট করেছি।
যাই হোক এর কয়েকদিন পরই একদিন আব্বু ঢাকায় আসলেন। বললেন আমি তোকে এম.বি.এ তে ভর্তি করানোর জন্যই ঢাকায় এসেছি। আমি আবারো পাশ কাটানোর জন্য বললাম আমার কাছে এখন টাকা নাই। চার মাস পরেই পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি হব। উনি কোন কথাই শুনলেন না নিজেই টাকা দিয়ে ভর্তি করে দিলেন।
- শুরু হল আমার এম.বি.এ যুদ্ধ। প্রথম ক্লাসে ক্লাসরুমে ঢুকে দেখলাম সবাই ২য় সারির চেয়ার থেকে পিছনের চেয়ার গুলোতে বসেছে। আমি পেছনে খালি চেয়ার না পেয়ে প্রথম সারির চেয়ারে বসলাম। আর এটাতে বাধল আরেক সমস্যা। আমি প্রথম সারির চেয়ারে বসেছি আমার পাশে আরো কয়েকজন বসেছে কিন্তু অন্য ছাত্ররা ভাবল আমি বোধ হয় মেধাবী ছাত্র (মুলত একটিভ ছাত্ররাই তো প্রথম সারির চেয়ার গুলোতে বসে) আমি বুঝানোর চেষ্টা করলাম ভাই আমার দ্বারা হবে না তারপর ও আমাকেই সি. আর বা ক্লাস কেপটেন নির্বাচিত করা হল।
- পরলাম আরেক বিপদে। সব শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে প্রথম দিনের ক্লাসে অনেক বড় বড় কথা ঝারলেন। সি.আর যিনি হন তিনি ক্লাস মিস দেন না, তার রেজাল্ট সবার চেয়ে ভাল হয়, এই, সেই আরো নানা কথা, কাজেই আপনাকে ও সিনসিয়ার হতে হবে। আমি মনে মনে বললাম আমার অনার্স এর রেজাল্টের কথা শুনলে এত কথা বলতেন না।
-যাই হোক আমি ও মনকে বুঝাতে লাগলাম আমাকে ভাল রেজাল্ট করতেই হবে। এমনিতেই আব্বু নিজেই ভর্তি করে দিয়ে গেছেন। আবার সি.আর নিবাচিত হয়েছি আমি, ভাল রেজাল্ট না করলে ইজ্জত থাকবে না। শুরু করলাম আরেক যুদ্ধ। পুরো এম.বি.এ তে কোন ক্লাস মিস দিলাম না। এক এক টা সেমিস্টার শেষ করলাম মনের জেদ নিয়ে ।
-একদিন শেষ করলাম এম.বি.এ । রেজাল্ট হল শেষ সেমিস্টারের। সি.জি.পি.এ পেলাম ৪ এর মধ্যে ৩.৭৬ এবং এটাই ছিল আমাদের ব্যাচের মধ্যে সর্বচ্চো রেজাল্ট। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম আর মনে মনে দায়িত্বটাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম এই ভেবে যে একটা দায়িত্ব মানুষকে জিরো থেকে হিরো করতে পারে শুধু দায়িত্বটার গুরুত্ব বুঝতে হবে আপনাকে।