somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অজানা সমাধি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার রোজকার যাওয়া আসার পথের ধারে দেখি এক প্রাচীন সমাধি । পরিচিতি নির্দেশিকায় লেখা- 'An unknown Tomb,-' একটি অজানা সমাধি'। বেশ কিছুটা চত্বর নিয়ে লোহার গ্রীল দিয়ে ঘেরা । সমাধিটা দেখলে চট করে মসজিদের মত মনে হয় । স্থাপনাটির চারপাশের দেয়াল জুড়ে জ্যামিতিক কারুকাজ চারকোনায় চারটে স্তম্ভ । মধ্যেখানে কারুকার্য্যময় খিলানওয়ালা দরজাটি একটু বের করা। মূল কপাট নেই, লোহার গ্রীল দিয়ে বন্ধ করা, যাতে ভেতরে কেউ না ঢোকে।
অজানা কবর,তবু সেখানেই হয়ত পূণ্যের আশায় কেউ ওর দরজার গ্রীলের গায়ে কয়েকটি সাদা ফিতা বা টুকরো কাপড় বেধেঁ দিয়েছে - - ঠিক যেমন দেবতার থানে বা পীরের দরগায় করে থাকে। দু’একজন সেখানে মাথা রেখে সিজদাও করতে দেখি, কেউ মোমবাতি, ধূপকাঠিও জ্বালায়। জায়গাটা নির্জন- পরিচ্ছন্ন আর ছিমছাম নীরবতা।
ছুটির দিনে সেখান দিয়ে যেতে- কৌতূহলবশতঃ দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সমাধিটার স্থাপত্য, কোন আমলের বা সেটা কত পুরান। চার পাশে আধুনিক উঁচু দালান কোঠার মাঝে বেমানান ওই স্থাপনা- যেন ধরে আছে ইতিহাসের অজানা কোন পাতা- একটা অন্যরকম অনুভূতি মনে জাগে। কতক্ষণ দেখায় ডুবেছিলাম মনে নেই । একটু পরে দেখি এক অল্প বয়সী কিশোর,বয়স হয়ত উনিশ-কুড়ি হবে, পিঠে র্যাকস্যাক, হাতে আড়াল করে রাখা একটি লাল গোলাপ । আমাকে দেখে কি ভেবেছে জানি না, জিঙ্গেস করলো-
‘-আঙ্কেল,ভেতরে যাওয়া যাবে?
বললাম-‘ মানা তো নেই,গেটও খোলা । নিশ্চয়ই যাওয়া যাবে।’
ছেলেটা সমাধিতে কি ফুল দেবে নাকি সুতো বাঁধতে এসেছে জানি না-আজকাল আবার তরুণদের মধ্যেও ধর্মচর্চার প্রবণতা বাড়ছে । কিন্তু এটি তো অজানা কবর, লেখাটা কি সে পড়ার পরও এসেছে কোন পূণ্যলাভের আশায়? এভাবেই বহু প্রাচীন কবর ধীরে ধীরে মাজারে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই বললাম-
- এটা কিন্তু কোন মাজার নয় '।
-হ্যাঁ,বুঝতে পারছি।
তবে একটু পরেই আমার ভুল ভাঙলো। বুঝলাম তার উদ্দেশ্য ঠিক মাজার নয়। দেখি ,উল্টো দিক থেকে স্কুল ড্রেস পরা আরেক কিশোরী আসছে। সে পায়ে পায়ে ছেলেটার কাছে গেল। স্কুল ফাঁকি দিয়ে নিশ্চয়ই-- হয়তো আসার কথা ছিল। প্রাচীন অভ্যস্ত চোখে একটু সঙ্কোচ, আবার স্বস্তি পেলাম যে - আধ্যাত্ত্বিকতা বা পূণ্যলাভ নয়, নেহাতই মানবিক প্রেম-ভালবাসার ব্যাপার ! চারদিকের কোলাহলময় যান্ত্রিক শহরের ব্যস্ততার মাঝে ক্ষনিক মিলনের এর ভীরু প্রয়াস-এই প্রত্নতত্তের পটভূমিতে- নগর জীবনের কর্কশতার মাঝে সেতারের এক মধুর আলাপ । একসময় ওদের দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলাম-
সন্ধ্যায় ফিরছিলাম আবার ওই পথের পাশ দিয়েই । না,এখন কেউ নেই। নির্জন চারদিক- সন্ধ্যা হয়ে আসছে- একটা মোমবাতি প্রায় নিবু নিবু শিখায় জ্বলছে,পাশেই অপ্রকৃতিস্থ মত একজন মানুষ বসে । হঠাৎ চোখ গেল সমাধির দরজার গ্রীলটায়- যেখানে ইচ্ছাপূরণের সুতো আর ফিতে বাঁধা- দেখি তার ঠিক নীচেই মাটিতে পড়ে আছে পূজার অর্ঘ্যের মত সেই গোলাপটি- নীরব নিশ্চুপ,অব্যক্ত কোন হৃদয়ের 'ইচ্ছে' হয়ে একলা পড়ে।
ওই বেদী তো কোন দেবতার তো নয়ই, ঐতিহাসিক ব্যক্তিরও না-নামহীন এক অজানা কবর । তবু ছেলেটি এখানে দেবে বলেই কি ফুলটা এনেছিল, না মেয়েটাকে দিতে ? মেয়েটা কি নেয় নি - মান-অভিমান? অথবা দু’জনে মিলে সেই অজানা সমাধির বিদেহী কোন আত্মার কাছে রেখে গেছে তাদের ভালবাসার নীরব সাক্ষী হয়ে ? নাকি অন্য কোন ইচ্ছাপূরণের আশায় - সবটাই অজানা । একসময় ধীর পায়ে ফিরে চললাম। কেবল চকিতে মনে পড়লো 'বৈষ্ণব কবিতার' ক'টি রবীন্দ্রচরণ

---------- ‘আমাদেরি কুটির কাননে
ফুটে পুষ্প , কেহ দেয় দেবতা-চরণে,
কেহ রাখে প্রিয়জন-তরে---তাহে তাঁর
নাহি অসন্তোষ। এই প্রেমগীতি-হার
গাঁথা হয় নরনারী-মিলনমেলায়,
কেহ দেয় তাঁরে, কেহ বঁধুর গলায় ।
দেবতারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই
প্রিয়জনে, -- প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই,
তাই দিই দেবতারে ; আর পাব কোথা !
দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা!

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৪
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×