somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ তুমি আমার ধ্রুবতারা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পকেটের ফোনটা দুবার টিংটিং করে উঠলো। মেসেজ এসেছে। এই ভর-দুপুরে আবার কে মেসেজ দিলো! বের করে দেখলাম। যা ভেবেছিলাম, তাই। মিথিলা। ছোট করে লেখা, "খেয়েছো হিমু?"
রমিজউদ্দিনের দোকানের বিরিয়ানির প্লেট খালি করে লম্বা ঢেকুর তুলে রিপ্লাই দিলাম, "তোমাকে ছেড়ে খাই কি করে, বলো? তুমি প্রথমে খাবে। তারপর আমি" গলাটা একটু করুণ করেই বললাম।
.
ডাহা মিথ্যে কথাটা খুব সহজে বিশ্বাস করলো মিথিলা। কিন্তু মেনে নিলোনা। বেশ অভিমানী কন্ঠে তার আদেশ, এখনই খেতে হবে আমাকে। আমিও তাকে আশ্বাস দিলাম, খাবো এখনই। যদিও পেট পূজা শেষ আমার। মিথিলা খেয়েছে কিনা জানতে চাইলাম না। ফোনটা রেখে দিলাম। জানি, খায়নি ও। এখন হয়তো খাবে। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে আমাকে ও। খুব ভরসা করে আমায়। প্রচন্ড ভালবাসার ক্ষমতা আছে ওর ভেতর। কিন্তু ওর অন্ধ বিশ্বাসের আড়ালে ওকে অন্ধকারেই রেখে দিয়েছি। কি ই বা করার আছে আমার? আমি তো ওকে ভালবাসি না। বাসতে পারবোনা। ভাল তো আমি নিধিকে বাসতাম। এখনও বাসি।
.
নিধি.....
আমার প্রথম প্রেম। আড়াই বছরের প্রেমজীবন শেষে ফ্যামিলির চাপে যখন বিয়ে করতে বাধ্য হলো ও, তাকিয়ে তাকিয়ে কাজলে ভেজা চোখের নিধিকে অন্য কারো হতে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলনা আমার মত একটা বেকার যুবকের। শেষ দেখার দিনটায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিল মেয়েটা। টানা পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে বুকে মাথা গুঁজে দাঁড়িয়ে ছিল নিধি। তারপর কিছু না বলেই হঠাৎ চলে গেল। যাবার সময় একটা বারও পেছন ফিরে তাকায়নি ও। আমিও পিছু ডাকিনি। মায়া বাড়াতে চাইনি । তারপর আর কোনদিন ওকে দেখিনি। বিয়ের পর ওর নাম্বারটায় কল করে ব্যস্ত পেতাম। এখন বন্ধ পাই। নতুন জীবনের মত ফোনের নাম্বারটাও পাল্টে ফেলেছে। ব্যাপারটা মন্দ না।
বিয়েটা হলো মেয়েদের পুনর্জন্মের মত। প্রতিটা অতীত ওরা ভুলে যায় প্রথম রাতের পরপরই। নতুন করে বাঁচে ওরা। বাঁচতে চায়। শিখে যায় ওরা। স্বামী সন্তানেই আবদ্ধ হয়ে জীবন শেষে বুড়ো হয়ে মরতে পারলেই ওরা খুশি। এখন আর তাই ওকে খোঁজার বৃথাচেষ্টা করিনা। ওকে ওর মতই থাক । সবাই সুখে থাকতে চায়। অতীত মনে রেখে কষ্ট পাবার মত বোকা হাতে গোনা কয়েকটাই থাকে হয়তো। যাদের মাঝে আমিও একজন ।
.
কোথায় যেন পড়েছিলাম। ফার্স্ট লাভ, সব সময় ট্রু নাও হতে পারে। কিন্তু সত্যি বলতে First day at school এর মত ফার্স্ট লাভ জিনিসটাও ভোলা যায়না। আমিও নিধিকে ভুলতে পারিনি। রাতের অন্ধকারগুলো যখন খোলা জানালা বেয়ে ঘরে ঢোকে, সুখগুলো তখন জানালা হয়েই পালায়। আমি জেগে জেগে নিধিকে ভাবি। এ জনমের দোষ দেই। আর পরজনমে পাবার স্বপ্ন দেখি চকচকে একজোড়া চোখ নিয়ে। হাউমাউ করে কাঁদতে পারিনা আমি। ছেলেদের হাউমাউ করে কাঁদতে নেই। হাউমাউ করে কাঁদে মেয়েরা। সিগারেটের ফিল্টারে প্রতিটা কড়া চুম্বনের সাথে অনেকটা সময় ধরে জমতে থাকা দু এক ফোঁটা নোনা জল চোখ হতে নেমে গাল বেয়ে ঝরে পড়ে।
.
রাত দেড়টা… ফোনটা বাজছে। মিথিলার কল। রিসিভ করলাম।
"হিমু"
"হু"
"কি করছো? রাতে খেয়েছো?"
“না”
“প্লিজ খেয়ে নাও তো। ওঠো”
খ্যাক করে উঠলাম। "তোমাকে বলতে হবে? আমি কি করবো, না করবো সব আমার ব্যাপার। তুমি বলার কে? এত কথা বলো কেন? এত বিরক্ত করো কেন? বিরক্ত করবা না আর"
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। ওর চোখের জলের সাক্ষী হবার সাহস আমার হলোনা। কলটা কেটে দিলোম। কোন দোষ ছাড়াই ওকে কথা শোনালাম। কোন কারণ ছাড়াই মেয়েটাকে কাঁদালাম। জানি মেয়েটা খায়নি। খাবেও না আজ রাতে। রাত জেগে জেগে কষ্ট পাহারা দেবে । আমার দেয়া কষ্ট। আর আমি রাত জাগবো নিধির জন্য। পাহারা দেবো ওর দেয়া কষ্টগুলোকে।
.
দুদিন হলো, অফিসে তানিয়া নামের নতুন এক কলিগ জয়েন করেছে। বেশ নজর কাড়া চাহুনী আর মায়াবী দেখতে। তানিয়া আসার পর অফিসের বেশটাই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। যুবক থেকে বুড়ো সবাইকে দেখি রোজ ওর সামনে এসে ঘোরাফেরা করে যায়। মতলব বুঝে ফেলেছি সবার। তবে ভাবার বিষয় হলো, আমার পাশের টেবিলে বসার নিয়ম করা হয়েছে তানিয়ার। এ নিয়ে বাকিদের বিরাট ক্ষোভ আর হিংসা আমার উপর। মজাই লাগে সবাইকে জ্বলতে দেখে।
.
মাস তিনেক পার হয়ে গেল। তানিয়ার সাথে আমার ঘনিষ্টতা বেড়েছে কয়েকগুন। তার দ্বিগুণ হারে বেড়েছে অফিসে আমার শত্রুর সংখ্যা। পান থেকে চুন খসলেই বসের কাছে কমপ্লেন হিংসুটে কলিগদের। কারণ একটাই; তানিয়া। রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ-ডিনার। স্পেশাল দিনগুলোতে এক রিক্সায় ঘোরা। এসব চলে আমাদের মাঝে। ব্যাপারটা যে অন্যদিকে গড়াচ্ছে, সেটা বেশ ভালমতই টের পাচ্ছি। কেন যেন মিথিলার কথা মনে পড়ছে খুব। ওকে আমি ঠকাচ্ছি। অন্যায় করছি! তবে, আমার মত বিবেকহীন মানুষের কাছে এসব ন্যায় অন্যায় ভাবা অস্বাভাবিক। তাই ঝেড়ে দিলাম এসব চিন্তা।
.
তানিয়াকে নিয়ে স্টার কাবাবের এক সাইডে বসে আছি। কুটকুট করে এটা ওটা খাচ্ছে ও। আমি চুপচাপ বসে আছি। খাওয়া শেষে দুজনে বের হলাম। রিক্সা নিতে গিয়ে দেখলাম, মিথিলা। সাথে এক ছেলে। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। কেন এমনটা হচ্ছে? এমনটা তো হবার কথা না। ওকে তো আমি ভালই বাসিনা। তবে এসব কি হচ্ছে? কি যেন হলো! কিছু না ভেবেই তানিয়াকে বলে দিলাম, “তানিয়া, আমাকে মাফ করে দিও। আমি ম্যারিড। তোমার সাথে রিলেশান করা পসিবল না আমার।”
দু একটা চড় থাপ্পড় খাবার জন্য রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। তানিয়া বললো, “রিলেশান! কিসব আজব কথা বলছো? আমি ম্যারিড। তোমাকে বলতে ভুলে গেসিলাম”
তানিয়া ভেবেছিল, আমি অবাক হবো; কষ্ট পাবো। অবাক হয়েছি; তবে কষ্ট পাইনি। বরং খুশিই হয়েছি। তবে ম্যারিড একটা মেয়ে পর পুরুষের টাকায় রেস্টুরেন্ট এ খায়, ভাবতেই হাসি পেল। জামাই মেবি বাসায় খেতে দেয়না। তানিয়াকে থ্যাংকু দিয়ে চলে আসলাম।
.
মিথিলা আর সেই ছেলেটা একটা মোবাইলের শোরুমে ঢুকছে। পেছন থেকে ওর হাতটা টেনে ধরলাম আমি। আকাশ থেকে পড়লো ও। ওকে বললাম আমি, “এটাই তোমার ভালবাসা? দামী মোবাইল কিনতে নতুন কাউকে ম্যানেজ করে ফেলছো? আমাকে বলতা, কিনে দিতাম।”
মিথিলা কটমট করে তাকিয়ে আছে। আর ওপাশে সেই ছেলে মিটমিট করে হাসছে। ধমক দিয়ে বললাম, “ঐ মিয়া হাসেন ক্যান? আমার বউকে নিয়ে ঘুরতে আসেন। আবার হাসেন! দাঁত ফালায় দিবো।”
“তোমার দাঁত ফেলবো আমি। বেশি বোঝো কেন? বড় ভাইয়াকে নিয়ে আসছি ভাবীর জন্য মোবাইল কিনতে।” মিথিলার কথাগুলো শুনে আমার অবস্থা এমন হলো, যেন মাটি ফাঁক করে গর্তে ঢুকে পড়ি। আপাতত সেটা তো পারছিনা। ভাইকে সরি বলে মিথিলার হাত ধরে দোকান থেকে ভাগলাম। নাহলে কপালে খারাবী আছে। মিথিলাকে নিয়ে একটা রিক্সা নিলাম। তিনটা ফ্রেন্ডকে কল করে আসতে বললাম। নিধির মত হারাতে চাইনা মিথিলাকে। রিক্সাওয়ালা মামা বললো, “মামা কই যাবেন?”
বেশ জোর দিয়ে বললাম, “ কাজী অফিস যাবো। চলো…”
মিথিলা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ওর চোখে চোখ রাখার সাহস আমার হলোনা। শুধু হাতটা শক্ত করে ধরলাম। মিথিলাও ভরসা নিয়ে আমার হাতটা ধরলো। নিজের কাছেই কথা দিলাম। ওর ভরসা আমি রাখবো।
গল্পটা শুরু এখানেই……….
.
লেখাঃ #GMHimu (আঁধারের আর্তনাদ)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×