somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা মাতালেন 'কিং খান'

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবন ও অভিনয় এমনভাবে এক জায়গায় মিলে গেছে যে, আমি মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। যখন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলি তখনকার শাহরুখ খান আর যখন ক্যামেরার সামনে শট দেই- সেই শাহরুখ খানের মধ্যে নিজেই তফাৎ করতে পারি না। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় কখনো মনে হয় আমি অভিনয় করছি আবার কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এটাই তো আমি। উপমহাদেশের এ সময়ের বিনোদন বাদশাহ শাহরুখ খানের উপলব্ধিটা এমনই।

অভিনয়কে জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলা এই অভিনেতা গতকাল শুক্রবার বিনোদনের জোয়ারে ভাসালেন বাংলাদেশের স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে 'কিং খান লাইভ ইন ঢাকা' কনসার্টে শাহরুখ খানের গান, নাচ আর তারচেয়েও মজার মজার কথা মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করলেন। উপলব্ধি করলেন, যে সম্মোহনী যাদু নিয়ে এই শিল্পী জন্মেছেন তাকে অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই। শাহরুখ হাসলে তারা হেসেছেন, নাচলে নেচেছেন। যতক্ষণ তিনি স্টেজে ছিলেন সবাইকে মাতিয়ে রেখেছেন তার সম্মোহনী ক্ষমতা দিয়ে। কম যাননি বাঙালি কন্যা রাণী মুখার্জি ও অর্জুন রামপালসহ অন্য শিল্পীরাও। তারাও সমানভাবে মাতিয়েছেন দর্শকদের। শুধু আর্মি স্টেয়ামের দর্শকরাই নন বৈশাখী টিভির সামনে বসে শাহরুখের মনোমুগ্ধকর স্টেজ শো উপভোগ করেছেন সারাদেশের শাহরুখ ভক্ত মানুষ।

স্টেজে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো স্টেডিয়ামের মানুষ জেগে উঠলো। অপেক্ষা করে বিরক্ত দর্শকরা শাহরুখের পারফর্মেন্সে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। গানের সুরে নেচে উঠলেন শাহরুখ, নেচে উঠলো পুরো স্টেডিয়াম। চোখে কালো গগলস, কালো ওভার কোট, গায়ে ডিপ অ্যাশ কালারের টিশার্ট ও প্যান্ট, তাতে সিকোয়েন্সের গর্জিআস কাজ। সুপারস্টার শাহরুখ তার স্বভাবসুলভ পোশাকে। প্রথম দর্শনেই মাত দর্শক।

প্রথম পারফর্মেন্সের পর আসলেন অ্যাশ কোট, লাল ওয়েস্ট কোট, সাদা শার্ট আর লাল ফ্রেমের চশমা পরে। এসেই বললেন, আসসালামু আলাইকুম, আদাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ভারতবর্ষ থেকে বয়ে এনেছি ভালবাসা। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জানালেন প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। আমার মা ছোটবেলায় বলতেন সোনার বাংলার কথা। এখানে এসে বুঝেছি এখানকার মাটি সোনা, এখানকার আকাশ সোনা, ভাষা সোনা, মানুষের মন সোনার। কাজী নজরুল, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমানের_ রুনা লায়লা, রেজওয়ানা চৌধুরীর এই সোনার বাংলা। আমি যাবার সময় বাংলাদেশ থেকে আমার বাচ্চাদের জন্য 'সোনার বাংলা' নিয়ে যাব। পৌনে নয়টায় স্টেজে উঠলেন। এরপর ১৫ মিনিট পরে উঠে থাকলেন প্রায় এক ঘণ্টা। এসময় বেশ কয়েকজনকে স্টেজে নিয়ে নানা গল্প আর দুষ্টুমি ভরা কথায় মাতালেন দর্শকদের।

মহি আর প্রেমাকে নিয়ে সাজালেন প্রেম নিবেদনের আয়োজন। পরে আরো কয়েকজনকে নিয়ে করলেন নানা মজার আয়োজন। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে দর্শকরা। এছাড়া রানী মুখার্জিকে নিয়ে 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়'সহ নানা সিনেমার গানে নাচলেন আর দর্শকদের মাতালেন আনন্দে। আর তার হিট সিনেমা 'ওম শান্তি ওম'-এর গান দিয়ে ইতি টানলেন শোয়ের। তবে বোম্বে ভাইকিংসের নিরাজ শ্রীধরের গান ছিল এতকিছুর পরও বাড়তি পাওনা। তিন দফা গান গাইতে এসে সুরের যাদুতে মন ভরিয়ে গেছেন দর্শকশ্রোতার।

রানী মুখার্জি স্টেজে এলেন তার 'দিল বোলে হারিপ্পা' গানের সঙ্গে। গান শেষে বললেন, আমাদের আয়োজন কেমন লাগছে। আজ আমার আপনাদের আনন্দ দিতে এসেছি। আনন্দ দিয়ে যাব। সে কথা রেখেছেন তারা। প্রত্যেকে তাদের নামের সুনাম রাখলেন প্রতিটি পারফমর্েেন্স। শাহরুখ খান তার অভিনীত জনপ্রিয় হিন্দি গানের সুরে নাচলেন, তার সঙ্গে নাচলেন রানী মুখার্জি, অজর্ুন রামপাল, ঊষা কোপিকার, শেফালি জরিওয়ালাসহ আরো অনেকে।

এর আগে গতকাল দুপুরে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী গৌরী খান, দুই সন্তান আরিয়ান ও সুহানা। শাহরুখ ও তার পরিবারের জন্য ১২ সদস্যের একটি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী তার সঙ্গে ছিল। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শাহরুখ ও তার সঙ্গীদের রেডিসন হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সরাসরি তিনি স্টেডিয়ামে এসে রিহার্সেলে যোগ দেন। এসময় রাণী মুখার্জি, অজর্ুন রামপালসহ অন্য শিল্পীরাও রিহার্সেলে অংশ নেন।

বর্তমানে বলিউডে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে শাহরুখ খান অন্যতম। তার অভিনীত- হে রাম, দেবদাস এবং পহেলি অস্কার পুরস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিল। শাহরুখ-কাজল জুটি বলিউডের অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে স্বীকৃত। কাজলের সাথে তাঁর অভিনীত বাজীগর, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে, করন অর্জুন, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, কভি খুশি কভি গম। এই ৫টি ছবিই ব্যবসা-সফল হয়। ১৫ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয়দের কাতারে অমিতাভ বচ্চনের পরেই ঠাঁই করে নিয়েছেন।

শাহরুখ দিলস্নীর পাঠান মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা তাজ মোহম্মদ খান ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামী এবং মা লতিফ ফাতিমা ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও সমাজসেবী। যিনি জাঞ্জুয়া রাজপুত পরিবারের মেজর জেনারেল শাহ নওয়াজ খানের কন্যা। শাহ নওয়াজ খান সুভাষ চন্দ্র বোসের অধীনে আজাদ হিন্দ ফৌজের অধিনায়ক ছিলেন। শাহরুখ খানের পিতা ভারত ভাগের আগে বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারের কিসসা কহানী বাজার থেকে দিলস্নীতে চলে আসেন। তার মায়ের বাড়ি ছিল পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। শাহরুখ খানের শেহনাজ নামে একজন বড় বোন রয়েছে। শাহরুখ দিলস্নীর সেইন্ট কলম্বাস স্কুলে পড়তেন এবং এখানে তিনি ক্রীড়া, নাটক ও পড়াশোনায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। এখানে তাকে সম্মানজনক সোর্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে তিনি হংসরাজ কলেজ থেকে (১৯৮৫-১৯৮৮) অর্থনীতিতে সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "মাস কম্যুনিকেশন" নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিতামাতার মৃতু্যর পর ১৯৯১ সালে শাহরুখ খান নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য নতুন দিলস্নী ত্যাগ করে মুম্বাইতে আসেন। ১৯৯১ সালে তিনি গৌরী (ছিব্বর) খানকে বিয়ে করেন।

শাহরুখ খানকে ফরাসি সরকার চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বররূপ 'অর্ডার অফ দ্য আর্টস এন্ড লিটারেচার' সম্মাননায় ভূষিত করেছে। লন্ডনে মাদাম তুসোর মোম জাদুঘরে তার মূর্তি রয়েছে।

শাহরুখ খান ছবির প্রযোজনা, কৌন বনেগা ক্রোড়পতি উপস্থাপনাও করেছেন। এছাড়া ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ টি টোয়েন্টি দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম মালিকও তিনি।। তিনি এবং তাঁর বন্ধু ও সহ-অভিনেত্রী জুহি চাওলার স্বামী জয় মেহতা এই দলটি কিনে নেন।
১৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×