somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদম্য মেধাবীদের কথা! ওদের পন্থা হতে পারে ধনী রাস্ট্র গড়ার পদ্ধতি!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন যাবত কয়েকটা ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ঘটনা আর কিছুই নয়, এক কেরানি ও স্টেনোগ্রাফার পনের হাজার কোটি টাকার মালিক আরেক পিয়ন চার হাজার কোটি টাকার মালিক। শুনতেই কেমন ভালো লাগছে! পিয়ন, কেরানী হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক! কি অদম্য মেধাবী তারা, এত ছোট পদে চাকরি করেও তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, নিজেদের ভাগ্যের চাকা কত দ্রুতগতিতে চালাতে পেরেছে। ভাবাযায়? তারা যদি বাংলাদেশের আমলা হতেন বা বড় কর্তাব্যক্তি বা রাজনীতিক? তবে দেশের অর্ধেকটাই কিনে ফেলতেন মনে হয়!


এই অদম্য দুই মেধাবী সম্পর্কে কিছু তথ্য না জানলে বন্ধুরা মুল্যায়ন করতে পারবেন বলে মনে হয় না। মানুষ মেধা নিয়ে জন্ম নেয় না। জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ কিভাবে জীবনের শিখরে পৌছানো যায় সেই ধারনাই পাওয়া যায় এদের কাছ থেকে! এদের কাছ থেকে আমাদের তথা দেশের নীতি নির্ধারকরা অনেক কিছু শিখতে পারে! শিখতে পারে কিভাবে নিজেকে ধনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়! ওদের জ্ঞাণ কাজে লাগিয়ে দেশকে ধনী দেশের খেতাব অর্জন করা সময়ের ব্যপার মাত্র! জানুন গুণীদের সম্পর্কে!


স্বাস্থ্য বিভাগের শতকোটি টাকার কেরানি ও হাজার কোটি টাকার স্টেনোগ্রাফারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ পায় দুদক। অনুসন্ধানে আবজাল ও রুবিনার নামে স্থাবর-অস্থাবর বিপুল পরিমাণ সম্পদের যে তথ্য পায় যা তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের নামে বাড়ি, গাড়ি, জমি, প্লট, মেয়াদি আমানত, বিভিন্ন ব্যাংকে জমানো টাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ পাওয়া গেছে। অর্থ পাচার করে বিদেশেও সম্পদ বানিয়েছেন তারা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দুই লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেন। তাদের নামে মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের ধারনা তাদের সম্পদের পরিমান পনের হাজার কোটি টাকা হবে। ১৯৯২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে লেখাপড়ার ইতি টানেন ফরিদপুরের আবজাল। এরপর গ্রামে রাখি মালের (মজুদ করে পরে বিক্রি) ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে (ফরিদপুর, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর ও বগুড়া) অস্থায়ীভাবে 'অফিস সহকারী' পদে যোগদান করেন। প্রকল্পটি ২০০০ সালে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে 'অফিস সহকারী' পদে পাঠানো হয়। এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে ঘুরে আসেন ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে বদলি করা হলে তিনি দুই মাসের মধ্যে আবার ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। সর্বশেষ তিনি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। এরই মধ্যে দুর্নীতির কারনে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। শিক্ষাগত ও সনদের জোর না থাকলেও অর্থ-বিত্তর পাহাড় গড়ার জ্ঞান ছিলো ঢের তা বুঝাই যায়। আর রুবিনাও ঐ মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পেই ১৯৯৮ সালে তিনি স্টেনোগ্রাফার পদে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। দুই বছর পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন রুবিনা। দুই বছরেই বুঝে গেছে আবজালের সাথে থাকলে চাকুরি করার কোন প্রয়োজন নেই। ২০০৫ সালে আগস্ট মাসে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করে রাজকোষ হাতিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ার সহযোগী হন তিনি।


বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর এলাকার কে আলী রোডের মৃত হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার ও সালেহা বেগমের ছেলে আবদুল মান্নান তালুকদার (৬০) ছিলেন বাগেরহাট ডিসি অফিসের নেজারত শাখার উমেদার (এমএলএসএস)। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও তার কোনো সার্টিফিকেট নেই। ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উমেদার পদে নিয়োগ পান এবং ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারী মাসে বেতন পেতেন সাকুল্যে পাঁচ হাজার টাকা। নিজেকে ‘সৎ ও ধার্মিক’ দাবি করা ‘চরমোনাই পীরের’ অনুসারী মান্নান এখন চার হাজার কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টারে চড়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। ৪০০ একর জমি, আটটি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন শহরে মার্কেট, জুটমিলসহ তার রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। সমিতি ও রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে তিনি চার হাজার কোটি আত্মসাৎ আত্মগোপনে যাওয়ায়র অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুদক। ‘নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি’র মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় তার অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ‘জাল ছড়ানো’। তার সমিতি ‘শরিয়া মোতাবেক’ পরিচালিত উল্লেখ করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ‘আমানত’ সংগ্রহ করেন। কৌশলে এলাকার মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, বেকার যুবক ও চরমোনাই পীরের মুরিদদের কাজে লাগান তিনি। এক লাখ টাকা সঞ্চয় রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা লাভ ও চার বছরে দ্বিগুণ-এমন অধিক মুনাফা দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করতেন। আবার ঋণ দিতেন চড়া সুদে। ‘হলমার্ক গ্রুপের’ মতো নাম ও প্যাডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মান্নান তালুকদারের ভিজিটিং কার্ডে লেখা হয়েছে, ‘ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, সাবিল গ্রুপ’। কার্ডে আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-অ্যাজাক্স জুট মিলস, সাবিল পেপার মিলস, সাবিল লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাবিল অটোমেটিক ব্রিক লিমিটেড, বাগেরহাট ট্রেডিং লিমিটেড, জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজ ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। সবই নাম ও সাইন বোর্ডসর্বস্ব। মান্নান তালুকদার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি জীবনে কখনো ঘুষ খাননি। শুধু চাকরির বেতনে সংসার চলবে না ও সৎ থাকা যাবে না এ ভাবনা থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি জমি কেনা শুরু করেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি থাকলে তিনি মরার পরে কী জবাব দেবেন?

উপরের তিনজনের দুজন নীতি থেকে সরিয়া আর একজন ইসলাম থেকে সরিয়া তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে বিত্তের পাহাড় গড়েছেন। শিক্ষাজীবনে কেউ ধারনাও করেনি তারা এতটা এগোতে পারবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কি জিনিস! তবে তাদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক যথাযথ শিক্ষা থাকতো তবে এর চেয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারো ধরার সাধ্য থাকতো না, কেউ কিছু বলতোও না। অনেক আমলা আছেন যারা বিত্তের পাহাড় দেশে নয় দেশের বাইরে রেখেছেন। কিন্তু তাদের বিষয়ে কেউ কোন দিন টু শব্দটাও করে না, করতে পারেওনি। এই সুযোগ সন্ধানী ধূর্ত দুর্নীতিবাজ হায়েনারা সবসময়ই সরকারী দলের লোক হিসাবে পরিচিত। সময় সময় সরকার পাল্টায় কিন্তু এরা কখনো দল পাল্টায় না। এদের দল একটাই, সেটা হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার!

আমি লেখার শুরুতে তাদের সমর্থনে কিছু কথা বলেছি! বলেছি তার কারনও আছে। আমরা জানি, সার্বজনীন দূর্গা পূঁজোর সময় দেবী দূর্গার সাথে অসুরও কিন্তু পূঁজো পায়। মেধাবীদের মূল্যায়নের সাথে এ ধরনের অতি মেধাবীদেরও কাজে লাগানো যায় কিনা ভেবে দেখার দরকার! এই অতি মেধাবীদের জাদুঘরে রেখেও দেখানো যেতে পারে তারা কি ছিলো! মানুষ দেখবে আর ঘৃণা ভরে তাদের ধিক্কার জানাবে, ভবিষ্যতে অন্যরা সতর্ক হবে, এমন কাজ করতে কিছুটা হলেও ভয় পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×