somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালি যেখানেই থাকে চরিত্র বদলায় না

২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বের দুইটি জায়গা বাঙ্গালি অধ্যুষিত। একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ আরেকটি ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বাংলা। এছাড়াও বিশ্বের অনেক এলাকায় বাঙ্গালি আছে তবে সেটা ছড়ানো ছিটানো। বিশ্বের সব জায়গায়ই বাঙ্গালি পাওয়া যাবে কমবেশি। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে। গর্ত করে মাটির তিনফুট নিচে গেলেও বিশেষ একটা এলাকার লোক পাওয়া যাবে যেখানে কিনা দেখা যাবে যে, সেই এলাকার লোক’ বসে আছে! এলাকার নামটা বলে আঞ্চলিক বিবাদ বাড়াতে চাই না। সাইবেরিয়ায় গেলেও একটু খোজাখুজির পর দেখা যাবে সেখানে বাঙ্গালি আছে, হয় ফুটপাতে চায়ের দোকান করছে নয় অন্য কিছু! বাঙ্গালি যেখানেই থাকুক তাদের চারিত্রিক কিছু বৈশিষ্ট আছে যা একদম মিলে যাবে। এখানে চারিত্রিক বৈশিষ্ট বলতে খারাপ বৈশিষ্ট বুঝাতে চাইনি। ভালো খারাপ যাই হোক সবই আছে।

দুইহাজার উনিশে শুরু হয়ে বিশ সালেও করোনা (কেভিড-১৯) ভাইরাস তার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। চীনের উহানে শুরু হয়ে এখন আর সংখ্যায় গুনে লাভ নেই, এক কথায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার বিস্তার হয় মানুষ থেকে মানুষে। সেই বিবেচনায় করোনা একটি প্রতিবন্ধী ভাইরাস! মানুষের সংস্পর্শে আসলে বা মানুষ তাকে একজায়গায় রেখে যায় সেখান থেকে অন্য কেউ তুলে নেয় এই আরকি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশ্বে যখন কোন ভ্যাকসিন বা ঔষধ তৈরী হয়নি তাই এর বিস্তার ঠেকাতে একটাই পথ বেছে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটা হলো মানুষ যেন মানুষের সংস্পর্শে কম আসে এবং বেশি বেশি হাত মুখ ধোয়। তাই দেশে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেছে। কেউ সেটাকে বলছে জনতার কারফিউ, কেউ বলছে লকডাউন, কেউ বলছে সেলফ কোয়ারেন্টিন। সার কথা হলো, যে যেই স্থানে আছেন সেখানেই থাকেন। আপনি যদি আক্রান্তও হন তবে বাড়িতে থেকে অন্যকে আক্রান্ত করা থেকে বিরত থাকলেন।

এই লকডাউন সিস্টেম পালনের ক্ষেত্রে দেশে দেশে ভিন্নতা দেখা গেছে। বেশির ভাগ দেশই পথে নিয়মিত বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। রাশিয়া নাকি রাস্তায় বাঘ-সিংহও নামিয়েছে! ঘরে ঢুকবে না কতোতে? উন্নত রাষ্ট্রগুলো জরিমানার প্রথা চালু করেছে। দুইশো ইউরো থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কোথাও কোথাও ধরে কোয়ারেন্টিনে রেখে দিয়েছে। আমাদের দেশের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এখানে জরিমানার চেয়ে ভিন্ন পথই বেছে নিয়েছে। আমাদের দেশের প্রধান ঔষধ হলো লাঠি। আমাদের দেশের পদ্ধতি পশ্চিম বাংলায়ও প্রয়োগ দেখছি!

লকডাউন প্রথা শুরুর পর থেকে বাঙ্গালিদের ঘরে ফেরাতে লাঠি থেরাপি ব্যবহার করতে দেখা গেছে অনেক জায়গায়। কলকাতার বাঙ্গালিদের ঘরে ফেরাতে পুলিশ রাস্তায় নেমে বেধরক পেটাতে দেখেছে দুনিয়াবাসী। একই রূপ বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের ঘরে ফেরাতে পুলিশ লাঠি ব্যবহার করেছে। কোথাও কোথাও বেধরক পিটিয়ে আহত করেছে। কলকাতায় জুয়ান বুড়া সবাইকে পিটানোর পাশাপাশি কানে ধরে উঠবস, মুরগি বানানো, রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ড্রামের মত চলতে বাধ্য করেছে পুলিশ। একই চিত্র বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের জন্যও করেছে। মাস্ক না পড়ার অপরাধে প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা বৃদ্ধ বাবার বয়সীদের কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে আবার নিজ মোবাইলে স্থিরচিত্র ধারণ করেছে। পুলিশ রাস্তায় নামা রিক্সা-ভ্যান চালকদের বেধরক পিটিয়ে পিঠে দাগ বসিয়ে রক্তাক্ত করেছে, রিক্সা ভেঙ্গে দিয়েছে, কান ধরিয়ে বসিয়ে রেখেছে।


লকডাউনের সময় যারা মারধরের, লাঞ্চনার, অপমানের শিকার হয়েছে তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ, অল্প শিক্ষিত, অসহায়, শ্রমজীবী শ্রেণীরই বেশি। যারা মারধর, লাঞ্চনা, অপমান করেছেন তারা বেশিরভাগই অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত থেকে শিক্ষিত বটে। আমাদের দেশ কাগজে কলমে, পরিসংখ্যানে যতটা ধণীক শ্রেণী মনে করা হয় আসলে বাস্তবতা ততটা নয়। এটা স্বীকার করুন আর না করুন, এটাই বাস্তবতা। আর এই কারনেই মিথ্যার অপর নাম পরিসংখ্যান। এখনও আমাদের দেশে মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, এক বেলা কাজ না করলে রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যেতে হয়। এই পরিস্থিতি দুই বাংলায়ই বিরাজ করছে। আমাদের এখনও প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বাড়ি হয়নি, বাড়ি বাড়ি আলাদা গাড়ি হয়নি, অনেকেরই ব্যাংক ব্যালেন্স বলতে যা আছে তা কোমড়ে লুঙ্গির ভাজে থাকে। সেই ব্যালেন্স একবার খাবার কিনলে আর থাকে না। কখনো সেই ব্যালেন্স দিয়ে পুরো সংসারের জন্য খাবারও জোটে না।

লকডাউন মানে সংবিধান স্থগিত নয়। লকডাউন মানে কারফিউ নয়। লকডাউনের মধ্যেও চাল-ডাল-নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা থাকবে, ঔষধের দোকান খোলা থাকবে, কাচামালের দোকান খোলা থাকবে। লকডাউনের মধ্যেও ক্ষুধা লাগবে, অসুস্থ হবে। তাই লকডাউনের সময় মানুষের বিশেষ প্রয়োজন হলে বের হবে। তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ দূরত্বে থেকে চলাফেরা করবে। একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব হতে হবে অন্তত এক মিটার। কেউ ঘর থেকে বের হলেই সে অতি উৎসাহী কেউ নাও হতে পারে। হাট-বাজারে আসা ব্যক্তিকে দেখা মাত্রই মারধর করা, লাঞ্চনা করা, অপমান করার আগে বিবেচনা করা উচিত কেন সে বের হয়েছে। সার্বিক বিবেচনা করে তাদের যৌক্তিক ভাবে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করতে হবে।

আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্তা-কর্মীরা দিন রাত পরিশ্রম করছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আমাদের পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনী, আনসার সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। তাদের রাতের নির্ঘুম পরিশ্রম ও নিরাপত্তা দান আমাদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়। তাদের শ্রমের কারনেই তারা জাতীয় বীর। প্রশাসনের লোকজন পরিশ্রম করছে। সারা দেশের অফিস আদালত যেখানে বন্ধ হয়ে আছে, কর্মীরা নিরাপদে বাড়িতে সময় কাটাচ্ছে সেখানে প্রশাসনের অনেক লোক রাত দিন কাজ করে যাচ্ছে, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ সেবার বিষয়টি সমন্বয় করছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু দেয়ার নেই আমাদের। কিন্তু এর মধ্যে দু’একজন অতি উৎসাহি কর্মকর্তা বা কর্মী নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শণ করে পুরো সিস্টেমটাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। এরা আসলে হাতে গোনা কয়েকজন। এক ঝুড়ি ভালো আমের মধ্যে একটা-দুটা পচা আম থাকলেই সব আমকে পচা বলা ঠিক হবে না। পচা আম ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। অতি উৎসাহি হয়ে করা কোন কাজই ভালো নয়। এমন সংকটের সময় আমাদের সকলের মানবিক হতে হবে, আন্তরিক হতে হবে। সকলেল আন্তরিক চেষ্টায়ই আমরা সংকট থেকে বাঁচতে পারবো।


চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা সত্যিকার অর্থেই জাতীয় বীর। এটা বিশেষ ভাবে ঘোষণা দেয়ার কিছু নেই। তারা জীবনের মায়া না করে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ভয়াবহ রোগ জীবানু ঘাটাঘাটি করছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের প্রতিও আমাদের নমনীয় ব্যবহার করা উচিত। আমরা আমাদের স্বজনদের জন্য অনেক সময় তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। আমরা একেকজন একেক স্বজন নিয়ে তাদের কাছে ভীর করি, একটু এদিক ওদিক হলে তাদের গুষ্ঠি উদ্ধার করি। কিন্তু তারাতো এক-দুজন নিয়ে কাজ করেন না। হাজার হাজার রোগী নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মনের অবস্থাটাও আমাদের বুঝতে হবে। অযথা দোষারোপ না করে বাস্তবতা বিবেচনা করে সকলের মানবিক হতে হবে।


মন্ত্রনালয় থেকে একটা বার্তা অলরেডি সকল জেলা প্রশাসনে পৌছে দেয়া হয়েছে। ‘কেউ যেন অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ না করেন। কেউ এ ধরনের আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আমরা ডিসিদের দিয়েছি। বলেছি, মনে রাখতে হবে তারা মাস্টার নয়, সেবক; তারা যেন জনগণের সেবা করেন।’ আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা একটা সংকটকাল পার করছি। এই সময়ে অতি উৎসাহ দেখিয়ে এমন কোন কাজ করা উচিত হবে না যা মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দেয়, ঘৃণার জন্ম দেয়। এই বিষয়টা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকলের এবং প্রশাসনের মনে রেখে কাজ করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের রক্ষা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×