মউকা মউকা
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ভয়ে জড়সড় রাহুল দ্রাবিড়। একটা একটা করে সিঁড়ি মাড়াচ্ছেন। একেকটা সিঁড়ি তাঁর কাছে এভারেস্ট মনে হচ্ছে। 'শালা, এর চেয়ে কার্গিল যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াও ভালো ছিল। বাঁশ দেওয়ার জন্য বোর্ড আমাকেই বেছে নিলো'? নিজেকে গালি দিচ্ছেন আর সিঁড়ি ভাঙছেন। অবশেষে কাংখিত রুমের সামনে দাঁড়ালেন। কলিং বেলে হাত রাখতে গিয়ে কেঁপে উঠলেন তিনি। হাত সরিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলেন। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার চেষ্টা। বড় বড় দলের বিরুদ্ধে এই আত্মবিশ্বাসেই বলিয়ান হয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন ঘনটার পড় ঘনটার, দিনের পড় দিন। এ জন্যই তিনি দ্যা গ্রেট ওয়াল, চিনের প্রাচির। নাহ! এতটুকো পিচ্চি ছেলে। সেই সাতের বিশকাপেও ঠিক মত দাড়ি গোঁফ গজায়নি। এর কাছে ভয় পাবার কি আছে? নিকেলে শাসালেন।
কলিং বেল টিপতেই কাংখিত 'টিং টং' এর পরিবর্তে আওয়াজ আসলো 'হালুম হা-----লু-----মমমমম'।
এবার সত্যি সত্যিই কেঁপে উঠলেন সাবেক কাপ্তান। বুকে থুঃথুঃ নিলেন। দরোজা খুলতে দেরি হচ্ছে। দ্বিতীয়বার বেল চাপার শক্তি সাহস কোনটাই নেই। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে অপেক্ষা করছেন...।
দরোজা খুলল বলিষ্ঠ এক যুবক। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চেহারায় পরিশ্রমের ছাপ কিন্তু চোখে মুখে ক্লান্তির বদলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনাবিল প্রশান্তি।
'আরে দাদা ভেতরে আসুন'। যুবকের কণ্ঠে আন্তরিকতার অভাব নেই।
'না, আমি ভেতরে আসবো না, শুধু একটা কথা বলতে এসেছি। তোরা তো ভাই ক্রিকেটে নতুন, তোদের দর্শকরাও মার্জিত, ভদ্র। খেলায় হারলে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কথা এখনো শোনা যায়নাই। আমাদের এমনই হয়। অনেকের ঘর সংসার ও ভেঙ্গে যায়। তোদের সেমিতে খেলা ওতটা জরুরী না। আইপিএল, ক্রিকেটারদের আর্চনা, আইসিসিতে আধিপত্য এতসব করার পড়েও যদি কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাই তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে একবার ভাব। এক ক্রিকেটারের কথা তো আরেক ক্রিকেটারকেই ভাবতে হবে তাই না? ভাই তোরা, বিশেষ করে তুই ১৯ তারিখে একটু খারাপ খেলবি, অন্যদেরও বলবি খারাপ খেলতে। যদি আমরা জিতে যাই কথা দিচ্ছি পরবর্তী আইপিএলে তোদের অনেক ক্রিকাটার নেব। তোদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কোন কথা বলবো না। প্লীজ ভাই, বুড়ো ভাইটার এই আবদার টুকো রাখ।'
চোখ বন্ধ করে ষোল কোটি মুখ একবার দেখে নিলেন ২৩ বছরের যুবক। ভাবছেন কি জবাব দেওয়া যায়।
যুবকের চোখ বন্ধ করা দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে কাপ্তানের। এই বুঝি টোপ গিলছে। 'শালা দু টাকার বাঙাল, টোপ না গিলে যাবি কই'?
যুবক চোখ খুললেন, মুখে কিছু বললেন না, মুষ্টি পাকান হাত থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি মুক্ত করলেন। ইশারা করলেন রুমের ভেতর।
মিস্টার পারফেক্ট এর চোখ যুবকের আঙুল অনুসরণ করলো। দেওয়ালে কয়েকটা ছবি টাঙ্গানো, প্রথমটায় দেখা যাচ্ছে, একজন তরুণী কাটাতারে ঝুলছে, পরনে তার লাল সালোয়ার। ব্লগে এই যুবতির ছবি দেখেন তিনি। নাম ফেলানি না কি যেন। পরের ছবিটা ফারাক্কা বাঁধের। এর পরেরটা ট্রানজিট, তার পরে ঝুলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটা স্টিল পিকচার। সবশেষে টিফাই মুখ বাঁধ। সবগুলা ছবির উপরে বড় করে দুইটা ছবি বাধানো। একটা সাদাকালো, সাদাকালো ছবিটায় লুঙ্গী পরা মাথায় গামছা বাঁধা, স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে চার পাঁচ জন তরুণ। হাঁতে রাইফেলের মাথায় বেয়োনেটে উরছে পতাকা। দেখেই বোঝা যায়, এরা একাত্তরের বীর সেনা। এরাই একটা দেশকে জন্ম দিয়েছে।
পাশের ছবিটা আর দেখতে পাচ্ছেন না রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। ঝাপসা চোখে মনে হচ্ছে সে ছবিটা সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের, একটু পড়েই মনে হল না ওটা মাশরাফির ছবি, চোখ মুছে ভালো করে তাকালেন, আরে নাহ এটাতো সাকিব, নাকি রুবেল? চোখের সামনে চেঞ্জ হচ্ছে ছবিটা।কখনো তামিম, কখনো মুশফিক। দেখা যাচ্ছে তাসকিন, সাব্বির, সৌম্য কেও।
রাহুল বুঝতে পারলেন তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম শুরু হয়েছে। সুস্থ থাকতেই কেটে পড়তে হবে...।