অনেক কষ্টে পিস্তলটা জোগাড় করেছে রুমি। সাথে একটা গুলি। একটা মাত্র। মিস হলে সেকেন্ড চান্স নাই। ঘুমন্ত স্বামীর কপালে ঠেকিয়ে টিগার টেনে দিতে হবে। ব্যাস! খেল খতম। পিস্তলটা একরাতের জন্য ভাড়া করতে বিশ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে রুমিকে। বদমাইশটা সাথে 'অন্যকিছু' চেয়েছিলো। সেটা দিলে দশ হাজার টাকায় পাওয়া যেত। রুমি রাজি হয়নাই। তাহলে তো স্বামীর অপবাদই সত্যি হয়ে যাবে। জীবনে যে দ্বিতীয় পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ার কথা মাথায় আনেনাই সে মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে কি করে এই পাপ করবে? এর চেয়ে ভালো দশ হাজার টাকাই যাক।
রুমির জীবনটা একটু অন্যরকম। সৎ মায়ের সহযোগিতায় পালিয়ে বিয়ে। হোটেলে বাসর কাটানো। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ফুটফুটে একটা সন্তান, সন্তান জন্মের পঁচিশ দিনের মাথায় স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে বেডে দেখা। সব মিলিয়ে ওর জীবনটা সপ্নের মত অগাছালো, হাইওয়ে রোডে বখাটে ছেলের বাইকের মত গতিময়।
টাকা-পয়সা, আদর-লালসা সবই ছিল জীবনে, একটু সুখ ছাড়া। স্বামীর বহুগামিতা নিয়ে কথা বলাতেই শুরু হল শারীরিক নির্যাতন। রুটি-ডিম ভাজি, ভাত-ডালের সাথে মার ও খেতে হয় প্রতিদিন। কোন একটা ছাড়া দিন পার হয়েছে গত দেড় বছরে এমন রেকোর্ড নাই। পতিতালয়য়ে বিক্রি, শারীরিক সম্পর্কের দৃশ্য ধারন করে নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি নতুন যোগ হয়েছে। শেষ রাতে মাতাল লোকটা যখন রুমির গায়ে হাত দেয় ঘেন্নায় গা রি রি করে ওঠে। মনে হয় অসংখ্য কেঁচো তার শরীরে নেচে বেড়াচ্ছে। মাতাল অলপতেই ঘুমিয়ে পড়ে। এর পর বেসিনে গিয়ে বমি করা রুমির প্রতিরাতের রুটিন।
স্বামীকে খুন করতে চাওয়ার এগুলো কোন কারন না। কারন হল ইদানিং রুমিকে না মেরে বাচ্চাটাকে বেশি মারা হচ্ছে। তাকে মারলে শুধু শারীরিক কষ্ট হয়, বাচ্চাটাকে মারলে শারীরিক মানুষিক, উভয় কষ্টের সীমা থাকেনা। সেদিন বাচ্চার দু পা ধরে দেওয়ালে আছার মারতে গিয়েছিলো উম্মাদের মত।
অনেক কষ্টে একটা পার্টির সন্ধান পেয়েছে রুমি। যারা আর্মস ভাড়া দেয়। আজ দুপুরেই নিয়ে এসেছে সেটা। স্বামীর মাথায় গুলি করে উত্তর পাশের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেবে। রাত তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পজ্জন্ত পার্টির লোক নিচে অপেক্ষা করবে। ফেলে দেওয়া আর্মস কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য। এরপর আপসেই পুলিশে ধরা দেবে রুমি। পুলিশকে বলবে পিস্তলটা ওর স্বামীরই ছিল। গুলি করে পূর্ব পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছে। ব্যাটা পুলিশ এবার পানি সেচে পিস্তল খোঁজ।
স্বামীর মৃদু নাক ডাকা শব্দে বুঝতে পারলো সে ঘুমিয়ে গেছে। বুক ধরফর করছে রুমির। হাত ঘামছে খুব।
উঠে পানি খেল, একটু হাঁটাহাঁটি করলো, টাওয়ালে হাত মুছে বালিশের নিচ থেকে বের করলো পিস্তলটা। লোড করাই ছিল। সেফটি ক্যাচ আনলক করে শক্ত করে ধরলো স্বামীর মাথার চার আঙ্গুল উপরে।
ঘুমন্ত মানুষটাকে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। মায়ার মুখে চটোপঘাত করলো রুমি। পাগলা কুত্তাকে মেরে ফেলতে হয়, নইলে তার আক্রমনে জলাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মারা যায় নিরীহ মানুষ। নিজেকে বোঝালো সে। চোয়াল শক্ত করে পিস্তল্টা আরেকটু নিচে নামিয়ে আনলো। পিস্তল আর স্বামীর কপালের মাঝে দুই আঙ্গুল ফাক। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো রুমির মনে একটুও পাপবোধ জন্ম নিচ্ছে না। বরং ধীরে ধীরে সাহস পাচ্ছে। দৃঢ় আঙুল রাখল টিগারে। চোখ বন্ধ করে টেনে দিলো।
'কিচ্চিক' করে একটা শব্দ হল। কোন বুলেটের আওয়াজ নেই, নেই রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন মগজ। বিস্ময়ে বিমুর হয়ে চোখ খুলল রুমি।
'মালটা বালিশের নিচে রেখে ঘুমিয়ে পরো, যার থেকে ভাড়া করেছো ও আমার বন্ধু। প্রায়ই একসাথে বাবা খাই। এ নিয়ে কাল কথা হবে'। বলেই নাক ডাকা শুরু করলো রুমির স্বামী।