থানা হাজতে আজ আমার দ্বিতীয় দিন সন্দেহজনক ঘোরাফেরার অপরাধে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হয়ে এখন মাদক মামলায় মোহাম্মদপুর থানা হাজতে আছি ।
প্রচন্ড গরমে ঘামে ভিজে শরীর চুপচুপে হয়ে একলাই ঠান্ডা হচ্ছে ।হাজতে ফ্যান থাকার কথা কিন্তু এর আগে এক আসামি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মারের হাত থেকে বাঁচতে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়েছিল যদিও কিছু কিছু সংবাদপত্রই লিখেছিলো অন্য কিছু এরপর থেকে নাকি ফ্যান খুলে ফেলা হয়েছে । যে দারোগা আমাকে ধরে এনেছেন উনি উনার নাম জাকির দারোগা ।কোর্ট এ চালানের সময় লিখেছিলেন চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ ও সফলতা হিসেবে আমার পকেটে গাঁজার পুড়িয়ে পাওয়া গেছে, যদিও গাঁজা কেন আমি জীবনে একটা সিগারেট ও টানি নাই তারপরেও দারোগা সাহেব যা লিখেছেন সেটাই সত্য উনার সাথে তো আমার ব্যাক্তিগত শত্রুতা নেই যে আইনের লোক হয়ে মিথ্যা কথা লিখবেন ।
অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে মাদকের উৎস সম্পর্কে জানা যাবে পাঁচ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন এই আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য বিচারক আমার দিকে তাকালেন , উস্কোখুস্কো চুলে আমাকে দেখে মনে হয় উনার একটু মায়া হলো রিমান্ড কমিয়ে দুইদিন করে দিলেন । হাজার হউক মহামতি বিচারক উনার দয়ার শরীর ।
রিমান্ডের শুরুতে জাকির সাহেব একটা বাঁশের লাঠি দিয়ে পায়ে এ পাছায় কয়েকটা বাড়ি দিলেন এরপর আমার মুখোমুখি বসলেন জিজ্ঞাসা করলেন তুই কি করিস? শরীরের ব্যথায় তুই তোকারি মনে কোনো দাগ ফেললো না বললাম স্যার বেকার, চাকুরী খুঁজছি পাই না তাই রাতে কাওরানবাজারে ট্রাক থেকে মাল নামাই আর দিনে একটা টিউশনি করি ।
তার মানে কুলির কাজ করিস তো এত দামি ফোন পেলি কোথায় ছিনতাই করা মাল নাকি ?
আমি মিথ্যা বললাম বললাম স্যার রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি । মিথ্যা বললাম যেন মালিকানা যাচাই করতে আবার লোপাদের বাসা পর্যন্ত আমার এই গাঁজার অপরাধের কথা না যায় ।আসলে ফোনটা আমার ছাত্রী লোপা আমাকে দিয়েছিলো ওর মামা নাকি আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছেন । দারোগা পুলিশ কে বিভ্রান্ত করা যায় না , জাকির দারোগা মুচকি হাসলেন বললেন তুই তো খুব সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে পারিস রে অভিনয় লাইনে গেলে কিছু করতে পারতি। যাক তোর কথাই রইলো ওটা মনে কর তোরকাছ থেকে আবার রাস্তায় হারিয়ে গেছে । আমি বুঝলাম ওটা ওনার পছন্দ হয়েছে আমি আর ফেরত পাবো না । দারোগা সাহেব পকেট থেকে ফোন টা বের করে সিম খুলে আমাকে সিমটা ফেরত দিলেন দয়ার শরীর না দিলেও তো পারতেন । বললেন এইবেপারে কাউকে কিছু বলিস না আমি বললাম জীবনেও বলবো না স্যার । উনি বললেন কাল তোকে চালান করে দেব কাউকে ধরে জামিন করে নিস, তোর কোনো পরিচিত উকিল আছে নাকি ? আমি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম ।আমার কাছে দারোগা সাহেব পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে দিলেন এরপর হাতের লাঠিটা রুমের একপাশে রেখে বের হয়ে গেলেন । চলবে -------
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৭