somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিজয় দিবস/ দিবস পালন কি হারাম?" হাদীসের আলোকে আলোচনা ও প্রোপাগান্ডার জবাব।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখানে আমি দুটো স্ক্রিনশট সংযোজন করেছি, এর ১ টিতে "ইসলামের দোহাই দিয়ে বিজয় দিবস পালন নিষিদ্ধ" বলা আছে, যার প্রতিবাদে আমি এর পূর্বে আমার পার্সোনাল এফবি আইডিতে ১টি পোস্ট করেছি।
এবং উক্ত পোস্টে আমার মত অনেকের প্রতিবাদের মুখে পোস্টদাতা তার ঐ পোস্ট সরিয়ে নেয় ও উক্ত আইডি থেকে "দিবস পালন করলে শিরক হয়" মর্মে আরেকটা পোস্ট দেয়, দুটো পোস্টের উদ্দেশ্যই এক, সেটা বুঝতে রকেট সাইন্স পড়া লাগে না।

আমি তার "দিবস পালন করলে শিরক হয় কি?" এর পোস্টে আমার আলোচনা মন্তব্য আকারে পোস্ট করি ও উক্ত আইডির প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করি, সেই আলোচনা এখানে দেয়া হল, ভেবে দেখুন, আলোচনা করুন, এই লেবাসধারীরা ইসলামকে যেভাবে ব্যাখ্যা করে আসলে ইসলাম সেটা কিনা?

আলোচনাঃ
“আবু ওয়াক্বিদ লাইছী (রাঃ) হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুনাইনের যুদ্ধে বের হলেন, তখন তিনি মুশরিকদের এমন একটি বৃক্ষের নিকট দিয়ে গমন করলেন, যাতে নিজেদের অস্ত্রসমূহ ঝুলিয়ে রাখত। উক্ত বৃক্ষটিকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ বলা হত। এটা দেখে কোন কোন নব্য মুসলিম বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ সমস্ত মুশরিকদের ন্যায় আমাদের জন্যও একটি ‘যাতু আনওয়াত্ব’ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! মূসা (আঃ)-এর কওম তাঁকে বলেছিল, আমাদের জন্য এরূপ মা‘বূদ নির্ধারণ করে দিন, যেরূপ ঐ কাফের সম্প্রদায়ের মা‘বূদ রয়েছে। তোমরাও তো সেরূপ কথা বলছো। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের পথ অনুসরণ করে চলবে, যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়ে গেছে’ (তিরমিযী, হা/২১৮০; মিশকাত, হা/৫৪০৮)।“

অত্র হাদীসের বর্ণনা মতে মুসা (আঃ) এর উম্মতেরা “মা’বুদ” চেয়েছিল, যা আরবি “ইলাহ” শব্দের সমার্থক। এই “ইলাহ বা মা’বুদ” দ্বারা আল্লাহকে বুঝায়; অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর উম্মতেরা শিরক করার অনুমতি ও বস্তু চেয়েছিল, স্পষ্টতই সেটা ইসলামের পবিত্র বিধানের লংঘন।

নব্য মুসলিমগন আল্লাহর নবীর নিকট “যাতু আনওয়াত্ব” এর অনুরুপ কিছু চেয়েছে, যেখানে “যাতু আনওয়াত্ব” হচ্ছে শিরকের ই নামান্তর। এবং সাধারণ জ্ঞানে ই বোঝার কথা, রসুলুল্লাহ (সঃ) এর বিরোধীতা করবেন। মূলত শিরক হতে পারে এরকম যেকোন কিছুকেই সিম্বলাইজ করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি এই হাদীস দ্বারা কোন ও দিবস পালনের ব্যাপারে কোন ও কথা বলেছেন কিনা?
তিনিতো দিবস বা উৎসবের ব্যাপারে কোনও কিছুই বলেন নি, সেখানে দিবস পালনের সাথে এই শিরক এর ব্যাপারটা কোত্থেকে আসলো?

আপনি/ আপনারা এর পরে ই নিয়া আসছেন, জাহিলিয়াতের যুগ হতে পালিত দুটো দিবস পালন বন্ধ করার প্রসংগ নিয়া।
এর মূল হাদীসটি নিম্নরুপঃ
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ ‏"‏ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ ‏"
মুসা ইবনে ইসমাঈল (রহঃ) ............ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্বীনায় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি দিন (নায়মূক ও মেহেরজান) খেলাধূলা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, এই দুইটি দিন কিসের? তারা বলেন, জাহেলী যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুইটি উত্তম দিন দান করেছেন এবং তা হল: কোরবানীর ঈদ এবং রোযার ঈদ।

When the Messenger of Allah (ﷺ) came to Medina, the people had two days on which they engaged in games. He asked: What are these two days (what is the significance)? They said: We used to engage ourselves on them in the pre-Islamic period. The Messenger of Allah (ﷺ) said: Allah has substituted for them something better than them, the day of sacrifice and the day of the breaking of the fast.

পড়ে দেখুন মূল হাদীসে বলা আছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুইটি উত্তম দিন দান করেছেন’ অথচ আপনি লিখেছেন, “তখন রাসূল (ছাঃ) সে দু‘টি দিনকে বাতিল করে মুসলিমদের জন্য দু‘টি দিন নির্ধারণ করলেন তাদের খেলাধুলা, আনন্দ ও যিকিরের জন্য” ।

কোন দিন পরিবর্তন করার ক্ষমতা মহানবী (সঃ) রাখেন কিনা? তিনি তো মাত্র আল্লাহপাক রব্বুল আলামীনের হুকুমের অনুসারী। আপনি সেখানে বলছেন “তখন রাসূল (ছাঃ) সে দু‘টি দিনকে বাতিল করে” এটা কি শিরক না?
শিরকের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে আইসা শিরক কইরা বইসা আছেন, নাকি?
আপনার এই মন্তব্যে অপরাধ দুইটা, এক, শিরক করছেন, দুই, হাদীস বিকৃত করে বর্ণনা করছেন।
وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না।
আপনি কোরানের এই অমোঘ বানীকে ও অমান্য করেছেন।

আবার মূল হাদীসে ফিরে আসি।
এই হাদীসে মহানবী (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুইটি উত্তম দিন দান করেছেন’, আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন, ইসলাম পূর্ব যুগের দুইটা দিনের পরিবর্তে নতুন দুইটা দিন উৎসবের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তিনি কোথাও ইসলাম পরবর্তী (মহানবী সঃ এর জীবদ্দশায়) সময়ের দিবস উদযাপনের বিষয়ে বলেন নি। যে কর্মকান্ডে শিরক করা হচ্ছে না, আল্লাহপাকের দ্বীনের বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে না, আল্লাহপাক তাকে নিষিদ্ধ করেন নি। আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন যেটা বলেন নি, সেটা আপনারা তার ই নামে চালিয়ে দিচ্ছেন!

জীব্রাইল (আঃ) কি আপনার/ আপনাদের নিকট ওহী নিয়া আসছে?
যদি না এসে থাকে, তবে নিজস্ব মতবাদ আল্লাহ ও তার পেয়ারের নবীজির নামে ছড়াইয়া ফিতনা সৃষ্টি কইরেনা না।

আরেকটা হাদীস দেখুন, আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী (সা.)-কে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর (প্রথম) ওহি অবতীর্ণ হয়…। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬২)

দেখুন মহানবী (সঃ) ও দিবস পালন করতেন, তিনি সেটা রোজা রেখে ই করতেন।
আর আপনারা সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, দিবস পালন করা হারাম!
আপনাদের সিদ্ধান্ত মতে মহানবী (সঃ) ও হারাম কাজ করতেন!
আস্তাগফিরুল্লাহ!

আচ্ছা, শেষ কথা, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি দেখলেই কি মাথা আউলাইয়া যায়?
ফতোয়া পয়দা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×