
আমি স্বাধীনতা চাইনি ::::
নয় মাসব্যাপী নারী,মদ, তাস নিয়ে ফুর্তিবাজ বিদেশফেরত বাবুজি মুক্তিযোদ্ধা হবে এটা আমি চাইনি। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিজ জীবন বিপন্ন করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা এনে দিয়ে,প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবহেলিত হবে এটা আমি চাইনি।স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান বীরশ্রেষ্ঠের পুত্র রাস্তার ফেরিওয়ালা! বীরশ্রেষ্ঠ-পুত্রের এমন করুন দশা হবে এটা আমি চাইনি।স্বাধীনতাযুদ্ধে অপরিমিত ভূমিকা রাখায় বিদেশি বন্ধুদের সম্মানার্থে, সম্মাননা ক্রেস্ট থেকে স্বর্ণ চুরি করে চোর উপধায় ভূষিত হওয়া, এটা আমি চাইনি। বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত বাংলাদেশে অবসরযোগ্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে চাকুরির বয়স সীমা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি ভোগ করবে, এটা আমি চাইনি।
বিজয় দিবসে গণ ভবনের বর্ণাঢ্য আয়োজন থেকে বীর প্রতিক অপমানিতের জ্বালা নিয়ে ফিরবে, বীর প্রতিকের এই বিমর্ষ বদন আমি দেখতে চাইনি। স্বাধীনতা দিবসে সেনানিবাসের জমকালো অনুষ্ঠানে বীর উত্তম সরকার প্রধানের অবজ্ঞার শিকার হবে,বীর উত্তম অবজ্ঞা প্রাপ্য? এটা আমি দেখতে চাইনি। স্বাধীনতার নামে সত্য মিথ্যা মিশ্রিত জাতীয় দৈনিককাগজের বিকৃত তথ্যপূর্ণ সংবাদ, এটা আমি দেখতে চাইনি। গণতন্ত্র পুনরোদ্ধারের নামে নিরীহ মানুষকে আগুনে ঝলসে দেয়,এই নিরপরাধ স্বাধীন নাগরিকের অগ্নিদগ্ধ পোড়া শরীর,এটা আমি দেখতে চাইনি। চোর,ডাকাত,সন্ত্রাস, গডফাদার, ধর্মদ্রোহী, মানবতা বিরোধী, রাজাকার,যুদ্ধাপরাধী,অশিক্ষিত মূর্খ,নামধারী বিজ্ঞানী ক্ষমতার মসনদে বসে যাচ্ছেতাই স্বেচ্ছাচারী করবে,এটা আমি দেখতে চাইনি।
প্রস্তাবিত সেতুর অর্থ আত্বসাৎকারী, জনগণের চূড়ান্ত দুশমন নির্লজ্জ মন্ত্রীর নির্লজ্জতা আমি দেখতে চাইনি। প্রকাশ্য দিবালোকে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে হাতেনাতে ধরা খাওয়া বেহায়া চোরমন্ত্রী, গৃহহীন মন্ত্রীর দম্ভপূর্ণ আচরণ আমি দেখতে চাইনি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব পাওয়ার মহানায়ক, দুর্নীতির বরপুত্র দলীয় প্রধান হবে আমি দেখতে চাইনি। মেয়াদ পূর্ন করে কৌশলে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা একনায়কের কিম্ভুতকিমাকার বদন আমি দেখতে চাইনি। পরিবার-পরিজন এবং দেশের প্রতি অশেষ অকৃত্রিম ভালোবাসা পরিত্যাগ করে,পরদেশে অক্লান্ত অমানুষিক পরশ্রমের ফসল প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনে অবৈধভাবে পুঞ্জিভূত হবে,আমি দেখতে চাইনি।
ভন্ড অসাধু সার ব্যবসায়ীর করতলগত হয়ে সারের দাম রাতারাতি দিগুণ, ত্রিগুণ, চতুর্গুণ হবে। আর অকিঞ্চন চাষা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষেতের আইলে বসে চাপা কন্ঠে কান্না করবে। দরিদ্র চাষার এই কান্নার আওয়াজ আমি শুনতে চাইনি। দুর্নীতিবাজদের কালোটাকায় গড়ে উঠা অপরিকল্পিত বহুতল ভবন ধসে অগণিত শ্রমিক নিহত হবে। আর নিহত শ্রমিক-স্বজনদের আজীবন অবিরাম শোক কান্নার করুণ সুর আমি শুনতে চাইনি। গণতান্ত্রিক অধিকার হরতালের নাম করে, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলগুলোর ককটেল বোমার কানফাটানো ভয়ানক বিকট আওয়াজ আমি শুনতে চাইনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত অতি আবাল চেতনাবাজদের আঁতলামো, আদিখ্যেতা, ন্যাকামো, ভাঁড়ামো, ভণ্ডামো, সত্য-মিথ্যার প্রলেপ,বিকৃত ইতিহাস এবং কুরুচিপূর্ণ স্তুতিমূলক স্তবগান আমি শুনতে চাইনি। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে যুদ্ধাপরাধী সমর্থক গণের নিন্দিত, ঘৃণ্য শ্লোগানের শব্দদূষণ আমি শুনতে চাইনি।
আস্তিক,নাস্তিক,বামপন্থী -মানবতাবিরোধী,যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার বিষয়ে নিরর্থক তর্কে আমরা বিভাজিত হব, স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের এই মনস্তাত্ত্বিক ভঙ্গুর রূপ আমি দেখতে চাইনি। বহির্বিশ্বের সশস্ত্র আক্রমণ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী সেনা অফিসারের বাংলাদেশেই গণকবর আমি দেখতে চাইনি।আমার দেশের উদ্যমী, পরিশ্রমী যুবক ভিটেমাটি বিক্রি করে অভিবাসী হয়ে ইউরোপের দ্বারস্থ হবে ও মায়ানমারের জঙ্গলে গণকবরে ঠাই পাবে, এটা আমি দেখতে চাইনি। অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবারের বৈধ পন্থায় স্বোপার্জিত অর্থ লোপাট করা, শয়তানের শশ্রুমন্ডিত বিভৎস্য সুফি চেহারা আমি দেখতে চাইনি। অসংখ্য নারীর সম্ভ্রম আর অগণিত দেশপ্রেমীর রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান বিদেশীদের চরণ চাটবে,এইসব উজিরের কুর্নিশ মার্কা প্রভুভক্তি আমি দেখতে চাইনি।
প্রতিটা নামধারী গণতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের পুঁথি, গল্প,অমরকাব্য,বীরত্বকাব্য, শোককাব্য, শৌর্যবীর্যের অশ্রুতপূর্ব ধারাবাহিক গল্পগুজব শোনানো হয়েছে। কিন্তু এই মহামান্যরা ছাড়াও আরও যারা স্মরণীয় বরণীয় ছিল এবং আছে তাদের বীরত্বকাব্য আমাকে শোনানো হয়নি। গণতন্ত্রের মহান দিকপাল অমুক তমুক নেতাদের কারাগারমুক্ত দিবসের অশ্রাব্য মাহাত্ম্যকাহিনী আমাকে শোনানো হয়েছে। কিন্তু খাঁটি দেশপ্রেমিক,কবি,সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, কলামিস্ট, সাংবাদিক,আলেমগণ অদ্যাবধি কারান্তরীণ কেন?তা আমাকে শোনানো হয়নি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ অবধি যতগুলো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, প্রত্যেকটা দলই আমাদের অধিকার হরণ করে সর্বোচ্চ স্বৈরাচারী করেছে কেন। তা আজও আমাদের কাছে রহস্যজনকভাবে অজ্ঞাত।
সুতরাং,ইসলামী সংগীত শিল্পী আইনুদ্দিন আল আজাদের গানের ভাষায় নির্ভয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই।
স্বাধীনতা চাইনি আমি এই স্বাধীনতা,
স্বাধীনতা পাইনি আমি সেই স্বাধীনতা।
যাহা চেয়েছি তাহা পাইনি আর
পেয়েছি যাহা তাহা চাইনি।
তাইতো আমি বিপ্লবী আর কথাগুলো বে-আইনি।
মূল ঃ আল আমীন ইবনে শফিক
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




