একবার।
দুইবার।
তিনবার।
নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে খালেদা মুচকি হাসলো। ভাবলো সেও মিসকল দিবে। কিন্তু কী ভেবে জানি ফোন করে বসলো।
ফোন রিসিভ করেই ওপাশে হাসির মাতম। হাসি থামিয়ে হাসিনা বলে
- কী গো বইন ডরাইছো?
- না, ডরামু ক্যান। তুমি মনে করছো তোমার নম্বর আমি জানি না?
- নম্বর জানলে ফোন করো না ক্যান?
- এই তো করলাম।
- হ করলা... আমি মিসকল দিলাম বইলাই তো করলা।
- মিসকল দিলে কী সবাই কলব্যাক করে কও? তোমার নম্বর দেইখাই কল ব্যাক করলাম।
-যাউক আর কথা বাড়াইও না আছো ক্যামন? হাসিনা জিজ্ঞেস করে।
খালেদা কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে - ভালো থাকতে আর দিলা কই কও, কীসব সংস্কার-ফংস্কার নিয়া গ্যাঞ্জাম শুরু করছো, শেষের ক'টা দিন শান্তিতে থাকবার দিছো?
- শুনো বইন, রাইত বিরাতে ফাউল কথা কইও না। বিলাই শুনলেও হাসবো। প্রথম যদি আমার কথার গুরুত্ব দিতা, তাইলে আইজ আর এরকম হইতো না।
- অই, কী কইলা? আমার কথা শুনলে বিলাই হাসবো? বিলাই হাসবো? আর তোমার কথা শুনে তো জগৎ হাসে, ঐটা বুঝো?
- মুখ সামলাও কইলাম...
- তুমি মুখ সামলাও...
- তুমি
- তুমি
- তুমি তুমি
- তুমি তুমি তুমি - - - -
(টেলিফোনে - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। তারপর অপারেটরের আওয়াজ - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের কলটি স্থগিত করা হলো। অনূগ্রহপূর্বক দুই মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর কল অ্যাকটিভেটেড হবে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে - পরবর্তী সংঘাতমূলক আলোচনার জন্য কল পাঁচ মিনিট স্থগিত করা হবে। ধন্যবাদ।)
দুই মিনিট পর লাইন রি-কানেক্টেড।
- হ্যালো।
- হ্যালো। আছো তাইলে। হাসিনা জিজ্ঞেস করে।
- হুম আছি। শোন - পলিটিক্স বাদ দাও। আসো অন্য কথা কই।
- ঠিক কইছো বইন। তো আছো ক্যামন? শরীর ভালো? পায়ের ব্যাথার কী অবস্থা?
- আর কইওনা। মাঝে মাঝে খুব ব্যাথা করে। ডাক্তার পেইন কিলার দিছে। খাইতে মন চায় না। তারাবীর নামাজ পড়ার পর হাল্কা পাতলা ব্যাথা করে।
- অসুদ-পত্র ঠিকমতো খাও। আলসেমী কইরো না।
- এইবার তোমার কথা কও। কানের কী অবস্থা?
- এখনো পুরাপুরি ভালো হয় নাই। মাইকের আওয়াজে প্রবলেম হয়। মাঝে মাঝে ঝিঝি শব্দ শুনি।
- ঈদের ছুটিতে বিদেশে গিয়া ডাক্তার দেখায়ে আসো। এরপর ইলেকশনের ঝামেলা শুরু হইলে সময় পাইবা না।
- হঅ আমিও তাই ভাবছিলাম। দেখি কী হয়।
হাসিনা এবার প্রসংগ পালটায়।
- ভাবতেছি একটা একটেল জয় প্যাকেজ নিবো। তোমারে জয় পার্টনার করবো। কথা কইতে খরচ কম পড়বো।
- ভালো হইবো। আচ্ছা, তোমার ছেলে জয় কেমন আছে?
- আছে, ভালোই আছে।
- ভালো থাকলো ক্যামনে? পেপারে তো দেখি সব আজব খবর। একদিন দেখলাম ক্রিস্টিনারে ডিভোর্স দিবো, মিশরীয় কোন মাইয়ার লগে নাকি নতুন সম্পর্ক হইছে। পরদিন শুনলাম আবার তুমি দাদী হইবা।
- তোমার এই এক দোষ। পেপারে যা লিখে সব বিশ্বাস করো। অন্যের পোলার কী হইছে খবর না নিয়া নিজের পোলার দিকে তাকাও।
- কী হইছে? আমার পোলা কী করছে? আমার পোলা দেশেই আছে। আমি তো খারাপ কিছু দেখি না।
- নিজে না দেইখা পাবলিক কি কয় ওগুলাও একটু শুনো।
- আমার শুনতে হইবো না। আমার পোলা তো আর তোমার পোলার মতো বিদেশী মাইয়া গো লইয়া...
- হিসাব কইরা কথা কও কইলাম। তুমি কিন্তু আমার কইলজ্যার ভিতর হাত দিতেছো।
- তুমিও আমার কইলজ্যা নিয়া টানাটানি করতাছো।
- তুমিই তো শুরু করলা।
- আমি করছি? নাকি তুমি?
- তুমি
- তুমি
- তুমি - তুমি
- তুমি - তুমি - তুমি
(টেলিফোনে আবার - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। ...অপারেটরের ঘোষণা - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের কলটি স্থগিত করা হলো। অনূগ্রহপূর্বক পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর কল অ্যাকটিভেটেড হবে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে - পরবর্তী সংঘাতমূলক আলোচনার জন্য আপনাদের ফোন কানেকশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হবে। ধন্যবাদ।)
পাঁচ মিনিট পর লাইন রি-কানেক্টেড।
- হ্যালো।
- হঁ্যা, শোনো - পলিটিক্সের কথা আর কইওনা। এইবার লাস্ট চান্স।
- আমিও ঐটাই ভাবছিলাম। হাসিনা জবাব দেয়।
- ঈদে কী করবা?
- কী আর করবো। ঘরেই থাকবো। টিভি চ্যানেলগুলায় ভালো প্রোগ্রাম আছে। দেখতে হবে।
- ভালো কথা মনে করাইচো। সুন্দর কোন প্রোগ্রাম দেখলে আমারে এসএমএস দিয়া জানাইও।
- আচ্ছা। ঈদের কেনাকাটা করা শেষ?
- টুকটাক কিনছি। আমি তো আবার শিফন ছাড়া অন্য কিছু তেমন লাইক করি না। আচ্ছা বইন, তোমারে একখান কতা জিগাই।
- কও।
- হাসবা না তো?
- হাসবার হইলে হাসুম না?
- ঠাট্টা করলা?
- আচ্ছা হাসুম না। কও কী কতা।
- 2001 এর ইলেকশনের দিন তুমি একখান শাড়ি পড়ছিলা, খেয়াল আছে - নৌকা প্রিন্ট করা...
- হুম আছে। ক্যান কী হইছে?
- না মানে - কোত্থেকা কিনছিলা? আমিও ভাবছিলাম ধানের শীষ প্রিন্ট করা এইরকম একটা শাড়ি কিনমু।
- ও এই কথা? ঐগুলান তো রেডিমেট পাওয়া যায় না। অর্ডার দিতে হয়।
- কোন কোম্পানী?
- থাক, ভাইবো না। তুমি যখন কইচো - আমি তোমার জন্য ধানের শীষ প্রিন্টঅলা ক'খান শাড়ী অর্ডার দিমু। তোমারে আমার ঈদ গিফট। ঈদের আগের দিন পৌঁছায়া দিমু। কাউরে কইও না বইন।
- ঠিক আছে, কাউরে কমু না। তয় আমি কইলাম তোমার জন্য ঈদে আমার রান্না করা সেমাই পাঠামু। ফিরাই বা না তো?
- আচ্ছা ফিরামু না।
- এইটাও কাউরে কইও না।
- আচ্ছা কমু না। কিন্তু বইন, আমি ভাবছিলাম অন্য কথা।
- ক্যান, কী হইছে?
- না মানে, ঐ যে শাড়ী কোম্পানিটা। ঐটা কুফা কোম্পানী। গতবার ইলেকশনের দিন ওদের বানানো শাড়ী পইরা কুফা লাগছিল। কী হারা হারলাম।
- ধুররো, কী যে কও। শাড়ী কী আর ভোট আনে? ভোট আনে উন্নয়ন। দেইখো, এইবারও আমাদের চারদল ক্ষমতায় আইবো।
- বেশি স্বপন দেইখোনা, পরে পস্তাইবা। নাজিম কামরানের রিপোর্ট পড়ছো?
- ঐসব হিসাব পাবলিক খাইবো না। আর আমি পস্তাইবো? হা হা... তোমার আরো কঠিন দিন আসতাছে। রেডি থাইকো।
- কী কইলা, আমার কঠিন দিন? আসলে তোমার কঠিন দিন আসতাছে।
- তোমার
- তোমার তোমার
- তোমার তোমার তোমার
- তোমার তোমার তোমার তোমার ...
(টেলিফোনে আবারো - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। ...অপারেটরের ঘোষণা - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের ফোন কানেকশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলো। আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত।)
(কাল্পনিক)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


