somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাহাদের ঈদী ফোনালাপ

১০ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত বারোটার দিকে হঠাৎ মিসকল।
একবার।
দুইবার।
তিনবার।
নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে খালেদা মুচকি হাসলো। ভাবলো সেও মিসকল দিবে। কিন্তু কী ভেবে জানি ফোন করে বসলো।
ফোন রিসিভ করেই ওপাশে হাসির মাতম। হাসি থামিয়ে হাসিনা বলে
- কী গো বইন ডরাইছো?
- না, ডরামু ক্যান। তুমি মনে করছো তোমার নম্বর আমি জানি না?
- নম্বর জানলে ফোন করো না ক্যান?
- এই তো করলাম।
- হ করলা... আমি মিসকল দিলাম বইলাই তো করলা।
- মিসকল দিলে কী সবাই কলব্যাক করে কও? তোমার নম্বর দেইখাই কল ব্যাক করলাম।
-যাউক আর কথা বাড়াইও না আছো ক্যামন? হাসিনা জিজ্ঞেস করে।
খালেদা কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে - ভালো থাকতে আর দিলা কই কও, কীসব সংস্কার-ফংস্কার নিয়া গ্যাঞ্জাম শুরু করছো, শেষের ক'টা দিন শান্তিতে থাকবার দিছো?
- শুনো বইন, রাইত বিরাতে ফাউল কথা কইও না। বিলাই শুনলেও হাসবো। প্রথম যদি আমার কথার গুরুত্ব দিতা, তাইলে আইজ আর এরকম হইতো না।
- অই, কী কইলা? আমার কথা শুনলে বিলাই হাসবো? বিলাই হাসবো? আর তোমার কথা শুনে তো জগৎ হাসে, ঐটা বুঝো?
- মুখ সামলাও কইলাম...
- তুমি মুখ সামলাও...
- তুমি
- তুমি
- তুমি তুমি
- তুমি তুমি তুমি - - - -
(টেলিফোনে - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। তারপর অপারেটরের আওয়াজ - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের কলটি স্থগিত করা হলো। অনূগ্রহপূর্বক দুই মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর কল অ্যাকটিভেটেড হবে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে - পরবর্তী সংঘাতমূলক আলোচনার জন্য কল পাঁচ মিনিট স্থগিত করা হবে। ধন্যবাদ।)

দুই মিনিট পর লাইন রি-কানেক্টেড।
- হ্যালো।
- হ্যালো। আছো তাইলে। হাসিনা জিজ্ঞেস করে।
- হুম আছি। শোন - পলিটিক্স বাদ দাও। আসো অন্য কথা কই।
- ঠিক কইছো বইন। তো আছো ক্যামন? শরীর ভালো? পায়ের ব্যাথার কী অবস্থা?
- আর কইওনা। মাঝে মাঝে খুব ব্যাথা করে। ডাক্তার পেইন কিলার দিছে। খাইতে মন চায় না। তারাবীর নামাজ পড়ার পর হাল্কা পাতলা ব্যাথা করে।
- অসুদ-পত্র ঠিকমতো খাও। আলসেমী কইরো না।
- এইবার তোমার কথা কও। কানের কী অবস্থা?
- এখনো পুরাপুরি ভালো হয় নাই। মাইকের আওয়াজে প্রবলেম হয়। মাঝে মাঝে ঝিঝি শব্দ শুনি।
- ঈদের ছুটিতে বিদেশে গিয়া ডাক্তার দেখায়ে আসো। এরপর ইলেকশনের ঝামেলা শুরু হইলে সময় পাইবা না।
- হঅ আমিও তাই ভাবছিলাম। দেখি কী হয়।

হাসিনা এবার প্রসংগ পালটায়।
- ভাবতেছি একটা একটেল জয় প্যাকেজ নিবো। তোমারে জয় পার্টনার করবো। কথা কইতে খরচ কম পড়বো।
- ভালো হইবো। আচ্ছা, তোমার ছেলে জয় কেমন আছে?
- আছে, ভালোই আছে।
- ভালো থাকলো ক্যামনে? পেপারে তো দেখি সব আজব খবর। একদিন দেখলাম ক্রিস্টিনারে ডিভোর্স দিবো, মিশরীয় কোন মাইয়ার লগে নাকি নতুন সম্পর্ক হইছে। পরদিন শুনলাম আবার তুমি দাদী হইবা।
- তোমার এই এক দোষ। পেপারে যা লিখে সব বিশ্বাস করো। অন্যের পোলার কী হইছে খবর না নিয়া নিজের পোলার দিকে তাকাও।
- কী হইছে? আমার পোলা কী করছে? আমার পোলা দেশেই আছে। আমি তো খারাপ কিছু দেখি না।
- নিজে না দেইখা পাবলিক কি কয় ওগুলাও একটু শুনো।
- আমার শুনতে হইবো না। আমার পোলা তো আর তোমার পোলার মতো বিদেশী মাইয়া গো লইয়া...
- হিসাব কইরা কথা কও কইলাম। তুমি কিন্তু আমার কইলজ্যার ভিতর হাত দিতেছো।
- তুমিও আমার কইলজ্যা নিয়া টানাটানি করতাছো।
- তুমিই তো শুরু করলা।
- আমি করছি? নাকি তুমি?
- তুমি
- তুমি
- তুমি - তুমি
- তুমি - তুমি - তুমি
(টেলিফোনে আবার - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। ...অপারেটরের ঘোষণা - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের কলটি স্থগিত করা হলো। অনূগ্রহপূর্বক পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর কল অ্যাকটিভেটেড হবে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে - পরবর্তী সংঘাতমূলক আলোচনার জন্য আপনাদের ফোন কানেকশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হবে। ধন্যবাদ।)

পাঁচ মিনিট পর লাইন রি-কানেক্টেড।

- হ্যালো।
- হঁ্যা, শোনো - পলিটিক্সের কথা আর কইওনা। এইবার লাস্ট চান্স।
- আমিও ঐটাই ভাবছিলাম। হাসিনা জবাব দেয়।
- ঈদে কী করবা?
- কী আর করবো। ঘরেই থাকবো। টিভি চ্যানেলগুলায় ভালো প্রোগ্রাম আছে। দেখতে হবে।
- ভালো কথা মনে করাইচো। সুন্দর কোন প্রোগ্রাম দেখলে আমারে এসএমএস দিয়া জানাইও।
- আচ্ছা। ঈদের কেনাকাটা করা শেষ?
- টুকটাক কিনছি। আমি তো আবার শিফন ছাড়া অন্য কিছু তেমন লাইক করি না। আচ্ছা বইন, তোমারে একখান কতা জিগাই।
- কও।
- হাসবা না তো?
- হাসবার হইলে হাসুম না?
- ঠাট্টা করলা?
- আচ্ছা হাসুম না। কও কী কতা।
- 2001 এর ইলেকশনের দিন তুমি একখান শাড়ি পড়ছিলা, খেয়াল আছে - নৌকা প্রিন্ট করা...
- হুম আছে। ক্যান কী হইছে?
- না মানে - কোত্থেকা কিনছিলা? আমিও ভাবছিলাম ধানের শীষ প্রিন্ট করা এইরকম একটা শাড়ি কিনমু।
- ও এই কথা? ঐগুলান তো রেডিমেট পাওয়া যায় না। অর্ডার দিতে হয়।
- কোন কোম্পানী?
- থাক, ভাইবো না। তুমি যখন কইচো - আমি তোমার জন্য ধানের শীষ প্রিন্টঅলা ক'খান শাড়ী অর্ডার দিমু। তোমারে আমার ঈদ গিফট। ঈদের আগের দিন পৌঁছায়া দিমু। কাউরে কইও না বইন।
- ঠিক আছে, কাউরে কমু না। তয় আমি কইলাম তোমার জন্য ঈদে আমার রান্না করা সেমাই পাঠামু। ফিরাই বা না তো?
- আচ্ছা ফিরামু না।
- এইটাও কাউরে কইও না।
- আচ্ছা কমু না। কিন্তু বইন, আমি ভাবছিলাম অন্য কথা।
- ক্যান, কী হইছে?
- না মানে, ঐ যে শাড়ী কোম্পানিটা। ঐটা কুফা কোম্পানী। গতবার ইলেকশনের দিন ওদের বানানো শাড়ী পইরা কুফা লাগছিল। কী হারা হারলাম।
- ধুররো, কী যে কও। শাড়ী কী আর ভোট আনে? ভোট আনে উন্নয়ন। দেইখো, এইবারও আমাদের চারদল ক্ষমতায় আইবো।
- বেশি স্বপন দেইখোনা, পরে পস্তাইবা। নাজিম কামরানের রিপোর্ট পড়ছো?
- ঐসব হিসাব পাবলিক খাইবো না। আর আমি পস্তাইবো? হা হা... তোমার আরো কঠিন দিন আসতাছে। রেডি থাইকো।
- কী কইলা, আমার কঠিন দিন? আসলে তোমার কঠিন দিন আসতাছে।
- তোমার
- তোমার তোমার
- তোমার তোমার তোমার
- তোমার তোমার তোমার তোমার ...
(টেলিফোনে আবারো - টুট, টুওট, টুট, টুওট, টুট, টুওট, পিট পিট শব্দ। ...অপারেটরের ঘোষণা - 'সংঘাতমূলক কথা বলার জন্য আপনাদের ফোন কানেকশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলো। আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত।)

(কাল্পনিক)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১১:৩৯
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×