somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাক পতাকার ছায়ায়

১২ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দর্জি বলেছিল রাজশাহী সিল্কের কাপড় দিবে। প্রথমে হাতে নিয়ে খানিকটা খটকা লেগেছিল। তবুও পতাকাটা যখন দু'হাতে জড়িয়ে ধরে ঘ্রাণ নিলো, তখন দেলুমিয়ার মনটা অন্যরকম হয়ে যায়। আজ সকালে ছাদের উপর পতাকাটা উড়িয়ে অনেকক্ষণ মুগ্ধ মনে তাকিয়ে ছিল সে। মনে পড়ে শৈশব-কৈশোর। দেখেই মনটা ভরে যায় - সবুজ জমিনে চাঁদ তারার ঝিলিক। আহ! পতাকাটা যদি সারা বছর এভাবে ওড়ানো যেতো! তবুও চার বছরে সুযোগটা একবারই আসে। মাস দুয়েক পতাকা ওড়ে। মনের ভেতর রোশনাই জাগে তখন, গুণগুণ করে সারাদিন - পাকসার জমিন সাদবাদ। দেলুমিয়া বাজারে বাজারে তাবিজ বেচতো। কী সব দিন ছিল তখন। টোটকা অসুদের রমরমা কাস্টোমারদের এটা-ওটা বলে বটিকা ধরিয়ে দেওয়া...। এখন দেলুমিয়া বুঝতে পারে - তার নূরানী চেহারায় সারল্যের মাঝেও সেলসম্যানশিপের বাহার ছিল। নইলে দেশের এত্তো মানুষকে ম্যানেজ করে এমন পজিশনে কীভাবে আসা যায়! এসব ভাবতে ভাবতে দেলুমিয়ার ক্লান্তি আসে। ছাদে পানির ট্যাংকির ছায়ায় ইজি চেয়ারে বসে দৈনিক সংগ্রামে চোখ বুলাচ্ছিল দেলুমিয়া।

ক্রিকেট খেলাটা প্রথম একটু একটু বুঝে বিরান্নব্বইয়ে। সেবার কী খেললো পাকিস্তান! খেলা শেষ হওয়ার পর বনানীর কাকলী মোড়ের দোকান থেকে দেলুমিয়া ইমরান খান আর ওয়াসিম আকরামের পোস্টার কিনেছিল, এখনো ঝুলছে বেডরুমে। এখন আরো নতুন নতুন প্লেয়ার এসেছে, কী জোয়ান তাগড়া শরীর! দেখতেই মন ভালো হয়ে যায়। দেলুমিয়া ভাবে - ক্রিকেট খেলা হইলো জমিদারের খেলা। ডাল-ভাত খাওয়া বাঙ্গালের জন্য এ খেলা আসে নাই। তবুও মনে পড়ে নিরানব্বইয়ে হেরে যাওয়ার কথা। পাকিস্তান কী ফালতুই না খেললো সেদিন। জেতার পর মহল্লার বখাটে পোলাপান দেলুমিয়ার জানালায় ঢিল ছুড়েছিল, হৈ-হুল্লা করে কী কীসব মিছিলও দিয়েছিল - একাত্তরের দালালরা হুশিয়ার সাবধান...। দেলুমিয়া ভেবেছিল সে রাতে বের হয়ে দেখবে কে কী বলে। কিন্তু ছোটবিবি ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। দেলুমিয়ার মনে পড়ে - এরপর অনেকদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে জিতেনি। কে জানে - হয়তো দেলুমিয়ার শাপ লেগেছিল ঢিলছোড়া পাজিদের উপর। পরমকরূণাময় তাই এ জাতের আনন্দ বরাত তুলে নিয়েছিলেন! নাহ্! দেলুমিয়া নিজেকে তো অতো কামেল মনে করে না। তার শাপে এমন হওয়ার কথা না। ভাবতে ভাবতে সংগ্রামটা চোখের উপর রেখে ঝিমিয়ে পড়ে, মাথাটা হাল্কা হয়ে আসছে...।


হঠাৎ সামনে তালুকদার এসে দাঁড়ায়। দেলুমিয়া চমকে উঠে - 'তালুকদার! তুই কোত্থেকে?'
তালুকদার হাসি দেয় - 'পাকিস্তানের পতাকা ঝুলাইছোস ক্যান?'
- তোর সমস্যা কী?
- স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা উড়বো ক্যান?
- ঐটা তোরে কওন লাগবো? তোর মন চাইলে তুই ওয়েস্টিন্ডিজের পতাকা লাগা, আফ্রিকার পতাকা লাগা, তোর আব্বা ইন্ডিয়ার পতাকা লাগা। মানা করছে কে?
তালুকদার শীতল গলায় বলে - 'মানা তো কেউ করে নাই, দেল্লা! বাংলাদেশের পতাকা কই?'
এটা বলে তালুকদার তার হাত দিয়ে লম্বা বাঁশের উপর থেকে পতাকাটা টান মেরে ছিড়ে ফেলে। দেলুমিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে তালুকদারের হাত দুটো অনায়াসে লম্বা হয়ে গেলো - দশ হাত, বিশ হাত কিংবা তারও বেশী!
এবার দেলুমিয়া চিৎকার করে - তালুকদার, হারামী করবি না, খবরদার। তোরে না আমি পাড়ের হাঁটের ক্যাম্পে শেষ করছিলাম, তুই আবার আসলি ক্যামনে?
তালুকদার শুনে হো হো করে হাসে। বলে - আমরা কখনো মরি না, দেল্লা। আমরা কখনো মরি না।

তালুকদারের দিকে তেড়ে যেতেই দেলুমিয়ার ঘুম ভেঙে যায়! ধড়পড় করা বুকে সাহস আসে। ধ্যুত, ছত্রিশ বছর পর তালুকদার আসবে কীভাবে! ঢোক গিলে চোখ কচলে দেখে মার্চ মাসের বাতাসে পতপত করে উড়ছে তার পেয়ারের পতাকা। বেলা বেড়েছে খানিকটা। স্বপ্নে তালুকদার এসে কী ভয়ই না লাগিয়ে গেলো! ছাদের কার্ণিশে এসে দাঁড়ায় দেলুমিয়া। পাশের বাড়ীর ছাদের উপরও উড়ছে পাকিস্তানের পতাকা। ও বাসার কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেগুলো খুব আদব জানে।

তালুকদার কখনো সত্যি সত্যি ফিরে এলে ওদের ডাক দেয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ১১:৪২
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×