হঠাৎ করে ঘুম ভাঙলে যে অবস্থা হয়, পুরো
পৃথিবীকে আবার নতুন চেহারায় দেখতে হয়। ঘুম এক
প্রকার সাময়িক বিরতি। এসময় মানুষের সাথে
পৃথিবীর কোন যোগাযোগ থাকে না।এই অল্প সময়ে
অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে পৃথিবীতে। আপনার
আধ-খাওয়া কলা কেউ খেয়ে নিতে পারে, আপনার
ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন হঠাৎ জোড়া লেগে যেতে
পারে, এতদিনের সম্পর্কের প্রেমিকা অন্য কারো
হাত ধরে চলেও যেতে পারে। হয়ত ঘুম থেকে উঠে
শুনবেন, এবছর শান্তিতে আপনি-ই হলেন নোবেল
বিজয়ী।এই কিছুক্ষণে কারো মৃত্যু ঘটে যাওয়াও
অস্বাভাবিক কিছু নয়।
.
রিফাতের বেলাও ঠিক তাই হল। তবে কেউ পটল
তুলেনি, তার মোবাইলে ৩৮ টি মিস্ড-কল জমা হয়ে
আছে।মিস্ড-কল অবশ্য কোন শুভাকাঙ্কীরো ছিল
না, ছিল তার এক বন্ধুর।তাই বলে ৩৮ টি.!!
সংখ্যাটি বড়ই বেমানান। রিফাত কল-বেক করল।কল
ধরতেই তার বন্ধু উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল-
"দোস্ত, তুই তাড়াতাড়ি মাঠে আয়।" গলার স্বরের
তীব্রতা বুঝে ধারণা করা যায়, নিশ্চয় কোন
সুসংবাদ আছে। মাঠে যাওয়া দরকার।
.
যাই হোক, রিফাত অতি শীর্ঘ্যই মাঠে উপস্থিত
হল। মাঠে বন্ধুদের দেখা গেল খুবি পরিপাটি
অবস্থায়। সবাই গোল হয়ে বসে আছে এবং
প্রত্যেকের মুখেই হাসি। ব্যাপারটি মন্দ নয়।
কাছে এগোতেই তার এক বন্ধু বলে বসল- "দোস্ত, তুই
নাকি BUET এ সেকেন্ড হয়েছিস..? এত বড় একটা কান্ড
করে ফেলেছিস। অথচ আমাদের কিছু জানালি না।"
রিফাত যেন একটু
হকচকিয়ে গেল। খানিকটা লজ্জাও তাকে গ্রাস করে
ফেলল। এবছর BUET ভর্তি পরীক্ষায় সে সেকেন্ড
হয়ছে, কথাটি সত্য, কালকেই ফলাফল জানতে পারে
সে। ঘটনা জানানোর মত এত সময়ও চলে যায় নি।
কিন্তু
রিফাত ভয়ে আছে অন্য কোন কারণে।
.
প্রশংসা শুনতে সবারই ভাল লাগে। কিন্তু
প্রশংসার পরের মুহূর্তটি খুবি বিরক্তিকর। কারণ,
তখন কিছু বলার মত ভাষা খুজে পাওয়া যায় না।
বন্ধুদের বেলায় তো ব্যপারটা একেবারেই আলাদা।
কিছু না বলে চুপ করে থাকলে বলে- "ভাব নাও,
তাইনা" আবার মুখ ফুটে কিছু বললেও একি কথা।
রিফাত শুধু মৃদু স্বরে বলল- "হুম"। তবে বন্ধুরা
পঁচাবার কোন সুযোগ-ই পেল না। একটু দুরে দেখা
গেল আফজাল চাচা মাঠের দিকেই আসছেন।
.
এইত কিছুদিন আগের কথা। রিফাত খেলতে গিয়ে
বল
মেরে আফজাল চাচার ঘরের জানলার কাঁচ ভেঙে
ফেলে। আফজাল চাচা মানুষটা অসম্ভব রাগী। তিনি
এলাকার ক্যাডার টাইপের মানুষ।তার ঘরের কাঁচ
ভেঙে ফেলা মানে বিশাল কিছু ভুল হয়ে গেছে।
সেদিন হতের কাছে পাননি বলে কিছু করতে
পারেনি। আজ একেবারে ঠিক সময়ে এসেছেন। আসা
মাত্র-ই তিনি রিফাতকে ডাকা শুরু করলেন।
রিফাতের মনে যথেষ্ট ভয়।না জানি কি না কি হয়।
পেছনের বন্ধুরাও রিতিমত ঘামা শুরু করে দিয়েছে।
সে সম্পুর্ণ অনিচ্ছা সত্বেও কাছে এগিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর চাচা ধরাম করে তার পিঠের উপর থাবড়
বসিয়ে দিলেন।ক্ষণিকের আকশ্মিকতায় সবাই
বিশ্মিত।
.
আফজাল চাচা ড্যাব ড্যাব করে রিফাতের দিকে
তাকিয়ে আছেন। রিফাতের মাথায় অবশ্য অন্য কিছু
চলছে, বড় ধরণের মার খাওয়ার আগে তাকে ঝেড়ে
একটা দৌড় দিতে হবে। এমন সময় চাচা চিৎকার করে
বলে উঠলেন- "সাবাশ ব্যাটা বাঘের বাচ্চা। এতদিন
পরে একটা কামের কাম কইরা দেখাইলি।তা বাবা,
মিষ্টি কখন খাওয়াবি।" রিফাতের আর কি করার,
সে শুধু তার ঠোঁটে এক প্রস্থ হাসি দিল।
বন্ধুরাও খুশি।
.
.
.
আর খুশি হবেই বা না কেন.?? রিফাত এতটা ভাল
ছাত্রও না, তবে অনেক পরিশ্রমী। কত রাত- জাগা
পড়ালেখা, কত ত্যাগ, হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে
আজকে তার এই অর্জন। এসব কথা শুধু রিফাত-ই না,
তার বন্ধুদেরো অজ্ঞাত নয়।
.
প্রাপ্তির মুহূর্ত গুলো আসলেই অনেক আনন্দের।
আপনি যতই চেষ্টা করুন এই আনন্দ গ্রহণ করবেন না,
কিন্তু আপনি গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি আপনার
প্রাপ্য। কারণ, এর পিছনে থাকে হাড়ভাঙা
পরিশ্রম, সততা, বিশ্বাস।এটি শুধু
ব্যাক্তিকেন্দ্রিক-ই নয়, প্রতিষ্ঠান,
সমাজ, দেশ কিংবা জাতি সব ক্ষেত্রেই প্রাপ্তির
ফলাফল অবশ্যই সুখময়, যদি তা সৎভাবে
অর্জিত হয়।
.
___________________________________________
গল্পটি এবারের ভর্তি পরিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য লিখা।