একই খাবার খেয়ে খেয়ে যাঁরা অতিষ্ঠ, তাঁরা এখন নতুন করে ভাবতে পারেন। আশপাশেই মিলতে পারে এমন সব মানুষের দেখা, যাঁরা নুড়ি, পাথর, বালি থেকে শুরু করে সুন্দর নকশা করা কার্পেটও চিবিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়! বিশ্বাস হচ্ছে না? অদ্ভুত খাদ্যাভাস নিয়ে অক্সফোর্ড ব্রুক ইউনিভার্সিটির রিপোর্টখানায় চোখ বুলালে সেই চোখ কপালে উঠবেই!
পাকিস্তানের ৬১ বছর বয়সী ওয়াসায়ওর সবচেয়ে প্রিয় খাবার কার্পেট। দুপুরের সাধারণ খাবার মেন্যু হলো এক বাটি ভাঙা কাচ আর কয়েকটা ঘাস কাটার কাঁচি। তিনি মনে করেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই বিচিত্র খাবারের বৈচিত্র্যময় স্বাদ থেকে বঞ্চিত। করাচির এক ফাইভ স্টার হোটেলে হাজারও মানুষের সামনে বাল্ব আর গুঁড়ো করা চায়ের কাপ গিলতে গিলতে জানালেন, তিনি মুরগির মাংসও খান।
তালিকা অনেক লম্বা। এ ক্ষেত্রে এশিয়ানরা একটু এগিয়ে। ভারতের কানপুরের দশরথ বিয়ার খেতে খুব ভালোবাসেন। তবে বিয়ারের বোতলকে আরো বেশি ভালোবাসেন। তাই বিয়ার শেষে বোতলটাও কুড়মুড় করে চিবিয়ে খেয়ে
ফেলেন।
আমরা যেমন ভাতের সঙ্গে ডাল মিশিয়ে খাই, তেমনি চীনের ওয়াংচেংকি কাচের বোতলের সঙ্গে ছাই খান। এর পরও দিব্যি সুস্থ আছেন ৫০ বছর বয়সী এ খাদ্যরসিক। ডাক্তাররা অবশ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, ওয়াংচেংকির পরিপাক রস সাধারণ মানুষের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী। তবে এ অসাধারণ পরিপাকতন্ত্র অর্জনের কারণ জানা যায়নি।
ছোটবেলা থেকেই বালি খেয়ে আসছেন ভারতের লক্ষ্নৌয়ের বৃদ্ধা রামরতি। বালি খেতে যেন সুবিধে হয় এ জন্য দীর্ঘকাল ধরে সমুদ্রের পাশে বাস করছেন। তাঁর বয়স এখন ৮৪। প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি বালি না খেলে তাঁর চলে না! ডাক্তাররাও আর নিষেধ করছেন না। যে কয়দিন বাঁচেন, মজা করে বালি খেয়ে গেলেই বা কী।
পিছিয়ে নেই পশ্চিমারাও। নাটবল্টুর পাশাপাশি মেশিনের পার্টসও হজম করে ফেলতে পারেন অ্যান্ড্রু ওয়াপল। তবে তাঁর প্রিয় খাবার হচ্ছে সিগারেটের ফেলে দেওয়া গোড়া।
ওই একই বস্তু শৈশব থেকে খেয়ে আসছেন ইউরোপের বোল্ট ক্যান্ট। লোহার তৈরি যন্ত্রাংশও হজম করে ফেলতে পারেন তিনি। ছুরি, কাঁচি, ব্লেড তাঁর নিয়মিত খাবার। যদি কোনো জিনিস দেখতে ভালো লাগে, তাহলে সেটা খেয়ে ফেলা উচিত; আর তাঁর কাছে সব জিনিসই ভালো মনে হয় বলে মন্তব্য করেন বোল্ট।
খুব ছোটবেলায় একদিন মনের ভুলে কাগজ গিলে ফেলেছিলেন জাপানের ইয়োকো ওসাদা। সেই থেকে কাগজ তাঁর সবচেয়ে পছন্দের খাবার, দুশ্চিন্তার সময় কাগজ খেলে দুশ্চিন্তা অনেক কমে আসে বলে মনে করেন তিনি।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজটি করেন চায়েন হাল্টগ্রেন। ১৮টি তলোয়ার একসঙ্গে গিলে গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী এ অস্ট্রেলিয়ান তলোয়ার গিলেও দিব্যি সুস্থ আছেন। তাঁর মতে, এটি নাকি বিপজ্জনক কোনো কিছু নয়! ১৬ বছর বয়স থেকে তলোয়ার খাওয়ার অনুশীলন করে আসছেন তিনি।
ছাগলে কী না খায় প্রবাদটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের কেন অ্যাডওয়ার্ডস। এক মিনিটে ৩৬টি তেলাপোকা খেয়ে সম্প্রতি তিনি গিনেস বুক অব রেকডর্সে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাঁর মতে, তেলাপোকায় কেমন একটা ওষুধ ওষুধ গন্ধ আছে। এ ছাড়া বাকি সব বেশ ভালোই লাগে তাঁর।
তাঁদের সবার যোগ্য পূর্বপুরুষ বলা যেতে পারে ফ্রান্সের মিশেল ললিতকে। ১৯৫০ সালে এই লোকের আরেক নাম ছিল মিস্টার সর্বভূক। ধাতু, পাথর, কাচ, রাবার, সাইকেল, টেলিভিশন থেকে আস্ত সেসনা বিমান পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছিলেন তিনি। অবশ্য বিমানটা সাবাড় করতে সময় লেগেছিল টানা দুই বছর!
ভাববেন না, অদ্ভুত সব খাবার খেয়ে রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে খুব সুখে আছেন এঁরা। এত খ্যাতি সত্ত্বেও ওয়াসায়ও এখনো বিয়ে করতে পারেননি। পাত্রীপক্ষের আশঙ্কা, কখন না জানি বউকেই সাবাড় করে ফেলেন এ ভোজনবিলাসী।