সিনেমার রূপালি পর্দায়, রঙিন মলাটে আবৃত ম্যাগাজিনে, কবিতায় কিংবা উপন্যাসে মায়েদের ত্যাগ, ভালোবাসার কথাই মূলত বলা হয়। কিন্ত মায়েদের নীরব ব্যথা, গোপন কষ্ট, গভীর রাতে বোবা কান্নায় বালিশ ভিজে যাওয়া বা আপন মানুষদের কাছে অপমানিত হবার কথা গুলো কেনো যেনো অন্তরালে থেকে যায়।সেই কথা গুলো কেউ লিখতে চায় না। পাবলিক শুধু সুখকর কথা শুনতে চায়। তাই দুঃখের কথা গুলো চাপা থেকে যায়।
দশ মাস দশ দিন সংগ্রামের পর মায়ের কোল জুড়ে যখন শিশুটি আশ্রয় নেয়। মা তখন সব কষ্ট ভুলে যায়। নিজের সুস্ততার চেয়ে সন্তানকে ভালো রাখাকেই তার প্রধান কর্তব্য হয়ে দাড়ায়। দুর্বল শরীর নিয়ে রাতের পর রাত মা জেগে থাকে যাতে সন্তানের যে কোনো ডাকে সাড়া দিতে পারে। পরিবারে অন্য সবার কাজে সহযোগিতা করেও সে নিজের জন্য বিশ্রাম না নিয়ে সন্তানের কাছে ছুটে চলে যায়।
সন্তান লালন পালনের পুরো সময়টা নানা প্রতিকূলতার মাঝে পার করতে হয়। অর্থনেতিক সংকট, আপনজন দের কূট কথা শুনতে হয়। তারপর ও সন্তান কে বুজতে দেয় না। আপন মানুষদের কাছ থেকে ব্যথিত হয়ে কত রাত মায়েরা বোবা কান্নায় বালিশ ভিজিয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।
মায়েরা সবচেয়ে গভীর সংকটে পড়ে সন্তানের বিয়ের পর। তখন মা হয়ে পড়ে সংসারে সব চেয়ে বাতিল সদস্য। যার কথা মনে রাখার সময় কারও নেই। ছেলের বউের সাথে মায়ের জেনেরেশন গ্যাপ থেকে যায়। ফলে দুজনের মতের অমিল দেখা যায়।ঝাগড়া লেগেই থাকে। মা ও বউের ঝাগড়ার বেশির ভাগ সময় ছেলেটা নীরব ভূমিকা নেয়। অনেক সময়ই বউের পক্ষ নিয়ে মা কে কটু কথা বলে। মা বুঝে ফেলে যে সন্তানকে নিয়ে হাজারো ঝড় ঝাপটা সামলে বড় করে তুলেছে, সে আজ অন্য কারও অধিকারে চলে গেছে। একজন নারী হয়েও যা আগামীতে মা হবে যেনেও আরেক জন মা কে শএু ভাবে। এ ভাবে ছেলের বউের কাছে মাকে অপমানে জর্জরিত হতে হয়। শেষ জীবনে মা কে কাটাতে হয় চোখের জলের সাথে বাস করে। কিন্ত এই অপমান, কষ্টের দিন গুলোর কথা খুব কম লেখা হয় বইের পাঁতায়।
আজ মা দিবস। যদিও দিবস কেন্দ্রীক ভালোবাসা আমাকে টানে না। কর্পোরেট দুনিয়া দিবস গুলো মূলত ব্যবসা নির্ভর। সেখানে গভীরতা কম। তারপর ভুলে যাওয়া জীবনে একদিন হলেও মাকে নিয়ে ভাবা যায় এটাও এখন অনেক বড় কিছু। আঘাতে জর্জরিত, ব্যথার সমুদ্র বুকে লালন করে ও বেচে থাকা মায়েদের জন্য রইল অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:২৫