একাত্তরের যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছিল তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। কিম্তু যেসকল ব্যাক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধ যেমন: খুন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সাথে যুক্ত যুক্ত ছিল তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি দাড়াঁ করানোর জন্য তৎকালীন সরকার চেস্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেস্টা আলোর মুখ দেখেনি। স্বাধীনতার সময়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলটি পাকিস্তানি মিলিটারির সাথে একাত্বটা ঘোষনা করেছিল এবং কখনও কখনও পাকিস্তানি মিলিটারির চাইতেও অনেক বেশি নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। যে কারেনে স্বাধীনতার পর দলটির কারর্যক্রম বন্দ ছিল। নিষিদ্ধ থাকলেও দলটি বিভিন্ন কৌশলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা গল্প ফেঁদে পুরো ইতিহাসকে বিকৃত করার তান্ডবে লিপ্ত ছিল। আর এই কাজের নাটেঁর গুরু ছিল গোলাম আযম।
ঠিক যেই মুহূর্ত থেকে একাত্তরের মানবতা বিরোধী বিচারের প্রকিয়া নতুন করে আলোর মূখ দেখতে লাগল, সেই মুহূর্ত ঠেকে গোলাম আযমের অনুসারীরা তাকে ভাষাসৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নেমে পরল। তারা বাজারে "ভাষা আল্দোলনের ইতিহাস" নামে একটি সিডি ছেড়ে দিল। আশর্যজানক হলেও সত্যি সেই সিডিতে বদরুউদ্দিন উমর সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম রয়েচে, যারা তাকে ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বকৃতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বদরুউদ্দিন উমর বলেছেন-" ‘ক্যাসেটটিতে ভাষা আন্দোলনের ওপর কিছু কথাবার্তা থাকলেও বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের দু’দফা সাক্ষাৎকার, যাতে তিনি নিজেকে ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টা যে কত অসৎ ও হীন এর একটা প্রমাণ হচ্ছে, এ ক্যাসেট তৈরির সময় তথ্য সহায়তা যারা করেছেন তাদের মধ্যে আমার নাম উল্লেখ। এ কাজ করার উদ্দেশ্য যে এই প্রতারণাপূর্ণ ব্যাপারটির প্রামাণ্যতা নিশ্চিত করা এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার তথ্য সরবরাহ করার বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। এক বন্ধু ক্যাসেটটি দেখার জন্য আমাকে দেয়ার আগে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচার কাজে আমি তথ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে সহায়তা করেছি এটা প্রচার করা থেকে বড় ধৃষ্টতা আর কি হতে পারে? কতখানি নৈতিক অধ:পতন ঘটলে এ কাজ কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব, সেটা বলাই বাহুল্য।
আমি আমার ভাষা আন্দোলনের বইটির প্রথম খণ্ডে একবারই মাত্র গোলাম আযমের উল্লেখ করেছি। ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে একটি মানপত্র দিয়ে তাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। এ মানপত্রটি পাঠ করেন ইউনিয়নের তৎকালীন সেক্রেটারি গোলাম আযম। আসলে এটি পাঠ করার কথা ছিল ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ বোসের। কিন্তু লিয়াকত আলীকে ভাষা আন্দোলনের দাবি সংবলিত মানপত্র পাঠ একজন হিন্দু ছাত্রকে দিয়ে করালে তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং মুসলিম লীগ সরকার এ নিয়ে নানা প্রকার বিরূপ প্রচার শুরু করবে¬ এ আশংকা থেকেই একজন মুসলমান ছাত্র হিসেবে সেক্রেটারি গোলাম আযমকে সেটা পাঠ করতে দেয়া হয়েছিল। এই হল ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের ‘বিরাট’ ভূমিকা।"
গোলাম আযম তার আত্বজীবনীতে যা লিখেছেন তার সাথে উমরের কথা হুবুহু মিলে যায়। তিনি লিখেছেন-"গোলাম স্বীকার করেছেন, এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিতান্তই আকস্মিক। তার ভাষায়, ’৪৯-৪৯ সালে ইউনিভার্সিটি ইউনিয়নের নির্বাচন না হওয়ায় এ সেশনেও জিএস-এর দায়িত্ব আমার উপরই রইল। কিন্তু হলে না থাকায় আমার জন্য এ দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়লো। তাই ভারপ্রাপ্ত জিএস হিসেবে নির্বাচিত সদস্যদের একজনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ’৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করার জন্য একটি মেমোরেন্ডাম (স্মারকলিপি) রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি আবদুর রহমান চৌধুরীর উপর (যিনি বিচারপতি হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন)। একটি কমিটি স্মারকলিপিটি চূড়ান্ত করে।
ইউনিভার্সিটি ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস চ্যান্সেলর ড. সৈয়দ মুয়াযযাম হোসেন তখন বিদেশে থাকায় ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর জনাব সুলতানুদ্দীন আহমদকে সভাপতিত্ব করতে হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পর তিনি গভর্নর হয়েছিলেন। ছাত্র মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মেমোরান্ডামটি কে পাঠ করে শুনাবে এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলো। ছাত্র ইউনিয়নের ভিপির উপরই এ দায়িত্ব দেওয়া স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু স্মারকলিপিতে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক দাবি-দাওয়ার তালিকায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ থাকায় সবাই একমত হলো যে, ঐ পরিস্থিতিতে একজন হিন্দুর হাতে প্রধানমন্ত্রীকে তা পেশ করা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ মুসলিম লীগ সরকার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পেছনে হিন্দুদের হাত আবিষ্কার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হিসেবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ছাত্রইউনিয়নের জিএস গোলাম আযমকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।"
১৯৫২ সালের ৬ ই মার্চ রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হন বলে গোলাম আযম জানান। কিন্ত তার এই দাবির স্বপক্ষে অন্য কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। বাংলা থেকেও তিনি যে উর্দুকে বেশি ভালবাসতেন এটাও তঅ জীবনিতে উল্লেখ রয়েছে।
১৯৪৮ সালে গোলাম আযমের মুসলমান পরিচয়টুকু ব্যবহার করা হয়েছে মাএ। আর সেই পরিচয়টুকু ভাগ্ঙিয়ে তিনি ও তার অনুসারীরা এখন ফায়দা লুটায় ব্যস্ত।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা যখন শহীদ মিনার ধংষ করে দেয় গোলাম আযম ও তার দল তখন এটিকে স্বাগত জানায়।
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম যেখানে নিজের সুস্বময়ে নিজের জীবনিতে নিজের সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে লিখে ফেলেছেন এবং এখন যতই মুক্টির ফায়দা লুটার চেস্টা কেরন না কেন, জীবনিতো পরিবর্তন করতে পারবেন না। আর তাই শত চেস্টা করেও তিনি ও তার অনুসারীরা তাকে ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারবে না। আশাকরি পাঠকদের মনে যুদ্ধপরাধী গোলাম আযম ভাষাসৈনিক কিনা এ ব্যপারে আর কোন সন্দেহ থাকবে না।
তথ্যসূএ:
১.ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভেলকিবাজি : বদরুদ্দীন উমর
২. জীবনে যা দেখেছি: গোলাম আযম, ১ম ও ৩য় খন্ড
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন