somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি ডকুমেন্ট

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাঁওতাল বিদ্রোহ # নিপীড়িতের পুনর্জন্ম

সাঁওতাল বিদ্রোহনিপীড়িতের পুনর্জন্ম১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের আগে শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য ব্রিটিশ বাহিনীকে যে বিদ্রোহ কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ বা সাঁওতালি ভাষায় ‘হুল’ নামে পরিচিত। সাঁওতাল বিদ্রোহের শুরুটা হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। বিদ্রোহ চলেছিল ১৮৫৬ পর্যন্ত। মাদলের সুরে রক্তে তাঁদের নেশা জেগেছিল সেদিন। বন্দুক-কামান আর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র উপেক্ষা করে সাঁওতালরা নেমেছিলেন নিজেদের ভূমি রক্ষার তাগিদে, নিজেদের দেশ ও অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। সেদিন তাঁরা আওয়াজ তুলেছিলেন স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার। ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহে সাঁওতালদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন সাঁওতাল পরগনার পাশেই বাস করা কর্মকার, তেলি, চর্মকার, ডোম ও মুসলমানরা। এ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুই অকুতোভয় সাহসী সহোদর সিদু ও কানু। শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য। মৃত্যুক্ষণে বিপ্লবী কানু তার পরও বলেছিলেন সদর্পে_’আমি আবার আসব, সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।’ সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৫৫ বছর পার হয়েছে। যুগে কানু-সিদুদেরও পুনরুত্থান ঘটেছে।

সুদূর প্রাচীনকালে সাঁওতাল ও অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায় ভারতবর্ষের বন-জঙ্গল কেটে গ্রাম পত্তন করেন, শুরু করেন কৃষিকাজ। বাধা-বিঘ্নহীন জীবনযাপন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু ছেদ পড়ে মাঝখানে। ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করলে শুরু হয়ে যায় শোষণ-নিপীড়ন আর উৎপীড়ন। সারা ভারতবর্ষ যেমন ব্রিটিশ অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল, সাঁওতালরাও তেমনি বাদ যাননি অত্যাচার নিপীড়ন থেকে। ব্রিটিশ শাসনামলে সাঁওতাল পরগনার প্রথাগত ভূমি অধিকার ও অর্থনীতির ওপর আঘাত আসে। এ ছাড়া বাইরে থেকে আসা যে হিন্দু মহাজন, জোতদার বা সামন্তপ্রভু সাঁওতাল পরগনায় বসতি স্থাপন করেছিলেন, তাঁরা সাঁওতালদের ওপর শোষণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন। আর এ কাজে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছিল ব্রিটিশ পুলিশ আর পাইক-বরকন্দাজ। কারণ তাতে স্বার্থ ছিল ব্রিটিশদের। ইংরেজদের লুণ্ঠন আর অত্যাচার তখন কি পর্যায়ে পেঁৗছেছিল তার প্রমাণ আমরা পাব তখনকার সংবাদপত্র ‘ক্যালকাটা রিভিউ’র পাতায় চোখ বুলালেই :
‘রেলপথে যেসকল ইংরেজ কর্মচারী কাজ করিতেন তাঁহারা বিনামূল্যে সাঁওতাল অধিবাসীদের নিকট হইতে বলপূর্বক পাঁঠা, মুরগী প্রভৃতি কাড়িয়া লইতেন এবং সাঁওতালগণ প্রতিবাদ করিলে তাহাদের উপর অত্যাচার করিতেন। দুইজন সাঁওতাল স্ত্রীলোকের উপর পাশবিক অত্যাচার ও একজন সাঁওতালকে হত্যা করাও হইয়াছিল’

‘ক্যালকাটা রিভিউ’ আমাদের আরো জানাচ্ছে :
‘এইভাবে জমিদার, নায়েব, গোমস্তা, পেয়াদা, মহাজন, পুলিশ, আমলা, এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত_সকলে একত্রে মিলিয়া নিরীহ ও দরিদ্র সাঁওতালদের উপর নিদারুণ অত্যাচার চালাইয়া যায়; শতকরা পঞ্চাশ টাকা হইতে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত সুদ আদায়, বে-আইনী আদায়, বলপূর্বক জমিদখল, শারীরিক অত্যাচার সমস্তই চলে।’

সাঁওতাল বিদ্রোহের পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক শোষণ- নিপীড়নের ইতিহাস। এ শোষণ-নিপীড়নে অংশ নিয়েছিল একদিকে আদিবাসী পরগনার বাইর থেকে আসা হিন্দু-মুসলমান জোতদাররা। অন্যদিকে ছিল ইংরেজ নীলকর ও প্রশাসন। কিন্তু দুই দলের লোকরা সাঁওতাল বিদ্রোহের জন্য দুষছে এক অপরকে। ক্যালকাটা রিভিউ যেমন দোষের বেশির ভাগ চাপাচ্ছে ইংরেজদের কাঁধে; আবার ইংরেজদের বক্তব্যও দায়ী করছে দেশীয় জমিদার-জোতদারদের। যেমন ডবি্লউ ডবি্লউ হান্টার তাঁর ‘এনালস অব রুরাল বেঙ্গলে’ বলছেন, অধিকাংশ সাঁওতালেরই সামান্য ঋণ পরিশোধ করার মতো জমি ও ফসল থাকত না। কোনো সাঁওতালের বাবার মৃতু্যু হলে মৃতদেহের সৎকারের জন্য সেই সাঁওতালকে হিন্দু জমিদার বা মহাজনের কাছ থেকে টাকা ঋণ করতে হতো। কিন্তু ঋণের জামিন রাখার মতো জমি বা ফসল না থাকায় সেই সাঁওতাল ব্যক্তিটিকে লিখে দিতে বাধ্য করা হতো যে ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত সে ও তার স্ত্রী-পুত্র-পরিবার মহাজনের দাস হয়ে থাকবে। এর ফলে পরদিনই সাঁওতালটি তার পরিবার নিয়ে মহাজনের দাসত্ব করতে যেত। জীবদ্দশায় তার ঋণ আর শোধ হতো না। কারণ শতকরা ৩৩ টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের ঋণ কয়েক বছরের মধ্যে দশ গুণ হয়ে যেত। আর মৃত্যুর সময় সাঁওতাল ব্যক্তিটি তার বংশধরের জন্য রেখে যেত কেবল পর্বতপ্রমাণ ঋণের বোঝা।
বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেলে সাঁওতাল পরগনা নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের মাথা যে কতটা ব্যথা হয়েছিল তা আমরা ব্রিটিশ সিভিলিয়ানদের বিভিন্ন চিঠির আদান-প্রদান থেকেই স্পষ্ট বুঝতে পারব। ঘটনাটি ১৮৫৫ সালের জুলাই মাসে। ডবি্লউ সি টেইলর নামের এক ব্রিটিশ সিভিলিয়ান লিখছেন তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছে :
প্রতি : এফ এস মুডজে
তারিখ : ৭ জুলাই, ১৮৫৫
প্রিয় মুডজে,
বর্তমানে আমি যে জায়গায় রয়েছি তার থেকে প্রায় আট মাইল দূরে প্রায় চার বা পাঁচ হাজার সাঁওতাল একটি বড় জমায়েত করেছে এবং আমার মনে হয়, তারা ভালোই অস্ত্র সজ্জিত। তাদের কাছে তীর-ধনুক, তলোয়ার আর দা আরো অনেক অস্ত্রশস্ত্রই ছিল। আর আমার মনে হয়, তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরাপীয়দের আক্রমণ করা এবং তাদের হত্যা করা…। আমার মনে করি, এখন আপনার প্রথম কাজ হবে আমাদের বহরমপুর অফিসকে জানানো এবং মিলিটারি সাহায্য পঠানোর জন্য তাদের বলা; কারণ আপনি তো জানেন, তাকিয়ে তাকিয়ে নিজেদের মৃত্যু দেখাটা তো মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। আমি আসলে যেটা বলতে চাই তা হলো, এটা কোনো হেলাফেলা ঘটনা নয়, মারাত্দক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আপনার ডবি্লউ সি টেইলর

টেইলরের চিঠিটি বিদ্রোহ শুরুর আট দিনের মাথায় লেখা। চিঠিটির গুরুত্ব অনুধাবন করা মোটেও কঠিন নয়। সাঁওতাল বিদ্রোহ এবং সাঁওতাল পরগনাকে ইংরেজরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল।

সাঁওতালদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক
অর্থনীতির আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক গড়ে ওঠার আগেই ব্রিটেনে এক ব্যাপক শিল্প উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। এই শিল্প উৎপাদন টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল প্রধান দুটি বিষয়। এক, উৎপাদিত কাঁচামাল বিক্রির বাজার, দুই উৎপাদিত দ্রব্যের কাঁচামাল। এই দুই প্রয়োজনেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দস্যু পৃথিবীজুড়ে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। ভারতবর্ষে বাংলায় তাদের প্রথম উপনিবেশ হওয়ার পরে তারা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে। সাঁওতাল পরগনায় ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক অর্থনীতির আরো বৃদ্ধি করার দস্যুপনা থেকেই তারা সরলমতি সাঁওতালদের অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা দখল করে।
ইংরেজরা চেয়েছিল এখানে মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতি চালু করতে আর ভূমিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি পরিবর্তন করে তা পুরো ভারতবর্ষের সঙ্গে একই রীতিতে যুক্ত করা। সাঁওতালদের নিজেদের ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ছিল ইংরেজ ও অন্য বণিকদের অন্যতম লক্ষ্য।
সাঁওতালদের নিজস্ব অর্থনীতি ধ্বংস ও তাদের ওপর শোষণ-নিপীড়নের একটি বিস্তৃত চিত্র আমরা পাই ইতিহাসবিদ কে কে দত্তের ‘দ্য সানতাল ইনসারেকসন’ গ্রন্থে। সেখানে তিনি বলছেন, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে দীর্ঘকাল ধরে বাঙালিরা বাস করত। ক্রমে ময়রা, বেনিয়া ও অন্যান্য শ্রেণীর আরো অনেক বাঙালি পরিবার বর্ধমান ও বীরভূম জেলা থেকে আসে। মহাজনী ব্যবসা এবং বাণিজ্যের অবাধ সুযোগে আকৃষ্ট হয়ে সাহাবাদ, ছাপরা, বেতিয়া, আরা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভোজপুরি, ভাটিয়া প্রভূতি পশ্চিমি ব্যবসায়ীরা দলে দলে দামিন-ই-কো অঞ্চলে জেঁকে বসে। পাহাড় অঞ্চলের ‘সদর কেন্দ্র’ বারহাইত ছিল একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এ স্থানের বহু সংখ্যক অধিবাসীর মধ্যে পঞ্চাশটি বাঙালি ব্যবসায়ী পরিবারও বাস করত। সাঁওতাল পরগনার বিপুল পরিমাণ ধান, সরিষা ও বিভিন্ন ধরনের তেলবিজ ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হতো। এসব শস্যের পরিবর্তে সাঁওতালদের দেওয়া হতো সামান্য অর্থ, লবণ, তামাক অথবা কাপড়। এ ছাড়া মহাজনদের শোষণ ছিল আরো ব্যাপক। তারা উচ্চহারে সাঁওতালদের কাছ থেকে সুদ আদায় করত। এসব ঘটনাই সাঁওতালদের নিয়ে গিয়েছিল অনিবার্য বিদ্রোহের দিকে।

সাঁওতাল বিদ্রোহ বিপ্লব
সাঁওতাল বিদ্রোহ বিস্তারের কাল ১৮৫৫ সাল হলেও ১৮৫৪ সাল থেকেই সাঁওতাল পরগনায় বিদ্রোহের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। ব্রিটিশ বিভিন্ন দলিলে এর আভাস পাওয়া যায়। ১৮৫৪ সালের দিকে মহাজনদের বাড়িতে বিছিন্ন কিছু ‘ডাকাতির’ ঘটনা ঘটে। ব্রিটিশ নথিতে বলা হয়, উত্তেজিত অনেক সাঁওতাল মহাজনদের বাড়িতে ‘ডাকাতি’ করছে এবং এ ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রশাসকদের তৎপরতাও চোখে পড়ে। তবে ব্রিটিশ নথিতে লেখা ‘ডাকাতি’ শব্দটিকে আধুনিক উপনিবেশ প্রভাবমুক্ত ইতিহাসবিদরা নেন ভিন্নভাবে। ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহাত্দক কাজকে ব্রিটিশ প্রশাসকরা আখ্যা দিত ‘ডাকাতি’ বা এ ধরনের কোনো ঋণাত্দক অভিধায়। আর যারা এসব বিপ্লবাত্দক কাজে অংশ নিত তাদের তারা চিহ্নিত করত ‘ডাকাত’ হিসেবে। নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ এ ব্যাপারে একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, তা হলো তথ্যের উল্টো পাঠ। অর্থাৎ তিনি বলছেন, ঔপনিবেশিক নথিতে যেখানে ‘ডাকাত’ বলা হবে, সেখানে আমাদের বুঝতে হবে বিপ্লবী কৃষক আর যেখানে বলা হবে ‘ডাকাতি’ সেখানে বুঝতে হবে বিপ্লবাত্দক বা বিদ্রোহাত্দক কর্মকাণ্ড। রণজিৎ গুহের এই তথ্যের উল্টো পাঠ তত্ত্ব প্রয়োগ করলে বোঝা যায় যে ১৮৫৪ সালের দিকেই সাঁওতাল পরগনায় ছোটখাটো বিদ্রোহের ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই প্রাথমিক বিদ্রোহী দলের কিছু সংবাদ আমরা পাওয়া যায় দিগম্বর চক্রবর্তীর ‘হিস্ট্রি অব দ্য সানতাল হুল অব এইটিন ফিফটি ফাইভ’ বইতে। তিনি জানাচ্ছেন, ১৮৫৪ সালের দিকে মহাজনের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে একদল সাঁওতাল ‘প্রতিহিংসা’ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বীরসিংহ মাঝি নামের এক সাঁওতাল সর্দারের অধীনে একটি ‘ডাকাতের’ (মানে বিদ্রোহী বিপ্লবীদের দল) দল গঠন করে। ‘ডিকু’ অর্থাৎ বাঙালি মহাজন ও পশ্চিম ভারতীয় মহাজনদের গৃহে ‘ডাকাতি’ করে ‘প্রতিহিংসা’ গ্রহণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের গতিবিধিতে সন্দিগ্ধ হয়ে সব মহাজন একত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীঘি থানার দারোগা মহেশলাল দত্তের কাছে আবেদন জানায়। এরপর তারা পাকুরের জমিদারের কাছে জানায়। জমিদার নায়েব-মহাজনদের সঙ্গে যুক্তি করে বীরসিং মাঝি নামের বিদ্রোহী সাঁওতাল নেতাকে কাছারিবাড়িতে আটক করে। এ ঘটনার পর থেকে সাঁওতাল মহলের সাঁওতালরা ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু মহাজনের বাড়ি আক্রমণ করে। তখন সাঁওতাল মহলের নায়েব ভীত হয়ে কাছারিবাড়ি রক্ষার জন্য অনেক পাঠান লাঠিয়াল ও পাহাড়িয়া ধনুর্বর নিযুক্ত করে। এর প্রতুত্তর সাঁওতাল বিদ্রোহী সৈনিকরাও খুব ভালোভাবেই দেয়। বীরসিংহের নেতৃত্বে সাঁওতাল বাহিনী অত্যাচারী মহাজনদের আক্রমণ করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ দীঘি থানার দারোগা মহেশ দত্ত পুলিশ নিয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার করতে যান। সাঁওতাল মহলে গোক্কো নামে এক অবস্থাপন্ন সাঁওতাল বাস করত। অনেক আগে থেকেই বাঙালি মহাজনদের লোভ ছিল গোক্কোর সম্পদের ওপর। এ সুযোগে মহাজন ও জোতদাররা দারোগার সঙ্গে পরামর্শ করে গোক্কো সাঁওতালকে মিথ্যা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করায়। ১৮৫৪ সালের শেষের দিকে সাঁওতাল নেতারা গোক্কো, বীর সিংহসহ আরো অনেক সাওতাল নেতা সাঁওতাল সর্দারের ওপর নিপীড়নের প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে বীরভূম, বাঁকুড়া, ছোটনাগপুর ও হাজারিবাগ থেকে প্রায় সাত হাজার সাঁওতাল ‘দামিন’ এলাকায় সমবেত হন। সাঁওতালদের ক্ষোভ ছিল যে মহাজনরা সাঁওতালদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার-নিপীড়ন চালালেও শাস্তি হয় না; কিন্তু সাঁওতালরা যদি এর প্রতিবাদ করতে যায় বা প্রতিশোধ নিতে যায় তাহলে তাদের ওপর নেমে আসে জেল-জুলুম। এসব অন্যায়ে তাদের নিয়ে যায় মহাবিস্ফোরণের দিকে।
এরকম পরিস্থিতিতে সাতকাঠিয়া গ্রামে ঢুকে মহেশলাল দারোগা বহু সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সাঁওতালকে চাবুক দিয়ে পেটানোও হয়। পুলিশের এ আচরণ সাঁওতাল পল্লীতে ক্ষোভের আগুন দ্বিগুণ করে তোলে।
শুরু হয়ে যায় সাঁওতাল বিদ্রোহ। চারদিকে তখন বাজতে থাকে বিদ্রোহের মাদল। বিদ্রোহের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসে বিদ্রোহের ঐতিহাসিক দুই নেতা সিদু ও কানু। সিদু ও কানু ছিলেন দুই সহোদর। সিদু বড় আর কানু ছোট। সাঁওতাল পরগনার সদর থেকে আধা মাইল দূরে ভগনদিহি গ্রামের এক দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারে তাঁদের জন্ম। সিদু ও কানুর সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘোষণা করা নিয়ে একটি চমকপ্রদ গল্প চালু আছে। গল্পটি এ রকম :
‘একদিন রাত্রিকালে যখন সিদু ও কানু তাহাদের গৃহে বসিয়া বহু বিষয় চিন্তা করিতেছিলেন,…তখন সিদুর মাথার উপর এক টুকরা কাগজ পড়িল, সেই মুহূর্তেই ঠাকুর সিদু ও কানুর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ঠাকুর শ্বেতকায় মানুষের মত হইলেও সাঁওতালী পোশাকে সজ্জিত ছিলেন। তাঁহার প্রতি হাতে দশটি করিয়া আঙুল, হাতে ছিল একখানি সাদা রঙের বই এবং তাহাতে তিনি কি যেন লিখিয়া ছিলেন। বইটি এবং তাহার সাথে বিশ টুকরা কাগজ তিনি দুই ভাইকে অর্পণ করেন। তারপর তিনি উপরের দিকে উঠিয়া শূন্যে মিলাইয়া যান। আর এক টুকরা কাগজ সিদুর মাথার উপর পড়িল এবং সাথে সাথে দু’জন মানুষ তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। তাহারা দুই ভাইয়ের নিকট ঠাকুরের নির্দেশ ব্যাখ্যা করিয়াই অন্তর্হিত হইলেন। এইভাবে একদিন নয়, সপ্তাহের প্রতিদিনই ঠাকুর আবির্ভূত হইয়াছিলেন। বইয়ের পৃষ্ঠায় ও কাগজের টুকরাগুলিতে কতগুলি কথা লেখা ছিল। পরে শিক্ষিত সাঁওতালগণ তাহার অর্থ উদ্ধার করে। কিন্তু সিদু ও কানুর নিকট কথাগুলির তাৎপর্য কিছুমাত্র অস্পষ্ট ছিল না।’

সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে এ গল্পটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। গল্পটি খুব সতর্কতাসহ বিশ্লেষণ করার প্রতি আলোকপাত করেছেন নিম্নবর্গের ইতিহাসবিদরা। সংকীর্ণ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে ওপরের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে ইতিহাসের কেবল ভুল পাঠ আর ভুল মূল্যায়নই করা হবে। ভারতীয় সমাজের হাজার বছরের লড়াই করার যে শক্তি মানুষ প্রকৃতি থেকে পেয়ে আসছে তাই বিবেচনা করার ওপর জোর দিয়েছেন আধুনিককালের ইতিহাসবিদরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর সিদু ও কানু তাঁদের বাড়ির কাছের বনে ঠাকুরের মূর্তি তৈরি করে পূজার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে তাঁরা চারদিকে শালগাছের শাখা পাঠিয়ে ঠাকুরের আর্বিভাব এবং বিদ্রোহের কথা প্রচার করেন। শালগাছের শাখা প্রেরণ হলো সাঁওতালি প্রচারব্যবস্থার একটি প্রচলিত পদ্ধতি। শালগাছের শাখা সাঁওতালিদের কাছে এক বিশেষ ইঙ্গিত দেয়। এ ইঙ্গিত হলো সর্বাত্দক লড়াই-বিদ্রোহে নামার ইঙ্গিত। অর্থাৎ সাঁওতাল বিদ্রোহে শালগাছের শাখা একটি ‘সিগনিফায়ার’ হিসেবে কাজ করে; যেমনটা আমরা লক্ষ করব, দুই বছর পরে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের বেলায়। মহাবিদ্রোহ শুরুর আগে গ্রামগুলোতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা চাপাতি বিতরণ করেছিলেন। এই চাপাতি ছিল তখন বিদ্রোহের ‘সিগনিফায়ার’ বা বিদ্রোহ যে শুরু হবে তার আলামত।
সিদু ও কানু দুই সহোদর ‘ঠাকুরের নির্দেশ’ (মানে বিদ্রোহের বার্তা) সাঁওতাল জনগণকে শোনানোর জন্য দিন ধার্য করেন। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিদু-কানুর গ্রাম ভগনদিহিতে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল একটি সভা করেন। এ সভায় বক্তৃতা করেন বিদ্রোহের দুই প্রধান নেতা সিদু ও কানু। বক্তৃতায় সিদু ও কানু ইংরেজ-জমিদার-পুলিশ এবং মহাজনদের বিভিন্ন শোষণ-নিপীড়নের কাহিনী তুলে ধরেন এবং এই শোষণ-নিপীড়নের বিরদ্ধে সাঁওতাল জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বক্তৃতায় সিদু ও কানু একটি স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেন। সভায় উপস্থিত প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল তখন সমস্বরে শপথ নেন শোষক-উৎপীড়কদের বিতাড়িত করে তাদের জমি দখল ও স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার।
সমাবেশের পর সিদুর নির্দেশে কির্তা, ভাদু ও সন্নোমাঝি নামে সাঁওতাল নেতা ইংরেজ সরকার, ভাগলপুরের কমিশনার, কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট, বীরভূমের কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট, দীঘি থানা ও টিকড়ি থানার দারোগা এবং আরো অনেক জমিদারকে হুঁশিয়ার করে চিঠি পাঠায়। এই চিঠিগুলো ছিল চরমপত্রের মতো। ‘চরমপত্র’ পাঠানোর পর সাঁওতাল নেতৃবৃন্দ চারদিকে ঘোষণা করে দেন যে তাঁরা বাঙালি ও পশ্চিমী মহাজনদের উচ্ছেদ করতে এবং সাঁওতাল অঞ্চল দখল করে সেখানে স্বাধীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মজার ব্যাপার যে এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আরো একটি ঘোষণা দেন, তা হলো, কুমোর, তেলি, কর্মকার, মুমিন মুসলমান বা তাঁতি, চর্মকার এবং ডোম, তারা হোক বাঙালি বা অন্য গোত্রের, তারা সাঁওতালদের প্রতি বিশেষ সহানভূতিশীল ও বন্ধুভাবাপন্ন বলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এতে বোঝা যায়, নিম্নবর্গের এসব মানুষের সঙ্গে সাঁওতালদের ঘনিষ্ঠতা ছিল কত। আসলে সাঁওতালদের লড়াই ছিল সাঁওতাল ভিন্ন এসব নিম্নবর্গের মানুষের লড়াই।

হুল বিপ্লব
হান্টারের কাছ থেকে এ বিদ্রোহের তীব্রতা সম্পর্কে জানা যায়। ডবি্লউ ডবি্লউ হান্টার জানাচ্ছেন, ৩০ জুন তারিখের সমাবেশ থেকেই সমতল ক্ষেত্রের ওপর দিয়ে কলকাতা অভিমুখে অভিযানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় এবং ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন কলকাতার দিকে এই বিরাট অভিযান শুরু হয়। হান্টারের বর্ণনা হয়তো কিছুটা অতিরঞ্জিত। তিনি বলছেন, ‘এই অভিযানে কেবলমাত্র নেতৃবৃন্দের দেহরক্ষীর বাহিনীর সংখ্যাই ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার। এই বিদ্রোহী বাহিনী থেকে তখন আক্রমণ চালানো হয় মহাজন ও ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের ওপর। বিদ্রোহীরা যখন পাঁচক্ষেতিয়া বাজারে মহাজনদের ওপর আক্রমণ পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন দিঘী থানার দারোগা মহেশলাল দত্ত তার বাহিনী নিয়ে সিদু, কানুসহ আরো অনেক সাঁওতাল নেতাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পাঁচক্ষেতিয়ার বাজারে আসেন। দারোগা তার উদ্দেশ্য গোপন করলেও বিদ্রোহীদের তা বুঝতে বাকী থাকে না।’
দারোগা তার বাহিনীকে সিদু ও কানুকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দারোগার কথা শেষ হতে না হতেই সমবেত সাঁওতালরা দারেগা ও তার অনুচরদে বেঁধে ফেলে। সাঁওতাল বিদ্রোহীরা সেখানেই দারোগা ও তার বাহিনীর বিচার করে। বিচারে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক নিজ হাতে নিপীড়ক দারোগাকে হত্যা করেন। এ ছাড়া আরো জ জন পুলিশ সদস্যদের সাঁওতাল বিদ্রোহীরা হত্যা করেন। এ ঘটনার পর থেকেই মূলত সাঁওতাল হুলের শুরু ও বিস্তার ঘটে। একের পর এক শোষক মহাজনদের হত্যা করতে থাকেন তাঁরা। সে সময় তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘রাজা মহারাজা খতম করো! দিকুদের (বাঙালি মহাজনদের) গঙ্গা পার করে দাও! নিজেদের হাতে শাসন নাও!’
এ ঘটনায় ইংরেজ প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ১৮৫৫ সালে ‘ক্যালকাটা রিভিউ’ পত্রিকায় একজন ইংরেজ লেখক শঙ্কিত হয়ে লিখেছিলেন, ‘এ ধরনের আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ইংরেজদের স্মরণকালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সমৃদ্ধিকে বিপদগ্রস্ত করতে পারেনি।’ ভাগলপুরের কমিশনারও প্রথমে ব্যাপক বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে বিশ্বাস করতে পারেননি। বিদ্রোহীরা ভাগলপুরের দিকে আসছে শুনে ভাগলপুরের কমিশনার আতঙ্কিত হয়ে সে অঞ্চলের সামরিক অধিনায়ক মেজর বারোজকে তার সৈন্যদলসহ অবিলম্বে রাজমহল পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহীদের বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। মেজর বারোজও চারদিক থেকে বিপুল সৈন্যবাহিনী নিয়ে সামরিক অভিযান শুরু করেন। ছোটনাগপুর, সিংভূম, হাজারিবাগ, ভাগলপুর ও মুঙ্গেরের ম্যাজিস্ট্রেটরা তাঁদের সাধ্যমতো সৈন্য ও হাতি পাঠান এই অভিযানে। এভাবে বহু সৈন্য ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি বাহিনী নিয়ে মেজর বারোজ ভাগলপুরের দিকে আসতে থাকা সাঁওতাল বাহিনীর গতিরোধ করতে এগিয়ে যায়। ১৮৫৫ সালের ১৬ জুলাই ভাগলপুর জেলার পিয়ালপুরের কাছে পীরপাঁইতির ময়দানে সুসজ্জিত ইংরেজ বাহিনী ও সাঁওতাল বিদ্রোহী দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর মেজর বারোজের বাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। এ লড়াইয়ে ইংরেজদের একজন অফিসার, কয়েক দেশীয় অফিসার ও প্রায় ২৫ জনের মতো সিপাহি নিহত হয়। ভাগলপুরের কমিশনারের একটি চিঠিতেও সাঁওতাল বিদ্রোহীদের বীরত্বের চিত্র পাওয়া যায় :
‘বিদ্রোহীরা নির্ভীক চিত্তে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিল। তাদের যুদ্ধাস্ত্র কেবল তীর-ধনুক আর একপ্রকারের কুঠার (টাঙ্গি)। তারা মাটির ওপর বসে পা দিয়ে ধনুক হতে তীর ছুড়তে অভ্যস্ত। তাদের বীরত্বে আমাদের বাহিনীকে পশ্চাৎপসারণ করতে হয়েছে।’

মেজর বারোজের পরাজয়ের ফলে ভাগলপুর সদর, কলগঙ্গ ও রাজমহল বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং ইংরেজ প্রশাসন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিদ্রোহে দমনে তারা শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে। সাঁওতালদের বীরত্বপূর্ণ বিদ্রোহে ভাগলপুরের কমিশনার এতই শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, তিনি একটি চিঠিতে বড়লাট লর্ড ডালহৌসিকে অবিলম্বে ‘মার্শাল ল’ জারি করে সমগ্র সাঁওতাল অঞ্চলটিকে সামরিক শাসনের অধীনে আনার অনুরোধ করেছিলেন। কমিশনার সাহেব বিদ্রোহের নায়কদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্যও বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সব পন্থা অবলম্বন করার পরও বিদ্রোহের তেজ বাড়তে থাকে। সাঁওতাল বিদ্রোহীরা আসলে তখন শুধু মহাজন নয়, মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন ইংরেজ রাজেরও, প্রত্যাখ্যান করেছিল ইংরেজ শাসন। এ ব্যাপারটিই তীব্র মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইংরেজ রাজের কাছে। হান্টারের এনালস অব রুরাল বেঙ্গলেও এই বৃত্তান্ত পাওয়া যায়_
‘…বিদ্রেহী সাঁওতালগণ এখানে তিন হাজার, ওখানে সাত হাজার_এইভাবে আক্রমণ চালাতে থাকে। বীরভূম জেলার সমগ্র উত্তর-পশ্চিমাংশ বিদ্রোহীদের দখলভুক্ত হয়। সীমান্ত ঘাঁটিগুলো হতে ব্রিটিশ শাসকগণকে পলায়ন করতে হয়। …বিদ্রোহীরা জমিদার-মহাজনদের শত শত গরু-মহিষ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। আমাদের সৈন্যবাহিনী বারংবার বিদ্রোহীদের হাতে পরাজিত হয়। সরকারের আত্মসমর্পণের নির্দেশকে বিদ্রোহীরা ঘৃণাভরে অগ্রাহ্য করে।’

বিদ্রোহ এভাবে ছড়িয়ে পড়ে বিহারের গোদ্দা, পাকুর, মহেশপুর ও মুর্শিদাবাদসহ পুরো সাঁওতাল অঞ্চলে। বিদ্রোহী সাঁওতালরা বিদ্রোহের শুরুর দিকেই বারহাইত নিজেদের অধিকারে নিয়েছিল। বারহাইতে থেকেই তারা তাদের বিদ্রোহ পরিচালনা করে। সাঁওতাল বিদ্রোহীরা বারহাইতে কিছুদিনের জন্য স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করেছিল।
হতভম্ভ এবং আতঙ্কিত ইংরেজ সরকার এরপর বিদ্রোহ দমনের জন্য তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সাঁওতাল পরগনার পূর্ব দিকের অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী রজ্যগুলোকে বিদ্রোহের দাবানল থেকে রক্ষা করার জন্য বড়লাট পূর্বাঞ্চলের সমগ্র সামরিক শক্তি সমবেশ করার আদেশ দেন। অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী, কামান বাহিনী, হস্তী বাহিনী প্রভৃতি পূর্ব ভারতের যেখানে যে বাহিনী ছিল, সব বাহিনীকেই সাঁওতাল পরগনায় এনে সমবেত করা হয়েছিল। আর বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল মুর্শিদাবাদের নবাব, জমিদার, জোতদার ও নীলকর মহাজনরা। ব্রিটিশদের এ দেশীয় দালাল জোতদার, জমিদার ও মহাজনদের সহায়তায় বিদ্রোহীদের ওপর এক সর্বাত্দক আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেয় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী।
হান্টারের বিবরণে বিদ্রোহ দমনের মহাযজ্ঞের একটি ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে_
‘সৈন্যবাহিনী দলে দলে পশ্চিশ দিকে যাত্রা করিল। দেশভক্ত (মানে ব্রিটিশভক্ত) জমিদার ও মহাজনগণ এ সকল বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও রসদ সংগ্রহ করে দিল, রাত্রিবাস ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিল। নীলকর সাহেবগণ প্রচুর অর্থসাহায্য করল এবং মুর্শিদাবাদের মহামান্য নবাব বহু সৈন্য ও একদল শিক্ষিত হাতি পাঠিয়ে এদের ব্যয়ভার বহন করলেন। আর বিদ্রোহ যেভাবেই হোক দমন করবার জন্য বিশেষ ক্ষমতাসহ একজন স্পেশাল কমিশনার নিযুক্ত হইলেন।’

এই যৌথ বাহিনী ও বিপুল এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। তবু লড়াই চলিয়ে গেছেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে। সামনে থেকে লড়াই করে সিদু, কানু, চাঁদ, ভৈরবসহ বিদ্রোহের নেতারাসহ অনেক বিদ্রোহী প্রাণ দিয়েছেন সাহসের সঙ্গে। তবে বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ বাহিনীর পৈশাচিকতা এমন পর্যায়েই গিয়েছিল যে একজন ইংরেজ সেনাপতিও তাঁর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি_
‘আমরা যা করেছি তা যু্দ্ধ নয়, স্রেফ গণহত্যা। আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল, যখনই কোনো গ্রামে ধূম্রকুণ্ডলী বনের ওপর দেখা যাবে, তখনই যেয়ে সেই গ্রাম বেষ্টন করতে হবে। কোনো বাছবিচার ছাড়া বর্ষণ করতে হবে গোলা। নারী-শিশু-বৃদ্ধ আমাদের কোনো বিবেচনায় ছিল না। বেশির ভাগ সময় পুরো গ্রামই আমরা জ্বালিয়ে দিতাম!’

এসব দমন-পীড়নে আস্তে আস্তে ১৮৫৬ সালের দিকে স্তিমিত হয়ে এসেছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সাঁওতাল বিদ্রোহ উজ্জীবিত করেছিল পরবর্তী প্রজন্মের বিদ্রোহীদের। সাঁওতাল বিদ্রোহের পরই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে পরিচিত মহাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ভারতে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১০০ বছর পর
নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ
সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই প্রধান নেতা কানু ও সিদু ইংরেজদের হাতে প্রাণ দেন। তবে সাঁওতালরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের নেতা নিহত হয়নি। সাঁওতাল বিশ্বাসমতে, এই দুই মহান বিপ্লবী ভগবানের কাছে আছেন। সাঁওতালদের দুঃখ-দুর্দশায় আবার তাঁরা ফিরে আসবেন। এ যেন যিশুর পুনরুত্থানের সেই পুরান কথা। কানু-সিদুর পুনারুত্থান না হলেও সাঁওতালরা তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই থেমে রাখেননি। সেই লড়াই দেখা যায় সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রায় ১০০ বছর পরে নাচোলের কৃষক বিদ্রোহে।
নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল ১৯৪৯ সালের শেষভাগ ও ১৯৫০ সালের শুরুতে। এই আন্দোলন ছিল তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, যার নেতৃত্বে ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টি যেন কানু-সিদুর পুনরুত্থানের জায়গা নিয়ে ফিরে এল ইতিহাসে। এই বিদ্রোহেও দরিদ্র বাঙালিরা অংশ নিয়েছিল, কিন্তু সাঁওতালরা ছিল আন্দোলনের প্রধান শক্তি।
কানু-সিদুর জায়গা নিয়ে আসা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন রমেন্দ্রনাথ মিত্র, মাতলা মাঝি, শেখ আজহার হোসেন, অনিমেষ লাহিড়ী, বৃন্দাবন সাহা। জমিদার রমেন্দ্রনাথ মিত্রের স্ত্রী ইলা মিত্র এই কৃষক আন্দোলনে ইতিহাসে কিংবদন্তিতে পরিণত হন।
১৯৪৭ দেশ ভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টির ওপর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় নেতৃত্ব পাতানু, নকুল কর্মকার, ওয়াজেদ মোড়ল প্রমুখ গ্রেপ্তার হয়ে যান। বাকিরা চলে যান আন্ডারগ্রাউন্ডে। রমেন্দ্রনাথ মিত্র এ সময় রামচন্দ্রপুর থেকে নাচোলে গিয়ে আত্মগোপন করে কাজকর্ম চালাতে থাকেন। এ সময় পুরাতন মালদহ ও গাজোল থানায় পার্টির প্রচার কাজ শুরু হয়। নাচোলের সাঁওতাল কৃষকরা বর্গাদার চাষি হিসেবে তাদের উৎপাদিত প্রায় সবটুকু ফসলই মহাজনদের গোলায় দিয়ে আসতে হতো। ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হতো কৃষকের ওপর। এইসব করের বোঝা জমিদারের ইচ্ছেমতো বসানো হতো। গ্রামের হাট থেকে জমিদারের লোকজন উচ্চহারে তোলা উঠাত। তোলা বন্ধ এবং জমির ফসলের ন্যায্য ভাগের দাবিতে কমিউনিস্ট পার্টি কাজ শুরু করে। কমিউনিস্ট পার্টি সাঁওতালদের মধ্যে তোলা, খাজনা এবং জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে থাকে। এর বাইরেও ছিল জমিদারের নানা প্রকার শোষণ-নিপীড়ন। এ পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পার্টি সাঁওতালদের মধ্যে কাজ করতে থাকে। নাচোলের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই মিছিল, মিটিং ও সমাবেশের আয়োজন করা হতে থাকে। আন্দোলন সঙ্ঘাতে রূপ নেয়। এ সময় জমিদারের সদরকুঠি নূরপুর থেকে নায়েব সুধীর বাবু ৩৯-৪০ জন বরকন্দাজ নিয়ে উপস্থিত হন রামচন্দ্রপুরে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে রমেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য নেতা-কর্মী জমিদারের বাহিনীকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই আন্দোলনের পুরোভাগে কৃষক সমিতি থাকলেও সমিতি মূলত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।
১৯৪৯-এর শুরুতেই পুলিশ গ্রামগুলোয় তৎপরতা চালাতে থাকে। প্রতিদিন নেতৃত্বস্থানীয়দের গ্রেপ্তারের জন্য হামলা চালাত, ঘুষ পেলে অনেক সময় চলেও যেত। কৃষকরা পুলিশ প্রতিহতের জন্য ব্যবস্থা নেয়। নানান সময়ে কৃষক ও তাদের পরিবারের ওপরে নির্যাতন চালায় পুলিশ ।
নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায় ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি। ওই দিনে পুলিশি আক্রমণ ও জমিদারদের সমর্থক বাহিনীর যৌথ আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সাঁওতালরা তাঁদের প্রচলিত অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুলিশের আগমনের খবরে পেয়ে লাল পতাকা উড়িয়ে সাঁওতাল জনপদে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রায় চার-পাঁচ হাজার নারী-পুরুষ তীর-ধনুক নিয়ে সশস্ত্র পুলিশকে প্রতিরোধ করে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড দমন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ দমন করে পাকিস্তান সরকার। আন্দোলনের প্রধান সংগঠকদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইলা মিত্র যেন নতুন করে কানু-সিদুর জায়গা করে নেয় সাঁওতালদের মনে। সাঁওতালরা ইলা মিত্রকে ‘রানি মা’ বলে অভিহিত করে।
১৮৫৫-৫৬ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাঁরা একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। সাময়িকভাবে তাঁরা পরাজিত হলেও তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রাম কখনো থেমে থাকেনি। তাই আমরা দেখব, ১৮৫৫-৫৬ সালের পরে বিশ শতকে এসেও ১৯২৪ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর জিতু সাঁওতালের নেতৃত্বে আবারও সাঁওতালরা লড়াই চালিয়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান পর্বের প্রথম থেকেই সাঁওতালরা বিদ্রোহ করে। সাঁওতালদের এই লড়াই করার সংস্কৃতি যুগে যুগে মুক্তিকামি মানুষকে করেছে উজ্জীবিত, সব ভয় আর দ্বিধাকে অতিক্রম করে শোষিত-নিপীড়িত মানুষকে শিখিয়েছে লড়াই করতে। এত লড়াই, এত আত্দত্যাগ, বিপ্লব-সংগ্রামের পরে সাঁওতালরা আমাদের বাঙালি রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে কি আদৌ ভালো আছে ? হয়তো নতুন যুদ্ধ, নতুন বিপ্লবের নন্দিরোলে আবারও কোনো কানু-সিদু বা ইলা মিত্রের পুনরুত্থান হবে। একদিন হয়তো সাঁওতালরা তাঁদের মাদল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মধ্যবিত্তকে জাগিয়ে তুলবেন সব অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার লক্ষ্যে।
লেখায় ব্যবহৃত ছবিগুলো সুপ্রকাশ রায়ের
‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া




খনা

খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল।[১] কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিস পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন। খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×