জেনে অবাক হবেন যে, আমরা যে পোশাক গুলি ব্যাবহার করি তা পরার যোগ্য কিনা আমরা তাও জানি না । আমরা যে পোশাক গুলো ব্যাবহার করি, এগুলোর উপর বেশ কিছু রসায়নিক দ্রব্য ব্যাবহার করা হয় । কিছু কাপড়ের রং-এর কাজে, কিছু আছে প্রিন্টিং-এর কাজে, কিছু উজ্জলতা বৃদ্ধিতে, কিছু আছে কাপড়ের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য ।
প্রথমে কিছু রাসায়নিক পরীক্ষার নাম বলি (বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের জন্য বুঝতে সুবিধা হবে) অ্যাজো (azo)-, থ্যলেট (phathalate), ফরম্যালডিহাইড (formaldehyde) । অ্যজো- কাপড়ের রং-এর কারনে , থ্যলেট- কাপড়ের প্রিন্ট নমনীয় করায়, ফরম্যালডিহইড – ফ্যাব্রিকের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য । এগোলো ছাড়াও আরো অনেক গুলো আছে ।
যদি শুধু অ্যজো যৌগ নিয়ে কথা বলি, তাহলে কাপড়ে ব্যাবহৃত রং-এর মধ্যে ২৪ টি অ্যজো আছে যেগুলো মানুষের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । এগুলোর যৌগের মাত্রা ২০ থেকে ৩০ পিপিএম (ppm -parts per million) অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখে মাত্র ২০-৩০ টি কনা । এর বেশি হলে বিভিন্ন চর্মরোগ, অ্যার্লাজি কিংবা ক্যান্সার হতে পারে ।
যে পোশাক গুলো আমাদের দেশীয় পোশাক কারখানা গুলো তৈরি করছে তা সত্যিই খুব ভালো মানের । কয়েক টি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নাম বললে হয়তো বুঝবেন GAP, S-OLIVER, G-STAR, H & M। এরা আমাদের দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে অর্ডারে পোশাক কেনে আর বেশ কিছু ৩য়-পক্ষ ল্যাব থেকে তাদের কাপড়ের মান পরীক্ষা করে নেয় । যদি তাদের চাহিদার বেশি মাত্রার কোন কিছু পাওয়া যায় তাহলে তারা আমাদের তৈরি পোশাক গুলো নেয় না । সেগুলা আমাদের দেশের স্থানিয় বাজারে বিক্রি হয় ।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন নেয় না ?
এর দুটি কারন আছে । প্রথম কারণ হচ্ছে, ইউরোপ বা আমেরিকার মানুষের ত্বক আমাদের মহাদেশের মানুষের মত এতটা সহনশীল না । তারা ঐ মাত্রার রাসায়নিক পরিমান সহ্য করতে পারে না । দ্বিতীয় কারন, যেটা আমি বেশি গুরুত্বর্পূন মনে করি, কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে যে ময়লা পানি টা যায় সেটা যেন পরিবেশ দূষন না করে ।
আমাদের দেশে যেটা হয়, আমরা বাসায় অল্প কয়েকটা কাপড় ধুয়ে তা রোদে শুকিয়ে নেই । কিন্তু উন্নত দেশে ময়লা কাপড় একবারে অনেক গুলো নিয়ে ধোপাখানায় দিয়ে আশে । মেশিনে পয়সা ফেলে, কিছুক্ষন পরে শুকনা কাপড় নিয়ে যায় । ওরা চিন্তা করে, প্রতিটা পোশাক যদি ৫০০ পিপিএম বিষ পানিতে ছাড়ে, তাহলে দেশের সব গুলো কাপড় কতটা পানি দূষিত করবে?
তাই ওরা সব টুকু বিষ আমাদের মত দেশে ফেলে যায় । আর আমরা ভাবি, আহা আমাদের কি ব্যাবসাটা-ই না হচ্ছে । আমাদের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের পানি পরিষোধনের জন্য ETP plant আছে, কিন্তু বেশির ভাগ ই দেখানোর জন্য। কাজের জন্য খুবই কম ।
একবার কি ভেবে দেখেছেন, যে বিষ ওরা আমাদের দেশ থেকে ছেকে নিচ্ছে ৩০ বছর পরে সে বিষের ঘনত্ব কতটা হবে ? আমাদের অসুখ হবে না তো কি ওবামার মেয়ের অসুখ হবে নাকি ?