আমি আমার ২৭ হাত লম্বা জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক মজা, অনেক আনন্দ । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ তিনটা বছর আমি আরো ১০০ বার ফিরে পেতে চায় । কিন্তু কপালের কি লিখন, আমি কোন জায়গায় শেষ বিদায় জানতে পারিনি ।
যখন স্কুল জীবন থেকে বিদায় নিলাম, তখন মনে হচ্ছিল- “ওরে মজা রে, আমি এখন কত বড় হয়ে গেছি।” এক বারের জন্যও বুঝিনি কি হারাতে যাচ্ছি । বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম । কলেজর দুটো বছর কিভাবে গেছে টেরও পাইনি । যখন কলেজ শেষ করলাম তখন র্ভাসিটিতে র্ভতির যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে যেয়ে বুঝতে পারিনি, জীবনের আরেকটা আনন্দঘন অধ্যায় হারালাম ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুই বছর কেটেছে ভয়ে ভয়ে, কখন কি হয়, কে কি বলে না বলে । ৩য় বছর থেকে ক্যাম্পাস কে চিনতে শিখলাম । সত্যি কথা বলতে কি, র্ভাসিটিতে কোন মেয়ের প্রেমে আমি পড়িনি ঠিক-ই, কিন্তু র্ভাসিটির-ই প্রেমে পড়ে গেলাম পুরেদমে । বাসা থেকে ক্যাম্পাস বেশ দুরে (প্রায় ২৫ কি:মি। সকাল ৮:৪৫-এ ক্লাস । সারা দিন ক্লাস, তারপর ল্যাব । ক্লাসের ফাকে ক্যাফেতে । বাকি সময়টা থিয়েটারে । বিকেলে বাসায় ফিরে কোচিং-এ ক্লাস নিতে যাওয়া, সন্ধায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা । রাত জেগে নোট করা । তবুও কখনো ক্লান্ত হয় নি ।
ডির্পাটমেন্ট থেকে পিকনিকে গেলে অথবা বাসে করে বাসায় ফেরার পথে বাসের হেল্পার মামার কাছ থেকে বাস ধোয়ার বালতি চেয়ে নিয়ে ঢোল বানিয়ে, বোতল দিয়ে পিটিয়ৈ, দল বেঁধে চিৎকার করে গান গাওয়া, কখনো বা বাসের ছাদে, কখনো নিজেই বাসের হেল্পারি করে কাটিয়েছি । তবে হ্যা, বুকে একটা সাহস ছিল কখনো অন্যায় করতাম না (রাজনীতি চরম ঘৃনা করতাম) । তাই সব স্যার, ছোট-বড়, বন্ধুরা সবাই খুব ভালবাসত । মাথার মধ্যে সব সময় মনে হত, আমি সবার মধ্যমনি হব । জানি না কতটুকু পরেছি । কিন্তু অনেক সাথে খাতির ছিল । বন্ধুদের তো জান দিয়ে ভালবাসতাম । একদিন না দেখলে মনে হতো “আজ কিছু ভুলে গেছি মনে হয় ।”
প্রতিটা বছর যখন বড় ভাইয়া-আপুরা বিদায় নিত, সে কি মজার-ই না হতো অনুষ্ঠান গুলো । কতো কিছুর না আয়োজন করতাম – গান, নাচ, নাটক, ফ্যাশান শো, মঞ্চ সাজানো, ফ্লোরে আলপনা করা, ব্যান্ড শো আরো কত কি । ভাবতাম একদিন আমারও বিদায় দিবে । আর সেদিন ফাটিয়ে আনন্দ করবো । স্যারদের সাথে অনেকটা চ্যালেঞ্জ করেই আমার বিদায়টা ক্যাম্পাসে করার ব্যাবস্থা করলাম ।
ভাগ্য খারাপ না ভালো জানি না, রেজাল্ট তো দুরের কথা, পরীক্ষা শেষ হবার ১০ দিন আগেই আমার চাকরী হয়ে গেল । আমার কলিজার ক্যাম্পাসকে কোন কিছু না জানিয়েই, মাত্র ৮ ঘন্টার ব্যাবধানে চলে আসি চাকরী করতে । কেউ জানত না আমি কোথায় ।
সবার পরীক্ষা শেষ হবার পর বিদায় দেয়া হচ্ছে, স্যাররা ফোন দিচ্ছে-“কিরে তুই কই, তাড়াতাড়ি আয়, তোর অপেক্ষায় বসে আছে সবাই” । বললাম “আমি তো অফিসে ।” মনে হচ্ছিলো- জানাযা ছাড়াই কবর দিচ্ছে আমাকে ।
আজ প্রায় দুই বছর হতে চলেছে, কোন বন্ধুদের সাথে আর সেরকম দেখা হয় না, কথা হয় তাও র্ফমাল । ফেসবুক বা ফোনের সুবাদে কিছুটা যোগাযোগ হয়, কিন্তু তাও তো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো । ব্যাবধানটা কেন হয়েছে, তা আমি আজও জানি না । কতজন কে প্রায় দুই বছর দেখি না । অনেক ফোন নাম্বারটা বদলেছে, জানাই-ও নি । হয়তো কয়েক বছর পরে তোরা আমার নামটাই ভুলে যাবি । তবুও তোদের অনেক মিস করি, অনেক ভালবাসি । আর ভালবাসি আমার প্রিয়, জানের টুকরা ক্যাম্পাস টা ।