somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-৭ | হেলেনীয় ও হেলেনিস্টিক সভ্যতার গল্প

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতবর্ষে যেমন রামায়ন-মহাভারত ইউরোপে তেমনি ইলিয়াড আর ওডিসি সবচেয়ে পুরনো মহাকাব্য। ভারতবর্ষে আগত আর্যদের রচিত রামায়ন-মহাভারতের সাথে গ্রিক আর্যদের রচিত ইলিয়াড-ওডিসির দারুন মিল দেখা যায়। পুরনো দিনে গ্রিক চারণ কবিরা মুখে মুখে গান করে ইলিয়াড-ওডিসির বীরদের বিভিন্ন বীরত্বের গল্প শুনিয়ে বেড়াতেন। যতদূর জানা যায়, হোমার নামে একজন চারণ কবি এই দুটি কাব্যের রচয়িতা। কিন্তু হোমার আসলে কে ছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

তিনি কোন দেশের কোন শহরে বাস করতেন তা নিয়েও পন্ডিতদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। হোমারের রচিত এ দুটি মহাকাব্য ছাড়াও হেসিয়ড নামে আরেকজন কবির রচিত ‘ওয়ার্কস এন্ড ডেইজ’ এবং ‘বার্থ অব দি গডস’ নামেও দুটি কাব্য আছে। এ সবই ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগের রচনা; অর্থাৎ যে সময়ে ভারতবর্ষের বৈদিক সমাজে জন্মান্তরবাদ চালু হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিনেভা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য।

মহাকাব্যগুলোতে গ্রিক সভ্যতার আদি পর্বের যে ছবি পাওয়া যায় তা থেকে মোটামোটিভাবে জানা যায় যে, পশুপালন আর শিকার চালু থাকলেও গ্রিকদের খাবার জোগাড়ের প্রধান উপায় ছিলো চাষবাস। যুদ্ধ-বিগ্রহে অপর পক্ষের যারা বন্দী হতো, জমিজমায় বা ব্যবসাবাণিজ্যে তাদের খাটিয়ে নেওয়া থেকেই শুরু হয়েছিলো ক্রীতদাস প্রথা। মহাকাব্যগুলির এই যুগকে বলা হয় বীরদের যুগ। প্রধান দুটি মহাকাব্যের রচয়িতা হোমারের নামে এই যুগকে হোমারীয় যুগও বলা হয়। গ্রিকদের বিশ্বাস, তারা বিখ্যাত দেবতা ডিয়োকেলিয়ানের পুত্র হেলেনের বংশধর। পুরাকালের ন্যায়পরায়ন রাজা ছিলেন ডিয়োকেলিয়ান। হেলেনের বংশধর বলে গ্রিকরা নিজেদের বলতো হেলেনীয়। এজন্যই গ্রিক সভ্যতা হেলেনীয় সভ্যতা নামে পরিচিত।

হোমারীয় যুগে গ্রিকদের ধর্ম ছিলো সরল। গ্রিক দেবতারা ছিলেন মানুষের মতই। বৈদিক দেবতাদের মতো তারা আকাশে বাস করতেন না। বরং গ্রিকদের বিশ্বাস ছিলো দেবতারা বাস করতেন উত্তর গ্রিসের অলিম্পাস পাহাড়ের চূড়ায়। হোমারীয় যুগের শেষ দিকে অলিম্পিক প্রতিযোগিতার প্রচলন হয়। প্রথম অলিম্পিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। দেবরাজ জিউসের সম্মানে এই খেলার আয়োজন হতো। অলিম্পিক ছিলো সমগ্র গ্রিসের অধিবাসীদের সাংস্কৃতিক বন্ধনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম।


চিত্র: গ্রিক স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ

সময়ের বিবর্তনে একসময় গ্রিসে ভেঙ্গে পড়তে থাকে হোমারীয় যুগের গ্রাম সম্প্রদায়। ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে এক একটি অঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠতে থাকে নগররাষ্ট্রসমূহ। যেমন মূল ভূখন্ডে ছিলো এথেন্স, থিবস ও মেগারা; পেলোপনেসাস অঞ্চলে ছিলো স্পার্টা এবং করিন্থ; এশিয়া মাইনরের তীরে ছিলো মিলেটাস ইত্যাদি। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলো স্পার্টা ও এথেন্স। এদেরকে একত্রে বলা হয় হেলেনীয় সভ্যতা।

৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে স্পার্টা গ্রিসের সব চেয়ে শক্তিশালী নগররাষ্ট হয়ে ওঠে। এটি ছিলো মূলত একটি সামরিক নগররাষ্ট্র। অন্যদিকে উত্তরের প্রতিবেশী এথেন্স নগররাষ্ট্রটি গড়ে উঠেছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র নিয়ে। রাজতন্ত্রের জায়গায় ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রথম নিয়ে আসলো এথেন্সবাসীরা। স্থায়ীভাবে অন্য ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রথম তারাই চালু করে। এর নাম হলো অভিজাততন্ত্র। তবে এ ব্যবস্থায় শোষিতরা ও দাসশ্রেণি আগের অবস্থায়ই থেকে যায়।


চিত্র: প্রাচীন এথেন্সের বাজার

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্য সব গ্রিক নগররাষ্ট্রের মতই এথেন্সেও একজন রাজার শাসন ছিলো। কিন্তু রাজ্যের ভূমি-মালিকানা পুরোপুরিভাবে রাজার হাতে থাকেনি। তাই রাজ্যের কৃষি-অর্থনীতিতে রাজা-প্রজা সম্পর্ক প্রাধান্য পায় নি; যা রাজতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। অন্যদিকে সময়ের পরিক্রমায় রাজ্যের অধিকাংশ কৃষি জমিতে এমন একটি শ্রেণির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় যারা রাজার অধীনস্ত সামন্ত-জমিদার ছিলো না; তাই রাজ্যে সামন্ততন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভূমি-মালিক অভিজাতরা আর্থ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে ছিলো স্বাধীন। এথেন্সে একসময় রাজতন্ত্রের স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় এই অভিজাত শ্রেণির শাসন।

নগররাষ্ট্র এথেন্সে সামাজিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলো অভিজাতরা। অভিজাত বলতে শুধুমাত্র ধনী ভূস্বামীদেরকেই বোঝানো হয়। অভিজাত ভূস্বামীদের পরে ছিলো স্বাধীন কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী, বণিক, নাবিক প্রভৃতি শ্রেণির স্থান। এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ছিলো। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় তাদের হাত ছিলো না। রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিলো অভিজাত শ্রেণির হাতে। তাই এথেন্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুরোপুরি গণতন্ত্র বলা যায় না। সমাজের আরেকটি অংশ ছিল যাদেরকে নাগরিক হিসেবেই ধরা হতো না। এরা হলো ভূ-সম্পত্তিহীন শ্রমজীবী মানুষ, বিদেশী মানুষ ও ক্রীতদাসেরা। এদের মধ্যে আবার ক্রীতদাসদেরকে মানুষ হিসেবেই ধরা হতো না।


চিত্র: প্রাচীন এথেন্সের বর্তমান চিত্র

এথেন্সের অভিজাততন্ত্রে প্রতি বছর অভিজাতদের মধ্য থেকে একজন আর্কন (বিচার বিভাগীয় প্রধান), একজন পোলেমার্চ (সামরিক প্রধান), একজন আর্কন বেসিলিয়াস (প্রধান ধর্মযাজক) এবং ছয়জন থেসমোথেটিয়া নির্বাচন করা হতো। এদের মধ্যে প্রধান ক্ষমতাধর ছিলেন আর্কন। শাসন পরিচালনার জন্য সাবেক আর্কনদের নিয়ে একটি সংসদও চালু ছিলো। এর নাম অ্যারিওপেগাস। অ্যারিওপেগাস ছিলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন। একলেসিয়া নামে সাধারণ নাগরিকদের একটি সংগঠনও ছিলো; তবে এর তেমন কোন কার্যকারিতা ছিলো না।

প্রাচীন ব্যবিলনীয় রাজা হাম্মুরাবির পর আইন সংকলনের ক্ষেত্রেও প্রাচীন পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এথেন্সবাসীরা। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকের শেষ দিকে এথেন্সে নানামূখী শ্রেণি-সংঘাত ও রাজনৈতিক কোন্দল সৃষ্টি হয়। ফলে সামাজিক সংহতি ও শৃঙ্খলার জন্য সুস্পষ্ট সামাজিক আইন প্রণয়ন ও সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়। থেসমোথেটিয়ারাই এ কাজটি শুরু করেন। ড্রাকো নামক জনৈক থেসমোথেটিয়া ৬২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্সের জন্য একটি আইন সংকলন তৈরি করেন। ড্রাকোর আইন খুবই কঠোর ছিলো। তাই বলা হতো, এ আইন কালির বদলে রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে। সামান্য বাঁধা কপি চুরির অপরাধেও মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান ছিলো এতে।


চিত্র: এক্রোপোলিস পাহাড়ের ওপর নির্মিত দেবী এথেনির মন্দির পার্থেনন

কিন্তু এথেন্সের সমাজে শোষণ ও বৈষম্য তীব্রতর হওয়ায় ড্রাকোর আইন রাজনৈতিক অসন্তোষ ও বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে পারেনি। ড্রাকোর আইনে ঋণদাসত্ব স্বীকৃত হওয়ায় অসংখ্য ঋণগ্রস্থ মানুষ পাওনাদারের ক্রীতদাসে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় ঋণদাসত্বের আইন বাতিলের তীব্র দাবী ওঠে। ধনীক শ্রেণির অসহনীয় শোষণের ফলে সমাজ বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ৫৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সকল পক্ষের সম্মতিতে 'সোলোন' নামে একজন জনপ্রিয় অভিজাত নেতাকে আর্কন নির্বাচিত করা হয় এবং তাঁর হাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। সলোন প্রথমেই ঋণদাসত্ব নিষিদ্ধ করে সকল বন্ধকী ঋণ বাতিল করে দেন এবং ঋণদাসদের মুক্ত করেন। সলোনের ব্যাপক সংস্কারের ফলে এথেনীয় অভিজাততন্ত্র গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায় যা পরবর্তীতে পেরিক্লিসের (৪৬১-৪২৯ খ্রিস্টপূর্ব) সময় ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিলো।


চিত্র: শিল্পীর তুলিতে এথেন্সের এক্রোপলিস

গ্রিস যখন ধীরে ধীরে মাথা তোলে দাঁড়াচ্ছে তখন এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শক্তি হিসেবে মাথা তোলে দাঁড়াচ্ছে পারসীয়রাও। মেসোপটেমিয়ার শেষ সভ্যতা - ক্যালদীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে পারসীয়দের হাতে। ৫৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য সম্রাট সাইরাস দখল করে নেন ক্যালদীয় সামাজ্য। পারসীয়রা গ্রিসের উত্থানকে ভাল চোখে দেখলো না। পাশ্চাত্যের সাথে প্রাচ্যের কোন বড় সংঘাতের প্রথম দৃষ্টান্ত হলো গ্রিকদের সাথে পারসীয়দের যুদ্ধ। পারস্য সাম্রাজ্যের পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে যেসব গ্রিক শহর গড়ে উঠেছিলো তারা পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করলো। এই বিদ্রোহে এথেন্স তাদের সাহায্য করেছিলো। তাই পারস্য সম্রাট দারায়ুস সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রিস আক্রমণ করার। তাঁর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৫২১ থেকে ৪৮৫ সাল পর্যন্ত।


চিত্র: স্থাপত্যরীতিতে গ্রিস ছিলো দুনিয়ার সেরা

এই সম্রাট দারায়ুসের সাথে ভারতীয়দের ইতিহাসের একটি যোগসূত্র আছে। তা হলো ভারতের অধিবাসীদের জন্য ‘হিন্দু’ নামটি সম্রাট দারায়ুসের নৌ সেনাদের দেয়া। সম্রাটের নৌ অধ্যক্ষ সাইলাস পারস্য সাম্রাজ্যকে পশ্চিম ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে নৌ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে এসে সিন্ধু নদের পথে ঢুকে পড়েন এবং এর অববাহিকা অঞ্চল দখল করতে করতে এগিয়ে যান। এ সময় পারসীয় নৌ সেনাদের মুখে ‘সিন্ধু’ নামটি বিকৃত উচ্চারণে হয়ে যায় ‘হিন্দু’ এবং এই নদ অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা তাদের কাছে পরিচিতি পায় ‘হিন্দু’ নামে। এ ঘটনার সময়কাল ছিলো ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি। ভারতবর্ষে তখন বুদ্ধের আগমন ঘটেছিলো। সিন্দু নদ হতে পুর্ব ইউরোপ পর্যন্ত তখন পারস্য সামাজ্য বিস্তৃত হয়েছিলো। এই সময়ে সম্রাট দারায়ুস তাঁর রাজ্যের অন্যদিকে গ্রিস দখলের জন্য তাঁর জামাতার নেতৃত্বে অন্য আরেকটি নৌ বহর পাঠালেন। কিন্তু ঝড়ের কবলে পড়ে সব জাহাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি ফিরে এলেন।


চিত্র: থার্মোপিলির গিরি সংকটে গ্রিক যোদ্ধাদের অবস্থান

৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট দারায়ুস নিজেই সেনাবাহিনী সজ্জিত করলেন গ্রিসের উল্টো দিকে তুরস্কের উপকূলে। তারপর গ্রিসের সব শহরে দূত পাঠিয়ে দিলেন। ভয়ে ও আতংকে গ্রিসের অধিকাংশ নগররাষ্ট্র অধীনতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের শহরের মাটি ও পানি তুলে দিলো দূতদের হাতে। কিন্তু স্পার্টা ও এথেন্স অধীনতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দূতদের ফেলে দিলো পানির কূয়ার নিচে। তাই সম্রাট দারায়ুস ৬০০ জাহাজ বোঝাই করে ২০০০০ সৈন্য নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে নামলেন গ্রিসের উপকূলে।

এথেন্স থেকে ২৬ মাইল দূরে ম্যারাথনের সমতল ভূমিতে তিনি স্থাপন করলেন সৈন্য শিবির। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এথেন্সের ১০০০০ সৈন্য এগিয়ে এলো মিলটাইডিসের নেতৃত্বে। ম্যারাথনের মাঠে তাদের মরণপণ প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখে পারসীয়রা নির্মমভাবে পরাজিত হলো। এই আনন্দ সংবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য ফিডিপাইডিস নামক একজন এথেন্সবাসী ম্যারাথন থেকে এক দৌড়ে ছুটে যান এথেন্সে। সংবাদটি জানিয়েই তিনি মুখ থুবড়ে পড়ে মারা যান। তাঁর সম্মানেই প্রতিবার অলিম্পিকে এখন ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

দারায়ুসের এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইলেন তার ছেলে সম্রাট জারেক্সেস। ওল্ড টেস্টামেন্টে এই জারেক্সেস সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ইনি সেই জারেক্সেস যিনি ভারত থেকে ইথিওপিয়া দেশ পর্যন্ত একশ সাতাশটা বিভাগের উপর রাজত্ব করতেন” (ইষ্টের পুস্তক-১:২)। ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রায় দেড় লক্ষ সৈন্য নিয়ে তিনি স্থলপথ ঘুরে রওনা দিলেন গ্রিসের উদ্দেশ্যে। তারা থার্মোপিলির সংকীর্ণ পথে বাঁধা দিতে আসা ৭০০০ গ্রিক সৈন্যকে পর্যদুস্থ করে এগিয়ে গেলো এথেন্সের দিকে। এথেন্সে যখন তারা প্রবেশ করলো তখন আর কাউকে খুঁজে পেল না। এথেন্সবাসীরা তখন জাহাজে চড়ে আশ্রয় নিয়েছে সেলামিস উপসাগরে। এথেন্সের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে উঠে পারসীয়রা দেখতে পেল এথেন্সবাসীদের।

জারেক্সেস সেই পাহাড়ে তাবু খাঁটিয়ে বসলেন তাঁর বিরাট নৌ বহর কিভাবে এথেন্সবাসীদের ধ্বংশ করে তা দেখার জন্য। কিন্তু সেখানে বসে তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, গ্রিকদের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে বিশাল পারসীয় নৌ বহর লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। হতভম্ব জারেক্সেস বাকী নৌবহর ও সৈন্য-সামন্ত নিয়ে ফিরে গেলেন নিজের দেশে। সেলামিস উপসাগরে পারসীয়দের এই পরাজয় সমগ্র সভ্যতার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। যদি সেদিন পারসীয়রা জিততে পারতো তাহলে গ্রিক বা রোমান সভ্যতার কোন অস্তিত্ব ইতিহাসে থাকতো না। এমনকি পশ্চিমা সভ্যতা বলেও আলাদা কিছু থাকতো না। প্রাচ্য আর ইউরোপ নৃতাত্ত্বিকভাবে একাকার হয়ে যেতো।


চিত্র: শিল্পীর তুলিতে গ্রিক সভ্যতা

গ্রিক সভ্যতার ইতিহাসে এর পর পরই শুরু হয় সোনালী যুগ, যা চলতে থাকে ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৪৮০ থেকে ৪৩০ - এই ৫০ বছরেই গ্রিক সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, চিকিৎসা, সঙ্গীত, স্থাপত্য, শিল্পকলা, সাহিত্য ও দর্শনে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছে যায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-চেতনায় এথেন্স সারা পৃথিবীকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। এ যুগে এসেছেন পেরিক্লিসের মতো রাষ্ট্রনায়ক, তাঁর বন্ধু হেরোডোটাসের মতো ইতিহাসবিদ। নাটকে সৃষ্টি হয় কমেডি, ট্রাজেডি, প্রভৃতি ধারা। এস্ফিথিয়েটারে হতো অভিনয়।

এস্কাইলাসের বন্দি প্রমিথিউস, সফোক্লিসের ইদিপাস ও আন্তিগোনে এ যুগেরই নাটক। এ যুগেই জন্ম হয় মহান দার্শনিক সক্রেটিসের। এনাক্সিগোরাস তখন এথেন্সে বসে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। এ যুগের প্রভাব আজও আমাদের জীবনে রয়ে গেছে। তবে এ কথা ভুললে চলবে না এত গৌরবের আসল কারিগর হলো এথেন্সের সেই সব ক্রীতদাস ও শ্রমজীবী মানুষেরা যাদের কথা হারিয়ে গেছে ইতিহাসের অন্তরালে। তারাই তিলে তিলে শ্রম দিয়ে নির্মাণ করেছে গৌরবময় এ সভ্যতা। দাস শোষনই ছিলো এথেন্সের সমৃদ্ধির ভিত্তি। তাই গৌরবের সমস্ত কৃতিত্ব দিতে হবে তাদেরকেই।

অন্যদিকে অবকাশ ভোগী শ্রেণিকেও কৃতিত্বের কিছুটা দিতে হবে এ জন্য যে, তারা রোমানদের মত অযথা দাস নিপীড়নের পৈশাচিক কান্ড কারখানা করেনি। রোমানদের মতো তারা দাসদের গ্লাডিয়েটর হতে বাধ্য করেনি বা দাসদের গলায় চাকা পরিয়েও রাখেনি। বরং ক্রীতদাসদেরকে তারা পড়ালেখা শিখাতো ছোট বাচ্চাদের শিক্ষকতার কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য। সময় এবং সম্পদকে শুধু বিকৃত রুচি আর স্থূল প্রবৃত্তির পেছনে ব্যয় না করে সৃষ্টিশীলতা ও শিল্পের পেছনে তারা কিছুটা হলেও ব্যয় করতো।

এথেন্সের এত গৌরব প্রতিবেশী নগররাষ্ট্রগুলো ভাল চোখে নিলো না। ফলে উন্নতির চরমে পৌঁছেও এক সময় দুর্যোগ নেমে আসে এথেন্সে। স্পার্টার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পেলোপনেসীয় লিগ ও এথেন্সের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ডেলিয়ান লিগের অন্তর্ভূক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বেঁধে যায় যুদ্ধ। ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধে চুড়ান্তভাবে পতন ঘটে এথেন্সের। যুদ্ধ শুরুর দু’বছরের মাথায় মহামারি প্লেগরোগে আক্রান্ত হলো এথেন্স। এ রোগ এতই ছোঁয়াচে ও ভয়ংকর যে নিমিষেই একটি জনপদকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪২৯ খ্রিস্টাব্দে মারা গেলেন এথেন্সের দীর্ঘ দিনের কর্ণধার পেরিক্লিস। ৩৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স চলে যায় স্পার্টার অধীনে। ততদিনে সবগুলো শহর যুদ্ধের ধকল সইতে না পেরে চূড়ান্তভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে।

গ্রিক সভ্যতা যখন এই আত্মঘাতী যুদ্ধে ভেঙে পড়ছে, গ্রিসের উত্তর দিকের একটি দেশ তখন মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এর নাম মেসিডোনিয়া। হেলেনীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগেছিলো এই ভূখন্ডে। তাই ইতিহাসে এর পরিচয় হয় হেলেনিস্টিক সভ্যতা নামে। এই ভূখন্ডের রাজা ছিলেন দ্বিতীয় ফিলিপ। তিনি ৩৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই ভূখন্ডে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে স্পার্টা ছাড়া অন্য সব গ্রিক নগররাষ্ট্র মেসিডোনিয়ার অধিকারে চলে আসে। পারস্য ছিলো রাজা ফিলিপের প্রধান প্রতিপক্ষ। পারস্য বিজয়ের জন্য তিনি সমগ্র গ্রিক শক্তিকে একত্র করার চেষ্টা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে হেলেনিক লিগ নামে একটি মৈত্রী জোট গঠন করলেন। প্রাচ্যভূমি দখলের পাশ্চাত্য পরিকল্পনার বড় ঘটনা এটাই ইতিহাসে প্রথম।


চিত্র: আততায়ীদের হাতে রাজা ফিলিপের মৃত্যুর দৃশ্য

রাজা ফিলিপ প্রাচ্য আক্রমণের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা বাস্তবায়নের আগেই তিনি মারা পড়লেন আততায়ীর হাতে। এটা খ্রিস্টপূর্র্ব ৩৩৬ সালের ঘটনা। এর পরে সিংহাসনে বসলেন তার ২০ বছর বয়সী পুত্র আলেকজান্ডার। পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে আলেকজান্ডার পারস্য সম্রাট জারেক্সেসের মতো ব্যর্থ হননি। প্রাচ্যের ওপর পাশ্চাত্যের বিজয় ইতিহাস তিনিই সর্বপ্রথম নিশ্চিত করেছিলেন। ইতিহাসে আলেকজান্ডারের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ তিনিই পাশ্চাত্যের প্রথম মানুষ যিনি প্রাচ্য জুড়ে তার সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন।

এতদিন পর্যন্ত লোকে জেনেছে শুধু মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, অ্যাসিরীয়, ক্যালদীয় ও পারস্য সাম্রাজ্যের কথা। ইতিহাসের দীর্ঘ পরিসরে ছড়িয়ে ছিলো শুধু এসব সাম্রাজ্যের দাপটের কথা। আলেকজান্ডার এসব সাম্রাজ্যের পাশাপাশি ইতিহাসে প্রথম যুক্ত করলেন ইউরোপের মেসিডোনীয় সাম্রাজ্যের কথা। তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিলো ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা - এ তিন মহাদেশ জুড়ে।


চিত্র: পারসীয়দের ওপর মেসিডোনীয়দের আক্রমণের দৃশ্য

আলেকজান্ডার প্রথমেই দৃষ্টি দিলেন তার পিতার রেখে যাওয়া প্রতিপক্ষ পারস্য সাম্রাজ্যের দিকে। ততদিনে পারস্য সাম্রাজ্যের বয়স ২০০ বছরেরও বেশি। সেইসময় পর্যন্ত সভ্যতার ইতিহাসে এ সাম্রাজ্য ছিলো আয়তনে সবচেয়ে বড়। এ বিশাল সাম্রাজ্যকে দখল করার জন্য পশ্চিম দিক থেকে এগিয়ে এলেন আলেকজান্ডার। ৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হেলেসপন্ট অতিক্রম করে এসে পারস্য সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন আলেকজান্ডার। একের পর এক পারস্য শহর জয় করে এগিয়ে যেতে লাগলেন মিসরের দিকে। ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে পারস্য শহর ব্যাবিলন, সুসা, পার্সেপোলিস, ইকতেবানা, জেরুজালেম সবই চলে এলো আলেকজান্ডারের হাতে।

৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের সাথে যুদ্ধে পরাজয়ের পর পারস্য রাজ তৃতীয় দারায়ুস তাঁর অধীনস্ত ব্যাকট্রিয়া প্রদেশের শাসনকর্তা বেসাসের হাতে নিহত হন। তৃতীয় দারায়ুসের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। এখানেই শেষ নয়; পারস্য থেকে বিপুল ধনরত্ন নিয়ে তিনি অগ্রসর হলেন ভারতের দিকে। আফগানিস্তান বিজয় করে তিনি খাইবার গিরিপথ অতিক্রম করে ঢুকলেন ভারতবর্ষে। সিন্ধুর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত করলেন তাঁর সাম্রাজ্য। এই ভারতে এসেই আলেকজান্ডার তার সেনাপতিকে বলেছিলেন, “সত্যিই সেলুকাস! কী বিচিত্র এ দেশ।” কথিত আছে যে, ভারতের কাঁঠাল খেয়ে আলেকজান্ডারের সৈন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। ইতোমধ্যে মেসিডোনিয়া থেকে তাদের বেরিয়ে আসার দশ বছর পেরিয়ে গেছে।


চিত্র: তৃতীয় দারায়ুসের মৃতদেহ দেখছেন আলেকজান্ডার

তাই আলেকজান্ডার আর না এগিয়ে ক্লান্ত সৈন্যদের নিয়ে রওনা দিলেন স্বদেশের পথে। এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় ব্যাবিলনে পৌছে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আলেকজান্ডার। এটা ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ঘটনা। কথিত আছে, আলেকজান্ডার বলতেন মৃত্যুর পরে তার হাত দুটি যেন কফিনের দু পাশে ঝুলিয়ে দেয়া হয় যাতে পৃথিবীর মানুষ দেখতে পায় দুনিয়া বিজয়ী বীর নিঃস্ব অবস্থায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। গল্পে আছে, আলেকজান্ডার নাকি পৃথিবীর মানচিত্র দেখে হতাশ হয়ে বলেছিলেন- “হায়! দখল করার মতো কোন দেশই আর অবশিষ্ট নেই”।

আলেকজান্ডার ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটলের ছাত্র। তার বাবা ফিলিপ ছেলেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা দার্শনিকের কাছে পড়িয়েছিলেন। তাই আলেকজান্ডার জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি খুবই উৎসাহী ছিলেন। তিনি ছিলেন জ্ঞান ও শিল্পের পৃষ্ঠপোষক। তবে আলেকজান্ডার যুদ্ধের ময়দানে খুবই নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিতেন। থিবিস অধিকার করে শুধু তার বীরত্বকে প্রদর্শন করার জন্য ৭০০০ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। এটাই ইতিহাসের এক অদ্ভুত সত্য। যে যত বড় হত্যাকারী ইতিহাসে সে ততো বড় বীর। বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতাও করতেন তারাই।


চিত্র: আলেকজান্ডার কর্তৃক পারসীয় প্রদেশ ব্যাকট্রিয়ার গভর্নর বেসাসের মৃত্যুদণ্ড

অ্যাসিরীয় সম্রাট আসুরবানিপালের (৬৬৮-৬৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মতই আলেকজান্ডার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিচয় দিতেন চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতার। কিন্তু গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীর সেরা লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরি তিনি স্থাপন করেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। পুরনো সভ্যতা মিসরের নীল নদের মোহনায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া শহর। এছাড়াও সিরিয়ায় এন্টিয়ক নামে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী তিনি গড়ে তোলেছিলেন। আলেকজান্ডার আলেকজান্দ্রিয়াকে তাঁর রাজধানী বানাতে চেয়েছিলেন। এখানে স্থাপন করেছিলেন লাইব্রেরি। তাঁর লাইব্রেরিতে প্রায় পাঁচ লক্ষ বই ছিলো। আসুরবানিপালের নিনেভার লাইব্রেরির পরে এটা সভ্যতার ইতিহাসের দ্বিতীয় বড় লাইব্রেরি। শুধু লাইব্রেরি নয় এটা ছিলো একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়, মিউজিয়াম, শিক্ষাকেন্দ্র, গবেষণা ও জ্ঞান চর্চার জায়গা।

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য তাঁর সেনাপতিদের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। আলেকজান্দ্রিয়াকেন্দ্রিক আফ্রিকান অংশটি নেন টলেমি, গ্রিস ও মেসিডোনিয়াকে নিয়ে ইউরোপীয় অংশটি নেন এন্টিগোনাস আর মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ে এশীয় অংশটি নেন সেলুকাস। সেলুকাস রাজধানী করেন এন্টিয়ককে, টলেমি করেন আলেকজান্দ্রিয়াকে। টলেমির সময়ে আলেকজান্দ্রিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার চর্চায় সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়। আলেকজান্দ্রিয়া যেন হয়ে ওঠে নতুন এথেন্স।


চিত্র: আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ

বিভিন্ন দেশের বড় বড় পন্ডিতদের স্কলারশিপ দিয়ে টলেমি আলেকজান্দ্রিয়ায় নিয়ে যান। আজকে আমরা বিদ্যালয়ে যে জ্যামিতি পড়ি, তার প্রায় পুরোটাই টলেমির সময়ে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে বসে আবিষ্কার করেন গণিতবিদ ইউক্লিড। জ্যামিতির ওপর রচিত ইউক্লিডের ‘এলিমেন্টস’ বইটি ছিলো তের খ-ে সমাপ্ত। বিদ্যালয়ে যে জ্যামিতি শিখানো হয় তার অধিকাংশই নেওয়া হয় ‘এলিমেন্টস’ এর প্রথম ছয় খ- থেকে। ইউরোপে মধ্যযুগে বাইবেলের পর সবেচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো এই বইটি।

শুধু আলেকজান্দ্রিয়া নয়, আলেকজান্ডারের সাথে আরেকটি শহরের ইতিহাসের যোগসূত্রও আলোচনার দাবী রাখে। সেই শহরের নাম জেরুজালেম। ইতিহাসের সেই অমর জেরুজালেম! আলেকজান্ডার মিসর ও জেরুজালেম দখল করেন ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসর ছেড়ে অগ্রসর হন পুর্ব দিকে। আলেকজান্ডার যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই শাসন ক্ষমতায় বসিয়েছেন মেসিডোনীয় বা গ্রিকদের। এদের সাথে স্থানীয়দের রক্তের মিশ্রণ ঘটে যায়। বর্তমান আফগানিস্তানের কটা চুলের অধিকারীরা এ সংমিশ্রনের সাক্ষ্য বহন করছে। তাদের শরীরে বয়ে চলেছে গ্রিক ও মেসিডোনীয়দের রক্ত। জাতিতে জাতিতে এই মিশ্রণ পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর এবং তাই হওয়া উচিত আরও বেশি পরিমাণে। কারণ জাতিগত সংকীর্ণতা ও দম্ভ পৃথিবীতে শুধু বিপর্যয় ও মানবতার অবমাননাই ঘটিয়েছে।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×