প্রসঙ্গ স্টার জলসা/জি বাংলা,
এমন এক সময়ে এসে দাড়িয়েছি এ নিয়ে কথা না বললেলই নয়, আমি এ পোস্টে শুধু স্টার জলসা লোকে কেন দেখে এর কয়েকটি লজিক দেখানোর চেষ্টা করেছি পাশাপাশি এর কয়েকটি দিকও বলেছি।
স্টার জলসা/জি বাংলা এদেশে এত জনপ্রিয় কেন?
১. দীর্ঘ মেয়াদী বিনোদন :- ম্যাক্সিমাম টিভি চ্যানেল যেসব অনুষ্ঠান রয়েছে তা একটানা দেখা বোরিং, যেমন খবরের চ্যানেল না মুভি চ্যানেল এসব সারাদিন ধরে দেখা কষ্টকর+বোরিং, আর ডিসকভারি বা অন্যান্য ক্যাটাগরির চ্যানেলগুলুর সাথে বয়সের একটি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।।
এদেশে সারাদিন ধরে টিভি সাধারণত বয়স্করাই দেখে, আর একটা বয়সে গিয়ে তরুণদের মত খেলাধুলা বা গান বা মুভি দেখতে তেমন ভাল লাগে না, আর যেহেতু টিভি প্রতিদিন দেখা হয় তাই এমন কিছু দরকার যা প্রতিদিন দেখতে ভাল লাগে পাশাপাশি মজাদারও।
সিরিয়াল এক্ষেত্রে পারফেক্ট, দীর্ঘ মেয়াদী, মজাদার, আকর্ষণীয়।।
এখন আসি,
স্টার জলসা/ জি বাংলার সিরিয়ালই কেন :- মানুষ টাকা দিয়ে ডিশ কিনে যাতে আকর্ষণীয় কিছু দেখতে পারে, বাংলাদেশি সিরিয়ালগুলু যা দেখায় ওতে আমাদের আশেপাশের স্পট ব্যাবহার করে, অন্যদিকে স্টার জলসার শুটিং সেট গুলি অধিক জাক-জমক, সুদর্শনীয়!
বিজ্ঞাপন : স্টার জলসায় এক ঘন্টায় বিজ্ঞাপন দেয় ৪ টি ( প্রতিটি ৩-৪ মিনিট করে) অন্যদিকে বাংলাদেশী চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের নির্দিষ্ট কোন শিডিউল নেই, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দেখার মুড নষ্ট করে দেয়।।
স্টার জলসা / জি বাংলার সিরিয়ালের কিছু দিক :
ওদের সিরিয়ালে নারী নির্যাতন বা পারিবারিক বৈষম্যের যে দিক তোলে ধরা হয় তা অধিকাংশেই ঠিক,
কিন্তু এরা যেভাবে শাশুড়ি বউ বা স্ত্রী স্বামীর ঝগড়া দেখায় তা এক কথায় কুরুচিপূর্ণ । নাটকে নাটকীয়তা থাকবেই তাই বলে দীর্ঘমেয়াদী সিরিয়াল কিন্তু দর্শকদের উপর প্রভাব ফেলে । তাই দিনের পর দিন একটি পরিবারের মিলমিশ বা নায়িকার সম্পূর্ণ নিষ্পাপ চরিত্র দেখার চেয়ে কিন্তু পরিবারটির ঝগড়া দেখে যাওয়া বা ভিলেনের ভিলেনগিরী দর্শকপ্রিয়তা পায়।
অধিকাংশ সিরিয়ালের কাহিনী গাঁজাখুরী, ট্রু লি, পুরনো বাংলা সিরিয়ালের সভ্য রূপ!!!
এগুলু বাংলার গিন্নীদের অতি কল্পনা প্রবণ বানাচ্ছে যা উনারা উনাদের বাস্তবে এপ্লাই করতে যান আর বড় সরো ধাক্কা খান !!!
পরচর্চা শেখার জন্য সিরিয়ালগুলুর চেয়ে উত্তম কিছুই নেই!!
পরকীয়া কখনোই আমাদের সংস্কৃতির অংশ ছিল না! কিন্তু এখানে ভালবাসার নাম করে যেভাবে পরকীয়াকে শুদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে তা অসভ্যতা ছাড়া কিছুই নয়।
অধিকাংশ সিরিয়ালে দেখানো হয়, বাড়ির বড়রা হচ্ছে ভিলেন নায়িকার পথের কাটা আর নায়িকা ধোয়া তুলসি পাতা, এতে দর্শকরা যে দিন দিন প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলছে বুঝতে পারছেন??
বাস্তবে কি তাই??
সব সময় শিখে আসছি গুরুজন দেব সমূতুল্য! আর সিরিয়ালগুলুতে গুরুজনদের ভিলেন হিসেবে দেখানো হচ্ছে,
হ্যা দুই একজন খারাপ হয়ত আছে বা এইটা তো সত্যি না, এরা অভিনেতা কিন্তু দুইটি চ্যানেলের, ২০ টি সিরিয়ালেই যখন বড়দের ভিলেন হিসেবে দেখানো হয় এটা দুশ্চিন্তা হয়ে দাড়ায়।।
তবু স্রেফ কাহিনী বাজে হলেও ওদের ব্যাবসা পলিসির জন্য চ্যানেলগুল এত জনপ্রিয়।।
এবার আসি বাংলাদেশী চ্যানেল প্রসঙ্গে,
সব চ্যানেলই যে খারাপ চলছে তা নয়, এমন হলে তো তারা ব্যাবসা করতে পারত না। এছাড়া কয়েকটি চ্যানেল আছে সত্যই ভাল জনপ্রিয় যেমন সময় টিভি, যমুনা নিউজ বা গান বাংলার নিয়মিত দর্শক শ্রেণি রয়েছে, আর বাকিগুলু দেখা হয় কিন্তু নিয়মিত না।। বাংলাদেশী যে সিরিয়ালগুলু চলে ওইগুলু কিন্তু চলছে আর এদের দর্শক হচ্ছে প্রধানত তরুণ সমাজ।।
আর এরা মোটেও আমদর্শক নয়, কারণ ওরা সর্বোচ্চ ২০-৩০% হবে!!
সত্যি বলতে কি অধিকাংশ স্টার জলসার বাংলাদেশী দর্শকরা ঈদ ছাড়া নিজেদের দেশী সিরিয়াল খুব খুব কম দেখে।।
বিদেশী চ্যানেলের দর্শক ফিরিয়ে আনতে হলে, চ্যানেল বন্ধ করে লাভ হবে না, বরং ওদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাবসা করতে হবে, চ্যানেলের অনুষ্ঠান স্রেফ দেশীয় গন্ডীতে রাখলে হবে না, বাইরের দর্শকরাও যাতে দেখতে পারে এমন অনুষ্ঠান রাখতে হবে।।
নকল নয় কিন্তু চমকপ্রদ ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু অনুষ্ঠান করতে হবে।
বাংলাদেশের ফিল্ম/নাটক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ভাল ধারণা নেই তবে যদ্দুর বুঝি এদেশের অভিনেতাদের প্রফেশনালিজমের খুব অভাব অথচ যারা প্রফেশনালি কাজ করছে তারাই এখনো টিকে আছে, অভিনয় করছে।।
আর অনুষ্ঠান ভাল না হলে, দেশ প্রেমের দোহাই দিয়ে দর্শক ধরে রাখা যাবে না।।
[ সবটাই আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে লেখা, আমি হয়তো সার্বিক দিক তুলে ধরতে পারিনি এজন্য ক্ষমাপ্রার্থি, আর যুক্তিতে দূর্বল অংশ থাকলে তা খন্ডানোর জন্য সাদরে আমন্ত্রণ ☺☺ ]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০০