somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্দকার রাজীব হোসেন এর কথা

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি খন্দকার রাজীব হোসেন এর অফিশিয়াল ফেসবুক থেকে সংগ্রহকৃত

আমার নাম খন্দকার রাজীব হোসেন। আমি ৪৬ বিএমএ লং কোর্সের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোর অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে কমিশন লাভ করি। ২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় তদকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। উক্ত ঘটনার সমসাময়িক কালে এবং পরবর্তী সময়ে আমার জীবনের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। ভারতের সুদূরপ্রসারী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে, আওয়ামী সরকারের পরিকল্পনা এবং তদকালীন কিছু সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বেসামরিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সরাসরি এবং পরোক্ষ ইন্ধনে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন হয়।

এই হত্যাকাণ্ড যখন শুরু হয়, তখন সেনাবাহিনীর আশ্চর্যরকম নীরবতা দেখে প্রথমে হতভম্ব হলেও পরে উদ্ধার অভিযানের চেষ্টা, এই ঘটনা চলাকালে হত্যাকারীদের ফিজিক্যালি বাঁধা দেয়ার এবং রেস্কিউ করার চেষ্টা, তদন্তে সহায়তা করা, ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা এবং সুবিচারের জন্য সোচ্চার ছিলাম। একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিধিতে ৩৭ লং কোর্সের মেজর হেলাল, ৪৩ লং কোর্সের ক্যাপ্টেন রেজা, ৪৬ লং কোর্সের ক্যাপ্টেন ফুয়াদ এবং ৪৯ লং কোর্সের ক্যাপ্টেন সুবায়েল সম্পৃক্ত ছিলেন।

হত্যাযজ্ঞের ব্লু প্রিন্ট বাস্তবায়নকারী একই চক্র, হত্যাযজ্ঞ পরবর্তী দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের সাইলেন্ট করে দেয়ার জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যেয়ে, আমাদের ৫ জন অফিসারের বিরুদ্ধে তাপস হত্যাচেস্টা নামক এক অবান্তর অভিযোগের সূচনা করে। এরপর একটি বছর বিভিন্ন অজ্ঞাত স্থানে কিংবা জ্ঞাত স্থানে, গোয়েন্দা সংস্থার গোপন কিংবা জ্ঞাত নির্যাতন কেন্দ্রে গুরুতর মানবাধিকার লংঘন এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হই। তদকালিন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক সিদ্দিকির নির্দেশে এবং ডিজিএফআই এর গুটিকয় উচ্চাভিলাষী গোয়েন্দা কর্মকর্তার যোগসাজশে, আমাদের সাথে এই আচরণ করা হয়। পরিশেষে একটি অন্যায়ভাবে গঠিত এবং সেনাবাহিনীর মৌলিক আইন লঙ্ঘন করে এমন একটি কোর্ট মার্শাল গঠন করা হয়, যার বিচারক মিথ্যাচার করে আমাদেরকে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের মাধ্যমে কারাগারে নিক্ষেপ করে। আত্মপক্ষ সমর্থনের নুন্যতম সুযোগ আমাদের দেয়া হয় নাই।

হাসিনাশাহী’র কারাগারে আমরা গুরুতর মানসিক নির্যাতনের মধ্যে বসবাস করি। কারাগার থেকে মুক্ত হবার পর বিগত ১০ বছরের অধিক সময় আমরা বৃহত্তর কারাগারে দণ্ডিত ছিলাম। আমাদেরকে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় হয়রানির শিকার হতে হয়। জীবিকা উপার্জনে প্রতিবন্ধকতা, পরিবার জীবন গঠনে বাঁধা, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং হত্যার হুমকি প্রদান, কোথাও চাকুরি করতে গেলে সেখানে কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়ে চাকুরিচ্যুত করা, এনএসআই কর্তৃক দেশের সর্বত্র আমাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি রাখা- এই সমস্ত কার্যক্রম সামগ্রিক হয়রানির কিয়দংশ। এছাড়া সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই- যারা আমাদের বিরুদ্ধে সকল হয়রানি এবং দণ্ডের পিছনের মূল নিয়ামক- তাঁরা তাঁদের কাউন্টার টে*রোরিজম এন্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা সিটিআইবি সংস্থার মাধ্যমে আমাদেরকে পদে পদে হয়রানি, গু*মের হুমকি, কখনও অপহরণ করে সাময়িক আটক, নিয়মিত ভিত্তিতে দেশত্যাগের বিষয়ে আল্টিমেটাম জারি রেখেছে।

আমাদের প্রধান অপরাধ ছিল পিলখানা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করা, হত্যাযজ্ঞের পিছনে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনের বিরুদ্ধে কথা বলা, রাজনৈতিক নেতা ব্যারিস্টার তাপসের সরাসরি ইনভল্ভ থাকার কথা বলা এবং সর্বোপরি ভারতের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মসৃণ বাস্তবায়নের পথে একটি বাঁধা হওয়া- হোক সে ক্ষুদ্র।

বিগত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত পিলখানা হত্যাযজ্ঞ পুনঃ তদন্তের জন্য গঠিত স্বাধীন কমিশনের রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- তাপস হত্যাচেস্টার অভিযোগে যা কিছু বিচারিক কার্যক্রম কিংবা বিচার বহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, তাঁর পুরোটা অবান্তর, মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। কমিশন তাঁর ফাইন্ডিংসে যাবার আগে বিস্তারিত তদন্ত করে। কমিশন মনে করে, ভারতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বলয়ের ব্লু প্রিন্টের অংশ হিসাবে এই মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের ফাঁসানো হয়েছিল। আরও একটি বিষয়ে সুস্পষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে। সেটি হল, আমাদের এই মিথ্যা অভিযোগের পিছনে কলকাঠি যারা নেড়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কিংবা বেনিফিশিয়ারি। এবং মোটামুটি সকলেই মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকির ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন।

কমিশনকে ধন্যবাদ। বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা এই কথাই বলে এসেছি। আজ আমাদের বক্তব্যের প্রাতিষ্ঠানিক সত্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য, কমিশনের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা। রাষ্ট্রীয় জুলুম এবং অমানবিকতার যে বলয়ে আমরা এবং আমাদের পরিবার বিগত ১৬ বছর কাটিয়েছি, তার কোন প্রতিকার হবার সুযোগ নাই- আমরা জানি। তবে সত্য উন্মোচিত এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়া, আমাদের এবং নিজেদের পরিবারের জন্য একটি বড় ধাপ। যদিও আজ ফুয়াদের পিতা ভগ্ন হৃদয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন, সুবায়েলের পিতা কোন কিছু বুঝার অবস্থায় নাই, মেজর হেলাল এবং ক্যাপ্টেন রেজার পিতামাতা বার্ধক্যের সম্মুখ পর্যায়ে এবং আমার আম্মা ব্রেইন স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী। তাও আমাদের পরিবারের অবশিষ্ট সুস্থ অগ্রজেরা একটু হলেও সান্ত্বনা পেলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আমার শিশু সন্তান যখন বড় হয়ে জানবে, তার পিতা এরকম গুরুতর অভিযোগে দণ্ডিত আসামী, সে তখন ঘাবড়ে গেলেও, এই প্রতিষ্ঠিত সত্য তাঁকে সান্ত্বনা দিবে।

আমি খন্দকার রাজীব হোসেন আজকের পর থেকে, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে নিয়মিত লেখা শুরু করলাম। এখন লেখা যায়। কারণ অনেক সত্য আজ কমিশনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত।

ধন্যবাদ

ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) খন্দকার রাজীব হোসেন
৪৬ বিএমএ লং কোর্স
কোর অফ ইঞ্জিনিয়ার্সের অফিসার এবং প্যারা কমান্ডো
লেখক এবং সমাজকর্মী
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×