somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‌্যাডক্লিফ লাইন

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভেদের রেখাচিত্র আঁকা হলো যার হাতে তিনি ছিলেন আইনজীবী এবং ভারতের সীমানা নির্ধারণে গঠিত র‌্যাডক্লিফ কমিশনের প্রধান। তিনি ছিলেন র‌্যাডক্লিফের প্রথম ভাইকাউন্ট। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালের ৩০ মার্চ ইংল্যান্ডের ডেনবিশায়ারের ল্যানিচ্যান এ।




র‍্যাডক্লিফ লাইন



প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বাধ্যতামূলকভাবে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন। কিন্তু ক্ষীণদৃষ্টির কারণে তাঁকে ফ্রন্ট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর পরে তিনি সৈনিকদের শ্রম দপ্তরে যোগ দেন। হুম বলছিলাম ভারত বিভাজন কারী সেই ঐতিহাসিক মানুষটির কথা । যার নাম সিরিল জন র‌্যাডক্লিফ ।




সিরিল জন র‌্যাডক্লিফ(১৮৯৯-১৯৭৭)



যুদ্ধের পরে র‌্যাডক্লিফ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি অল সোলস কলেজ এ ফেলোশীপের জন্য মনোনীত হন। তিনি আইন শাস্ত্র এবং আইনী বিষয়াদি সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। সিরিল র্যা ডক্লিফ ১৯২৪ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে বার এ যোগ দেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ১৯৪১ সালে তিনি এ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি পুনরায় আইন পেশায় ফিরে যান। ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইনের অধীনে র‌্যাডক্লিফকে ভারতে দুটি সীমানা নির্ধারণকারী কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। কমিশন দুটি হলো ‘বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন’ এবং ‘পাঞ্জাব বাউন্ডারি কমিশন’। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ৮ জুলাই ভারত আসেন।

তিনি ভারত বিভাগ, নতুন দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্র এবং আন্তর্জাতিক সীমা নির্দেশ করে তাঁর রিপোর্ট পেশ করেন। তাঁর পরিকল্পনা ভারতের ইতিহাসে র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ হিসেবে পরিচিত। তাঁর প্রস্তাবনায় ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।

বাংলা ও পাঞ্জাবকে বিভক্ত করেছিলো র্যা ডক্লিফ লাইন। যার ভিত্তিকে মানচিত্র পেয়েছে ভারত ও পাকিস্তান ।কাগজে কলমে ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে ভাগ করতে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিলো তাকে।কিন্তু যে সীমানা তিনি এঁকেছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের, তা আজো উপমহাদেশে বড় উত্তেজনার মূল কারণ। ব্রিটিশ ভারতে তখন জনসংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।



দেশভাগ নিয়ে আলোচনা করছেন জওহরলাল নেহেরু, লর্ড মাউন্টেব্যাটেন ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

তবে একই সাথে তারা মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।১৯৪৭ সালের অগাস্টে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ছিলো দুটি বড় প্রদেশ, যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমরা ছিলো প্রায় সমান সংখ্যক। এর একটি হলো পূর্ব দিকে বাংলা আর পশ্চিম দিকে পাঞ্জাব। সিরিল র‌্যাডক্লিফ এর দায়িত্ব ছিলো এই দুটি প্রদেশের মধ্যে বিভক্তি লাইন টেনে দেয়া, যা ছিলো অত্যন্ত জটিল কাজ।এ কাজটি করতে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে কিছু অনড় উপদেষ্টা, একটি পুরনো মানচিত্র আর জনসংখ্যার ভুল চিত্র সম্বলিত তথ্য।

শত শত বছর পাশাপাশি বসবাস করে আসা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে রাতারাতি এ জাতীয় বিভাজন রেখা টানা অসম্ভব। অথচ সেটাই করলেন র‌্যাডক্লিফ। হাতে সময় নেই, বুঝতে পারছেন। স্বাধীনতা পাওয়ার দুই দিন পর তার সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলো। মধ্যরাতে স্বাধীনতা প্রাপ্তির আনন্দে উৎসবে মাতল কোটি কোটি লোক, অথচ তখনো তারা জানেই না, কোন দেশের নাগরিকত্ব ইতোমধ্যে জুটেছে তাদের কপালে।


১৯৪৯ সালে সিরিল র‌্যাডক্লিফল’ লর্ড এবং ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টির বারনেথ (Warneth) এর আজীবন ব্যারণ পিয়ের র্যােডক্লিফ হন। আইনপেশার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এর তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হন। তাঁর সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটকে পুনর্গঠন করা হয়। এছাড়া তিনি ১৯৫৭ সাল থেকে সরকারের আর্থিক এবং ঋণ পদ্ধতি সম্পর্কিত তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৪ সালে Knight Commander of the Order of the British Empire (KBE) এবং ১৯৪৮ সালে Knight Grand Cross of the Order of the British Empire (GBE) উপাধি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে র্যাযডক্লিফ প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য হন। তিনি ১৯৬২ সালে বংশানুক্রমিক পিয়ের নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে তাঁর নামে লিঙ্কনস ইন এর চ্যান্সেরি ব্যারিস্টার এর চেম্বারের নামকরণ করা হয় র্যা ডক্লিফ চেম্বার। সিরিল জন র‌্যাডক্লিফ ১৯৭৭ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনে মারা যান ।


তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের নতুন পরিচয়ে নতুন জীবন শুরুর লক্ষ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ লোক র‌্যাডক্লিফের টেনে দেয়া সীমান্তরেখা অতিক্রম করল। প্রায় ১০ লাখ লোক মারা গেল জাতিগত দাঙ্গায়। একদিকে হিন্দু আর শিখ, অন্যদিকে মুসলমান। নিজের কাজের পরিণতি দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন র‌্যাডক্লিফ। কাজের মজুরি হিসেবে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ৩ হাজার পাউন্ড নিতে রাজি হননি তিনি। ভারত ছাড়ার আগে নিজের সব কাগজপত্র দলিল-দস্তাবেজ পুড়িয়ে দিলেন। দেশে ফেলার পর তাকে ‘নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ পদকে ভূষিত করে ব্রিটিশ রাজ। তবে পাঞ্জাবি আর বাঙালিরা যে তাকে কোন চোখে দেখবে, তা নিয়ে কখনোই কোনো সংশয় ছিল না তার মনে। ‘প্রায় ৮ কোটি লোক চিরকাল ক্ষুব্ধ হয়ে থাকবে আমার নামের ওপর। আমি চাই না তারা কোনোদিন খুঁজে পাক আমাকে’- বলেছিলেন একবার।

এ কারণেই হয়তো বাকি জীবনে আর কখনো ভারত কিংবা পাকিস্তানে পা রাখেননি তিনি।


তথ্যসূত্র : বি.বি.সি. নিউজ বাংলা ২ অগাস্ট ২০১৭ , ভোরের কাগজ ও টি.এম যায়েদ হোসেন , বাংলাপিডিয়া


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×