somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা দিবস কি কেবলই শফিক রেহমানের একক আমদানি? ভালোবাসার শক্তিই আলাদা:D

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শফিক রেহমান কি এতটাই প্রভাব বিস্তারকারী?
অনেকে এহেন অশ্লীল(তাহাদের ভাষায়) দিবসের জন্য শফিক রেহমানকে একক ভাবে দায়ী করে থাকেন। আমি দ্বিমত পোষণ করছি। তখন ইন্টারনেট ছিল না বা ব্লগ ছিল না । তাই হয়ত ভেলেন্টাইন আমাদের ঘরে প্রবেশ করে নি। কিন্তু বিশ্বের তাবৎ মানুষের খুব দুর্বল জায়গার নাম ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার আবেদনকে নিয়ে যে দিবস: সেটা কি করে গ্লোভাইজেশন এর যুগে আপনার বৈঠক খানায় না ঢুকে বাইরে থাকবে? এত মৌলানা, হেফাজত, ধর্মভিত্তিক দল, সুশীল ব্যক্তি, মুরুব্বী কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারলো না এহেন তথাকতিত নষ্ট দিবসকে? এই প্রশ্ন গুলার উত্তর খুঁজলে পেয়ে যাবেন আমার শিরোণামের সার্থকতা।মোটা দাগে বলতে চেয়েছি এটা কেবল শফিক রেহমান সম্ভব করেনি বা করতেও পারতো না যদি না এই দিবসটার নাম ভালোবাসা দিবস না হতো। দিবস ইট সেল্ফ অবদান রেখেছে তার ব্যাপকতায় ।

কর্পোরেট স্বার্থ এবং মানুষের আগ্রহ:

এই দিবসের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারার কারণ কি? কম কথা্য় উত্তর দিলে বলতে হবে সংস্কৃতি/ দিবস মানচিত্র মেপে চলে না, মুরুব্বীদের চাবুকেও নত হয় না এবং স্থীর ও থাকে না। সংস্কৃতিতেও গ্রহণ বর্জন প্রক্রিয়া চলমান। এটা বাঙালী সংস্কৃতি নয়, এটা মুসলমান সংস্কৃতি নয় এ সব ফতোয়া গুলা কর্পোরেট দুনিয়ায় তথা বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থায় নাকচ হয়ে যায়। কর্পোরেট স্বার্থ এবং মানুষের আগ্রহ দু'য়ে মিলে উৎসব গুলা এখন সার্বজনীনতা পেয়ে যাচ্ছে। চায়নার মত দেশে বড়দিনের উৎসব এখন গ্রাম মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মত দেশে তাই ১লা নববর্ষ এখন একমাত্র দলনিরপেক্ষ, ধর্ম নিরপেক্ষ বড় উৎসব। ভালোবাসা দিবস তাই নগর নাগরদে ছাড়িয়ে গ্রামেও প্রবেশ করেছে। এখন এই দিবসের দোষটা কোথায় ? অথবা শফিক রেহমানের দোষই বা কি? ভালোবাসা করা যাবে না , ভালোবাসা ভালো নয় এমন কেউ কিন্তু বলছে না। দিবসটা উদযাপনে প্রক্রিয়া নিয়ে তাহারা হয়ত উস্মা প্রকাশ করেন। ধর্ম বারণ করা তাজিয়া মিছিলতো হয় এই দেশেই!! গায়ে পিঠে চাবুকে রক্তাক্ত একদল লোক মিছিল করার ভয়াবহ দৃশ্যের চেয়ে ভালোবাসা দিবসে কি বেশী কিছু হয়? কোন কোন উচ্ছলতা মাত্রা অতিক্রম যদি করে ও থাকে তাহলে সেট নিশ্চয় তাজিয়া মিছিলের চেয়ে খারাপ নয়!! রাজনৈতিক বিক্ষোভ মিছিল শেষে গাড়িতে অগ্নিউৎসব নিশ্চয় এর চেয়ে মন্দ কাজ! এমন আরো উদাহরণ আছে ধর্মের দিক দিয়ে দেখলে। ফার্ম গেইটে যে কুতুবাগের আলোর ঝলকানি দেখলাম, যে এলাহী কান্ড দেখলাম সেটা নিয়ে কি বলবেন? উরস শরিফ নামের কিছু কি আছে ধর্মে? সে গুলা কেমনে মহা সমারোহে চলে?এই সব উরস শরিফের আমদানিকারকের নামতো কেউ বলে না। নাকি সে গুলাও শফিক রেহমানের কাজ? ভালোবাসা নিয়ে ঘর করা যায়, এত এত নাটক সিনেমা বানানো যায়, দলের প্রতি, নেত্রীর প্রতি এত এত ভালবাসা আমাদের অথচ আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবস থাকবে না সেটা কি করে হয়?

শীতের শেষে প্রথম ফাগুনের পরের দিন ভালোবাসা দিবস - মন্দ কি?
শীতকে বিদায় জানতে হাজির হয় ১লা বসন্ত। হলুদ শাড়ি পাঞ্জাবীতে যখন সে দিন রাস্তা, রেস্তোরা, বটতলা শোভিত হয় তখন মনটাই কেমন রোমান্টিক ও নরম হয়ে যায়। সেটার রেশ না কাটতেই আপনাকে উইশ করে যাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভাই এত এত ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, জাতিসংঘ দিবস পালন করতে পারি সেখানে না হয় ভালোবাসা দিবসটাকেও একটু জায়গা দিই। অবশ্য জায়গা সে করেই নিয়েছে। সেন্ট ভেলেন্টাইন কে ছিলেন, কোন ধর্মের ছিলেন এই গুলা আসলে ব্যবহারিক কথা নয়। আর বাংলাদেশে ভেলেন্টাইন দিবস পালন করা হয় না । করা হয় ভালোবাসা দিবস হিসাবে। কথা অবশ্য একই। সেটা হলো এই দিনটা ভালোবাসার আবেদন নিয়ে। তরুন তরুনীর উচ্ছলতাকে বেহায়াপনা বললে আপনি বলতে পারেন। যুগে যুগে তরুণরা এমন তকমা পেয়েই এসেছেন। আজকে যারা মুরুব্বী তারাও পুরনো সমাজের কিছু না কিছু ভেঙ্গেই এসেছেন। তরুণের ধর্মই এটাই- বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজই যদি না থাকে সে আবার তরুণ কি? দিবসের একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। অন্য সময় আমরা একা-একা, দিবসের দিন আমরা বহু। আমাদের সম্মিলিত চিৎকার কেবল দিবসের দিন। তাই বলে এটা কোন বাড়াবাড়ি নয়। সবাই এক সাথে বলে কলরবটা বড় হয় কেবল। ভালোবাসা সব দিনের জন্যই থাকে, ইবাদতও সব দিনের জন্যই বরাদ্দ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে ইবাদতের প্রকাশটাও বাড়ে। তাই সেটা একদিনের ধার্মিক বা একদিনের প্রেমিক বা বৈরাগী নয় ঐ যে বললাম দিবসের একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। ইবাদত এবং আচার কালচার ভিন্ন জিনিস। ইবাদত করতে হলে নিয়ত করা লাগে।

বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুকে ইদানিং :
ভালোবাসা দিবস নিয়ে একটা লিখা লিখতে হাতনিশপিশ করছিল। বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুকে ইদানিং পহেলা নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ দিবস, সহ নানা দিবসের আগে আগে দেখা যায় আমাদেরকে সতর্ক করার জন্য "বড় ভাই সুলভ" কিছু লিখা। তোমার জাত যাবে তো যাবে ধর্মও যাবে এমন নানা অসিহত। যা হোক নিয়তি মেনে সে সব ২০০৫ সাল থেকে হজম করে আসছি। উল্লেখ্য আমার বাংলা ব্লগিং এর হাতে খড়ি ২০০৫ সালে। লিখা গুলা একদম যুক্তি নির্ভর নয় সেটা আমি বলবো না কিন্তু আচার কালচারে ধর্ম টেনে আনা অনেক সময় বিপদজনক। হযরত আলী যখন গভর্ণর নিয়োগ দিচ্ছিলেন তখন তিনি একটা কথা বলেছিলেন - যদি নিতান্তই শিরক না হয় তাহলে স্থানীয় উৎসব পার্বনে যেন বাঁধা দেওয়া না হয়। আমি বলছি না ভালোবাসা দিবস না হলে দেশটা ধবংস হয়ে যাবে। ভালোবাসা দিবসের নামে কিছু কিছু অবশ্যই অতিমাত্রার হয়।
আমি বলছি আমরা নিয়ন্ত্রণবাদি না হয়ে সংস্কারবাদী হতে পারি। এতক্ষণ

ভারী ভারী কথা বললাম এবার একটু হালকাতে আসি:
ভালোবাসা দিবসকে যে ভাবে উপভোগ্য এবং উপযোগী করা যায়:
কেবল তরুন তরুনীর ভালোবাসার উদযাপন নিয়ে কিছু কথা :
১, একটা সুন্দর জায়গা বেঁচে নিয়ে উৎকৃষ্ট জামা কাপড় পরে প্রেমিক প্রেমিকা দেখা করতে পারে। পরিবারে অনুমতি নিলে ভালো হয়। সুবিধা হলো পহেলা বসন্তের ভাঁজ ভাঙ্গা জামা গুলা পড়লেই চলবে।

২, সে দিন একটা ভালো কাজের শপথ করতে পারি। প্রেমিক যদি ধোঁয়া গিলে তাহলে প্রেমিকা সে দিনের উঁচিলায় তাকে বলতে পারে -"ভালোবাসা দিবসে আজকে তুমি একটা ভালো শপথ কর।" এইভাবে সিগারেট বর্জন করে তরুনরা দেশের অর্থনীতিতে একটা ভালো অবদান রাখতে পারে।

৩, নব বিবাহিতরা সে দিন ঘুরতে বের হতে পারেন। নব দম্পতি যতই একাকী ঘুরবে ততই তারা পরস্পরকে বুঝবে। (স্বামীরা ডরাইয়েন না মেয়েরে ৪০ টাকা দামের ফুসকা পেলে আর তেমন খরচ করায় না।)মেয়েরা বেশীর ভাগ সময় ঘরে থাকে তাই যতই তাদেরকে ঘুরতে নিবেন ততই আপনি সোহাগী স্বামী হবেন।:) )

৪, শফিক রেহমান আনুক আর শেফালী বানুই আনুক; ভেলেন্টাইন মশাই চুলায় যাক ভালোবাসার কথাইতো চলবে এই দিন আর তো কিছু নয়। ফোন দিন পুরনো ভালোবাসার বন্ধু বান্ধবদের যারা আপনার ফোন লিষ্টে এতদিন অলস পড়ে আছে।
৫, যারা দেশ উদ্ধার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন মুখে এবং অনলাইনে তাহারা দেশেকে ভালোবেসে একটা ভালো কাজ করার শপথ নিতে পারেন এই দিনে।
৬,আমার মত যারা রাজনৈতিক স্ট্যাটাস মারেন তারা শপথ নিতে পারেন আগামী এক মাস ফেসবুকে কোন রাজনীতি ফলাবো না। :) :-B
৭, আজকের দিনটিতে ভাবুন আপনার জীবনে কারা কারা অবদান রেখেছে, কাকে আপনার কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। তাদের সাথে পারলে দেখা করুন, ছবির হাটে বসে মাশরুমের চপ খান এবং এই ফাঁকে জানিয়ে দিন আপনি তার কথা মনে রেখেছেন।
যারা আমার পোস্ট খানা পড়েছেন তাদেরকেও আমার অকৃত্রিম ভালোবাস। অন্তত আজকের দিনটা উদার হই। কালকে না হয় পেট্রোল বোমা মারবো।:D
****************সমাপ্ত*************
ফেসবুক:[email protected]
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×