somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লকডাউনে কুতুব

০৮ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাস্তার পাশের টং দোকানটা খোলা দেখে কুতুব ভাবল একটু চা-টা খেয়ে নিলে মন্দ হয় না । দোকানে প্রবেশের পূর্বে ফাঁকা রাস্তার দুদিক ভালো করে দেখে নিলো সে । মালবাহী ট্রাক, অটো, সি.এন.জি ও রিক্সা ছাড়াও মোটর সাইকেল প্রায়শই চলতে দেখা গেলেও দুপুরের এই সময়টাতে রাস্তা একটু ফাঁকাই থাকে । লকডাউনের কড়াকড়ির জন্য আজ একটু বেশিই ফাঁকা । করোনা মহামারীর কথা ভাবলেই কুতুবের মনটা বিষিয়ে ওঠে । দেশে তো কুতুবের অভাব নাই । কিন্তু করোনার প্রতিষেধক বানানোর মত কুতুব আজও পাওয়া গেল না ! এসব ভাবতে ভাবতে কুতুবের চা প্রায় শেষ হয়ে এলো । এমনই মুহূর্তে দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ঢুকে দোকানদারকে দোকান বন্ধ করতে বলে সামনের দিকে চলে গেল । কুতুবের হৃদ কম্পন শুরু না হলেও এ যাত্রা বেঁচে গেছি বলে মনে মনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে দোকানীকে চায়ের দাম দিয়ে বেরিয়ে সদর রাস্তায় এসে দাঁড়ালো । দোকানীও ভাবল কিছু যখন কইলো না, তাইলে দোকান বন্ধ কইরা কাম নাই ! একটু পরেই পুলিশের পিকআপ ভ্যান আগের রাস্তা দিয়ে ফিরে এসে দেখল সেই চায়ের দোকান তখনো খোলা । ৩/৪ জন পুলিশ সদস্য লাঠি হাতে দ্রুত নেমে দোকানীর পাছায় এক ঘা দিতেই ও মারে, গেলাম রে বলে চিৎকার দিয়ে দোকানী কুতুবের সামনে দিয়েই দিলো ভো দৌড় । ভেতরে দুজন কাস্ট্রমার ছিল, একজনের হাতে চা আরেক জন বসে মনের সুখে চা আর সিগারেট একসাথেই চালিয়ে যাচ্ছিল । আচমকা পুলিশের এহেন আক্রমনে তারা দিশেহারা হয়ে দৌড় দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একজন একশো টাকা জরিমানা গুনল । লুঙ্গি পরা আরেক জনের দৌড়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে লুঙ্গি খুলে গেল । সে বেচারা উঠে কুতুবের সামনে দিয়ে যখন প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো তখন তার পরনে লুঙ্গি ছিল না দেখে কুতুব নিজের লুঙ্গির গিঁঠ পরোখ করতে গিয়ে আবিস্কার করলো সে লুঙ্গি নয় প্যান্ট পরে বেরিয়েছে ।

কুতুব নিজেও কোন দিকে দৌড় দিবে কিনা তা ভাবতেই সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়াতেই সে টুপ করে উঠে পড়লো । রিক্সা কিছুদূর যেতেই পূর্বাভাস ছাড়াই আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হোল । পলিথিন দিয়ে ঢাকতে ঢাকতেই সে অনেক খানি ভিজে গেল । গন্তব্যে পৌঁছে যখন সে রিক্সাওয়াকে জিজ্ঞেস করলো, চাচা কত দিমু ? রিক্সাওয়ালা বলল, ত্রিশ টাকা ! কুতুব আলী ভাবল, ভাড়া তো দশ টাকা, কিন্তু ত্রিশ টাকা চায় কেন ? সে মনে মনে অংক কষতে শুরু করে দিল, যদি লকডাউনের কারনে দশ টাকা এবং বৃষ্টির জন্য দশ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় তাহলে অরিজিনাল ভাড়া সহ মোট রিক্সা ভাড়া ত্রিশ টাকা । হিসেব মিলে গেছে দেখে কুতুব কিছু না বলে ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেল ।

বাড়িতে ফিরে সেদিন কুতুবের খুব দ্রুত ঘুম পাচ্ছিলো । ইদানিং সে তার বউকে বেগমজাদি বলে ডাকে, বেগমজাদিকে সংক্ষেপে সারাদিনের বৃত্তান্ত বলে সে ঘুমাতে চাইলো । কিন্তু বেগমজাদি অত তাড়াতাড়ি তাকে ঘুমোতে দিলো না । সে জিজ্ঞেস করলো, পুলিশ তোমারে কিছু কয় নাই ? পুরো ঘটনা খুলে বলার পরেও একই প্রসঙ্গ যখন আবার আসে কেবল তখনই কুতুব গুল মারতে থাকে । স্বভাব সুলভ হেসে জবাব দিল সে, আরে না আমারে কি কইবো ? তাছাড়া প্রায় সব তো পরিচিতই ! একজন তো আমারে দেখেই সালাম দিল ! আরেক জন কয়, ভাই কই গেছিলেন, চা খেয়ে যান !

বেগমজাদিও বুঝল কুতুবের গুল মারা শুরু হয়ে গেছে । অগত্যা সে তাকে ঘুমাতে দিল । ঘুমিয়ে পড়তেই কুতুব স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেল । কুতুবের এক সহকর্মী একদিন তাকে একজোড়া খরগোশ উপহার হিসেবে দিল । কুতুব বাজারে গিয়ে ভালো খাঁচা কিনে আনলো । খালের ওপাড় থেকে নিজেই কিছু কচি ঘাস তুলে আনলো । মেলা পরিশ্রম করে খরগোশ বেচারাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে কুতুব বারান্দার চেয়ারে বসে একটু জিরিয়ে নেবার সময় তন্দাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল । বেগমজাদি ভাবল, এই সুযোগে খরগোশ দুটোকে একটু খাবার দেওয়া যাক । কিন্তু খাবার দিতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি ! যেই না বেগমজাদি খাঁচার দরজা খুলেছে অমনি খরগোশ দুটো খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির বাইরে চলে গেল । কুতুবের কানে এসে লাগলো, ওগো, খরগোশ ছুটে গেছে ! সম্বিৎ ফিরে পেয়ে কুতুব বলল, কোন দিকে গেছে ? বেগমজাদি হাতের তর্জনী দিয়ে ওই দিকে ইশারা করতেই কুতুব সেই দিকে ছুটে গেল ! পথে যাকে পেল তাকেই জিজ্ঞেস করলো, কেউ খরগোশ দেখেছে কিনা ! ছুটতে ছুটতে কখন যে তার পরনের লুঙ্গি খুলে পড়ে গেছে তা তার জানা নাই । লোকজন বিশেষত মহিলারা যখন তাকে দেখে পালাতে শুরু করলো তখন সে টের পেল তার পরনে লুঙ্গি নাই । দ্রুত পাশের হিন্দু পাড়ার একটি ঘরে ঢুকে দেখল, টিনের বেড়ার সাথে ঝুলছে রাধা-কৃষ্ণের ছবি । ছবিখানা টান দিয়ে খুলে নিয়ে লজ্জাস্থানের সামনে ধরে আবার ছুটতে শুরু করলো । লোকজন প্রথমে রাধা-কৃষ্ণের ছবি দেখল, তার পর কুতুবকে । নানা জনের নানা মত, আলোচনা, সমালোচনা । কিন্তু কুতবের জিজ্ঞাসা, কেউ দেখেছে কি না ? ছুটতে ছুটতে ছবিখানার সামনের কাঁচ ভেঙ্গে গেল । আরও ছুটতে ছুটতে রাধা-কৃষ্ণের ছবি খানাই পড়ে গেল, থাকল শুধু কাঠের ফ্রেম ! লোকজন আবার তাকে দেখে পালাতে শুরু করলো । কুতুব ছুটতে ছুটতে জেলে পাড়ায় এসে এক হিন্দু বিধবা নারীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো, দাদী তুমি দেখছো ?
বিধবা নারী প্রথমে কুতুবের মুখের দিকে তাকাল, তারপর নিচের দিকে ! ভালো করে পরোখ করে সে বলল, দেখমু না ক্যা, তোর দাদা বাইচা থাকতি কত দেখছি ! কিন্তু তোর মতন এই রহম ফেরেমে বান্ধা জিনিস দেহি নাই ! ক্যারে কুতুব, ফেরেমডা কি কাঠের না পেলাস্টিকের ?

কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
২৩ আষাঢ়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
বিষয়শ্রেণীঃ রম্য ও গদ্য কার্টুন
ছবিঃ নিজ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×