somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা

০৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে....................
এই ভাবে কি থাকা যায়? সারাদিন শুয়ে বসে। শালার..একটা বান্দরের জীবনও তো আমার চেয়ে অনেক আরামের।ইচ্ছেমতো লাফালাফি করতে পারে কিন্তু আমি..............ধূর!! কিছুই করতে পারি না। সব তাদের ইচ্ছে মতো চলতে হয়। একটু বেশী সিগারেট খেতে চাই, তাও দেয় না। মরে যেতে ইচ্ছে করছে।


ভাবছেন এতো অল্পতেই কেউ মরতে চায় নাকি? এটা কি পাগল না ছাগল!!
আমার কি দোষ বলেন............ বাবা বিশিষ্ট শিল্পপতি। মা একটা মাল্টিন্যাশাল কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আজ মিটিং,কাল কনফারেন্স... মাসের প্রতিটা দিন লেগেই আছে। আমার যে একটা অস্তিত্ব আছে এটাই যেনো কারো মনেই থাকে না। একমাত্র সন্তান হওয়ায় না চাইতেই সব কিছু পেয়েছি। বাহ্যিক অভাব কি জিনিস কখনও বুঝিনি কিন্তু এটা কি জীবন??? ইচ্ছে মতো চাওয়া মাত্রই পাওয়াই কি জীবনের আসল সুখ??

মা'র সান্নিধ্য পাওয়া যায় না। আর বাবার তো ঠিক মতো দেখা পাওয়াটাই চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই আমিও তাদের কে ভুলে যেতে চাইলাম। চলে আসলাম আমার নিজের জগতে............ আমার কোন সমস্যা-ই হয় নি। টাকা পয়সার অভাব ছিলো না তাই বন্ধুরও(!) না। এক দিন দু'দিন করে আমার জগতটা অনেক আপন হয়ে গেলো যতটা এই ২৪ বছরেও মা-বাবা আমার আপন হতে পারেনি। আর আমার বেশ কদর-ই ছিলো সেই জগতে কারন আমার বাবার অঢেল টাকা।
সবই বুঝতাম...........কিন্তু তারপরও ওদের অনেক আপন মনে হতো। ওদের সঙ্গ উপভোগ করতাম। একসাথে চুটিয়ে আড্ডা দিতাম। সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করতাম। জীবনটাকে গালাগালি করতাম। বেশ ভালোই লাগতো....... ঠিক মতোই চলছিলো সব যদি না................. চাচা মা'কে কিছু না জানাতো।

চাচাকে সেই ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাসায় দেখছি। বলতে গেলে ওনার হাত ধরেই বড় হয়েছি। স্কুলে আনা নেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই ও ছিল আমার ছায়াসঙ্গী। ওই ব্যাটার আমার প্রতি তাই টান টাও বেশী। ব্যাটার জন্যই আজ আমি এই বদ্ধ ঘরে। ব্যটারে না পারি কিছু কইতে না পারি সইতে। এর নাম কি মায়া,ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু?

এই যে আমি বন্দী হয়ে আছি ...তাঁদের কোন মাথাব্যাথা নেই। সেই যে ভর্তি করিয়ে রেখে গেলো তারপর দু'বার দেখলাম তাদের। তাও এক সাথে তাঁদের দু'জনকে দেখতে পেলাম না। তারপর সব শেষ। চাচাই প্রতিদিন এসে আমার খোঁজ নিয়ে যায়। নাহ...!! এই জীবনটা কে আর ভালো লাগে না। সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে। শুধু আজকের রাতটা......
টাকা থাকলে এই দূনিয়ায় সবই সম্ভব শুধু অন্তরের শান্তি ছাড়া।আজ রাতই হবে আমার জীবনের শেষ রাত...............

ভাইয়া...........ও ভাইয়া বলটা দাও তো..............ও ভাইয়ায়ায়ায়া
হঠ্যাং চমকে তাকিয়ে দেখি এক হাতে প্লাষ্টার করা ফুটফুটে অল্প বয়সী মেয়ে আমার সামনে চিৎকার করছে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছি - এই পিচ্চি এখানে কি করে? স্বপ্ন দেখছি না তো.........আবার তাঁর সেই বিখ্যাত আওয়াজ ভাইয়া-তে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম।

পিচ্চি- ভাইয়া..আমার বলটা দাও না।
আমি- কোথায় তোমার বল? তোমার নাম কি?
পিচ্চি- ঐ যে... তোমার পিছনে। আমার নাম পরী। তোমার নাম কি?
পিছনে তাকিয়ে দেখি ছোট্ট লাল একটা বল। হাত দিয়ে কুঁড়িয়ে পরী কে দিয়ে বললাম........
-আমার কোন নাম নেই। তোমার নামটা অনেক সুন্দর। এই নাও তোমার বল। কার সাথে এসেছো? হাত ভেঙ্গেছে কি করে?
পরী- ওমা!!! নাম ছাড়া আবার মানুষ হয় নাকি? আমি মা'য়ের সাথে এসেছি। ঐ যে রুমটা দেখছো,ওটা আম্মুর রুম। এটা আম্মুর অফিস। আজ স্কুলে যাইনি তো,তাই আম্মু আমায় নিয়ে এসেছে। আর ভাইয়া ও তো স্কুলে...... আচ্ছা তোমার ভাইয়া আছে?
- নাহ........তুমি তোমার ভাইয়াকে ভালোবাসো?
- হুমমম.....অনেক। আচ্ছা তুমিও তো আমার একটা ভাইয়া। কি ভাইয়া না?
- হুমম..আমিও তোমার একটা ভাইয়া।
- আচ্ছা তুমিও কি আমার ভাইয়ার মতো আমার সাথে ঝগড়া করবে?
- তোমার মতো এত সুন্দর লক্ষী মেয়ের সাথে কি ঝগড়া করা যায়? নাহ করবো না। তোমার হাতে ব্যন্ডেজ কেন?
- ঠিক আছে..তাহলে তুমি আমার আরেকটা ভাইয়া। উপর থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছি।
- কিভাবে পড়েছো?
- ভাইয়া কে বাঁচাতে গিয়ে.........ভাইয়াকে আমি অনেক ভালোবাসি তো তাই...........
একটু অবাক হয়ে............ কিভাবে বাঁচিয়ে ছিলে। কি হয়েছিলো ভাইয়ার?
- কিছুদিন আগে ভাইয়ার অনেক জ্বর হয়েছিলো। অনেক কিছু করার পরও ভাইয়ার অসুখ ভালো হচ্ছিলো না। তাই আমার সাথে ঝগড়াও করতে পারে না।আমি তখন আম্মুকে বললাম ভাইয়া ভালো হবে কি করলে? আম্মু বললো আল্লাহ'র কাছে চাও,উনি ভালো করে দিবে। আমি তখন শেলফের উপর আল্লাহ'র কিতাব নেয়ার জন্য উঠতেই পা ফসকে পড়ে গেলাম আর হাতটাও ভেঙ্গে গেলো।
- অনেক ব্যথা করছে বুঝি.........
- নাহ....... এখন আর করছে না। হাত ভাঙ্গলেও আমি অনেক খুশী কারন আমার আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। পর দিন ভাইয়া ভালো হয়ে গিয়েছিলো। তুমিই বলো ভাইয়া যদি মরে যেতো আমি কাকে ভাইয়া বলে ডাকতাম? আমি কার সাথে খেলাধুলা করতাম,ঝগড়া করতাম? আমি যে অর্ধেক চকলেট লুকিয়ে রাখি, কাকে খাওয়াতাম? ভাইয়াকে যে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি............
আমি তোমাকেও ভালোবাসি। তুমি ও তো আমার একটা ভাইয়া। তোমাকেও চকলেট দিবো কেমন........

নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো...........তখনই ও আমায় বলে উঠলো
-কি হলো!! তুমি কাঁদছো কেন? তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?
- না রে আপু....আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তাই খুশীতে কাঁদছি।

কি হয়েছে বাবা............তুমি কাঁদছো কেন? পরী কি তোমায় কিছু বলেছে?
মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি আমাদের শারমিন ম্যাডাম। উনাকে জিজ্ঞাস করলাম.....
- পরী কি আপনার মেয়ে?
- হুম....আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। তোমার কি অবস্থা?
- অনেক ভালো। জানেন আন্টি.... পরীর মতো এতো মমতা দিয়ে আমায় কেউ কখনো কিছু বলেনি। ভেবেছিলাম আজই রাতই আমার জীবনের শেষ রাত কিন্তু আমার ছোট্ট বোনটার অর্ধেক চকলেটের জন্য আবার ফিরে আসলাম.........জীবন যে একটাই। ও আমার চোখ খুলে দিয়েছে। তাই খুশীতে কাঁদছি........নিজকে ফিরে পাবার আনন্দে। বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে।
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×