somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংজ্ঞা-শেষ পর্ব

১৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব


এই যে ভাই রাখেন। ভাইয়া ঐটা আমার কোচিং সেন্টার। আমি নেমে যাবো। আপনার অফিস কোন দিকে?
- এখনও তো আমার অফিস হয়নি। মাত্র তো ইন্টারভিউ দিতে আসছি। চাকুরী হয় কি না হয় তার কোন ঠিক নেই। দোয়া করো যেনো চাকরীটা হয়ে যায়। আচ্ছা তোমার কোচিং শেষ কয়টায়?
- তা জেনে আপনার লাভ কি? আপনার জন্য সব সময় দোয়া আছে। চাকরী হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
- তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো? ভেবেছিলাম একসাথে বাসায় ফিরবো। তাই জানতে চেয়েছিলাম। কারন অফিসের ইন্টারভিউ শেষে আর কোন কাজ নেই তো তাই। ঠিক আছে তোমায় বলতে হবে না।
- ১টায় শেষ হবে। আমি আসি।
মেয়েটা যে কেন রেগে গেলো বুঝতে পারলাম না।বয়সটাই এমন... কি যে চিন্তা করে বুঝা মুশকিল। রিকশাওয়ালা কে বললাম সামনে এগিয়ে যেতে। আমার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা চাকরীটা আমার চাই...........



আজ মনে হয় ঘড়িটা আস্তে চলছে। সেই কখন দেখলাম ১২টা বাজে আর এখন মাত্র ১২:৩০। সে কি আসবে? সত্যিই আসবে তো। নাহ!! আজ কোন ক্লাশ ভালো লাগছে না। আকিফ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে? কে উনি? হাজারটা প্রশ্ন ভিড় করতে লাগলো তাসনিয়ার মনে। আজ কেন তার এমন লাগছে বুঝতে পারছে না। আচ্ছা.....এর নাম কি ভালোবাসা? এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয়ে যায় নাকি!!! স্যার যে কি পড়াচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। ধূর....১টা বাজে না কেন? ক্লাশ কবে যে শেষ হবে।
আজ এইটুকুই থাক..........সামনের ক্লাশে বাকীটুকু শেষ করবো। স্যারের এই কথাটা বেশ মনে ধরলো তার। ক্লাশ শেষ হতেই বেশ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লো। বের হবার পর মাথায় আসলো- আচ্ছা..ভাইয়াকে তো বলা হয়নি কোথায় অপেক্ষা করবে? আর ভাইয়াও নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। ভাইয়া আসবে তো? যদি না আসে? ভাবতে ভাবতে যে জায়গায় রিকশা থেকে নেমেছিলো সেখানে এসে দাঁড়ালো। তার মনে শুধু একটাই চিন্তা- আসবে তো?
রাস্তার লোকগুলো যেনো সব ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হয় যেনো কোনদিন মেয়ে দেখেনি। অপেক্ষার মতো ফালতু জিনিস আর দুনিয়াতে নাই। তাও আবার অনিশ্চিত অপেক্ষা। আসছে না কেন?? ১:৩৫ বাজে। নাহ!! আর নয়। অনেক হয়েছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো তাসনিয়ার। এই রিকশা যাবে...?? সব ঠিক করে রিকশায় উঠতেই মনে হলো কে যেনো নাম ধরে ডাকলো। ঘাড়টা ঘুরাতেই দেখি ভাইয়া অস্থিরভাবে হেঁটে আসছে। অজানা কোন এক ভালো লাগায় সমস্ত রাগ,ক্ষোভ,অভিমান নিমেষেই দূরীভূত হয়ে গেলো।
- কই যাচ্ছো?
- কেন!! বাসায়। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না।
- আর বলো না। একে একে তিনবার ইন্টাভিউ নিলো। তাই এতো দেরী হলো। আর আমি ভাবিনি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে। ভাগ্য ভালো যে এসে তোমায় পেয়েছি। আচ্ছা..........মামা-মামী কি পছন্দ করে বলো তো?
- কেন? চাকরী হয়ে গেছে? মামা- মামীর জন্য কিছু লাগবে না? বলেন না চাকরী হয়ে গেছে?
- হুম......এজন্যই তো এতো দেরী হলো। কথাটা বলা মাত্রই যা হলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। ইয়াহু..!!! বলে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো- কংগ্রাচুলেশন। এইবার সব স্বপ্ন পূরন হয়ে যাবে। অনেকদিন পর এমন অকৃত্রিম হাসি দেখা ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর হাসিমাখা মুখ দেখে নিজকে অনেক সুখী মনে হলো।
মা'কে ফোন করে চাকরীর সংবাদটা জানাতেই খুশীতে কেঁদে দিলেন। কথা শেষ করে ওকে নিয়ে কিছু মিষ্টি আর ফল কিনে নিলাম বাসার জন্য। রিকশায় যেতে যেতে তাসনিয়া বললো-
-দেখলেন আমর দোয়া কেমন কাজে লাগে। আপনার সব স্বপ্নও পূরণ হয়ে যাবে। এখন আমায় বলেন আপনি কাকে ভালোবাসেন?
- আমি কি বলেছি বলবো না? আচ্ছা... ভালোবাসার সংজ্ঞা কি বলতে পারো?
- ভালোবাসার আবার সংজ্ঞা হয় নাকি.......চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো আমায়। এটা তো অনুভূতির ব্যাপার।
- ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু তুমি কি মনে করো?
- হুমমমমমমমমম। বুঝতে পারছি না। তবে প্রিয় মানুষের আনন্দে আনন্দিত হওয়া,দুঃখে দুঃখী হওয়া হচ্ছে ভালোবাসা। যেমন আপনার সুখে আমি আজ সুখী এটাও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। হয়তো আমি আপনাকে ভালো.... আচ্ছা আমিই তো সব বলে যাচ্ছি,আপনি তো কিছু বলছেন না।
আচ্ছা বলো - কি জানতে চাও?
- আপনি কাকে ভালোবাসেন?
- আমার মা'কে। আমি আমার মা'কে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি।
- ধূর....আমিও তো মা'কে ভালোবাসি। সবাই তো মা'কে ভালোবাসে। আমি তা বলছি না মানে ভালোবাসার প্রকার ভেদ আছে না........
- দেখো তাসনিয়া। আমি সত্যিই বলছি। আমি আমার মা'কে আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি।
- আর কাউকে না!!!
- নাহ.......শুধু মা'কে।
তাসনিয়া মনে মনে খুশীই হলো উত্তরটা শুনে কারন ও যা ভেবেছিলো সব ভুল। নিজের আনন্দ বুঝতে না দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো -আপনার
কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কি?
তাসনিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম- আমি যখন প্রতিবার বাড়ী যেতাম, মা অনেক খুশী হতো। আবার যখন চলে আসতাম মা ঠিক ততোটাই কষ্ট পেতো। বাড়ী থেকে বের হলে মা অশ্রুভেজা চোখে পথে দাঁড়িয়ে থাকতো, যতক্ষন পর্যন্ত আমায় দেখা যায়। আমারও কষ্ট হতো। তাই পিছনে ফিরে তাকাতাম না। যদি মা ভুল করে আমার ঝাপসা চোখ দেখে ফেলে। তাহলে মা'র আরও কষ্ট হবে। মায়ের প্রতিটি অশ্রু ফোঁটা আর আমার ঝাপসা চোখ হচ্ছে আমার ভালোবাসার সংজ্ঞা............


কথাগুলো বলেই আকাশের দিকে তাকালাম। নীল মেঘমুক্ত আকাশে পাখিরা উড়ছে। নিজকেও পাখি মনে হলো। হয়তো আর বেশী দূরে নয় আমার স্বপ্ন দ্বার। হাতে শক্ত একটা চাপ অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখি তাসনিয়ে চোখে জল। আলতো করে চোখ মুছে দিয়ে বললাম- আমি তোমাকেও ভালোবাসি।


(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৮:২৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×