somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা

০৬ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমযান মাসে সকালের দিকে ঘুমটা মন্দ না। গতকাল থেকে মন অনেকটা প্রফুল্ল। বাড়ী যাবো তাই অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে
নিজের ভিতর।ফযরের নামায পড়ে নিশ্চিন্ত মনে একটা ঘুম দিলাম। তার উপর আজ শুক্রবার।ব্যাগ গুছিয়ে রাখাছিলো আগেই তাই প্ল্যান হলো জুম্মার নামাজ
পড়েই রওনা দিবো বাড়ীর উদ্দেশ্যে।

ঘুমটা ভাঙ্গলো আযানের শব্দে এবং ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই একটা অদ্ভুত ধাক্কা খেলাম। বাহিরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। অদ্ভুদ ব্যপারটা হলো
ঘুম ভাঙ্গার আগে আমি স্বপ্নে দেখছিলাম প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছি “এতো বৃষ্টি তার উপর আবার শুক্রবার। তাড়াতাড়ি না গেলে তো
মসজিদে জায়গা পাবো না।” ঘুম থেকে উঠে যখন বাস্তবতাও তাই দেখলাম তাই কেমন যেনো একটা অনুভূতি কাজ করছিলো নিজের ভিতর। মসজিদে যাবো, আযানও হয়ে
গেছে তাই তাড়াতাড়ি নামাযের জন্য তৈরী হয়ে মসজিদে চলে গেলাম। অনেক মানুষ। রমযান আসলেই মানুষগুলো কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে যায়। সব পরিবর্তন ভালো না
তবে কিছু কিছু পরিবর্তন সত্যিই আনন্দদায়ক।একে তো বৃষ্টি তার উপর অনেক মানুষ। কোন রকমে দো’তালায় এক পাশে বসলাম।যথারীতি নামায সম্পন্ন করে বাসায় এসে
সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বাড়ী যাবার উদ্দেশ্যে বের হলাম।

ভাগ্য ভালোই বলতে হবে।এই বাদলা দিনেও অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই একটা টেক্সী পেয়ে গেলাম। ভাড়াটাও সাধ্যের মধ্যে।রাস্তায় খুব একটা জ্যাম পেলাম না। ৪৫ মিনিটের মাঝেই পৌঁছে
গেলাম।লঞ্চে অনেক ভীড় আর এই ভীড়ের মাঝে সীট না পেয়ে আসা অনেক কষ্টকর। ধুমধাম বৃষ্টির জন্য নদীর আবহাওয়াও ঠিক থাকে না। তাই বাসকেই বেছে নিলাম।টেক্সীওয়ালার ভাড়া চুকিয়ে বাস কাউন্টারে গিয়েও আক্কেল গুঁড়ুম অবস্থথা।
ভালোই লম্বা লাইন।কি আর করা.... যেতে তো হবে,তাই লাইনে দাঁড়ালাম।মানুষ যাচ্ছে তো যাচ্ছে তবুও আমার সিরিয়াল আসছে না।এতো মানুষ বাড়ী যাচ্ছে আজ!!! অবশেষে যখন
টিকেট হাতে পেলাম জানলাম যে বাসটা দাঁড়িয়ে আছে তার পরের বাসটা হচ্ছে আমার। টিকেট হাতে নিয়ে দেখলাম সামনের দিকে বাম সাইডে জানালার পাশের একটা সীট।কি আর করা!!!! তাও টিকেট তো পেলাম। ভাবছি যেতে যেতে তো ইফতারেরে সময় হয়ে যাবে
কিছু খাবার কিনে নেই। কি কিনবো দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ পিঠের উপর একটা স্পর্শ পেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি এক অপরিচিত বৃদ্ধ লোক। বেশভূষা দেখে বুঝতে পারলাম না কোন টাইপের লোক। তবে চেহারার মাঝে কি যেনো একটা আছে। খাবার দাবারের চিন্তা ভুলে ওনার কথা ভাবছিলাম.... চিন্তা ভঙ্গ হলো বৃদ্ধের কথায়। “তুই বাড়ী যাবি? আমায় কিছু দিবি না?” আমি ভাবলাম হয়তো টাকা পয়সা চাচ্ছে। পকেটে হাত দিতেই উনি বলে উঠলেন “তোর কাছে কি টাকা চাইছি??” আমি অবাক হয়ে বললাম - তাহলে কি চান আপনি? তোর টিকেটটা একটু দে। আমি তো অবাক। এতো কষ্ট করে টিকেট পেলাম আর এই ব্যাটা কোথা
থেকে এসে বলে টিকেট দে। ইস!! বললেই হলো। কি রে, এতো কষ্টের টিকেট দিবি না ভাবছিস? চিন্তা করিস না তোর টিকেট নিবো না। তুই এইখানেই দাঁড়া। ওনার কথায় কি যেনো একটা ছিলো। তাই শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাধের টিকেটটা উনার হাতে দিলাম। উনি আমায় দাঁড়া করিয়ে আবার কাউন্টারে গেলেন এবং অল্প কিছক্ষনের মাঝেই ফিরে আসলেন। বলেন ধর এই তোর টিকেট। যা.. তোকে একটু অপেক্ষা করলাম । ভালোভাবে বাড়ী যা। তোর মা অনেক ভালো। তাই তোর কাছে আসলাম। আমি টিকেট হাতে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর আর কোন কথা না বলে উনি চলে যেতে লাগলেন। কি করবো বুঝতে পারলাম না। একবার টিকেটটার দিকে তাকালাম তারপর উনার দিকে ফিরতেই আবার একটা ধাক্কা খেলাম। বৃদ্ধ লোকটি নাই!!! নাই তো নাই। ডানে-বামে ভালো করে খুঁজতে লাগলাম, কোথাও খুঁজে পেলাম না। এক মুহুর্তে একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষ উবে গেলো!!! কি হচ্ছে আজ এসব আমার সাথে? নিজেই নিজকে প্রশ্ন করতে লাগলাম।

পাশের বাসটি ছেড়ে গেলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পরবর্তী বাসটি এসে দাঁড়ালো। আমার টিকেট অনুযায়ী এটাই আমার বাস হওয়ার কথা। বাসে উঠে নির্দিষ্ট আসন খুঁজে বসা মাত্রই মনে পড়লো অদ্ভুত বৃদ্ধের পাল্লায় পড়ে আমার কোন খাবার-ই কিনাই হয়নি। আবার বাস থেকে নামলাম। একটা ঠান্ডা জুস আর কিছু হালকা খাবার কিনে বাসে উঠে দেখি আমার সীটে একজন বসে আছে। আমি ভাবলাম বাসে এমটা প্রায়ই হয়। ভদ্রভাবেই বললাম- ভাইয়া, সীটটা আমার। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- এক সীট দু’জনের হয় কি করে?? এটা তো আমার সীট। একে তো গেলো বৃদ্ধের ঝামেলা এখন আবার এই লোক!! ভিতরে ভিতরে মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তারপরও নিজকে শান্ত রেখে বললাম আপনার টিকেটটা দেখি? উনি টিকেটটা বের করে দেখালেন। পড়ে দেখলাম সব ঠিকই আছে। তারপর আমার টিকেটটা বের করা মাত্রই উনি বললনে আরে এটা হলো ৪.৩০-এর বাস আর আপনারটা ৫.২০। এই গাড়ীর নাম্বার গ-০৩-২৬০ আর আপনারটা গ-১৩-৭৮৬। এইবার বুঝলেন ভুলটা কার?? লোকটার কথার পর আবার দু’টো টিকেট পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে দেখলাম। নাহ!! লোকটার কথাই ঠিক। এক রাশ বিরক্তি,ক্লান্তি আর বৃদ্ধের উপর ভীষণ অসন্তুষ্টি নিয়ে বাস থেকে নামলাম। নেমে বাসের নাম্বার টা দেখলাম তারপর টিকেটটা নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে বললাম যে বাসটা দাঁড়িয়ে আছে এটা কি এই বাসের টিকেট? লোকটা টিকেটটা হাতে নিয়ে বললো না ভাই এটা পরের বাসের। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার বাস ছিলো ৪.৩০ এর আর এখন কিনা হয়ে গেলো ৫.২০ !!! অদ্ভুত বৃদ্ধ লোকটার সাথে সাক্ষাত হবার পর থেকেই কি যে হচ্ছে!!!

অপেক্ষার প্রহর যেনো কাটতেই চায় না। তার উপর অদ্ভুত ঘটনা ঘটার পর যেনো ঘড়িটাও থেমে আছে। সেই কখন থেকে দেখছি ৫টা বাজে। মনে মনে বাসা থেকে শুরু করে এইখানের কথাগুলো একে একে ভাবতে লাগলাম। আজ কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?? কখন যাবো বাড়ী? বৃদ্ধটা কে? কোন কিছুর সাথেই কিছু মিলাতে পারলাম না। অবশেষে বাসটা ছাড়লো। তাও আবার ২০ মিনিট লেট করে। পরের বাসটা যখন আসলো কাউন্টারে গিয়ে টিকেট দেখিয়ে শিওর হয়ে নিলাম। অতিরিক্ত সর্তকতার জন্য বাসে উঠার আগে গাড়ীর নাম্বারটাও মিলিয়ে দেখলাম।যাক..সব ঠিক আছে। বাসে উঠে নিজের নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসলাম। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ছাড়বে বাসটা? আবার যদি কোন ঝামেলা শুরু হয়?? তাই বসে বসে বাসটা ছাড়ার প্রহর গুনছিলাম। অবশেষে সকল অপেক্ষার প্রহর শেষ করে যাত্রা শুরু করলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাসটা ভালো মতোই চলতে লাগলো। জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের গোধূলী বেলার দৃশ্য দেখছিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর মাগরীবের আযান দিলো। সঙ্গে আনার খাবার দিয়ে ইফতারী সেরে নিলাম। ইফতারী করে দু’চোখ বন্ধ করে আজকের সব ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলাম। বাসে ঘুমানোর অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিলো না কিন্তু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলতেই পারবো না।
এমন গভীর ঘুম যে কিছুই বলতে পারবো না। হঠাৎ অনেক মানুষের আর্তনাদ আর চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ মেলে দেখে আমি একা বসে আছি,আশেপাশে কেউ নেই। বাসটাও থেমে আছে। ধাতস্ত হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি সামনে রাস্তায় অনেক মানুষের জটলা। আমি বাস থেকে নেমে সামনে গিয়ে একজন কে জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে ভাই?? উনি বললেন আমাদের আগের বাসটা এক্সিডেন্ট করছে। আমি ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখি একটা বাস রাস্তার পাশে খাদে পড়ে আছে। সামনের অংশটা দুমড়ে-মুচড়ে আছে। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। কয়েকজন স্পট ডেথ। রক্তাক্ত দেহ আর মানুষের আর্ত চিৎকারে অস্বস্তি বেড়ে গেলো আমার। রাস্তার গাড়ীর নিয়ন আলোতে দেখলাম গাড়ীর পিছনের নাম্বার প্লেটটা। গ-০৩-২৬০। ভীষণ খারাপ লাগছিলো আমার। আর কানে শুধু একটা কথাই বাজছিলো............. ধর এই তোর টিকেট। যা.. তোকে একটু অপেক্ষা করলাম । ভালোভাবে বাড়ী যা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:৪৭
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×