কয়েকদিন হলো মাথায় মধ্যে সাহিত্যের পোকা ঢুকেছে। গতকাল সন্ধায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, ভাবলাম বাস আসতে আসতে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করি। দু'টুকরো কাগজ আর কলম হাতে নিয়ে লেখা শুরু করলাম, আর মনে যা আসলো লিখতে শুরু করলাম। এক পৃষ্ঠা লিখতে লিখতে বাস এসে পড়লো। বাসে উঠে বসলাম তখনও কাগজ কলম হাতে। আমার পাশে এক ভদ্রলোক বসলেন আর আড়চোখে আমার কাগজ কলমের দিকে তাকাচ্ছেন। হঠাৎ মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি চাপলো, লোকটাকে আমি বিরক্ত করে ছাড়বো, আমার লেখা দেখতে চায় কতবড় হিম্মত!!!
বাইরে তখন ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে, কবিতা লেখার উপযুক্ত সময়। আমি এমন একটা ভাব ধরলাম যে আজ আমি ব্যাপক এক লেখক, ব্যাপক একখান কবিতা লিখতে যাচ্ছি। তাকিয়ে দেখলাম লোকটাও একটু নড়েচড়ে বসছে, আমি যা লিখবো সে তা দেখেই ছাড়বে। আমাদের বাসটা হেলেদুলে খুবই ধীর গতিতে চলছে। আমি একটু পরপরই লেখার ভান ধরছি, আর পরীক্ষার সময় একবন্ধু যেমন অন্য বন্ধুকে না দেখানোর জন্য হাতদিয়ে ঢেকে লিখে ঠিক ঐ রকম ভাব, কিন্তু কিছুই লিখছি না। ভাবটা এমন যেন যা লিখতে চাচ্ছি তা আমার পেটে আছে মুখে নেই, মুখে আছে তো কলমে নেই। এমন করতে করতে ঘন্টা খানেক পার করলাম। দেখতে পাচ্ছিলাম যে লোকটা চড়ম বিরক্ত হচ্ছে আর তার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখক্ষণ ধরে বসে থেকে সে একটা অক্ষরও লিখতে দেখেনি আমাকে। মাঝে মাঝে আমি কলমটা আঙ্গুলে ঘুরাচ্ছি, মুখের সামনে নিচ্ছি, আর ভাবটা এমন যে আমি এখনি কিছু লিখবো। এবার লোকটা তার মোবাইল নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লো, এই সুযোগে আমি আগে লেখা কাগজটা নিচ থেকে বের করে ভাজ করতে লাগলাম, দেখি লোকটা আবার তাকাচ্ছে। আমি কাগজটা তাড়াতাড়ি ভাজ করে ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম আর এমন ভাব করলাম যে আমি এটা এখনই লিখেছে। খুবই গোপনীয় কিছু কাউকে দেখানো যাবে না। আমার এই কান্ড দেখে লোকটা এবার চড়ম বিরক্ত আর অবাক ও হলো সে ভেবে পাচ্ছে না আমি এটা লিখলাম কখন। এরই মধ্যে হেল্পার আসলো ভাড়া চাইতে আর তো লোকটা পুরাপুরি ক্ষেপে গেলো তার উপর বললো "ঐ তোর ড্রাইভাররে তাড়াতাড়ি চালাইতে ক"। আমার বুঝতে বাকি নেই যে আমার রাগটা ওর উপর ঝাড়া হলো। আমি বুঝলাম না আর ক্ষেপান যাইবো না, তাইলে বিপদ আছে। আমি এবার চোখ বন্ধ করে আরো গভীর চিন্তার ভাব ধইরা ঘুমাইয়া পড়লাম। বাসার কাছের বাসস্ট্যান্ডে এসে ঘুম ভাঙ্গলো, দেখি পাশে লোকটি নেই আর সাথে আমার হাতের সাদা কাগজটাও যেটাতে আমি প্রায় দেড়-দু'ঘন্টা চেষ্টা করেই কিছুই লিখিনি ( মূলত ইচ্ছা করেই)। কাগজটা আশে পাশে খুঁজলাম পেলাম না। তখন মনে হলো হয়তো লোকটাই নিয়ে গেছে এই ভেবে যে, নিশ্চয় আমি কিছু লিখেছি কোন অদৃশ্য কালি দিয়ে বাসায় গিয়ে আমার লেখার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে। লোকটার কথা ভেবে শুধু হাসতেই আছি আর হাসতেই আছি।
তবে পুরো ঘটানা থেকে বুঝতে পারলাম আসলে এটা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে, ধরুন বাসে বা পাবলোক প্লেসে আপনি আপনার মোবাইলে একটা এসএমএস লিখছেন, অথবা গেম খেলছেন, অথবা অন্য কিছু করছেন তা কেউনা কেউ লক্ষ্য করছে। মানে আমাদের প্রতিটি কর্ম কান্ডের উপর কারো না কারো দৃষ্টি রয়েছে।