somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে উৎসর্গ করে আমার লেখা প্রথম গল্পটি পোষ্ট করলাম।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক দিনের হিমু

এক

ডঃ হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রটি আমার উপর ভর করেছে অনেক দিন হলো। তাই আমারও ইচ্ছা অন্তত একদিনের জন্য হলেও হিমু হব।
ঠিক করলাম আজ রাত বারটা থেকেই আমি হিমু হওয়ার সাধনায় নামব। রাতে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম...

সকালে ঘুম ভাঙ্গলে চোখ খুলে ভয়ে আবার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। চোখ বন্ধ অবস্থায় ভাবতে লাগলাম আমি কোথায়? অনেক্ষণ পরে সাহস করে চোখ খুলে ঘরের চারপাশটা ভালো ভাবে দেখলাম, আরে এটাতো আমারই ঘর। কিন্তু ঘরের জিনিস পত্র সব গায়েব!
মেঝেতে একটা চিরকুট তাতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা অক্ষরে লেখা-
ছার দরজা জানালা খুইলা ঘুমাইতাছিলেন দেইখা মনে হইলো এই ঘরের কোন কিছুই আফনের দরকার নাই, শুধু গায়ের হলুদ পাঞ্জাবিডা ছাড়া। তাই সব নিজের মনে কইরা ঘরের সব নিয়া গেলাম। তবে পাঞ্জাবিডা গায়ে না থাকলে ঐডাও নিয়া নিতাম। আর আমি না নিলেও অন্য কেউ নিয়া যাইত। ভালা করছি না স্যার?

ঘরের সব চুরি হয়েছে মনটা অনেক হালকা হয়ে গেল। এই ভেবে ভালো লাগছে যে, চোরটা কিছুদিন ভালো মতো কাটাতে পারবে। আর চোরটা আমার হিমু হওয়ার কাজটা অনেকটা এগিয়ে দিলো। এখন আমি দরজা জানালা খুলে যে কোন সময় যে কোন দিক চলে যেতে পারবো, প্রতি রাতে ঘরের দরজা জানালা খুলে ঘুমাতে পারব। হঠাৎ মনে হলো যে লোকটা আমার এতো বড় একটা উপকার করলো তাকে তো একটা ধন্যবাদ দিতে হয়। আজ হিমুর প্রথম কাজ চোরটাকে খুঁজে বের করে একটা ধন্যবাদ দেওয়া। অতএব আমাকে থানায় যেতে হবে সেখানে একটা ডায়রি করাতে হবে আর পুলিশ হয়তো চোরটাকে খুঁজে বের করতে আমাকে সাহায্য করতে পারে। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ধানমন্ডি থানায়।

ওসি সাহেব এখনো আসেন নাই, সেকেন্ড অফিসার তিন সাহেব বসে আছেন।
আমি বললাম, ‘তিন সাহেব আমি একটা ডায়রি করাবো।’
‘আমার নাম তিন সাহেব না, মতিন।’
আমি বললাম, ‘ও আচ্ছা, আসলেই তো হিমুদের ক্ষেত্রে সব পুলিশের নামেরই প্রথম অক্ষর থাকে না।’

তিন সাহেব বললেন, ‘কি বিষয়ে ডায়রি করবেন?’
আমি বললাম, ‘আমার বাসায় চুরি হয়েছে, চোরটাকে খুঁজে বের করে একটা ধন্যবাদ দিব।’
তিন সাহেব বললেন, ‘আমার সাথে ফাইজলামি করেন?’
আমি বললাম, ‘রবি ঠাকুর বলেছেন, “আমার মনের স্বকীয় একটা স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি আছে, তার গুনে আমার হৃদয়ের ভারী কথাগুলোও মুখে খুব হালকা হয়ে ভেসে ওঠে, তাই বলে তার ওজন কমে না।” আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা সম ভাবে প্রযোজ্য।’
তিন সাহেব বললেন, ‘আপনার নাম কি?’
আমি বললাম, ‘আমি হিমু হতে চাই’।
তিন সাহেব বললেন, ‘হিমু হইতে চান ভালো কথা, নাম বলেন।’
আমি বললাম, ‘এখনো পুরোপুরি হিমু হতে পারি নাই, আজই প্রথম দিন তাই আমার নাম "মু"। আপনের মতো আমারও নামের প্রথম অক্ষর "হি" নাই।’
তিন সাহেব বললেন, ‘বুঝচ্ছি আপনেরে মাইরে টানছে, ইন্ডিয়ান ডলা দিলেই বুঝবেন মজা কারে কয়।’
আমি বললাম, ‘তিন সাহেব ইন্ডিয়ান ডলা আবার কি? এর আগে পাকিস্থানি ডলার নাম শুনছি।’
তিন সাহেব বললেন, ‘বিএসএফ যেমন বাঙ্গালিদের মেরে কাটা তারের সাথা ঝুলিয়ে রাখে, তেমনি আমরা হাজতের শিকের সাথে পা উপরে মাথা নিচে বাধে পিটাই।’
আর আরেকটা বিষয় আমার নাম তিন না, মতিন।এইবার বলেন চুরি হলো কিভাবে?’
আমি বললাম, ‘আমি রাতে ঘরের দরজা জানালা খুলে ঘুমিয়ে ছিলাম, সকালে দেখি ঘর সাফা, আর চোরটা আমার জন্য এই চিঠিটা লিখে রেখে গেছে।’
মতিন সাহেব চিঠি পড়ছেন আর রাগে কটমট করছেন, বললেন, ‘দেখি চিঠিটা দেন। সব দোষতো আপনের, এই ব্যাটারে হাজতে ঢুকা। স্যার আসবে তার পর শুরু হবে ইন্ডিয়ান ডলা।’
আমাকে হাজতে ঢুকানো হলো, আমি আমার হিমু হওয়ার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট। প্রথম দিনই হাজতে ঠুকতে পেরে। আধ ঘন্টার মধ্যেই ওসি সাহেব চলে এলেন। তাকে

দেখেই হাজত থেকে লম্বা একটা সালাম দিয়ে বললাম, ‘ওসি সাহেব ভালো আছেন?’ তিনি কোন উত্তর না দিয়েই নিজের কক্ষে চলে গেলেন, আর সেকেন্ড অফিসার ডেকে পাঠালেন। তাদের কথা আমি শুনতে পাচ্ছি-

ওসি সাহেব বললেন, ‘হাজতে হলুদ পাঞ্জাবি পড়া লোকটা কে?’
তিন সাহেব বললেন, ‘স্যার উনি হিমু হইতে চান, এখনো পুরোপুরি হিমু হতে পারেন নাই, আজই প্রথম দিন তাই তার নাম "মু"।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘হিমু হতে চান ভালো কথা, হাজতে কি? আমরা কি হিমু হওয়ার ট্রেনিং দেই নাকি?’
তিন সাহেব বললেন, ‘স্যার ডায়রি করাতে এসেছিলো, বলে বাসাতে চুরি হয়েছে চোরকে খুঁজে বের করে ধন্যবাদ দিতে চায়।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘ইন্টারেস্টিং যাও লোকটাকে নিয়ে আসো।’

আমি ওসি সাহেবের কক্ষে গেলাম, সাথে সেকেন্ড অফিসার তিন সাহেব-
ওসি সাহেব বললেন, ‘বসুন, আপনার নাম কি?’
তিন সাহেব বললেন, ‘স্যার উনি হিমু হ্তে চান, পুরাপুরি হতে পারেন নাই, আজই প্রথাম তাই তার নাম হুদামুদা 'মু'।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘তুমি চুপ করো।আপনি বলেন।’
আমি বললাম, ‘জ্বি স্যার তিন সাহেব যা বলছেন সব সত্য।’
তিন সাহেব বললেন, ‘আবারও তিন, আমার নাম মতিন।’
আমি বললাম, ‘স্যার আপনার নামও কি মতিন।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘না আমার নাম জতিন।’
আমি বললাম, ‘দুঃখিত স্যার আপনার নামেরও প্রথম অক্ষর নাইতো, তাই ভাবছিলাম।’
ওসি সাহেব বললেন, ‘এবার বলেন কেন ডায়রি করাতে চান?’
আমি বললাম, ‘স্যার চোরটাকে শুধু একটা ধন্যবাদ দিতে চাই, আমার হিমু হওয়ার পিছনে তার বিরাট অবদান।’


ওসি সাহেব বললেন, ‘দেখুন “মু” সাহেব এ বিষয়ে আমরা আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না। দরকার হলে আপনি চোরকে খুঁজে নিন, আমি আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘ধন্যবাদ স্যার, এক কাপ চা খাওয়ানো যাবে?’
ওসি সাহেব বললেন, ‘হুম চা খেয়ে সোজা এখান থেকে চলে যাবেন, আর যেন না দেখি।’
আমি বললাম, ‘আচ্ছা স্যার।’


দুই

আমি চা খেয়ে রাস্তায় আসতেই মনে হলো এখন আমার কাজ হলো দুইটা এক) মনে মনে চোরটাকে খোঁজা, আর দুই)প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে, খাওয়ার জন্য পকেটে কোন টাকা নেই, অতএব একটা বাকি খাওয়ার দোকান ঠিক করতে হবে। হুমায়ূন স্যারের গল্পে হিমুদের বাকি খাওয়ার অভ্যাস আছে।

আমি রাস্তায় হাঁটছি হঠাৎ দেখলাম এক বৃদ্ধ রাস্তার পাশে মুমূর্ষ অবস্থায় পরে আছে। প্রথমে এড়িয়ে চলে যেতে চাইলাম, কারন হিমুদের আবেগ থাকতে নেই। কিন্তু পারলাম না আবেগ না থাকলেও মানবিকতা বলেতো কিছু আছে। তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম লোকটাকে হাসপাতালে নিতে হবে। একটা রিক্সা দরকার কিন্তু ভিআইপি রাস্তা রিক্সা চলে না। তবুও অনেক দূর যেয়ে রিক্সা পেলাম কিন্তু পথে আটকে দিলো ট্রাফিক পুলিশ। তাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলাতে ছেড়ে দিলো।
এবার বৃদ্ধের পাশে গিয়ে বললাম, ‘চলেন চাচা আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
বৃদ্ধ বললো, ‘না আমি হাসপাতালে যামু না।’
আমি বললাম, ‘আপানর অবস্থাতো খারাপ চলেন।’
বৃদ্ধ বললো, ‘না আমি যামু না, এতো ত্যাক্ত করেন ক্যান, ভিক্ষা দিলে দেন না দিলে নাই। শান্তি মতো ভিক্ষাও করতে দেয়না।’
আমি মাটি থেকে আকাশে উঠে গেলাম, বুঝতে পারলাম হিমুদের মানবিকতারও উর্ধ্বে থাকতে হবে।
ওদিকে রিক্সা ওয়ালা বলছে, ‘ঐ মিয়া আমার ভাড়া দেন আমি চইলা যাই, আফনেগো তামশা দেখার টাইম নাই।’
আমি বললাম, ‘ভাই আমার কাছে একটা টাকাও নাই, দাঁড়ান ভিক্ষুকটার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আপনাকে ভাড়া দিচ্ছি।’
চেয়ে দেখি ভিক্ষুকটাও কেটে পড়েছে, এখন কি করবো?
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘আমি অতশত বুঝি না হয় ভাড়া দিবেন না হয় আমারে যেইহান থিকা নিয়া আইছেন সেইহানে রিক্সা চালাইয়া দিয়া আইবেন।’
আমি বললাম, ‘আচ্ছা আপনি পিছনে বসুন আমি রিক্সা চালিয়ে আপনাকে দিয়ে আসছি।’


আমার কোন সমস্যা নাই কারন হিমুদের সব সময় যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।রিক্সায় চড়ার অভ্যাস আছে কিন্তু চালানোর অভ্যাস নাই এটা ঠিক না। আমি অতি ধীরে ধীরে আমি রিক্সা চালাচ্ছি আর পেছনে বসে রিক্সা ওয়ালা পায়ের উপর পা তুলে একটা বিড়ি ধরিয়ে করে টানছে।
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘ভাইজান বিড়ি খাইবেন? বিড়ি খাইতে খাইতে টানলে দম পাইবেন।’
আমি বললাম, ‘না বিড়ি খাব না।’
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘না খাইলে নাই, ভাইজান কি রাগ করছেন?’
আমি বললাম, ‘না হিমুরা অন্যের উপর রাগ করে না, তারা শুধু নিজেরা নিজেদের উপরেই রাগ করে।’
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘ও আফনের নাম বুঝি হিমু?’
আমি বললাম, ‘না এখনো পুরোপুরি হিমু হয় নাই এখন শুধু “মু”। আপনার নাম কি?’
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘আমার নাম কলিম মিয়া। ভাইজান রিক্সাটা রাস্তার পাশের ভাতের হোটেলের পাশে রাখেন, দুইডা ভাত খামু।আফনে খাইবেন?’
আমি বললাম, ‘আমার কাছে টাকা নেই?’
রিক্সা ওয়ালা বললো, ‘টাকা কোন সমস্যা না, হোটেলের নাম ফকিরের হোটেল এইহানে একজন খাইলে অন্যজনের খাওন ফিরি।’
আমি বললাম, ‘তাহলে খাব, কারন এখনো আমার বাকি খাওয়ার দোকান ঠিক হয় নাই।’
দু'জন মিলে ভাত খেলাম আর এরই মাঝে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো, বৃষ্টি এখনো থামেনি গুড়ি গুড়ি হচ্ছে।
আমি কলিম মিয়াকে বললাম, ‘আমি আমি চলে যাচ্ছি।’
কলিম মিয়া বললো, ‘কই যাইবেন চলেন আমি আফনেরে নামাইয়া দিয়া আহি, টাকা লাগব না।’
আমি বললাম, ‘না আমি হেঁটেই যাব, আমার হাঁটার অভ্যাস আছে। বৃষ্টির পরে খালি পারে হাঁটার মজাই আলাদা।’


তিন

আমি হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি চন্দ্রিমা উদ্যানে। উদ্যানের ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটছি সে এক অন্যরকম অনুভূতি। কত বছর পরে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটছি হিসেব নেই। আর হিমুদের এতো হিসেব করে চলতে নেই । হঠাৎ একটি ছেলে আর একটি মেয়েকে দেখলাম লেকের পাশে ঘনিষ্ট ভাবে বসে আছে। ড্রেস দেখে মনে হলো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ডেটিংয়ে আসছে । তাদের অবস্থা দেখে আমার কাছে দৃষ্টিকটূ মনে হলো। তাই ভাবলাম ওদের একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার ।
মোবাইলটা থাকলে ভালো হতো, তাহলে ওদের পাশে যেয়ে ওদের শুনিয়ে শুনিয়ে মোবাইলে কথা বলার ভান করে বলতাম, দোস্ত তোমার ঐ যে একটা খালাত না মামাত বোন আছে না, তারে তো একটা ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। তুমি তারাতারি চলে আসো আমি এখানেই আছি আর ওদের ফলো করছি। তুমি আসলেই ছেলেটাকে ইন্ডিয়ান ডলা দিমু। আর তখনই দেখা যেত দু'জনের মুখই বিবর্ণ হয়ে গেছে আর দু’জনই বিভ্রান্ত। দু'জনের মধ্যেই আতঙ্ক আজ ধরা খাইলাম, তাদের মনের মধ্যে একই চিন্তা আজ বাসায় গেলে মনে হয় ইন্ডিয়ান ডলা নিশ্চিত।কিন্তু বাসায় যেয়ে দেখতো সব কিছু স্বাভাবিক আর তখন হয়তো মেয়েটার মনে পড়তো আরে আমার তো কোন খালাত ভাই নেই আর চাচাত ভাইয়ের বয়স মাত্র তিন ও কিভাবে ইন্ডিয়ান ডলা দিব? শুধু শুধু ভয় পাইলাম।

কিন্তু আমার কাছে তো মোবাইল নাই, গত রাতেই চুরি হয়েগেছে। তবে ভালোই হয়েছে, মোবাইল হলো ঝামেলা। একটা মোবাইল রাখা মানে আমার মোবাইলে যত নাম্বার আছে এবং আমার নাম্বার যত লোকের মোবাইলে আছে ততোগুলা মানুষকে সাথে নিয়া ঘুরে বেড়ানো। পৃথিবীতে আসছি একা যাব একা মাঝ খানে এতোগুলা লোক নিয়ে ঘুরার দরকার কি?
মোবাইল নাই তাই বলেতো ওদের ভয় না দেখিয়ে থাকা যাবে না। বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। হঠাৎ দেখি আমার পায়ের সাথে একটা জোঁক রক্ত খাচ্ছে। ঘাসের মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময় ধরেছে, ব্যাটা মজা করে "এ" পজেটিভ রক্ত খাচ্ছে। আমি জোঁকটা হাতে নিয়ে বললাম চল আজ তোকে অন্য গ্রুপের রক্ত খাওয়াব।
আমি ছেলে-মেয়ে দু'টোর সামনে গিয়ে বললাম, ‘এই তোমাদের মধ্যে কার রক্তের গ্রুপ কি?’
ছেলেটা বললো, ‘আপনি কে?’

আমি বললাম, ‘আমি “মু”। এই ছেলে রূপার হাত ছাড় আর তিন হাত দূরে সরে বস।’
মেয়েটি বললো, ‘জ্বি আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?’
আমি বললাম, ‘আমি আরো অনেক কিছুই জানি।’
রূপা বললো, ‘আর কি জানেন?’
আমি বললাম, বলতে ইচ্ছা করছে না, তারাতারি রক্তের গ্রুপ কি বলো।’
এবার দু'জনই বিভ্রান্ত, দেখতে ভাল লাগছে।
রূপা বললো, ‘আমার 'এ' পজেটিভ আর ওর 'বি' নেগেটিভ। আপনার হাতে কি?’
আমি বললাম, ‘আমার হাতে ভালোবাসা পরিমাপের যন্ত্র, তুমি চোখ বন্ধ কর। আমি তোমার হাতে উপহারটা দিব, তারপরে তুমি মুঠ বন্ধ করে ফেলবে আমর তুমি এই উপহারটা ছেলেটার শার্টের ভিতরে দিয়ে দিবে।এটা হলো ছেলেটার সাহস আর ভালোবাসার পরীক্ষা এতে ও তোমাকে কতটা ভালো বাসে তার প্রমান পাওয়া যাবে।’
রূপা বললো, ‘সত্যি! খুব মজা হবে তো।’
রূপার চোখ বিস্ময়, রূপা বন্ধ করলো, আমি ওর হাতে জোঁকটা দিয়ে দিলাম।
ছেলেটাকে বললাম, ‘এবার তোমার চোখ বন্ধ, রূপা ওর শার্টের মধ্যে তোমার হাতের জিনিসটা দিয়ে দাও।’
রূপা তাই করল।
রূপা বললো, ‘কি হলো কিছুই তো হচ্ছে না।’
আমি বললাম, ‘হবে অপেক্ষা করো।’
ছেলেটা বললো, ‘আমার শুর শুরি লাগছে, কি ছিলো ওটা?’
আমি বললাম, ‘তেমন কিছু না একটা জোঁক, 'বি' নেগেটিভ রক্ত খাওয়াব বলে নিয়ে আসছি। 'বি' নেগেটিভ রক্ত খেতে ওর ভালো লাগে।’
ছেলেটা সাথে সাথে ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো আর জামা কাপড় সব খুলে লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। রূপা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে আর ছেলেটাকে ডাকছে, ‘যেওনা।’ ওদিকে ছেলেটা সাঁতরে লেক পর হয়ে উঠে এক দৌঁড়ে হারিয়ে গেলো। লেকের পাশে শত শত মানুষ এই দৃশ্য দেখে হাসতে, আর ভাবছে ঘটনা কি? আর আমর ভালো লাগছে এতোগুলে মানুষকে একসাথে আনন্দ দিতে পেরে আর পাশাপশি সবাইকে বিভ্রান্ত করতে পেরে এই যে, ছেলেটা এমন করলো কেন?

রূপা বললো, ‘না এটা ভালোবাসা পরিমাপ হলো না, ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।’
রূপাকে বললাম, ‘দেখলে তো ছেলেটা কত ভীতু সামান্য একটা জোঁকের ভয়ে তোমাকে ফেলে চলে গেল। আর জোঁকটা যদি তোমাকে ধরতো তবে সে তাই করতো। জীবনে এর চাইতেও কঠিন সময় আসতে পারে, আর তখনও সে তোমাকে এভাবে ফেলে পালিয়ে যাবে। অতএব সে ভালোবাসার পরীক্ষায় ফেল করেছে।’
রূপা বললো, ‘হুম আপনার কথায় যুক্তি আছে।’
রূপাকে বললাম, ‘এর পর যদি অন্য কোন ছেলের সাথে তোমার ভালোবাসা হয় তাহলে প্রথমেই কোন রেস্টুরেন্টে যাবে না কারন সেখানে জোঁক পাওয়া যায় না, তবে তোমার পার্সে করে জোঁক নিয়ে যেতে পার। তা না হলে সোজা উদ্যানে এসে জোঁকদিয়ে ভালোবাসা পরিমাপ করে নিবে। নাহয় পস্তাতে হবে।’
রূপা বললো, ‘জ্বি এখন থেকে তাই করবো।’
আমি বললাম, ‘তবে তোমাকে সব চাইতে মূল্যবান কথাটা বলা হয়নি, তা হলো তোমরা যা করছিলে তা ঠিক না, আসলে একসময় ভালোবাসা ছিলো মনের মিলন আর এখন তা দৈহিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আসলে তোমাদের জন্য একটা ফ্যান্টাসির মতো, কিন্তু যখন তোমাদের সে ঘোর কেটে যায় তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।’
রূপার চোখে পানি টলমল করছে-
আমি বললাম, ‘তাহলে রূপা বাসায় যাও।’
রূপা মাথা নিচু করে চলে গেল।


চার

সন্ধা নামছে সে এক অদ্ভুত সুন্দর। আমি বসে আছি সংসদ ভবনের সামনে, সংসদ ভবন দেখতে দেখতে মনে পড়লো-
হিমু হওয়ার স্বপ্ন দেখার আগে স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হব। সংসদে একটা জ্বালাময়ী ভাষণ দিব, দেশর মানুষের কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না, আর হুমায়ূন স্যারকে প্রিন্সিপাল করে একটা কলেজ প্রতিষ্ঠা করবো যেখানে হিমু তৈরি করা হবে, আরো কত কী। তবে আজ মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চাইতে হিমু হওয়ার সুবিধাই বেশি, যখন খুশি যেখানে খুশি হেঁটে চলে যাওয়া যায়, যে কোন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলা যায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়, বাকি খাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আর প্রধানমন্ত্রী হলে যেখানে সেখানে যাওয়া যাবে না গেলে সাথে বডি গার্ড নিয়ে যাও, নিজ দেশের মধ্যেই কেমন একটা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে হয়, যে কোন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলা যায় না। আচ্ছা প্রধানমন্ত্রী হলে কি মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়? বাকিতে খাওয়া যায়? আমার জানা নেই, তবে তারা মনে হয় বাকিতেও কিছু খায় না। এখন আমার চিন্তায় সংসদের সাথে আরো দুইটা 'সং' যুক্ত হয়েছে- সংসার, সংবাদ। এই তিন সং এর মধ্যে এক অদ্ভুত মিল আছে।সংসার জীবনে আমরা অভিনয় করছি, সংসদে সংসদ সদস্যরা আর সাংবাদিকরা তা সংবাদ হিসেবে উপস্থাপন করছে। এসব চিন্তা করতে করতে মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, বুঝতে পারছি এগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে লাভ নেই।বহু লোক আছে এসব চিন্তা ভাবনা করার জন্য, যদিও তাদের চিন্তা কোন কাজে আসে না। হিমু হিসেবে আজই প্রথম দিন এখনো পুরোপুরি হিমু হতে অনেক বাকি অতএব, এতো কিছু চিন্তা করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকা ত্যাগ করা উত্তম, অবশেষে শুধুই মনে হলো বড়ই আজব আমাদের এই জগৎ সংসার।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সময় পার হলো বুঝতে পারিনি, না আজ আর বাসায় ফিরবো না। হিমুরা রাতেও ঘুরে বেরায়, তবে তা জোৎস্না রাতে। কিন্তু আজ তো জোৎস্না রাত না, আমাবস্যা রাত চার দিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। বিদ্যুৎ নাই তাই অন্ধকারটা আরো বেশি লাগছে। হাঁটছি গন্তব্যহীন ভাবে আর একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারে, এ যেন নিজেকে নতুন করে আবিস্কারের চেষ্টা। রাত ঠিক ক'টা বাজে বুঝতে পারছিনা, আকাশে চাঁদও নেই যে অনুমান করবো। তবে

সময় জানাটা আমার জন্য জরুরী না আমার কাজ হলো হাঁটা। আমি হাঁটছি আশে পাশে কোন লোক জন নেই যেন স্মশানপুরী। হঠাৎ দেখলাম দূর থেকে একটা গাড়ী আসছে আমার দিকে।এসে থামলো আমার ঠিক সামনে। চার-পাঁচ জন র‌্যাব নেমে এলো গাড়ী থেকে।
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘কি ব্যাপার এতো রাতে এখানে কি করছেন?’
আমি বললাম, ‘কিছু করছি না হাঁটছি, আপনারাও চাইলে আমার সাথে হাঁটতে পারেন। গাড়ীতে চড়ার চাইতে হাঁটার মধ্যে মজা আছে।’
র‌্যাবের অফিসার বললো,‘আমাদের সাথে মজা করেন? নাম কি?’
আমি বললাম, ‘আমি হিমু হতে চাই। এখনো হতে পারি নাই তাই আমাকে 'মু' বলে ডাকতে পারেন।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘হিমু হতে চান ভালো কথা কিন্তু হুমায়ূন স্যারের কাছে অনুমতি নিয়েছেন?’
আমি বললাম, ‘জ্বি না, স্যারের সাথে এখনো সাক্ষাৎ হয় নাই। পুরাপুরি হিমু হতে পারলেই স্যারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়া আসব। তাতে লিখা থাকবে, এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, এই ছেলেকে হিমু হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হইলো। নিচে থাকবে স্যারের স্বাক্ষর। আমি হব স্যারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি হিমু। যেমন মূসা ইব্রাহিম হলো বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী।’
এর মধ্যে একজন র‌্যাব বললো, ‘স্যার লোকটা কথা বেশি কয়, এইডা দুই নাম্বার হিমু, আসল না। সন্দেহ জনক গতিবিধি, লোকটারে ধইরা নিয়া যাই।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘এই গাড়িতে ওঠো।’
আমাকে গাড়ীতে করে নিয়ে গেলো একটা খোলা মাঠে, গাড়ী থেকে নামলাম। এরই মধ্যে আরো একটা গাড়ী এলো, সে গাড়ী থেকে নেমে এলো আরো দু'জন গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি। হলুদ পাঞ্জাবি দেখে মনে হলো এরাও মনেহয় হিমু হতে চায়।
আমি তাদের বললাম, ‘ভাই আপনারাও কি হিমু?’
তাদের একজন বললো,‘না আমরা হিমু হইতে যামু কোন দুঃখে, দেখেন না পায়ে জুতা আছে।’
অপর জন বললো, ‘আমাদের পাঞ্জাবিতে পকেটও আছে।’
আমি বললাম, ‘ভাই আপনাদের ধারনা ভুল মানুষ দুঃখে হিমু হয় না। অন্ধকারে পায়ের জুতা চোখে পড়ে নাই, যাক তবে আপনাদের ধরে আনলো কেন?’

তাদের একজন বললো, ‘আমরা গিয়েছিলাম বন্ধুর গায়ে হলুদে, ফিরতে দেরি হলো আর রাস্তা থেকে র‌্যাব ধরে নিয়ে আসছে’।
আমি বললাম, ‘তাহলে তো বিপদ বাসায় ফোন করেন খবর দেন।’
অপর জন বললো, ‘আরে ভাই র‌্যাব ধরার আগেই আবার ছিন্তাইকারী ধরছিলো মোবাইল, টাকা সব নিয়া গেছে।’
আমি বললাম, ‘আহারে আপনারা তো দেখছি ধরা খাওয়ার উপরেই আছেন, কিছু ক্ষণের মধ্যেই মনে হয় গুলি খাইবেন।’
দু'জনের চেহারাই কান্না কান্না ভাব, ভীত আর বিভ্রান্ত।

এরই মধ্যে র‌্যাবের আরো একটি গাড়ী আসলো সে গাড়ী থেকে নামলো আরো তিন জন। এদের মধ্যে একজনকে ধরা হয়েছে জঙ্গী সন্দেহে, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছোট ভাই আর আপর জন ছিচকে চোর। আর স্বভবত কারনেই আমি চোরের কাছে প্রথমে এগিয়ে গেলাম, কারন আমি আজ 'মু' চোরের কারনেই।

আমি চোরের কাছে জানতে চাইলাম, ‘কি চুরি করে ধরা পরছেন?’
চোরটা বললো, ‘একটা ঘরের বেবাক কিছু খালি একটা হলুদ পাঞ্জাবি ছাড়া।’
আমি বললাম, ‘ভাই সকাল থেকে আমি আপনেরে খুঁজছি, ধন্যবাদ ভাই আমার ঘরে চুরি করার জন্য।’
চোরটা বললো, ‘ঐডা কি আপনার ঘর আছিলো?’
‘হুম আমিই এই হলুদ পাঞ্জাবিটা পরে ঘুমাচ্ছিলাম। বাসা নাম্বার ১/এ/১, সমস্যা নাই আমি র‌্যাবের কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করবো যেন আপনারে ছেড়ে দেয়। আপনি আমার এতো বড় উপকার করছেন।’
চোরটা বললো, সত্যিই সুপারিশ করবেন? আফনে অনেক ভালা মানুষ।’

এর পর আমি গেলাম জঙ্গী সন্দেহে আটক ব্যাক্তির কাছে-
আমি বললাম, ‘ভাই আপনার নাম কি? আপানরে ধরছে কেন?’
জঙ্গী বললো ‘আমার নাম লাদেন। বাবা-মা বড় শখ করে নামটা রাখছিলো। বিশ্বাস করেন আমার কোন দোষ নাই। আমি কলেজ ছাত্র, পড়া লেখা করি।’
আমি বললাম, ‘ছাত্র হলে এতো রাত্রে বাইরে কেন?’

লাদেন বললো, ‘আমি এক ছাত্র পরাই, দু'দিন পরে তার পরীক্ষা তাই আজ একটু বেশি সময় দিয়েছিলাম।’
আমি বললাম, ‘শুনলাম আপনার কাছে নাকি একটা জিহাদী বই পাওয়া গেছে?’
লাদেন বললো, ‘হুম কিন্তু জিহদী বই রাখা কি অপরাধ? জিহাদী বই দিয়া কি মানুষ খুন যায়? আমি তো আর অস্ত্র নিয়া ঘুরছিলাম না।’
আমি বললাম, ‘আপনার কথায় যুক্তি আছে, দেখা যাক কি হয়। আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করতে থাকেন।’

এর পর সর্বশেষ শীর্ষ সন্ত্রাসীর শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছোট ভাই কাছে গেলাম-
আমি বললাম, ‘আপনার পরিচয়? আপনাকে কেন ধরেছে?’
ছোট ভাই বললো, ‘আমারে চিন না! আমি আঙ্গুল কাটা জগলুর ছোট ভাই আঙ্গুল কাটা মগলু।’
আমি বললাম, ‘আপনিও কি জগলু ভাইয়ের মতো মানুষের আঙ্গুল কাটেন?’
আঙ্গুল কাটা মগলু বললো, ‘না জগলু ভাই কাটে হাতের আঙ্গুল আর আমি কাটি পায়ের আঙ্গুল। আপনার পরিচয়?’
আমি বললাম, ‘আমি এখনো পুরোপুরি হিমু হতে পারি নাই, আজই প্রথম দিন তাই আমার নাম "মু"।’ আপনের মতো আমারও নামের প্রথম অক্ষর "হি" নাই। তা মগলু ভাই এই পর্যন্ত কত জনের পায়ের আঙ্গুল কাটছেন?’
আঙ্গুল কাটা মগলু বললো, ‘না এখনো কাটি নাই, তার আগেই ধরা পড়ছি। আপনে তো অনেক বিরক্ত করতাছেন। আর একটা কথাও কইবেন না, তাইলে আপনার পায়ের আঙ্গুল থাকবোনা কইলাম।’
আমি বললাম, ‘মগলু ভাই শেষ প্রশ্ন, পায়ের আঙ্গুল না থাকলে কি হাঁটতে অসুবিধা হয়? আমি তো হিমু, আমার কাজ হলো হাঁটা হাঁটি করা।’
মগলু আমার পায়ের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, ভাবটা এমন যেন এখনি একটা কুড়াল দিয়ে এক কোপে আমার পায়ের আঙ্গুলগুলো কেটে নিবে।

এর মধ্যেই র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘সবাই এক লাইনে দাঁড়াও।’
এই কথা শুনেই সবাই হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো, আর বললো, ‘স্যার এইবার মাফ কইরা দেন।’

তখন আমি বললাম, ‘স্যার আমার মাথায় দুইটা আইডিয়া আসছে অনুমতি দিলে বলতে পারি-
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘কি বলতে চাও বলো।’

আমি বললাম, ‘নাম্বার ওয়ান, আমদের হলুদ পাঞ্জাবি পড়া তিনজনকে কোন গ্রামে দিয়া আসেন, গ্রামের লোকজন চোর -ডাকাত মনে কইরা গণধোলাই দিয়া মাইরা মজা পাইবো। পরে আপনারা যেয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসবেন।’

পরদিন সকালে মিডিয়ার সংবাদ আসবে-

অমুক গ্রামে গভীর রাতে গণপিটুনির স্বীকার হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে গ্রামবাসী দাবি করছে যে, তিন জন গভীর রাতে চুরির উদ্দেশ্যে গ্রামে প্রবেশ করে, তখন গ্রামের লোকজন তাদের ধরে গনপিটুনি দেয়। যদিও গ্রামের কোন বাড়িতে চুরির কোন ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে, তিন জনের পোশাক দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে তারা হিমু। গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি, পা খালি। তাই অনেকের দাবি তারা হিমু তাই রাতে ঘুরতে বেরিয়েছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো গতকাল জোৎস্নারাত ছিলো না।
পুলিশ বলেছে, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এর সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তারা হিমু কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হিমু বিশেষজ্ঞ ডঃ হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে প্রধান করে সরকার তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা আগামি সাত দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন। তবে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোন সময়ের চাইতে ভালো’

আইডিয়া টু: ‘স্যার বাকি তিনটাকে সড়ক দুর্ঘটনার ফাঁদে ফেলে দেন। তিনটাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে বলবেন, ‘দে দৌড়, আপনারা পিছন পিছন গাড়ী দিয়ে তাড়াবেন। তারপর একটা একটা কইরা গাড়ির নিচে চাপা দিয়া মারবেন। সারা দিনইতো আমাদের অজান্তে কত কীট গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরে, এরা হলো সমাজের কীট এদেরও চাকার নিচে চাপা দিয়া মারবেন।’

পরদিন সকালে মিডিয়ার সংবাদ আসবে-

গতকাল গভীর রাতে অমুক হাইওয়েতে তিন জন যুবকের লাশ পাওয়া যেছে। তারা তিন জনই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জগলুর ছোট ভাই বলে পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তিনটি খুনের মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে। অপর একজন ছিচকে চোর বলে জানা গেছে। আর অপর একজনের পকেটে একটি জিহাদি বই পাওয়া গেছে আর তাই স্বভবত কারনেই ধারনা করা হচ্ছে সে কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত। একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাথে একজন চোর ও জঙ্গীর কি সম্পর্ক তারা কোন নাশকতার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছিলো কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সাত সদস্যর তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে এখনো ঘাতক গাড়ি ও তার চালকলে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলেই জানা যাবে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স কি সে গরু-ছাগল চিনে নিয়েছিলো কিনা?

‘স্যার আমার আইডিয়া কেমন লাগলো?’
i¨v‡ei অফিসার বললো, ‘হুম আইডিয়া পছন্দ হয়েছে, কিন্তু অনেক দিন যাবৎ ক্রস ফায়ারে মানুষ মারিনা তাই দিন দিন মনে হয় হাতের নিশানা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ সব গুলারে ক্রস ফায়ারে দিমু এইটাই ফাইনাল।’
সবাই আবারো হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো।
আমি বললাম, ‘স্যার ক্রস ফায়ারে দেওয়ার আগে আমি কিছু বলতে চাই।’
i¨v‡ei অফিসার বললো, ‘বল কি বলতে চাও, তবে সংক্ষেপে বলবে।’
‘স্যার চোরটাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না, ও আমার বাসায় চুরি করেছে। আমি ওকে ক্ষমা করেছি।’
তখন চোরটা বললো, ‘স্যার আপনাগো পায়ে পড়ি আমারে ক্রস ফায়ারে দিয়েন না, আমার মত ছিচকে চোর ক্রস ফায়ারে মরলে আপনাগো অপমান। আপনার আমারে জনগনের হাতে দিয়া দেন গণ ধোলাই খাওয়ার জন্য। আমার আবার গণধোলাই খাওয়ার অভ্যাস আছে। মতই মারুক ব্যাথা লাগে না, মারতে মারতে তারাই ক্লান্ত হইয়া পড়বো।’

তারপর আমি বললাম, ‘স্যার এই দুইজন তো হিমু না, এরা হিমুও হতে চায় না। এরা বন্ধুর গায়ে হলুদে গিয়েছিলো, এদের মোবাইল, টাকা পয়সা সব ছিনতাই হইছে এদেরও ছেড়ে দিন। এরা আর কোন দিন কোন বন্ধুর গায়ে হলুদে যাবে না প্রমিস।’


একজন বললো, ‘জ্বি স্যার আমরা আর কোন দিন কোন বন্ধুর গায়ে হলুদে যাব না প্রমিস।’
অপর জন বললো, ‘প্রয়োজনে আমরা আমাদের বিয়ের সময় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও করবো না। এমন কি আপনি বললে বিয়েও করবো না।’

আমি বললাম, ‘স্যার আঙ্গল কাটা মগলু ভাইকেও ছেড়ে দিন, সে এখনো কারো আঙ্গুল কাটে নাই। তবে তারে ভয় দেখানোর জন্য তার কানের পাশদিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। সে বলছে যদি জীবনে কারো আঙ্গুল কাটে তবে সবার আগে আমার আঙ্গুল কাটবে। তবে আমার আঙ্গুল কাটলে একটু অসুবিধা হবে, কারন আমি হিমু কাজ হলো হাঁটা-হাঁটি করা।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘আর কিছু বলবে তুমি?’
আমি বললাম, ‘জ্বি স্যার আমার শেষ কথা লাদেনের দোষ কি বলেন? তার কাছে একটা জিহাদী বই পাওয়া গেছে তার মানে সে জঙ্গী? তাহলে তো আপনাদের হিসেবে যারা জিহাদী বইয়ের প্রকাশক আর লেখক তারা সবচাইতে বড় জঙ্গী। আপনাদের উচিত তাদের আটক করা। তাহলে আর কোন সমস্যা নাই, জিহাদী বই ছাপা বন্ধ, জঙ্গী উৎপাদন বন্ধ।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘তোমার কথা শেষ?’
আমি বললাম, ‘জি স্যার।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘তুমি কি বলতে চাও তুমি হিমু তাই তোমাকে ছেড়ে দেই আর হিমু তৈরির কারিগর ডঃ হুমায়ূন আহমেদ স্যার কে এনে ক্রস ফায়ারে ফেলে দেই?’
আমি বললাম, ‘যুক্তি সঙ্গত ভাবে তাই হওয়া উচিৎ কিন্তু সে কথা আমি সরাসরি কি ভাবে বলি। স্যার বড়ই ভালো মানুষ, তাকে ক্রস ফায়ারে দিয়ে নিজের বিপদ কেন ডেকে আনবেন?’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘চুপ আর একটা কথাও না। পাঁচ মিনিট পরে সিদ্ধান্ত হবে তোমাদের সাথে কি করা হবে গণপিটুনি, সড়ক দূর্ঘটনা না ক্রস ফায়ার।’

পাঁচ মিনিট পরে সিদ্ধান্ত হলো-


র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘তোমাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে, তবে ঐ অর্ধেক হিমুটাকে ছাড়া। ঐ ব্যাটা কথা বেশি বলে। কথা বেশি বললে হায়াত কমে, ওর হায়াত কম।’
আমি বললাম, ‘স্যার আমাকে কিভাবে মারবেন সিদ্ধান্ত হইছে?’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘হুমম... হইছে ক্রস ফায়ার, জনগনের হাতে দিয়া লাভ নাই। তোমারে একলা পিটাইয়া মজা পাইবো না।’
আমি বললাম, ‘জ্বি আমি রাজি আছি, ক্রস ফায়ার শব্দটার মধ্যে একটা ভাব আছে। স্যার ক্রস ফায়ারের সময় আমার হাতে কি কোন অস্ত্র দিবেন? দিলে একটা একে ৪৭ দিয়েন, এইটার মধ্যেও একটা ভাব আছে।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘অর্ধেক হিমুর চোখ বাঁধ। আজ ওদের সবার সামনে ক্রস ফায়ার হবে।’
আমি বললাম, ‘স্যার চোখ বাঁধতে হবে না। নিজের মৃত্য যদি নিজের চোখে না দেখি তাহলে আমি কিসের হিমু?’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘আচ্ছা চোখ বাঁধা হবে না, আমি দৌঁড় দিতে বললে দৌঁড় দিবি।’
আমি বললাম, ‘স্যার দৌঁড় কি সামনের দিকে দিমু না পিছনের দিকে দিমু? আর আপনার পিস্তলের রেঞ্জ কত মিটার? আপনিও কি আমার সাথে দৌঁড়াবেন আর গুলি করবেন?’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘চুপ কর, এতো কিছু জেনে লাভ নাই?’
আমি বললাম, ‘স্যার আমি আবার পিছন দিকে ভালো দৌঁড়াই। একবার ১০০মিটার উল্টা দৌঁড়ে গোল্ড মেডেল পাইছিলাম। বিশ্বাস নাহয় চোরটাকে জিজ্ঞাসা করেন ও আমার মেডেলটাও চুরি করছে।’
তখন চোরটা বললো, ‘জ্বি স্যার আমি স্বাক্ষী, ঘটনা সত্য।’
এবার র‌্যাব অফিসার রেগে গিয়ে বললো, ‘ঐ হিমুর বাচ্চা 'মু' আর কোন কথা বলবি না। সোজা দাঁড়াইয়া থাক, সমনে থিকা গুলি করমু।’
আমি বললাম, ‘স্যার এইটা ভালো বলছেন, হিমুরা কাউরে ডরায় না, গুলি খামু বুকে পিঠে কেন? পিঠে গুলি খাবে ভীতু লোক।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘আর কোন কথা না, এক, দুই, তিন বলার সাথে সাথে গুলি হবে।’

আমি বললাম, ‘জ্বি স্যার আমি রেডি।’
র‌্যাবের অফিসার বললো, ‘তিন’
সাথে সাথে গুলি, একটা বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, একটা বিড়াল আমর শখের গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেলেছে। দেখতে লাগলাম শরীরের কোথায় গুলিটা লেগেছে? না কোথাও লাগেনি কারন র‌্যাব কথা দিয়ে কথা রাখেনি, সে এক, দুই,তিন না বলে সরাসরি তিন বলাতে মনে হয় গুলিটা ফসকে গেছে!

ইতি কথা
আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষের মাঝেই একটা হিমুর বসবাস। তবে সে হিমু বহিঃপ্রকাশ ঘটে না কখনোই কারন আমদের সবারই রয়েছে হাজারটা পিছুটান, মোহ-মায়া, দায়বদ্ধতা পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি। আর তাই বাস্তব জীবনে এসবের উর্ধ্বে উঠতে পারা লোকের সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু আমার মতো কল্পনায় হিমু হওয়ার খুবই সহজ, শুধু স্বপ্ন দেখতে হবে।

বি:দ্র: হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উদ্দেশ্যে একটাই কথা, আপনার সৃষ্টি হিমু চরিত্রটি নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করলাম, কিছু মনে নিবেন না। আর মনে নিলেও আমার কোন দোষ নাই সব দোষ ঐ হিমুর।
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×