somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাাদেশের ব্লগিং এবং ব্লগারদের প্রকৃত পরিচয়ের নিশ্চয়তা বিধান

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির সাথে মিথষ্ক্রিয়া থাকে, তাদের কোন না কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। যেমন, একটি পত্রিকা, কিংবা ব্যবসা সংস্থা, কিংবা স্কুল, ইত্যাদি কোন না কোন সরকারী সংস্থা কতৃক লাইসেন্স প্রাপ্ত। নাগরিকদের নিরাপত্তা, দেশের সার্বভৌমত্ব, ইত্যাদি কারন দেখানো যেতে পারে এই লাইসেন্সিং-এর কারন হিসেবে। আমি যেভাবে দেখি, তা হল, কোন প্রতিষ্ঠান যেন তার কাজের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকে, কোন অনৈতিক কিংবা বেআইনী কার্যক্রমের বিচারে যেন আমরা কোন একজন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠিকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারি, এই ধরনের নানা কারনে আমরা একধরনের গ্যারান্টি চাই।


উদাহরণ হিসেবে দেখি, কোন একটি দৈনিক পত্রিকা যদি লাইসেন্স প্রাপ্ত না হয়, তাহলে কি হতে পারে, ক) দেশের আইনের ব্যাপারে তারা তোয়াক্কা না করে বেআইনী-রাষ্ট্রদ্রোহমূলক-অসামাজিক নানা কিছু তারা প্রকাশ করতে পারে, খ) লাইসেন্স না থাকলে তার কোন আইনী অস্তিত্ব থাকে না, তাই আমরা তাকে আইনের আওতায় আনতে চাইলে কাকে ধরব তা জানব না, গ) প্রকৃত জবাবদিহিতার অভাবে ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন করে এই পত্রিকায় যে কেউই যা ইচ্ছা তা প্রকাশ করতে পারে, পরবর্তীতে যা তারা অস্বীকার করতে পারে। এরকম আরো অনেক কিছু বলা যায়। যেমন ধরুন, ক) প্রথম আলো কিংবা জনকন্ঠে কেউ একজন "জনাব আলফা" লিখল, "সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে" - কি মজা, আমরা গিয়ে জনাব মতিউর রহমানকে বলতে পারব, "এই যে মতিউর রহমান সাহেব, আপনার পত্রিকায় জনাব আলফা লিখল সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে, এই আলফা সাহেবের সাথে একটি মিটিং করতে চাই, ঠিকানা দিন।" জনাব মতিউর রহমান সাহেবে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু অন্যদিকে দেখুন, দৈনিক শেষের অন্ধকার কিংবা জন্তুরগলা পত্রিকা লাইসেন্স প্রাপ্ত নয়, এবং ঐখানে যে কেউ খেয়ালখুশি মত ইচ্ছেমত ছদ্ম নামে যা খুশি বললে, আমরা কিন্তু ওদের কাছে জবাবদিহিতা চাইতে পারব না। কিছুদিন আগেই একজন নারি নেত্রিকে কটাক্ষ করে গল্প লিখেছিলেন জনাব হাসনাত আব্দুল হাই, প্রথম আলো তা ছাপিয়েছিল। মানুষের প্রতিবাদের মুখে তারা তা নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়; মানুষ জানে কারা এগুলো করেছিল। কিন্তু প্রথম আলো যদি এই অনুমতি দিত যে, বেনামে-পরিচয় গোপন করে যে কেউ লিখতে পারবে, তখন জনাব হাই কিন্তু পরিচয় গোপন করে লিখতে পারতেন। তেমনিভাবে, গ্রামিন ফোন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে সরকারী বাহিনী ওদের ভয়েস ডাটা কিংবা লোকেশন ডাটা চেক করে তদন্ত করতে পারে, ওদের প্রত্যেক লাইনের পেছনের মানুষটির পরিচয় থাকতে বাধ্য। কিন্তু কোন "শহরের-ফোন" কোম্পানি যদি লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয়, ওরা যদি ছদ্মনামে-বেনামে মানুষকে টেলিফোন লাইন দিয়ে বেড়ায়, তাহলে কিন্তু বড় বিপদ। নামে-বেনামে-বিনাপরিচয়ে যে কেউ যা ইচ্ছা করে বেড়াতে পারবে।


আইনত অস্তিত্বহীন কিন্তু বাস্তবে কার্যকর একটি প্রতিষ্ঠান তার খেয়ালখুশি মত যা ইচ্ছা করে বেড়াতে পারে। এখন দেখুন, বাংলা ব্লগে কি হচ্ছে। ঐখানে নামে বেনামে লোকজন যা ইচ্ছা বলে বেড়াচ্ছে। কোন একটি কথা বলল এবং তার দায়ভার নিল না, এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। যতক্ষন পর্যন্ত ব্লগগুলোতে প্রকাশের কারনে মানুষ মারা যাচ্ছিল না, ততক্ষণ কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু গত দুই বছরে আমরা বিশাল একটি পরিবর্তন দেখলাম। ২০১৩ সালে একজন এবং এই কিছুদিন আগে ২০১ এর ফেব্রুয়ারীতে আরো একজন খুন হলেন। তাছাড়া ব্লগে লিখালিখি করার জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশের দরজা ঘুরে এসেছেন। ধর্মদ্রোহিতা-রাষ্ট্রদ্রোহিতা ইত্যাদি নানা কারনে নানাজন প্রশ্নবিদ্ধ। এদের নানা জনের পরিচয় আইনের কাছে জানা আছে, কিন্তু অনেকেই আইনের চোখে অস্তিত্বহীন। অনেকেই বেনামে-ছদ্মনামে ব্লগে লিখেন। যতক্ষন পর্যন্ত মানুষ মারা যাচ্ছিল না, কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন পরিবর্তন জরুরী। কোন ব্লগ-অনলাইন মিডিয়াতে যারা লিখছেন, তাদের পরিচয়ের নিশ্চয়তা প্রদান খুবই জরুরী।


পরিচয় প্রদান কেন জরুরী? খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি আমার মতামত দিতে পারি, সরকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব মত থাকতে পারে। ধরুন,"যে-কোন-নামে-লিখুন.কম" ব্লগে বেনামে-ছদ্মনামে লেখা যায়। মনে করুন আমাদের পরিচিত "মানিক" এবং "রতন" এই ব্লগটির প্রতিষ্ঠাতা। ওরা খুব ভাল ভাল কথা বলে থাকে, ব্লগে খুব ভাল ভাল কথা লিখে থাকে। এই পর্যন্ত কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা হল যখন "কোন-দুষ্ট-মানুষ" নামক লোক "অজানা" ছদ্ম নামে ঐ ব্লগে এমন একটি লিখা লিখল যা মিথ্যা, কিংবা অশ্লীল কিংবা কুৎসামূলক। যেহেতু আমরা "অজানা" নামের আড়ালের কোন-দুষ্ট-মানুষ-টির পরিচয় কখনোই জানতে পারছি না, আমরা আমাদের কল্পনার তীর যে কোন দিকে ছুড়ে মারতে পারি। কোন হিংসুটে লোক হয়ত বাজারে চালু করে দিল, এই "অজানা"-র আড়ালে আছে "মানিক-রতন" কিংবা "অমুক-তমুক" কিংবা অন্য কেউ। হয়ত, কোন জঙ্গীগোষ্ঠী নাশকতার আগে করে উল্টাপাল্টা কথা বলে পরিবেশ গরম করে "অজানা" নামটি চালিয়ে দিল ওদের টার্গেট লোকটির নামে। হয়ত অন্য কোন নষ্ট উদ্দ্যেশে কেউ একজন তার দোষের ভার চাপিয়ে দিল অন্যকারো নামে। নির্দোষ-নিরপরাধ লোকের উপর যখন অন্যায় আচরন ঘটে, তখন কিন্তু তা মেনে নেয়া যায় না। এইখানে হামলা কিংবা নাশকতার নৈতিকভিত্তিহীনতার উল্লেখ বলাই বাহুল্য। বেনামে কোন কিছু করার অনুমতি থাকা মানে এরপর আমরা চাইলেও ঐ দুষ্ট লোকটিকে ধরতে পারব না। বেনামে-বিনাপরিচয়ে তাই কোন কিছু লিখতে বা বলতে দেয়া চরম অনৈতিক। মানুষের নামগুলোই যখন আমরা লুকিয়ে রাখতে দেই, তখন "যে-কোন-নামে-লিখুন.কম" এর পেছনে জঙ্গী আছে নাকি ভাল মানুষ আছে তা কোন ব্যাপার না, প্রকাশ্য জনসমগমে যা ঘটে তাই বিবেচ্য। "যে-কোন-নামে-লিখুন.কম" এর পেছনে হয়ত ভাল মানুষেরাই আছেন, কিন্তু এর সারল্যের-সাফল্যের ফায়দা যদি আমরা খারাপ লোকদের লুটতে দেই, তাহলে সমস্যা। সবকিছু তখন নষ্টরাই ভোগ করবে।


যুগে যুগে কালে কালে প্রখ্যাত-বিখ্যাত মানুষেরা সমাজের নানা উন্নতি ঘটিয়েছেন। হাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাসে হাজার-হাজার মানুষে সমাজের উন্নতি ঘটিয়েছেন। কিন্তু সবাই তাদের নিজ নিজ নামেই তা করেছেন। মুখোশের আড়ালে কেবল কাপুরুষেরাই কাজ করে থাকে। কোন কাজের দায়ভার যদি কেউ নিতে না পারে, তার পরিণাম সমাজের সবার উপরই ভয়াবহ। আজ আমরা ২-৩ জন ব্লগারের মৃত্যু দেখছি, জনাদশেক ব্লগারের রাষ্ট্রদ্রোহিতা-ধর্মদ্রোহিতার কথা আলোচনা করছি, আমার আশংকা, বেনামে চলতে দিলে সামনের দিনে আমরা হয়ত সম্ভাব্য মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে পারব না। মুক্তচিন্তা-ধর্মচিন্তা-আলোচনা-সমালোচনা সবই আমাদের দরকার, এর জন্য ব্লগিংও দরকার। ব্লগিং আমাদের অনেকের জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটি আমাদের নতুন এক প্রতিষ্ঠান। তাই সকলের কাছে আহ্বান, অবিলম্বে এই জরুরী পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পন্থা বের করুন, সবাইকে যারযার কথা-কাজের দায়ভার নিতে উৎসাহিত করুন। সমস্যা সমাধানে সকলের অংশগ্রহণ জরুরী, একজনকে ছাড়া আমরা অন্যজন খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারব না। ব্লগিং থাকবে, ব্লগাররাও থাকবেন, কিন্তু এর সাথে ওনাদের সকলের পরিচয়ের নিশ্চয়তাও বিধান করতে হবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×