ঢাকা শহর থেকে শীতটা তাহলে বিদায়ই নিল মনে হয়। এবার আর তেমন করে হাড়ে কাঁপন ধরানো শীতও পড়লো না, মাঝখান দিয়ে বিল্ডিঙের সাথে সাথে মনেও কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ভয়ংকর ভুমিকম্প। দীর্ঘমেয়াদী কোনো শৈত্যপ্রবাহও ছিল না, শীতে জড়সড় হয়ে কেউ বলতে পারেনি, "এহ, এই বছর সবচাইতে বেশি শীত পড়েছে"। কিছুদিন পরেই গরম পড়তে শুরু করবে, ধীরে ধীরে তা অসহ্য হয়ে উঠবে। সবাই বলতে থাকবে, শীতকালই ভাল ছিল! এমনটা কেন হয় বলেন তো? মানে, শীতকালে কেন শীত লাগে, গরমকালে কেন গরম লাগে? হাসছেন? ভাবছেন, পাগলটা বলে কি? শীতকালে শীত, গরমকালে তো গরমই লাগবে! কথা ঠিক, যখন যেমন ওয়েদার তখন তো তেমনই অনুভুত হবে। কিন্তু কেন? জানেন তো, ব্যাঙের তা হয় না। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে বুঝিয়ে বলি। তার আগে শুনি, আপনি কি সায়েন্স পড়েছেন? পড়েননি? ভাল করেছেন, তাহলে আপনাকে বুঝানো ইজি হবে, বেশি টেকনিক্যাল ডিটেইলসে যেতে হবে না, সোজা বাংলায় বললেই হবে।
মানুষ ও অন্যান্য উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রানীদের রক্তের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে উঠা-নামা করে না। যেমনা সব ঋতুতেই আমাদের দেহের গড় তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইটই থাকে। ফলে শীতকালে বা গরমকালে পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে দেহের তাপমাত্রার পার্থক্য তৈরি হয় বলেই আমাদের শীত বা গরম লাগে। কিন্তু ব্যাঙের মত শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রানীরা পরিবেশের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে নিজেদের দেহের তাপমাত্রাও এডজাস্ট করে নেয়, ফলে দেহের সাথে পরিবেশের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে না বলে তাদের আর আলাদা করে শীত বা গরম লাগে না। কিন্তু এই এডজাস্টমেন্ট এমনি এমনি হয় না। বাড়তি কিছু এনার্জি খরচ হয়।
আসুন একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাই। একটা সসপ্যান বা পাতিল প্রায় কানায় কানায় পানিতে ভরে নিয়ে চুলায় বসিয়ে দেই। এরপর একটা জীবিত ব্যাঙ ওই পানিতে ছেড়ে দিয়ে তাপ দিতে থাকি। পানির তাপমাত্রা যতই বাড়তে থাকবে ব্যাঙও তার দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে থাকবে, সাথে সাথে সে তার এনার্জি হারাতে থাকবে। এভাবে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছাবে যখন ব্যাঙের আর শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না যে তার তাপমাত্রা বাড়াবে। ফলে কি হবে? পানির তাপে ব্যাঙটা মারা পড়বে।
এখন বলেন ব্যাঙটাকে মারলো কে? আমার দিকে তাকাচ্ছেন যে! বলতে চাইছেন আমি পুড়িয়ে মেরেছি? কিন্তু আমি তো বলব ব্যাঙ নিজেই নিজেকে মেরেছে। হাসছেন যে! ভাবছেন নিজের দোষ ব্যাঙের ঘাড়ে চাপাচ্ছি? মোটেও না মশাই! দেখেন, আমি যখন পানির তাপমাত্রা বাড়াচ্ছিলাম তখন ব্যাঙ তার নিজের তাপমা্ত্রা এডজাস্ট করে যাচ্ছিল, সময় থাকতে লাফায়নি। ফলে তার লাফানোর ক্ষমতা হারিয়ে শেষমেশ মারা পড়ল। এখনো কি ব্যাঙকে দোষী না করে আমাকে দোষী করবেন?
আমরা ব্যাঙের এই অপমৃত্যুর দৃশ্যটা আমাদের জীবনেও দেখতে পাই। আমরা বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশে এডজাস্ট করতে থাকি, এডজাস্ট করতে থাকি, প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠা বা সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করি না। এভাবে এমন একটা সময় আসে যখন আর এডজাস্ট করার অবস্থা থাকে না, বের হবার ইচ্ছা জাগে, কিন্তু বের হবার সুযোগও তখন শেষ। একদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আবার সামনেও বিশাল গর্ত, লাফাইতে পারছি না। তখন যতই আমরা অন্যকে দোষ দিতে থাকি না কেন, দোষ কিন্তু নিজেরই। তাই বলছি, সময়মত যে লাফাচ্ছেন না, একবার ভেবে দেখেন কেন লাফাচ্ছেন না।
(ব্যাঙ বিষয়ক থীমটা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭