somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেন ও কবিতা কথন

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-ও সাহেব রাস্তা বানালে
ছ মাসের পথ কলের গাড়ি দন্ডে চালালে।

বৃটিশ সাহেবরা উপমহাদেশে যখন প্রথম রেলগাড়ি চালু করেছিল, গোরা সাহেব ও রেলগাড়ির মহাত্ম্য এভাবেই একসাথে লোকগাথায় বন্দী হয়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরত।।
তারপর শতাব্দী পেরিয়ে গেল । স্টীম, কয়লার যুগ পেরিয়ে চতুর্ঘাত ইঞ্জিন চলে এসেছে এখন। তবু রেলগাড়ি নিয়ে আমাদের রংঢং কমেনি এতটুকু ।
বাস, ট্রাক নিয়ে কয়টা কবিতা বা গান আছে আমার জানা নেই। কিন্তু রেলগাড়ি নিয়ে হাজারো ফ্যাচাং করে গেছে আমাদের কবি সাহিত্যিকরা।
সেই ছোটবেলার লিমেরিক থেকে শুরু-
'রেলগাড়ি ঝমাঝম পা পিছলে আলুর দম .........
তারপর পাঠ্যবইএ শামসুর রহমানের ছড়া-
'ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই?.........।
আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ , তার লেখা অসাধারণ রোমান্টিক কবিতা 'হটাৎ দেখা' -
'রেলগাড়ির কামরায় হটাৎ দেখা,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন,
আগে ওকে বারবার দেখেছি লাল শাড়িতে,
ডালিম ফুলের মত রাঙা'।
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড় ,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে .........।।

আহমেদ তানভীর এর কবিতাটা,’অধরা ট্রেন’।এত সুন্দর কবিতাটার খন্ডাংশ দিতে ইচ্ছে করল না।তাই পুরোটাই দিলাম।
দীর্ঘ এই যাত্রায় একটা মাত্র ট্রেন...
যেখান থেকে তুমি উঠেছিলে, আমি ঠিক তার এগারো স্টেশন পরে।
চোখের পাতা অবিরাম টেনে রেখে প্রতীক্ষা ছিলো নিদ্রাহীন!
একটিই তো ট্রেন...

প্রলম্বিত প্রতীক্ষার ভারে যখন ক্লান্ত-
আমার তন্দ্রালু মদিরতার সুযোগে
ট্রেনটা পেরিয়ে গেলো এগারো নম্বর স্টেশন-
চুপচাপ হুইসেলবিহীন... পলাতক কয়েদি যেন!

আজ অবধি ছুটছি আমি সে ট্রেনের পেছনে-
একটিই তো ট্রেন...
ছুটতে...
ছুটতে...
ছুটতে...
অধরাই থেকে গেল শেষ বগির শেষ দরজাটা!
দণ্ডিত হবার ভয়ে একবারের জন্যও শিকলটা টেনে দিলে না তুমি!

মহাদেব সাহাও তার কবিতায় এনেছেন রেলগাড়ি-
মনটা ভীষণ উড়ু উড়ু শালবনে
কার ছায়া দেখি-
লোকাল ট্রেনে যাচ্ছি কোথায়!
আমার এখন মনে পড়ে তোমার চোখে
বৃষ্টি নামা,
তবু উড়ু উড়ু এই দুপুরে মধুপুরে হয় না নামা।

শক্তি চট্টোপধ্যায়ের কবিতা ‘স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি’-
মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ ধ’রে ক্রমাগত
সাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান
শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলি
যেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলে


আরো অনেএএএএক অনেএএএএক কবিতা............।।
'ঝরা পাতার কিনার ধরে লোকাল ট্রেন,
নৈহাটিতে চা, বৃষ্টি আসে কথা নিয়ে,,,,,,।
বৃষ্টিতে ভেজা বন আর সমুদ্র ঝড়ের পরপরই আমার দেখা সবথেকে বিশুদ্ধ সুন্দর হল, বৃষ্টিতে ধুয়ে শীতল হয়ে যাওয়া একটা জংশন।
ট্রেন, প্লাটফর্ম, স্টেশন,স্টেশনে ঝিম মেরে পড়ে থাকা পড়ে থাকা পুরনো ওয়াগন ,লাল ইটের রেলওয়ে অফিস বিল্ডিং ,লাল রেলব্রীজ সবই এক একটা জ্বলজ্যান্ত কবিতা যেন।

তানিম কবির লিখেছেন এই কবিতাগুলোর কথা তার একটি কবিতায়-
বৃষ্টি পড়ার দিনটায়, শর্মি তোমাকে ডাকলাম
বললাম, তুমি শর্মি, তুমি বৃষ্টি পড়ার দিনটা
চলো ভৈরব, চলো তিনদিন, তুমি মেঘনার
ঘাটে থাকবা।
আরো বললাম, তুমি চাইলে
টানা বৃষ্টির, এই মৌসুম, আশুগঞ্জের উঁচু
প্লাটফর্ম, ধরে হাঁটবা, খালি হাঁটবা।
তুমি শর্মি
তুমি পুরনো, কোনো বৃষ্টিতে ভেজা ওয়াগন
ধরে দেখবা। ভিজে পিচ্ছিল, কালো পাটাতন
নিজে বসবার, করে ঘষবা। চারিপার্শ্বে
চির চারপাশ, বসবাসহীন, করে তুলবা,
তুমি
আই থিংক, তুমি পারবা।
পোষা কচ্ছপটাকে
সঙ্গেই, নিয়ে নিচ্ছো? ব্যাগে থাকল—সেটা
সুন্দর। তাকে রেইনকোট, কিনে দিচ্ছো?
দিও দিও তো!
প্রতিনিয়ত, দেখো বৃষ্টি, টানা
বৃষ্টি—ফাঁকে ফোকরে তারই ছাঁটেরা, উড়ে
যাচ্ছে।
ঘোলা বাষ্পে, চলো মিশ খাই, চলো
শর্মি, ভেজা রেলব্রিজ, হাতে আমব্রেলা, পায়ে
ফস্কাই।

ওপার বাংলার চন্দ্রবিন্দুর একটা গান- ‘সোনা মন’ যেখানে রেলগাড়িকে শেখানো হয়েছিল শাঁখের সুর।

তারপর সেই গানটা -
ইস্টিশনের রেলগাড়িটা!মাইপ্যা চলে ঘড়ির কাঁটা ......।

ঈস্টিশনের কথায় মনে পড়ল হুমায়ুন আহমেদ এবং জাফর ইকবাল দুইজনারই ইস্টিশন নামে দুইটা বই আছে। ।
ট্রেন নিয়ে আদিখ্যেতার চূড়ান্ত করে গেছে সবাই।
তারপরও প্রতিবার ট্রেন জার্নিতে মনে হয় রংঢং, আদিখ্যেতা গুলো থাকুক না চিরকাল।
রাজশাহী থেকে ট্রেনে খুলনা যাচ্ছি, পাশের আঙ্কেলকে ফ্রুটিকা এবং মিস্টার টুইস্ট খাইয়ে জানলার পাশের জায়গাটার দখল নিছি।
মাথা বের করে দিয়েছি অনেকখানি। বাইরের হালকা বৃষ্টির ঝাপটা একটু একটু চোখেমুখে এসে লাগছে আমি বিড়বিড় করে বলছি আবুলা হাসানের সেই বিখ্যাত কবিতাটা-
মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল ?
একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিলআমাদের ইস্টিশনে
সারাদিন জল ডাকাতের মতো উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা;
ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায় জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান।


দুই কানে গুঁজে দেওয়া হেডফোনে বাপ্পা মজুমদার ভারীকন্ঠে গাচ্ছে -
'চারিদিকে শুধু নেমেছে আধার,
অপলক এই দৃষ্টিআমার
যেতে হবে আজ অনেক দূরে
চলেছে রাতের ট্রেন,
নীরবতা ভেঙে দিয়ে '।............।।

রংঢংএ আমিও কম যাই না,

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×