somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেষ্ঠ গল্প-রাহাত খান; পাঠ প্রতিক্রিয়া

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রেষ্ঠ গল্প-রাহাত খান; বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র; মূল্য-২১৫ টাকা; পৃষ্ঠা-২১৫
বইয়ের কিছু গল্পে উঠে এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবক্ষয়পীড়িত সমাজের অসুস্থ চিত্র।
‘মধ্যিখানে চর’ গল্পের বিভ্রান্ত বিপর্যস্ত সবুজ যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল স্বাধীন দেশে সেই স্বপ্নের সামান্যতম প্রতিফলন খুঁজে পায় নি।যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই স্বপ্নশূন্য তরুণদের প্রতিনিধি সবুজ তাই বুড়ো পাইকারের পেটে লাথি কষিয়ে ডাকাতি করে।অথচ একদিন পাকিস্তনি সৈন্যদের উপর বেয়েনেট চার্জ করেছিল সবুজরাই।
‘মুকিযোদ্ধার মা’ গল্পে শহীদ আবু চানের মা মরিয়ম দরজায় দরজায় গিয়ে হাঁক দেয়-‘ভিক্ষা দ্যান গো বাবাজী,আমি মুক্তিযোদ্ধার মা’, আর সুযোগ পেলেই তার শহীদ পুত্র আবু চানের গল্প আরম্ভ করে।শহীদ আবু চান রামদা দিয়ে কুপিয়ে এক পাঞ্জাবী সৈন্যকে হত্যা করেছিল।স্বাধীনতার বিশ-একুশ বছর পর এসে ভিখারিণী ভিক্ষা প্রার্থনার সাথে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি মেনে নিতে চায় না কেউ। মরিয়মকে বেঁধে রেখে লাঞ্চিত করে এলাকার প্রভাবশালী রুস্তম।পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্র দেশপ্রেমিক শাহজাহান সাহেব এসব আদিখ্যেতা পছন্দ করেন না, বলেন-এত বছর পর কিসের মুক্তিযুদ্ধ!কিসের গোলাম আজমের বিচার!
‘এই বাংলায়’ গল্পটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অনন্য এক গল্প।শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আর বীরঙনাদের আত্মারা মর্ত্যলোকে নেমে আসে স্বাধীনতার উৎসবের দিনে।তারা দেখে বিজয় মঞ্চে সম্মানের আসন দখল করে বসে আছে স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষের শক্তিরা।গল্পের অতিপ্রাকৃত দিকটি রাহাত খান অসামান্য দক্ষতায় গৌন করে রক্তার্জিত স্বাধীনতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন।
ইমান আলীর মৃত্যু গল্পের শুরুতেই দেখে যায় মুমূর্ষ ইমান আলীর আসন্ন সম্ভাব্য মৃত্যুতে শোকাতর হয়ে পড়ে তার সন্তানরা।ইমান আলী সুস্থ হলে সেখানে দেখা যায় স্নেহ মমতায় পরিপূর্ণ এক সুস্থ যৌথ পরিবার চিত্র।এরপর দেখা যায় বন্যা পরবর্তী অভাব দুর্ভিক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত মূল্যবোধের চিত্র।লঙরখানার উদ্দেশে যাত্রাপথেই বোঝাতুল্য মৃতুপথযাত্রী ইমান আলীকে ফেলে রেখে যায় তার তিন সন্তান।ক্ষুধা ,অভাব,দারিদ্র যে মানুষের সমস্ত মূল্যবোধস্থিত ইতিবাচকতাকে ধ্বংস করে ফেলে সেই নির্মম সত্যই বলতে চেয়েছেন গল্পকার এই গল্পে।
এরকমই আরেকটি গল্প ‘উদ্বেল পিপাসা’য় অসুস্থ যুবক তার ওষুধ ও খাবারের জোগানদার স্ত্রী খালেদাকে খুজে পায় পাশের রুমে তার বন্ধু হাসানের বাহুলগ্ন অবস্থায়।মুহূর্তেই তার মাঝে জেগে ওঠে সীমাহীন ক্রোধ এবং ইর্ষা।কিন্তু বেঁচে থাকার আকুতির কাছে পরাজিত হয় সেই সব অনুভূতি।এই দুই গল্পই মনে করিয়ে দেয় তারাশঙ্কররে ‘তারিণী মাঝি’ গল্পের কথা।‘তারিনী মাঝি’ গল্পের প্রথমেই দেখা যায় স্ত্রীর প্রতি মাঝির সীমাহীন ভালবাসার প্রকাশ।এক রাতে বন্যায় সব ভেসে গেলে সাঁতার না জানা স্ত্রীকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে একসাথে বেঁচে থাকতে চায় তারিণী মাঝি।কিন্তু একসময় বন্যার পানি আরো বাড়তে উভয়ের মাঝেই জেগে ওঠে বেঁচে থাকার সহজাত প্রবৃত্তি।মাঝি বউ মাঝিকে আশ্রয় করে তাকে আরো শক্ত করে পানির নিচে চেপে ধরে নিজে বেঁচে থাকতে চায় আর মাঝি তার এতদিনের ভালবাসার স্ত্রীকে ছুঁড়ে ফেলে তার নিজের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করে। বেঁচে থাকার আকুলতার কাছে ভালবাসা পরাজিত হয় নির্মমভাবে।
‘আমাদের বিষবৃক্ষ’ আমার পড়া বাংলা সাহিত্যের গল্পগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি গল্প।১৯৫০ সালে ময়মনসিং দাঙা আর তিন বালকের বন্ধুত্ব নিয়ে অসাধারণ একটি গল্প।গল্পের স্বল্প পরিসরে রাহাত খান সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন ভয়াবহ রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে।
রাহাত খানের গল্প খুব সহজ সরল ক্যাজুয়াল ভাষায় লেখা ফলে পাঠক মনযোগের কোনরূপ বিঘ্নতা না ঘটিয়েই গল্প চলে আসে উপসংহারে।বইয়ের শুরুতেই আহমাদ মোস্তফা কামালের ভূমিকাও সুপাঠ্য ও পাঠ সহায়ক।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×