somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামিন নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে ৪৪০ ‘জঙ্গি’

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলার (জঙ্গিবাদ) প্রায় ৫০০ এজাহারভুক্ত আসামি। তাদের মধ্যে গত কয়েক বছরে উধাও হয়েছেন ৪৪০ ‘জঙ্গি’। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বলছেন তারা (জঙ্গিরা) সীমান্ত অঞ্চলে লুকিয়ে আছেন। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, তারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে জঙ্গি প্রতিরোধ ও প্রতিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে বৈঠকে জানায় পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স।

এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও আন্তরিকতার অভাব দেখা যায়। সাক্ষী খুঁজে না পাওয়ায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা এ সুযোগ গ্রহণ করেন।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন জানান, একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ৩৩১ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গিবাদে জড়ানোর প্রমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। বাকিরা সন্দেহভাজন।

পালিয়ে যাওয়া আসামিদের ফিরিয়ে আনতে মামলা দায়েরকারী সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), আদালত পুলিশ ও পাবলিক প্রসিকিউটরকে নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি। বৈঠকের শেষ দিকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

বাংলাদেশি এসব জঙ্গির বিদেশে অনুপ্রবেশ এবং সেখানে গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার তথ্যও উঠে আসে ওই বৈঠকে।

আল-কায়েদার প্রধান কর্মী সংগ্রাহক সামিউন রহমান

জামিন নেয়ার এতদিন পর আসামিদের খুঁজে বের করা খুবই কষ্টকর

সম্প্রতি ভারতের দিল্লি থেকে ‘আল-কায়েদার প্রধান কর্মী সংগ্রাহক’ সামিউন রহমানকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। সামিউন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। ভারতীয় পুলিশের দাবি, চলতি বছরের জুলাইয়ে তিনি সিলেট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন।

বৈঠকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার উদাহরণ টেনে বলা হয়, সেদিন পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির সালাউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান রাসেল (হাফেজ মাহমুদ) ও জাহিদুল ইসলামকে (বোমারু মিজান) ছিনিয়ে নেয়া হয়। প্রিজন ভ্যানে হামলাকারী আনোয়ার হোসেন ফারুক জামিনে মুক্ত ছিলেন। পরে অবশ্য কলকাতা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ।

বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২০০ জন সন্দেহভাজন এবং ১৪৮ জন অভিযুক্ত ‘জঙ্গি’ কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আগস্টের ৩০, ৩১ এবং সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ ২০ জন ‘চিহ্নিত জঙ্গি’ কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা বলছেন, জেল থেকে বের হওয়া এসব জঙ্গির অধিকাংশই জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ), নব্য জেএমবি, আনসার-আল-ইসলামে যোগ দিয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দেন।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তদন্তের পর একেকজন জঙ্গিকে ধরতে সক্ষম হই। কিন্তু তারা সহজে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। জামিন নিয়ে জঙ্গিরা আত্মগোপনে গিয়ে ফের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে জঙ্গি দমন অভিযান। এ প্রবণতা (জামিনের) অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকে কখনই জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন সম্ভব হবে না।’

কারা সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা আব্দুল বাতেন। বাতেনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জে দুটি, রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই

একই দিন একই কারাগার থেকে মুক্তি পান তিন জঙ্গি আবুল কালাম, মিজানুর রহমান ও সেলিম মিয়া। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।

পরদিন ১ সেপ্টেম্বর জামিন পান মামুনুর রশিদ, ইয়াসিন, জাহিদুল ইসলাম ও মোর্শেদ ওরফে মাসুম নামে আরও চার জঙ্গি। মামুনুর রশিদ ও ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী, জাহিদুলের বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় এবং মাসুমের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে। জামিনপ্রাপ্তদের অধিকাংশই জেএমবি সদস্য।

কারা অধিদফতরের সহকারী কারা-মহাপরিদর্শক (অ্যাডমিন) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬৮টি কারাগারে সন্ত্রাস দমন (জঙ্গি) আইনে মোট ৬২৪ জন কারান্তরীণ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তারা আমাদের হেফাজতে থাকেন। জামিনের বিষয়টি আদালত সংশ্লিষ্ট। আদালতের জামিনের কপি আমাদের কাছে আসার পর তাদের তো আটকে রাখতে পারি না। আইন অনুযায়ী আমরা তাদের ছেড়ে দেই। পরবর্তীতে বিষয়টি আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়ে থাকি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, এসব মামলায় সাক্ষী উপস্থাপনের দায়িত্ব পুলিশেরই। কিন্তু অনেক সময় সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের হাজিরের জন্য আদালত থেকে সমন জারি করা হয়। কিন্তু এরপরও সাক্ষীর কোনো খোঁজ থাকে না।

‘এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও আন্তরিকতার অভাব দেখা যায়। সাক্ষী খুঁজে না পাওয়ায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা এ সুযোগ গ্রহণ করেন।’

তিনি আরও বলেন, এটা সবারই জানা যে, জঙ্গিরা খুবই ধূর্ত হন। তারা জামিনের জন্য সব ধরনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। এরপরও বলব, জঙ্গিবাদ রুখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

‘জঙ্গিরা এতই ধূর্ত যে, তারা নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানও পরিবর্তন করেন। শুধু শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার বিষয়টি এককভাবে তাদের ঘাড়ে চাপান ভুল হবে’- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ত্রিশাল থেকে ছিনতাই করা তিন জঙ্গি

জামিন নিয়ে ‘জঙ্গি’দের আত্মগোপনে যাওয়া প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ পুলিশের দুই বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এবং ঢাকার দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে। জঙ্গি প্রতিরোধ ও প্রতিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক থেকে গৃহীত নির্দেশনার কথা মৌখিকভাবে স্বীকার করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওসি বলেন, ‘নির্দেশনায় জামিন নিয়ে পালিয়ে থাকা আসামিদের অবস্থান শনাক্ত এবং তাদের গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে। আমরা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি।’

‘ইতোমধ্যে সিলেট ও নাটোরে দুটি টিম পাঠান হয়েছে। জামিন নেয়ার এতদিন পর আসামিদের খুঁজে বের করা খুবই কষ্টকর’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘যারা জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার কাজটি বিশেষ গুরুত্বসহকারে করা হচ্ছে। তাদের ফেরাতে পুলিশের কিছু আইনানুগ প্রক্রিয়া রয়েছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক আলোচনাও প্রয়োজন। এরই মধ্যে আমরা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তাদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’জাগো নিউজ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×