আজ ২৪ ডিসেম্বর (১০ পৌষ)। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাগ্মী ও সমাজ সংস্কারক কর্মবীর মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৬১ সালের এদিনে তিনি যশোরের কালীগঞ্জের ঘোপ গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস পার্শ্ববর্তী ছাতিয়ানতলা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিল মুনশী মোহাম্মদ ওয়ারেছ উদ্দিন। দারিদ্র্যের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি না এগোলেও আরবী, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় তিনি ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ একজন সরকারি চাকরিজীবী সিহাবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে যশোর শহরের দড়াটানা মোড়ে স্বাধীনভাবে দর্জ্জি ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। চিন্তাশীল সাহিত্যিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ সচেতন ব্যক্তি মেহেরুল্লাহ বাংলা, আসাম, বিহারসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একজন যুক্তিবাদী বাগ্মী হিসাবেই বেশি পরিচিতি পান। বৃটিশ উপনিবেশের সে সময়কালে খৃষ্টান পাদরীদের তৎপরতায় মুসলিম সমাজে নানান রকম বিভ্রান্তির ধূম্রজাল তৈরি হয়। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ইসলামের তাৎপর্যপূর্ণ উপস্খাপনার মাধ্যমে এই বিভ্রান্তি দূর করতে সচেষ্ট হন। ইসলামের সোনালী অতীত, গৌরবময় ঐতিহ্য সাধারণ মানুষের কাছে উপস্খাপন করে এই ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বকে তিনি উচ্চে তুলে ধরেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার ফলে খৃস্টান পাদরীদের তৎপরতা থমকে যায়। বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা পান মুসলমানগণ। সেকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সুধাকর' ‘ইসলাম ধর্মত্তেজিতা সভা' প্রভৃতি পত্রিকায় প্রব লিখে তিনি সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ‘বিধবা গঞ্জনা' ‘খৃস্ট ধর্মের অসারতা' ‘বিষাদ ভান্ডার' ‘হিন্দু ধর্মের দেবলীলা' প্রভৃতি গ্রন্থ লিখে এই মনিষী তৎকালীন সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ভাব মন দমে দম, রাহা দুর বেলা কম। গাওরে মোসলেমগণ নবী গুণ গাওরে, পরাণ ভরিয়া সবে সাল্লো আলা গাওরে।' তাঁর রচিত এসব গজল এ অঞ্চলের ধর্মসভাগুলোতে আজো উচ্চারিত হয়। ১৯০৭ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইসলাম ধর্মের এই একনিষ্ঠ প্রচারক ইন্তিকাল করেন।
২৪.১২.২০০৭