somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অশ্রু যমুনার বিনিময়ে শুধু একবার শৈশব ফিরে চাই - ৩

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার প্রিয় শহর, রংপুর। হ্যাঁ, এবার রংপুর নিয়ে বলবো। আমরা রংপুর শহরে যাই ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৮ তে নিজেদের বাড়িতে উঠি। তো ৮৭/৮৮ সালের ঘটনা আমার খুব একটা মনে নেই। যেটুকু মনে আছে তা হল পাকা রাস্তা থেকে একটা মাটির রাস্তা দিয়ে ১০০ গজের মত আসলে একটা একতলা পাকা বাড়ি, বাইরে কোন রং নেই, ছাদে কোন রেলিং নেই। মাটির রাস্তাটা একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে যেত। বাড়ির চারপাশে ফাঁকা। আবাদি জমি ছাড়াও আছে পুকুর, খেলার মাঠ। ওই পুকুরটাতেই আমি সাঁতার শেখার চেষ্টা করেছিলাম। আর মাঠটাতে চেষ্টা করেছিলাম ক্রিকেটার হওয়ার। ফেলুদা, আঙ্কেল টম (আঙ্কেল টম'স কেবিন) আর উভচর মানুষ বা টেনিদা (চারমূর্তি) আমাকে ভালো সাঁতারু বা ভালো খেলোয়াড় হতে দেয়নি। কিন্তু এ জন্য আমার বিন্দু মাত্র দুঃখ নেই। বড় কিছু পাওয়ার জন্য ছোট ছোট কিছু ইচ্ছা বাদ দিতে হয়। আমিও দিয়েছিলাম।

রংপুর শহরটা ছিল খুব ছোট। মনে হয় শহরের সব লোক সবাইকে চেনে। আমিও চিনতাম। বাবলু কাকুর দোকানে পিয়াজ, আলু বা চাল কিনতে যেতাম, আলমগীর কাকুর ছিল ইস্ত্রি করার দোকান, যেতে হত মাঝে মাঝেই। চুল কাটাতে যেতাম বদর সেলুনে। মোটামুটি ১ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে আমার বৃত্ত।

বড় হতে হতে বৃত্ত বড় হতে লাগলো। একসময় দেখা গেল পুরো রংপুরের অলিগলি ঘুপচি সব আমি দৌড়ে বেড়াচ্ছি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই তোলার কাজ করতাম সে সময়। শহরের কোথাও কাঁচা রাস্তা, কোথাও লাল ইটের আবার কোথাও পিচঢালা রাস্তা। তবে প্রধান সড়কের রাস্তায় ছিল সোডিয়াম লাইট। কারমাইকেল কলেজ ছিল শহরের এক প্রান্তে, আরেক প্রান্তে ঘাঘট নদী। কখনও যেতাম নীলকণ্ঠ আবার কখনও মডার্ন মোড়।

বন্ধু ছিল পাঁচজন। এখনও আছে। যাবতীয় কর্মকাণ্ডের Team mate ছিল ওরা। নেহালের পুরি বা শিঙাড়া হাউসের শিঙ্গাড়া খাওয়ার জন্য অপু ভাইকে manage করা। পুষ্টির মিষ্টি ভালো না নিপেনের এই তর্কটাও চলতো। পাঁচ বন্ধুই ছিলাম রংপুর জিলা স্কুলের ছাত্র। ২০০০ এস এস সি।

ছোট বেলা থেকেই দেখতাম রাতে শহর আলো করতো সোডিয়াম লাইট। এই সোডিয়াম লাইট নাকি এরশাদ সাহেবের অনন্য অবদান। ঢাকা ছাড়া শুধু রংপুরেই নাকি ছিল এই আশ্চর্য বৈদ্যুতিক বাতি। শিহরিত হওয়ার মত ব্যাপার। আমার কাছে তখন তো ঢাকা আর নিউ ইয়র্কের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যাদের প্রতিদিন টিভিতে দেখি তারা তো সব ঢাকাতেই থাকে। ভাবা যায়?

ঘাঘট নদীটা ছিল শহরের শেষ প্রান্তে। শীতের পরে নদীটার অবস্থা প্রায় মরোমরো হত। আমরা প্রায় মাঝামাঝি একটা দ্বীপের মত জায়গায় বসে সিগারেট খেতাম। শহরে তো সব লোকই চেনে। তাই শহরের শেষ প্রান্তে এসে ধূমপান। বর্ষার শেষে অবশ্য সেই দ্বীপে যাওয়া যেত না। এখন মনে হয় শহর ঘাঘট নদী বা ঘাঘট ব্রিজ পেড়িয়ে আরও অনেক দূর চলে গেছে। নব্য ধূমপায়ীদের হয়তো বদরগঞ্জে যেয়ে সিগারেটের প্রথম স্বাদ নিতে হয়।

কারমাইকেল কলেজটা ছিল রাজার বাড়ির মত। পুরাতন বিল্ডিং, নতুন বিল্ডিং, বিশাল পুকুর, কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধান, আলু চাষবাস, বিশাল বিশাল অনেক গুলো মাঠ, বিশাল বিশাল গাছ, শিক্ষকদের সারি সারি বাড়ি, বিশাল ক্যান্টিন, উত্তাল ছাত্র রাজনীতি সব মিলিয়ে হুলুস্থুল অবস্থা। আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর কলেজ ক্যাম্পাস। একটু পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে বললাম কি? অবশ্যই না।

পাট গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরটা ছিল সাঁতরানোর জন্য উৎকৃষ্ট। বিশাল সেই পুকুর। একটা পুকুর যত বড় হলে আমরা তাকে দীঘি বলি, পাট গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরটা ছিল তার চেয়েও অনেক বড়। তবে পাট গবেষণা কেন্দ্রে ঢুকতে হত চুপচুপ করে। আর মৎস্য চোরদের প্রতিহত করার জন্য পুকুরে বিছানো খেজুর কাঁটাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও ছিল।

টেকনিক্যাল কলেজের পানির ট্যাঙ্কিটাতে কোন পাহারাদার ছিল না। পুরো শহর এক নজরে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে আমরা উঠে যেতাম ট্যাঙ্কিতে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। মনে হত গ্যাস বেলুনে চড়ে আকাশে ভাসছি। ওই ট্যাঙ্কিতে প্রথম যে মেয়েটাকে এই জীবনে ভালো লেগেছিল তার নাম বিশাল করে লেখেছিলাম। ইচ্ছা ছিল একদিন ডেকে এনে দেখাবো। মেইন রাস্তা থেকেই আমার এই প্রেম বিষয়ক চারুশিল্প দেখা যেত। ভাগ্যিস দেখাইনি। প্রেম হলে মনে হয় বিপদে পরে যেতাম। আমার ছোট্ট বেলার সেই ম্যারিয়েনও হারিয়ে গেছে।

নাহ! রংপুর নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখাটা "আমার ছেলেবেলা" টাইপ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা অবশ্য ইচ্ছাকৃত। শিরোনামের সাথে মিল রেখেই লিখলাম। তবে রংপুর নিয়ে লেখাটা অসম্পূর্ণ।কত কি নিয়ে বলা হল না। যত লেখব অসম্পূর্ণই থাকবে। তাই আপাতত রনে ভঙ্গ দিলাম।

ঢাকাএ এলাম ২০০২ সালে। মফস্বল থেকে আসার কারনে মনে হল ঢাকার ছেলেদের থেকে অন্তত দশ বছর পিছনে আছি। কিন্তু ভালোবাসার শহরের জন্য আমি ১০০ কিংবা ১০০০ বছর পিছনে থাকতেও রাজি আছি। আর যে শহরে আশা পুরনের আনন্দে ভাসতে থাকা লোকের সংখ্যার চেয়ে আশা ভঙ্গের বেদনায় জর্জরিত লোকের সংখ্যা বেশি, সে শহরে যত দেরিতে আসা যায় ততই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×