২০০১ সালে আমার দাদী মারা যান। আমার দাদী আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন। বাবা-মা খুব রাগী ছিলেন, তাই দুনিয়ার আবদার করতাম দাদীর কাছে। দাদী তার সাধ্যমত আব্দার, অন্যায় আব্দার, দাবি-দাওয়া মেটাতেন। মানুষটা খালি দিয়েই গেলো। কিছু ফেরত দেয়ার সুযোগটাও দিলেন না।
যেদিন উনি মারা গেলেন, সেদিন আমি প্রথম আমার বাবাকে সিগারেট খেতে দেখি। অধিক শোকে আমার বাবা পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। দাদী মারা যান সকালে। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হবে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমি না খাওয়া। দাদীর মারা যাওয়াটা যে পর্বতসম সমস্যা, এর কাছে আমার না খেয়ে থাকাটা একদমই নিম্নস্তরের একটা সমস্যা। এই সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারছিনা। নিজের মধ্যে একটা চোর চোর ভাব জন্মাচ্ছিল। কি করি, কি করি ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত উপোষ করে কাটিয়ে দিলাম। বড় সমস্যার কাছে ছোট সমস্যা ধোপে টিকলো না।
এই রকম বড় ছোট সমস্যায় আবার পরেছি। সারা দেশে চরম অস্থিরতা। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। একদল চাচ্ছে জামাত নিষিদ্ধ হোক, আরেকদল আবার সেই জামাতকে কোলে নিয়ে বসে আছে। বেঘোরে প্রান হারাচ্ছে কিছু বাঙ্গালী। সারাদেশে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। একদল হরতাল ডাকছে, আরেক দল সেই হরতাল প্রতিহত করার জন্য রাস্তায় ক্যাডার বাহিনী নামাচ্ছে। শীল আর পাঁটায় ঘষাঘষি, আর এদিকে মরিচের কাম শেষ।
এই মারাত্মক সমস্যার মাঝে আমি আরেকটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। লজ্জায় কাউকে বলতে পারছি না। কিন্তু টেকা মুস্কিল হয়ে যাচ্ছে। মরহুম হানিফ সাহেব যখন মেয়র, সে সময়ের কথা। ঢাকা শহরবাসী মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মশার কয়েলের নাম "হানিফ" দিয়ে দিয়েছিলেন। দোকানে যেয়ে বলতেন, "ভাই, এক প্যাকেট হানিফ দিয়েন।" দোকানদারও বিনা বাক্য ব্যয় করে এক প্যাকেট মশা মারার কয়েল দিয়ে দিতেন। আমার এই ছোট সমস্যাটা মশা বিষয়ক। ঘরে লাখ লাখ মশা, অফিস শেষে যেখানে বসে আড্ডা দেই সেখানে লাখ লাখ মশা। এই মশার অত্যাচারে মোটামুটি অতিষ্ঠ। দিন কয়েক চিন্তা করে এই ছোট সমস্যাকে বিশাল সম্ভবনায় পরিবর্তন করার একটা আইডিয়া মাথায় এলো। মশা মারার জন্য ব্যাডমিন্টন ব্যাটের মত একটা বস্তু আমাদের খুব কাছের জিনিস হয়ে গেছে। মশা দেখলেই আমরা সাঁই করে সেই ব্যাডমিন্টন ব্যাট হাঁকিয়ে দিচ্ছি। ফটাস ফটাস শব্দ করে মশা পটোল তুলছে।
এখন এই পদ্ধতিতে আমরা সবাই যদি মশা মারতে থাকি, তাহলে এক সাথে দুইটি কাজ হবে। রথ দেখা ও কলা বেচার আদর্শ উদাহরন। এক হল, মশা মারা। আর দুই নাম্বারটা হল, টেনিস খেলাটার একটা প্র্যাকটিস হয়ে যাওয়া। গলফ খেলাটাও আমাদের দেশে একসময় খুব অপরিচিত ছিল। সিদ্দিক সাহেবের দয়ায় এখন আমরা একটু একটু গলফ জানি। আর টেনিসে তো লাখ লাখ ডলারের ওড়াউড়ি। ক্ষুদ্র মশা মারতে মারতে আমাদের যে প্র্যাকটিস হচ্ছে, টেনিস বল তো মশার থেকে অনেক বড় সাইজ। বল মিস হওয়ার চান্স খুব কম। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিসার্ভ নাকি ১৪ বিলিয়নের বেশি। মশা মারতে মারতে যদি শ'খানেক টেনিস খেলোয়াড় তৈরি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু টেনিসের চারটা ওপেন থেকে আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবো, সেগুলো ম্যানেজ করতে ভবিষ্যতে আমাদের ২ জন করে অর্থমন্ত্রী লাগবে।