somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ছবির গল্পকার

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তুইতো দারুন ছবি তুলেছিস” – রবিনের উচ্ছ্বাস, রবিন আমার স্কুলের বন্ধু। ও সবসময় আমাকে নিয়ে সবকিছুতেই উৎসাহ দেয় । ”আমাদের গ্রামের সব বিয়েতে ভালো ছবি তুললি । ঢাকাতে পড়াশুনার জন্যে যাচ্ছিস, লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ফটোগ্রাফিতো শুরু করতে পারিস। এতে তোর পড়াশুনার খরচতো উঠে আসবে“ – রবিনের এই কথাটা আমার দারুন মনে ধরলো। বাবাকে বলতে সাহস পেলাম না। বাবা সবে আমাদের ধানের জমি বিক্রি করে আমার পড়াশুনার ভর্তির খরচটা দিচ্ছেন। ছেলে ঢাকায় পড়াশুনার সুয়োগ পেয়েছে তাই বাবা দাদুর শখের জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছেন। অতঃপর নিরুপায় হয়ে মাকে জানালাম নিজের শখের কথা মা চুপচাপ শুনলেন কিছু বললেন না। আমি নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে প্রিয় গ্রাম ফেলে ঢাকায় যাচ্ছি নতুন জীবন গড়তে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদল আমার প্রিয় বন্ধু রবিন, বাবা-মা, ছোট বোনটা। আমি নৌকাতে উঠে ওদের দিকে তাকালাম না। কষ্ট হচ্ছিল খুব। রবিন দূর থেকে চিৎকার করে বলছিল, ”বন্ধু ভালো থাকিস। ঢাকায় পৌছে ফোন দিস”।

নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে মাস খানিক লেগে গেল। নতুন জীবন গোছাতে অল্প সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছিল। আমার মা ফোনে প্রায় ফোপায় তাই আমি পারতপক্ষে মাকে ফোন করি না। বাবার সাথে শুধু টুকটাক আলাপ হয়। হঠাৎ একদিন দেখি আমার ছোট মামা জাপান থেকে ফিরে আমার ইউনিভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমি খুশীতে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। মামাকে আমাদের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখালাম। ক্যান্টিনে বসে খাচ্ছিলাম তখন মামা আমাকে একটা ব্যাগ ধরে দিয়ে বললো, বাবা তোকে তোর মা এটা দিতে বলেছে। আমি খুলে দেখি ডিএসএলআর ক্যামেরা। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। মামাকে বললাম, ”তুমি এত দামী ক্যামেরা কেন কিনেছ “? মামা বললো, আমি কিনি নি তোর মা তার বিয়ের বালা বিক্রি করে আমাকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি দেশে ফেরার সময় তোর জন্যে নিয়ে আসলাম। তোর জন্যে আমি ক্যাসিও ঘড়ি এনেছি। তোর মনে আছে তুই ছোটবেলাতে আমার কোলে বসে আমার ঘড়ি ধরে খেলতি। আমি বাকহারা হয়ে বসে আছি।

মহাখালী মেস বাড়িতে ক্যামেরা জড়িয়ে ঘুমুতে যাই। মাকে ফোন দিয়েছিলাম। মা এবার হেসে কথা বলেছে। এই প্রথম মা’র কন্ঠে খুঁজে পেলাম বিশ্বজয়ের উচ্ছ্বাস। ছেলের শখের জন্যে মা কতটা উদগ্রীব ছিল আমি উপলব্ধি করেছিলাম। ঢাকা শহরের আনাচে কানাচের জীবন নিয়ে আমি ছবি তুলতে শুরু করলাম।

আমি মার্কেটিংএ মেজর নিয়েছি তাই এ্যাডভারটাইজমেন্ট কোর্স এ এ্যাসইমেন্ট এ নিজের ছবি যুক্ত করে ক্রিয়েটিভ করার চেষ্টা করছি। একটা প্রেজেন্টেশন ছিল সেখানে ছোট করে ভিডিও এড এর কাজ করলাম। সবাই প্রশংসা করলো। আমি এ প্লাস পেলাম। মুশতাক স্যার আমাকে উনার টিচিং এসিস্টেন্ট বানিয়ে দিলেন। আমি অনেক ‍প্রনোদনা নিয়ে কাজ শুরু করলাম।

হঠাৎ একদিন আমার স্যার বললেন, ”আমার ভাইয়ের ছেলের বিয়ের ছবি তুলবে নাকি”। আমি ঘোরের ভিতর থেকে হ্যাঁ বলে দিলাম। আমি এখন সেনাকুঞ্জে ছবি তুলছি। স্যার আমাকে ডাকছে ঐ এদিক আয় আমাদের ছবি তোল। স্যার আমাকে আপন ছেলের মতন আগলে রাখলেন। দুই একজন আমাকে ক্যামেরাম্যান ডাকাতে স্যার তাদেরকে বকে দিলেন তোমরা ফটোগ্রাফারকে সম্মান দিতে জানো না। আমি দেখতে পেলাম কনে পক্ষে অনেক ভালো ফটোগ্রাফার এসেছেন। তারা অনেক সুন্দর ছবি তুললেন। আমি উচ্ছ্বাসিত হয়ে তাদের কাছে গেলাম। আমি আমার ছবি সম্পর্কে তাদের মতামত জানার চেষ্টা করলাম তারা আমাকে পাত্তা দিলেন না। আমি একটু দূরে যেতে দেখি তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি কিছুটা আশাহত হলাম। আমি ফটোগ্রাফারকে খুব আপন ভেবে কাছে টেনে নেই। তাই তাদের জন্যে কয়দিন মনোকষ্টে ভুগলাম। একসময় ভাবলাম ফটোগ্রাফি ছেড়ে দেই।

আমি গ্রাজুয়েশন শেষে আমি ছোট একটা এ্যাড এজেন্সিতে চাকরী পেয়ে গেলাম। আমি এখানে ওখানে ছবি তোলার বিষয়গুলো শিখতে শুরু করলাম। আমি টানা দুই বছর কাজ শেষে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলাম। আমি বসের অনুরোধে পুরো ক্রিয়েটিভ টিমের দায়িত্ব নিলাম। আমরা সবাই ফটোগ্রাফাররা মিলে বন্ধুর মতন পরিবেশ সৃষ্টি করে কাজ শুরু করলাম। আমি জুনিয়র ফটোগ্রাফাদের নিয়ে ছোট ছোট টিম করে দিলাম। ওরা সবাই এককভাবে দক্ষ হয়ে উঠল। ওদের কাজ দেখে আমিও মুগ্ধ হলাম। ওরা আমাকে খুব সম্মান দেয় আমি ওদের স্নেহ করি। আমাদের কাজ সবগুলো ম্যাগাজিনে যাচ্ছে। আমার বস আমাকে নিয়ে খুব গর্বিত।

আজকে আমি বড় একটা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, আমি সিনিয়র ফটোগ্রাফার ও ক্রিয়েটিভ ডির্পাটমেন্টের হেড।

আমি মাকে গেল বছর ঈদে টিভি কিনে দিয়েছিলাম। মা’র অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল নিজের ঘরে বসে টিভি দেখবে। অনেকদিন রবিনদের বাসায় টিভি দেখেছে। বাবাকে পাঞ্জাবী, ছোট বোনটাকে একটা সুন্দর ফ্রক আর পুতুল দিয়েছিলাম । আমার বোন সেই পুতুল নিয়ে রোজ ঘুমুতে যায়। আমার সেই জাপান ফেরত মামাকে একটা দামী টাইটান ঘড়ি কিনে দিলাম। মামাকে আমাকে জড়িয়ে অনেকক্ষন কাঁদলেন। কারন আমি মামার ভালবাসা প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনো ভুলে যাই নি। আর আমার প্রিয় বন্ধু যে আমাকে প্রথম ফোন দিয়েছিল আমি ঢাকায় ঠিক মতন পৌছেছি কিনা রবিনের জন্যে নোকিয়া মোবাইল ফোন। ও খুব নোকিয়া ভক্ত ।

কয়দিন পর ঈদ। আমি আবার দেশের বাড়ী যাচ্ছি। এইবার মার জন্যে একটা ফ্রিজ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। মা’র অনেকদিনের শখ ঠান্ডা পানি খাবে।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×