somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় হুমায়ূন

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় হুমায়ূন
আশা করি ভালো আছো।এই কয়টা দিন তোমার খোজ নিতে পারি নি,নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। পরীক্ষার ব্যাস্ততা আমার মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। তবু একটু আগে যখন শুনলাম তুমি রাগ করে চলে গেছ তখনি বুঝতে পারলাম এই যাহ,দেরি হয়ে গেছে।হুমায়ূন,এখন গেলে কি ধরতে পারবো তোমাকে মাঝপথে,নাকি অনেক দূর চলে গেছ?মনে হয় না পাব।তাই এই ছোট চিঠীটা লেখাই সম্বল মনে করলাম।
হুমায়ূন,তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয় তোমাকে দিয়ে।সেই ক্লাস সিক্স হবে।এরপর তো হরহামেশাই তোমার সাক্ষাত পেয়েছি।আমার পুরো বুকশেলফ জুড়ে তোমাকে বন্দী করে রেখেছি।আজ আমি কোথাও যাবো না,আমার চোখে সেই প্রথম পানি এনেছিলে।আমার সব মনে আছে বুঝলে।
তোমার জন্য অনেক বকা খেয়েছি,বাবা মা,টিচার,পরীক্ষায় ফেল করেছি,আবার পাশ করে তোমাকে উপহার পেয়েছি,পেয়েছি জন্মদিনে।একটা বারের জন্য তোমাকে ছাড়ি নি।আর আজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে?
সবাই তোমাকে কষ্ট দিবে, তোমাকে শুধু এমন একজনকে খুঁজে নিতে হবে, যার দেয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে।অনেক কষ্ট সহ্য করেছ তুমি হুমায়ুন।তার ফলও পেয়েছ।তবু বলি তোমার ছুটি হয় নি।বোকা হুমায়ুন মানুষকে শুধু দিয়েই গেলে।তোমাকে তো আমি জানি।তোমার বাসা খুজতে খুজতে আমি পেরেশান।দারোয়ান ঢুকতে দিবে না।আমিও তো বন্ধুকে না দেখে যাবো না।শেষে এলে।লুংগি দেখে আমার হাসিই পেয়েছিল।তুমিও হাসলে।বলেছিলে এমন অনেক পাগলই নাকি হরহামেশা তোমার কাছে আসে,আমি বুঝি না আমার মত এত এত পাগলকে কিভাবো তোমার ছোট্ট বুকটাতে ঠাই দিয়েছিলে?
তোমার উপর যে আমি একটু বেজার ছিলাম না তা না।ওটা আমি বলব না।আমি শুধু আজকের চলে যাওয়া নিয়ে বলব।হুমায়ূন তুমি হয়ত কিছু অন্যায় করেছ,কিন্তু আজ চলে গিয়ে তুমি যে অন্যায় করলে আমি তোমাকে ক্ষমা করব না।
হুমায়ূন তুমি জানবেও না,এই ঢাকা শহরের কোন একটা বারান্দায় রাতের কালো আকাশের দিকে চেয়ে একটা ছেলে আপন মনে কাদবে।সারা রাত কাদবে।তোমার বিভিন্ন দিবসের মত এই ছেলেটাও ১৯ জুলাইকে কান্না দিবস হিসেবে ঘোষনা করল।
হুমায়ূন তুমি কি জানবে তোমার ঐ উড়লচণ্ডী হিমু হতে গিয়ে,রাস্তায় খালি পায়ে হাটতে গিয়ে আমাকে কত জনের হাসির পাত্র হতে হয়েছে।তাতে আমার বয়েই গেল।শুধু পারতাম না ভবিষত বলতে।তোমার বৃষ্টিবিলাস আমাকে ভালোই পেয়েছে।বৃষ্টি হলে আমি কেমন আনমনা হয়ে যাই।হয়ত তোমার মত শিং মাছের ঝোল খুজে বেড়াই পাতে।বা একটু খানি ঘি।আহ অমৃত।
হুমায়ূন কোন জায়গায় স্বার্থপর হতে দেখিনি তোমায়,তবু কেন আজ এতটা স্বার্থপর হলে?আমি কিচুতেই মেনে নিতে পারছি না।জানি না কতদিন তোমার চলে যাওয়া আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে।জেনো তুমি,এই আমি তোমাকে কখনই ভুলবো ন।কখনো ঝুম বৃষ্টিতে,কখনো জোসনার প্লাবনে আমি ঠিকই তোমাকে খুজে নেব।
আর লিখতে পারছি না।চোখের পানি অনেকক্ষন আটকে রেখেছি।ল্যাপটপের স্ক্রীন ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে।হুমায়ূন তোমার বই গুলো আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল।যতদিন থাকব তোমার এই স্মৃতিগুলো নিয়েই থাকব। হয়ত আর বইমেলায় যাওয়া হবে না। নতুন কোন বাংলা বই হাতে নেওয়া হবে না।বাসার সবাই একসাথে বসে দেখা হবে না তোমার কোন নাটক কিংবা সিনেমা।হবে না গুনগুনিয়ে গাওয়া ও কারিগর দয়ার সাগর,ওগো দয়াময়,চান্নিপশর রাইতে যেন আমার মরন হয়।
হুমায়ূন যেখানে গেছ ভালো থেক।তোমার এই অন্ধ ভক্তের দোয়া সবসময় তোমার সাথে থাকবে।তোমাকে কখনও ভুলবো না।কখনও না।আমি খুজবো তোমাকে।ভালো থেকো।
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার
আকাশের দিকে তাকাই।
গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?
বালিকা ভুলানো জোছনা নয়,
যে জোছনায় বালিকারা ছাদের
রেলিং ধরে ছুটোছুটি করতে করতে বলবে,
ও মাগো! কি সুন্দর চাঁদ!
নব দম্পতির জোছনাও নয়,
যে জোছনা দেখে স্বামী গাড়
স্বরে স্ত্রীকে বলবে;
দেখো দেখো,
চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর।
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাঁতে
জোছনা নয়,
যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয়
আকাশে।
কবির জোছনা নয়,
যে জোছনা দেখে কবি বলবেন,
কি আশ্চর্য রুপোর থালার মত চাঁদ।
আমি সিদ্ধার্থের মত
গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত
দরজা খুলে যাবে।
ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব, আর হাঁটব।
পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে,
চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ
ডাকবে ..... আয়, আয়, আয় ।
- হুমায়ূন আহমেদ

ডায়েরীর পাতা থেকে (১৯ জুলাই ২০১২)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×