মুখের জোরে যারা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করে সহজ বাংলায় তাকেই বলে চাপাবাজ। বাপাবাজদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো সব বিষয় তাদের জিততেই হবে। হেরে যাওয়াটা তাদের জন্য একেবারেই অসহ্য। এজন্যই গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে। “এক শ্রেণীর মানুষ আছে সবকিছুতেই হারলেও মুখে হারে না।” চাপাবাজদের অনেক সময় নীতি-নৈতিকতা থাকে না কারণ জেতার জন্য তারা সত্য মিথ্যার ধার ধারে না। তবে তারা বিবেককে যে একেবারে চাপা মাটি দিয়েছে এমনটিও আমি মনে করি না। অনেক সময় দলের মধ্যে পদবী পাকাপোক্ত করার জন্য দল যতটুকু আশা করে তার চেয়ে একটু বেশি দেয়ার চেষ্টা করে অনেক রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা। তার চাপার জন্য যে পুরো জাতি বিশ্বের দরবারে মিথ্যাবাদী হিসেবে উপাধি পায় সেটাও চিন্তা করে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কি ঘটেছিল আমাদের দেশের এবং সে কারণেই ১ নবেম্বর'০৬ আমাদের ভাগ্যের যে পরিবর্তন হলো তা বিশ্ব জানে। ২৮ অক্টোবরের বর্বরতার বিচার করার জন্য সাক্ষী প্রমাণের কোন অভাব নেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে এটা কোন সমস্যাই নয়। অসংখ্য টিভি চ্যানেল সেদিনের ঘটনা ক্যামেরায় বন্দী করেছে। ভিডিও করেছে উভয় দল সেখান থেকে প্রমাণ নেয়া যায় কাদের হাতে পিস্তলসহ ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কোন দিক থেকে গুলী করা হয়েছে কাদের হাতে লাঠি ছিল ইত্যাদি। এতসব প্রমাণের পরেও যখন ২৮ অক্টোবর ২০০৮ সেই বর্বর ঘটনার বিচার দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমাবেশ করে তার সচিত্র প্রতিবেদন যেমন দেখেছি পত্রিকাগুলোতে তেমনি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও দেখা গেছে। অবাক লেগেছে একটি ঘটনা দেখে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, যখন দেখলাম আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বললেন, “২৮ অক্টোবরে এ বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছিল জামায়াত শিবিরের লোকেরা।” তখন মর্মাহত ও স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাবতে থাকলাম এই হলো আমাদের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য। পাঠক বলবেন বাসি কথা লিখছি? না গতকাল টিভি চ্যানেলগুলোতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছেন, “আমাদের দলের লোকদেরকে টাকা দিয়ে দলে ভেড়ানো হচ্ছে, টাকা তো আর তাদের কম নেই।” এ বক্তব্য শুনার সাথে সাথে আমার স্ত্রী বলে ফেললো এ কেমন কথা ওনার লোকেরা টাকার লোভে অন্য দলে যায় কেন।” সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে নিজ দলের লোকেরা যদি টাকার লোভে পড়ে অন্য দলে যোগদান করে সেটা কি বলা ঠিক? আর যদি টাকার লোভে অন্যদলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় তাহলে নেত্রী নিজেও যে এক সময় টাকার কাছে দুর্বল হয়ে যাবেন না তারইবা গ্যারান্টি কোথায়? যাই হোক এবার আবার পরাজিত হলে এ অভিযোগ তোলেন কিনা যে আমার অনেক নেতাকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে' অতএব নির্বাচন মানি না। আমার স্ত্রী বলেছিল নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর এক বদঅভ্যাস আছে কিছু মানুষের। সে না হয় অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর সুধাসদনের সামনে যে মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের কাণ্ড দেখলো জনগণ তাও কি অন্য দলের শিখানো কিনা সে অভিযোগ এখনো শুনিনি, হয়তো চিন্তা চলছে। লগি-বৈঠার মতো লম্বা লম্বা লাঠি দিয়ে যেভাবে পিটাপিটি দেখলো জনগণ তাতে আমাদের প্রশ্ন জেগেছে যারা মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনায় নিজেদের ওপর নিজেরা লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বরতার পরিচয় দেয়, তাদের নিকট থেকে জাতি কি আশা করবে? ক্ষমতায় যাওয়ার পরইবা তারা নিজেদের স্বার্থে সামান্য আঘাত লাগলে কি কাণ্ড করবে? ২৮ অক্টোবরের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে তা বিশ্বাস করতে এতটুকু কষ্ট হয়নি সাধারণ জনগণের; যারা সুধাসদনের সামনে লাঠি মিছিল দেখেছেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ ভোট দিয়ে যাদের ক্ষমতায় আনবেন সেটাই আমাদের মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ হাত পা বাঁধা অবস্খায় কেন নির্বাচনে যেতে চেয়েছিল সেটা জাতির সামনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর চারদলীয় জোট কেন এ অবস্খায় যেতে চায়নি, তাও জনগণ বুঝতে পেরেছে। জরুরি আইন প্রত্যাহার উপজেলা নির্বাচনের তারিখ পেছানো আরপিও'র ধারা বাতিল এসবই তো আওয়ামী লীগেরও দাবি ছিল। তবে কেন তারা এগুলো ফয়সালা না করে নির্বাচনে যেতে চেয়েছিল? শেখ হাসিনা বললেন, “জরুরি আইন প্রত্যাহার করার দাবি করে এটা আরো পেছানো হচ্ছে যা এমনিতে ওঠে যাবে। সেটা হয়তো শেখ হাসিনার জানা থাকতে পারে জরুরি আইন ওঠে যাবে কারণ সরকারের সাথে তার হয়তো বুঝাপড়া হতে পারে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো তা জানেন না তাই তিনি এগুলোর ফয়সালা করার জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নির্বাচনে জেতার ক্ষেত্রে একটা ভয়ও কাজ করেছে শেখ হাসিনার মধ্যে। কারণ তিনি পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন ২৮ অক্টোবরের শহীদ জসিম উদ্দিনের শিশুকন্যা কিভাবে তার মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছে। আমরা বলেছিলাম শহীদ তনয়া মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছে কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ মুছবে কে? এবার নির্বাচনে শান্তিকামী জনগণ হয়তো বা সে হৃদয় এর বেদনা মুছে দেয়ার জন্য সেই বর্বরতার জবাব দিবে। এসব ভেবেই হয়তো শেখ হাসিনা সরকারের সাথে আঁতাত করে কোনরকম একটি নির্বাচন করে ক্ষমতার মসনদে বসতে চেয়েছিলেন। দিন দিন আমাদের সে আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। কথায় বলে পাপে ছাড়ে না বাপেরেও। আগামীতে এ প্রবাদেরই প্রতিফলন ঘটবে বলে আমরা আশা করি। ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্বেই শেখ হাসিনার কথা-বার্তায় সেই পুরাতন সুরই দেখছি যা ইতোপূর্বেও তার সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। এ জন্যই জনগণের মনের কথাটাই আমি বলতে চাচ্ছি, দোহাই তোমার এবার তোমার মুখটা একটু থামাও। টিভি চ্যানেলগুলোতে ২০ ডিসেম্বর খবরেও দেখলাম শেখ হাসিনা জনসভায় বলেছেন, “ধানের শীষে ভোট দিবেন না খেয়ে থাকার জন্য? বিগত ৫ বছরে বিএনপি জামায়াত জনগণের পকেট খালি করে নিজেদের পকেট বোঝাই করেছে।” তার এমন সব ‘কথা' নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় কিনা এটা নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই দেখা দরকার। অথচ আওয়ামী লীগ নেতা এস. টি ইমাম অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ‘খালেদা জিয়া গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে, জামায়াত নেতা মুজাহিদ বলেছেন, দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত চলছে।' এগুলো নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন অথচ দু'দিন পরেই যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে সাংবাদিকগণ তাকে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি উত্তর দিলেন “আইনগুলো একেবারে বেশি কঠিন হয়ে গেছে। অজ্ঞতাবশতই কেউ কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে।” তাদের বক্তব্য হলো নিজের ছেলে করলে “পোলাপান মানুষ বুঝে নাই অন্যের ছেলে করলে সর্বনাশ।” একটি ঘটনা বলি, আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতের সাথে একত্রে আন্দোলন করছিল তখন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ছেলেরা ছাত্রশিবিরের উপর আক্রমণ করেছিল। বিষয়টি শেখ হাসিনার কাছে বলা হলে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের ছেলেরা কথা শুনে না।” এর জবাবে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বাইতুল মোকাররমে এক জনসভায় বলেছিলেন, “আমাদের ছেলেরা যে সব সময় কথা শুনে তাও কিন্তু না।” অন্য এক মিটিংয়ে জনাব কামারুজ্জামান তার শেরপুর এলাকায় একটি গল্প বলেছিলেন যে, আমাদের এলাকা থেকে ঢাকা আসতে হয় জামালপুর হয়ে আর জামালপুর রেলস্টেশনে রেলে চাপা পড়ে একজন লোক মারা গিয়েছিল। লোকটিকে কেউ চিনতে পারছিল না। হঠাৎ একজন এসে বললো আমি চিনতে পেরেছি। উপস্খিত সকলে জিজ্ঞেস করলো কোথায় তার বাড়িঘর? লোকটি উত্তর করলো তা জানি না। সবাই বললো, তাহলে চিনলেন কিভাবে? লোকটি বল্লো দেখছেন না রেলে চাপা পড়ে তার শরীরের সবকিছু ভেঙ্গে গেছে কিন্তু চাপাটা ভাঙ্গেনি।” এ হলো আওয়ামী লীগের অবস্খা। “এক সময় বলেছিল স্বৈরাচার এখন সে হয়ে গেছে সুরকার সুন্দর সুন্দর সুর দিচ্ছে ভাইবোনে মিলে থাকবো।” এই এরশাদ সেই এরশাদ যাকে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, নারীদের প্রতি আপনার এত টান কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “দেখেন আল্লাহ আমাকে এমন একটা চেহারা দিয়েছেন যে, মহিলারা আমাকে দেখলে পাগল হয়ে যায়, আমার কি দোষ বলুন।” এসব নেতা হচ্ছে এবার সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। আর তা নিয়েই শেখ হাসিনার কত অহঙ্কার। খুশিতে আর মাটিতে পা পড়ছে না। শোনা যায় কোন অদৃশ্য শক্তি নাকি তাকে এবার ক্ষমতায় বসিয়েই ছাড়বে। সারা দেশের যে অবস্খা যদি নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে কোনরকম চক্রান্ত করা হয় তা হবে ভয়াবহ। পত্রিকার মাধ্যমে যে বিষয়টি বার বার বলা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এটা অত্যন্ত সুন্দর কথা, তবে নির্বাচন যদি ফেয়ার হয় দেশী-বিদেশী সকলের নিকট যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে মেনে নেয়ার কথা বার বার বলার কি দরকার। সবাই মানতে বাধ্য হবে। যদি এ কথার মধ্যে কোন রহস্য লুকানো থাকে যে আগেই হলফনামা নিয়ে ছাড়বো নির্বাচন মানবা কি না? এরপর নিজেদের পছন্দের লোকদের বসিয়ে দিয়ে বলবেন, আগেই ওয়াদা নিয়েছি ফলাফল মানতে হবে। এবারের নির্বাচনে একজন প্রভাবশালী সরকারি লোকের ভাই প্রার্থী হয়েছেন মানুষের মনে ভয় কাজ করছে তাকে নির্বাচিত করার জন্য নাকি ঐ ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রভাব খাটাবেন। সবকিছু মিলে আমরা চাই এমন অনাকাáিক্ষত কোন ঘটনার জন্ম না নিক দেশ ও জাতির এ ক্রান্তিকালে সকল পক্ষকেই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আলোচিত ব্লগ
আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।
জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।
মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।