জীবনটা এক এক সময় এক এক রকম লাগে। কখনও বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে খুব ভাল লাগে। আবার কখনও খুব খারাপ লাগে। এটা রাজুর অনেক পূর্বের অভ্যাস। যখন সে ক্লাস ৯-১০ এ পরে। তখন থেকে তার এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক সপ্তাহ খুব ভাল কাটে যেমন- সময়মত পড়াশুনা করা, সময়মত খাওয়া-দাওয়া করা, ঘুমসহ অন্যান্য কাজ সব ঠিকঠাক মত চলে। আবার পরের সপ্তাহ পড়ায় মন বসে না, খাওয়া-দাওয়ার ঠিক থাকে না। কোথাও মন স্থির করতে পারে না। তাই ৪০০/৫০০ টাকা নিয়ে চলে যেত নিলক্ষেত, সেখানে ঘুড়াফিরা, ছবি দেখা তারপর রাতে বাড়ি ফেরা। তখন ওর অবশ্য অনেক সময় ছিল। কারন টিউশনি করত। দু-একদিন দু-এক ছাত্র না পড়ালেও চলত। কারও কাছে কোন জবাবদিহীতা ছিল না। কিন্তু এখন চাকুরীজীবন, অনেক অনিচ্ছা সত্বেও খুব ভোরে অনেক দুরে আসতে হয় কর্মের জন্য। না আসলেই বেতন কাটা।
ওর ঐ বদঅভ্যাসটার জন্যই নাইন-টেনের পর পড়াশুনা আর ভালমত হল না। কিন্তু ছোটবেলায় অনেক স্বপ্ন দেখত অনেক বড় হবে। মা-বাবার স্বপ্ন পুরণ করবে। কিন্তু কতটা স্বপ্ন পূরন করতে পেরেছে তার হিসাব মেলাতে পারছে না। তবে একটা বিষয় ভেবে তার অনেক ভাল লাগত। ছোট বেলায় তার বাবা কাছে ৫/১০ টাকা চাইত। তখন তার বাবা তাকে ১০/২০ টাকা দিত মানে একটু বেশী বেশী দিত। তাতে সে খুব খুশি হত। যখন রাজু টিউশনি শুরু করল তখন তার কাছে ভালই টাকা পয়সা থাকত। আর তার বাবা কাছে ভাংতি টাকা চাইত ২০/৩০ টাকা আর তখন সে তার বাবাকে ৫০/১০০ টাকা দিত। আর মনে মনে এই ভেবে শান্তি পেত যে বাবাকে সে তার ছোটবেলার মত বেশী বেশী দিতে পারছে। যাই এই দেওয়াটা সে বেশী দিন দিতে পারে নাই। কারন যখন রাজু দিতে শিখছে তখনই তার বাবা এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। এখন রাজুর কাছে অনেক টাকা থাকে তার বাবাকে দেওয়ার জন্য কিন্তু সে তার বাবাকে আর খুজেঁ পায় না।
আমাদের বাংলা ভাষায় প্রবাধ আছে দাতঁ থাকলে দাঁতের মর্ম বুঝে না। তাই আজ রাজুর মা বেঁচে আছে কিন্তু দুরে থাকার কারনে মায়ের সেবা ভালমত করতে পারছে। হয়ত এখনকার বাবার মত একসময় মায়ের জন্যও আফসোস করবে। কিন্তু মাকে আর খুজে পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২