কয়েকদিন থেকে অপুর খুব ভয় ভয় লাগছে। কয়েকদিন আগে এক ভুমিকম্প হল। তাতে অপুর ২২ তলা অফিস বিল্ডিং অনেক জোরে সোরে দুলেছে। ভূমিকম্প সম্পর্কে অপুর এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা এর আগেও হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তব বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। কারন এর আগে অন্যরা ভুমিকম্প টের পেয়েছে তাই তারা দৌড়ে পালাচ্ছে আর অপু তাদের দৌড় দেখে পালিয়েছে কিন্তু নিজে সরাসরি ভূমিকম্প টের পায়নি। কিন্তু ঐদিন অপুর ডেস্ক পুরোপুরিভাবে দুলেছ এবং অপু সেটা প্রত্যক্ষ করেছে তাই সে এবার বেশী ভয় পেয়েছে। সেই ভয়ে একটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হল এই যে বার বার ভুমিকম্প হচ্ছে হয়ত এখন অল্প অল্প হচ্ছে কিন্তু আল্লাহ না করুক কোন একদিন যদি এটা একটু বেশী মাত্রায় হয় আর সামান্য দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অপুদের অবস্থা কি হবে, ঢাকা শহরের অবস্থা কি হবে। কারন ঢাকা শহরে যেভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং এবং এতো ঘনবসতি, তাতে কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হবে আল্লাহই ভাল জানেন।
ঐদিন দৌড়ে ১০ তলা থেকে নেমে কাছের এক বুথ থেকে কিছু টাকা তুলল। কারন যদি কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়, যদি অপু মারা যায় তাহলে এত কষ্ট করে ২/৪ টাকা জমিয়ে লাভ কি, এত কষ্ট করে লাভ কি। তার চেয়ে যদি নিজের মনে চায়, তা খেঁয়ে নেওয়াই ভাল। খাওয়ার জন্য বা ভাঙ্গার জন্য টাকা ঠিকই তুলেছে কিন্তু টাকাটা ঐদিন ভাঙ্গতে পারেনি পরিবারের কথা ভেবে, মা-ভাই বোনের কথা ভেবে।
অপু, টাকা পয়সা জমাতে চায় না। কিন্তু যখন দেখা যায় আশেপাশের সবাই অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়েছে, বাড়ী-গাড়ীর মালিক হয়েছে, তখন অপুর খুব ইচ্ছে হয় অনেক টাকার মালিক হতে। আবার যখন দেখে আশে-পাশের মানুষগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মানুষদের উপর অন্যায়-অত্যাচার করে, তখন তার অনেক বড় হতে ইচ্ছে করে ঐসব অত্যাচারীদের, অন্যায়কারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।
দুনিয়াতে মানুষগুলো যদি এতো খাই খাই না করত, এতো বেশী সম্পদের আকাঙ্খা না করত, তাহলে এতো অন্যায়-অবিচার থাকত না। তখন এক বাউল শিল্পীর এক গানের কথা মনে যায়-
হায়রে স্বাদের পৃথিবী, তোর লোভে যারা লোভী, আপনা মাথা খাইল আপনি।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫২