somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দাঘাত

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের দিনটা খুবই গরম। গরমে নাভিশ্বাস উঠার মত অবস্থা। এর মাঝে বউ এর ঘ্যানঘ্যানানি। অসহ্য। তাও হয়ত মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি যে আমার বউ কে তীব্রভাবে ঘেন্না করি?
বাধ্য হয়ে স্ক্রাবল খেলতেছি। আবার বিরক্তিকর বউ এর সাথেই। কোথা থেকে খেলা শিখল আর বোর্ড জোগাড় করল কে জানে? ঘেন্না বাড়ানোর কোন সুযোগই দেখি বেটি ছাড়ে না। এই ৩২ বছর বয়সে কি আর কোন কাজ নাই করার? স্ক্রাবল?
অথচ এখন আমার বাইরে থাকার কথা, দেশ বিদেশ ঘোরার কথা, দুই হাতে টাকা ওড়ানোর কথা। আর আমি কিনা দুই হাতে স্ক্রাবল এর গুটি নিয়ে বসে বসে গাধীটার সাথে স্ক্রাবল খেলতেছি?
কপাল রে আর কত শত্রুতা করবি? অন্তত ভাল ভাল গুটি ত দিতে পারতি। এইগুলা কোন গুটির জাত হল? তাও আমি নিয়ম মেনেই খেলব। ১ম শব্দ বানালাম begin (শুরু) - ছোট গোলাপী তারায় n রেখে, ২২ পয়েন্ট। আমাকে হারাবে, দেখি না কিভাবে হারায়।
কিন্তু না বিরক্তিকর মেয়ে লোক টা দেখি মুচকি মুচকি হাসে। কি যে মাথায় খেলে মেয়ে লোকটার তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ধুপ ধাপ শব্দে গুটি বোর্ড এ রাখছে। আচ্ছা মেজাজ কেন এত খারাপ হয় ওকে দেখলে? ২ বছরের বিবাহিত জীবনেই এত বিরক্ত কেন আমি? ও না থাকলে এখন মজার কিছু না কিছু করতে পারতাম তাই কি? সমুদ্র দেখতে যেতে বাধা ছিল না? বান্দরবনে গিয়ে বান্দর হয়ে গেলেই বা কে বাধা দিত? শালার কপাল, বউ একটা। না নিজে যাবে না আমাকে যেতে দিব।
আবার বোর্ডের দিকে যেন কি দেখাচ্ছে। ওহ, গাধীটা দেখি খেলা ভালই শিখছে - JINXED (জাদু করা হইছে এমন কিছু)। ৩০ পয়েন্ট পেল। আরে হারায়া দিবে নাকি? নাহ, তোমার কাছে কিছুতেই হারা যাবে না। আচ্ছা খুন করে ফেলব নাকি? সব সমস্যা শেষ। হু, করা যায়। একটা D দরকার। MURDER বানায়া একটা ওয়ার্নিং ত দেয়া যেত। যাক নাই ত আর কি করা? U লেখা গুটি মুখে নিয়ে চুষতে চুষতে বানালাম - WARMER ( বেশী গরম)। আরও ২২ পয়েন্ট।
ব্যাগে হাত দিয়া নতুন গুটি নিচ্ছি আর ভাবতেছি, ইস অক্ষরগুলা দিয়া যদি KILL (খুন) বা STAB (ছুরিকাঘাত) বা ওর নাম উঠত। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতাম। এখানেই, এখনই শেষ করে দিতাম ওকে। কিন্তু না, কপাল কি আমার কথা শোনে? উঠল কি? MIHZPA আর সাথে আমার মুখের ও।
গরমে কি মাথা খারাপ হয়া যাচ্ছে নাকি? জানালা দিয়ে রোদ আসতেছে। সেই সাথে কোন একটা পোকার পাখার আওয়াজ। মৌমাছি নাকি? খোদা আর যাই হোক মৌমাছি যেন না হয়। ছোটবেলায় আমার ভাই রাফি একবার একটা মৌমাছি গিলে ফেলেছিল। গলা ফুলে ঢোল হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মারাই যায় বেচারা। ইস, মৌমাছি যদি আমার বউ এর গলায় ঢুকত।
এদিকে যে বদ মেয়েলোকটা বোর্ড এ SWEATIER (বেশী ঘর্মাক্ত) খেলে ফেলছে। ওর সব গুটি শেষ। ২৪ আর সেই সাথে বোনাস ৫০ পয়েন্ট। মন চায় একটা ছুরি নিয়া পেটে ঢুকায়া দেই।
আমি গরমে ঘেমেই যাচ্ছি। বিষ্টি পড়লে ভালই হত। খুব দরকার। সমুদ্র দেখতে না পারলেও ত অন্ততপক্ষে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটত। বাতাস টাও একটু ঠান্ডা হত। তাইত, পাইছি। নতুন শব্দ - HUMID (আর্দ্র)। JINXED এর D ব্যবহার করলেই হয়। মেয়েলোক টা দেখি নতুন গুটি নিচ্ছে। হে খোদা বাজে গুটি দাও ওকে।
খোদা মনে হয় কথা শুনেছ। চেহারা কাল করে ফেলছে দেখি। আমাকে হারাতে পারবে না বলে মন খারাপ? ইস কত্ত বাজে মেয়ে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় ওকে দেখলে। ওরে গাধী, তোর হারাই উচিত। কিন্তু না, দেখি তাও একটা শব্দ ঠিকই বানিয়েছে - FAN (পাখা)।
আবার যায় কই? নাহ, মহারানীরর চা খাবার ইচ্ছা হয়েছে। গত ১০ বছরের সবচেয়ে গরম দিনে উনি চা খাবেন। গাধী কি সাধে বলি? আমি বোর্ডের দিকে তাকালাম। দেখলাম খুব সহজে ZAPS (বিদুৎ শক খাওয়া) হয়া যায়। দিয়ে দিলাম, দেরি করে কি লাভ। হটাৎ শুনি উফ শব্দ।
গাধীটা দেখি সুইচ টিপতেও জানে না। এসি অন করতে গিয়ে শক খেয়েছে। আরে একটু বড় শক খেতে পারলি না? যাক, শক ত খেয়েছে। ভাল হয়েছে, খুশি হয়েছি।
চুপচাপ এসে আমার সামনে বসে পড়ল। গুটি নাড়ছে। খেলার কোন লক্ষণ নাই। আরে গাধী খেললে খেল নাইলে রক্ষা কর। ধরব নাকি গলা টিপে? হাতের কাছেই ত আছে। বেশী কষ্ট হবে না।
এদিকে কেতলিতে শিস বাজছে। READY (তৈরি) খেলে চা ঢালতে উঠে গেল। চা না খেয়ে বিষ খেতে পারিস না? ১৮ পয়েন্ট নিয়া ত আগায়া গেল? জিতে যাবে নাকি। পিঠ আমার দিকে দিয়ে ফিরতেই ব্যাগ থেকে একটা খালি গুটি (ব্ল্যাংক টাইল) নিয়ে আমার হাতের V টা রেখে দিলাম।
চা নিয়ে বসে পড়ল আবার। জিজ্ঞাস করল চুরি করেছি কিনা? আরে গাধী করলেও কি তোর কাছে স্বীকার করব নাকি?
READY এর A ব্যাবহার করে বানালাম CHEATING (চুরি করা)। হে হে আমাকে হারাবে? মুড়ির মোয়া? ৬৪ পয়েন্ট এর সাথে আরও ৫০ পয়েন্ট। এখন যে আগায়া সোনামনি?
নাহ তেজ দেখি এখন ও আছে। IGNORE (উপেক্ষা) বানিয়ে নিয়ে নিল ২১ পয়েন্ট। ওর ১৫৩ আর আমার ১৫৫।
ভয়ংকর কোন শব্দ বানান যায় কিনা তাই দেখতেছি। হায়রে SLEEP (ঘুম) বাদে কিছুই হয় না দেখি। আমার বউ এর এই গুন টা আছে। ঘুম। সারাদিন ঘুমাইতে পারে। সেবার আমাদের প্রতিবেশী ঝগড়া করে গ্লাস, প্লেট, টিভি সব ভেংগে ফেলল, কিন্তু মহারানীর ঘুম কি আর ভাংগে? এত ঘুম ত চিরতরে ঘুমাইলেই ত পারিস।
পায়েছি - EXPLODES (বিস্ফোরিত হওয়া)। আমার সব গুটি খরচ হয়া যাবে। JINXED এর X কে ব্যাবহার করলাম। ৭২ পয়েন্ট পেয়ে মনটা খুশি খুশি হচ্ছে, সেইসময় শুনি বিকট শব্দ। এসি বার্স্ট করছে।
এটা কিভাবে হল? কাকতালীয়.. নাকি? কিন্তু তাই কি হয়? কিভাবে সম্ভব? EXPLODES বোর্ড এ বানাবার সাথে সাথে এসি বার্স্ট করল? কাকতালীয় নাও ত হতে পারে। হয়ত বোর্ডে যা বানান হয় তাই সত্য হয়?
এই যে CHEATING লেখা হল আর আমি চুরি করলাম? আবার ZAPS বানান হল আর মেয়েলোক টা শক খেল? নাহ বানান শব্দগুলো আসকেই সত্য হচ্ছে। এই পুরো খেলা টাই JINXED?
বউ দেখি SIGN (চিহ্ন) বানায়া ফেলছে। ১০ পয়েন্ট। আরে গাধী এদিকে যে কি হচ্ছে তার হিসেব আছে? পয়েন্ট নিতে চাস? নে, যত চাস নে।
কিন্তু আমাকে নিশ্চিত হতে হবে। এমন কিছু যা স্বাভাবিক ভাবে হবার কথা না। কি আছে? এমন কি বানান যায়? আমার কাছে আছে ABQYFWE. নাহ কিছুই মাথায় আসছে না।
পায়েছি FLY (উড়া) বানালেই হয়। হে খোদা, যেন হয়। এক মিনিট পেরিয়ে গেল, কিন্তু কিছু ত হচ্ছে না। চোখ বন্ধ দেখে গাধীটা জিজ্ঞাসা করতেছে কু হয়েছে? আরে চোখ খুলেই বা করব টা কি? তোর থোঁতামুখ দেখব?
হতাশ হয়ে চোখ খুললাম। দেখি চা এর কাপের উপর একটা মাছি (FLY) উড়তেছে। এতে কিছুই প্রমান হয় না। শক্ত প্রমান দরকার। বউ CAUTION (সাবধান) বানাল, ১৮ পয়েন্ট। নিক না, যত ইচ্ছা পয়েন্ট নিক। শেষ হাসি ত আমারই।
আমার কাছে এখন আছে AQEWUK, ও আর আমার মুখে রাখা B. আসলে মুখে কিছু না কিছু রেখে চুষতে থাকা আমার অনেক পুরানো অভ্যাস। গুটির শক্তিরে আমি অবাক। একি সাথে সেটা ব্যবহার করতে না পারার জন্য হতাশ। তাহলে কি আমার মুক্তি নেই? এই বিরক্তিকর মহিলার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে?
পেয়েছি - QUAKE ( ভুমিকম্প), ১৯ পয়েন্ট। আচ্ছা, মাটি কি পয়েন্ট এর অনুপাতে কাঁপবে? আমার আর তর সহ্য হচ্ছে না। এইত, এইত, সব সত্য, আমি টের পাচ্ছি, আমার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। এবার, এবার আমি মুক্তি পাব। একটা শব্দ - SLAY (খুন) বা SLASH (ধারাল বস্তু চালনা করা), আর আমি মুক্ত।
কিন্তু বোর্ডে ও কি বানাচ্ছে? DEATH(মরণ)? বুঝে শুনে করল না হটাৎ? লাফ দিয়া উঠলাম। সাথে সাথেই টের পেলাম আমার মুখের ভিতর রাখা গুটি গলা দিয়ে নেমে যাচ্ছে। কিন্তু এত বড় গুটি গলায় আটকাবে ত?
শ্বাস আটকে আসছে। কাশি দিচ্ছি বারবার। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বের ত হচ্ছে না গুটি। ফুসফুসটা যেন বাতাসের অভাবে ফেটে যাচ্ছে। ভুমিকম্প বন্ধ হয়ে গেছ, কিন্তু আমার দুনিয়াটা যে ঘুরছে।
মেঝেতে পরে গেলাম, চোখ ভরা আকুতি নিয়ে তাকালাম আমার বউ এর দিকে। ওই ত বসে আছে চুপচাপ। চোখে কি? উল্লাস.. নাকি......
(বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে)
সংগ্রাহক ফুয়াদ আল ফিদা
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×