somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতপ্রীতি নাকি বিলাসিতা নাকি বোকামী?

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে এখন প্রচুর শিক্ষিত মানুষ।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো আছেই সেই সাথে আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।প্রচুর ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। তারা ভাবছেন নিজেদের নিয়ে।সাথে সাথে দেশকে নিয়ে ভাবনা চিন্তার মানুষও এখন অনেক সংখ্যায়। রাজনীতি এখন আর পল্টন ময়দানের সম্পত্তি না।হাওয়া ভবন অথবা সুধা সদন থেকেও বের হয়ে এসেছে অনেকটাই। সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের সব ইতিহাসও বের হয়ে এসেছে জাদুঘরের কাচের বাক্স থেকে। এখন ভার্চুয়াল এই পৃথিবীতে আমরা অনেকটাই সার্বভৌম ও স্বাধীন জীবন যাপন করছি। নিজেদের চিন্তা ভাবনা শেয়ার করছি ব্লগসাইটগুলোতে অথবা ফেসবুকের নোটে। অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে মানুষের কাছে নানা চিন্তা ভাবনা পৌছে দেয়াটা। জাতীয় কমিটির তেল গ্যাস আন্দোলন অথবা হালের ঢাকা বিভক্তি,টিপাইমুখ বাঁধ কিংবা রাজাকারদের বিচার সব কিছু নিয়েই এখনকার আমরা সরব হয়ে থাকি অনলাইনে সবসময়।

বর্তমানে আমাদের আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে টিপাইমুখ বাধ,রাজাকারদের বিচার,তেল গ্যাস আন্দোলন।নানা কারণেই এখন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ দুইটা ভাগে বিভক্ত। ১। পাকিস্তানের পক্ষে/জামাত ইসলামের পক্ষে/শিবিরের/হিজবুতিদের পক্ষে ২।ভারতের পক্ষে। ব্লগস্ফিয়ারে প্রথম দলকে বলা হয় ছাগু আর ২য় দলকে বলা হয় ভাদা(ভারতের দালাল)। ওই যে বললাম অনেক মানুষ এখন অনলাইনে একটিভ থাকায় সাধারণ মানুষ(এখানে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তাদের বোঝানো হচ্ছে) মাঝে মাঝেই কনফিউজড হয়ে যায়।এবং অনেক সময় প্রতারিতও হয় নানা বিষয়ে।

ভারতের বিরুদ্ধে অনেক দিনের ক্ষোভের শুরুটা হয় ফেলানী দিয়ে। এরপরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যঃ ফেলানী বাংলাদেশের নয়" শোনার পরে ক্ষেপে উঠেছিলো ভার্চুয়াল জগতের সাধারণ মানুষ।এরপর থেকেই জামাত শিবিরের অনুসারীরা নানাভাবে সুযোগ খুজতে থাকে যেকোন উছিলায় ভারতের বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচারণা চালানোর। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা কথা বলি ভারত এবং পাকিস্তান দুইদেশের বিপক্ষেই। এরমধ্যেও নানা কারণেই ভাটা পড়ে না আমাদের ভারত-পাকিস্তান প্রীতিতে।এখনো পাকিস্তানের নামে অনেকেই সেজদা দেয় পারলে।আফ্রিদির নামে মেয়েরা পাগল হয়,ছেলেরা বুমবুম লিখে প্ল্যাকার্ড,ব্যানার নিয়ে যায় স্টেডিয়ামে।আবার অনেক ভারতীয়কেও শুনি বলতে মাঝে মাঝে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা হলেও আমি ভারত।শুনে অবাক হই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরা হয় যেকোন আন্দোলনের আতুড়ঘর।এ পর্যন্ত আমাদের দেশের বেশীরভাগ আন্দোলনেরই সুচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যাকে বলা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড।এখনও অনেক আন্দোলনই হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক/বর্তমান ছাত্রদের প্রচেষ্টা থেকে। অনেক ছেলে মেয়ের স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।এবং সবচেয়ে বড় কথা বলতে গেলে বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে সুবিধা বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের অনেকেই তাদের উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারে না।বেসরকারি যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা যে শিক্ষার নামে বানিজ্য করছে তার খরচ বহন করা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই।তাই দেখা যায়(দুঃখজনক সত্য হলেও) গরীব ঘরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রতিযোগীতা থাকে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।

যে কথায় আসতে চাচ্ছি তা হচ্ছে,ভারত অথবা পাকিস্তান নিয়ে আমরা দেশপ্রেম নিয়ে যেসব কথা বলি তার মধ্যে দেখা যায় ব্লগে অথবা অনলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরাই তুলনামুলকভাবে বেশী অংশ নেয়।বেশ কিছুদিন থেকেই দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঐতিহ্যে পরিণত হচ্ছে পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে শিক্ষা সফর আয়োজন করার।খুব ভালো। কিন্তু কথা হচ্ছে যেই ভারতের বিপক্ষে আমরা এভাবে কথা বলি,তাদেরকে গালাগালি করি,তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেই সেই আমরাই কিভাবে শিক্ষা সফরের নাম করে ভারতে যাই? আমরা নিজেরা এই বাংলাদেশেরই বা কতটুকু দেখেছি?আগে তো আমার দেশ সম্পর্কে জানতে হবে।আমাদের এই দেশেই তো রয়েছে কতকিছু দেখার মত।তার কিই বা আমরা দেখেছি?শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় স্পন্সরের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা দেখতে যাচ্ছি কি?তাজমহল!আগ্রা!কেন?আমাদের দেশ আমাদের পুরোপুরি দেখা হয়ে গেছে? এখন যদি কোন শিক্ষার্থীগ্রুপ বলে যে আমরা পাকিস্তানে যাবো,আমরা কি সেই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নেবো? তার উপরে দেখা গেছে এই শিক্ষা সফরের জন্য স্পন্সর খোজা হয়।কিন্তু তারপরেও শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া হয় কিছু টাকা।অনেকের জন্যেই এই অল্পটাকা দেয়াও অনেকটা বিলাসিতার মত।যার জন্য তাদের মধ্যে হয়তো একটা হীন্মন্যতা কাজ করে যা আমরা আমাদের সাদা চোখে দেখতে পাই না। তারউপরে যদি আরো বলি,দেশে তো কত মানুষ আছে যারা ভিক্ষা করে খায়।প্রতিটা বিভাগ থেকে এভাবে ভারতে/দেশের বাইরে শিক্ষা সফরে না গিয়ে যদি দেশের ভেতরেই করার হয় তাহলে অনেকটাকাও বেঁচে যায় যা দিয়ে হয়তো তারা অনেক লোকের কর্মসংস্থানেরও একটা উপায় করে দিতে পারে। এতোকিছুর পরেও হয়তো অনেকেরই গা জ্বালা করবে এই নোটটা পড়ে।কারন এই পেইজেও হয়তো ঢা.বির অনেক শিক্ষার্থী আছেন।তারা হয়তো প্রতিবাদ করবে।কিন্তু একটা কথা বলিঃ

ভেবে দেখুন,আপনাদের সেই বন্ধুর কথা যে হয়তো টাকা দিতে না পেরে আপনাদের সাথে যাবে না।তার মনের অবস্থাটা চিন্তা করে দেখুন।

ভেবে দেখুন,যেই ভারত আমাদের প্রতিটা ব্যাপারে পিষে মারছে বছর বছর তাদের দেশে ভ্রমনে গিয়ে তাদেরকেই উপকার করছি আমরা।কই তারা তো আমাদের দেশে আসে না!!!!তাহলে আমরা কেন যাবো?

ভেবে দেখুন,এই দেশেরই অনেককিছু আপনাদের দেখা হয়নি।দেশপ্রেম নিয়ে আমরা এতোকথা বলি তাহলে কোন অবস্থা থেকে?শিক্ষা সফরেই যদি যাবো তাহলে দেশেই যাই।দেশকেই ভালোমত চিনে নেই।

ভেবে দেখুন,যেই টাকা খরচ করে আপনারা দেশের বাইরে যাচ্ছেন শিক্ষা সফরে সেই টাকা দিয়ে আপনারা কিন্তু দেশের অনেক কাজেও কন্ট্রিবিউট করতে পারেন।

ভেবে দেখুন,লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাইরে গিয়ে আপনাদের কি লাভ হচ্ছে শুধু মাত্র যে দেশে যাচ্ছেন তাকে টাকা দেয়া ছাড়া?

জানি,অনেকেই হয়তো এর প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু শেষের কথাগুলো ভেবে দেখবেন।আমরা পাকিস্তান নিয়ে এতোকিছু বলি,খেলাকেও নিয়ে আসি রাজনীতির মধ্যে তাহলে ভারতকে নয় কেন?

ফেলানীর রক্তে আমাদের সীমান্ত মেখেছে সেই কবে।আজ আমাদের সম্মানকে এই বেজন্মাগুলো মাটিতে ফেলে অসম্মান করলো।আর কত এভাবে মুখ বুজে থাকবো আমরা?ভারতীয় প্রতিটা জিনিসের বিকল্প আছে বাংলাদেশে।তারপরেও কেন আমরা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো?আসুন আমরা বর্জন করি ভারতকে
আমরা আমাদের জামা কিনবো না ওদের থেকে।শাড়ি কিনবো না ওদের থেকে।আমরা বেড়াতে যাবো না ওদের দেশে।আমরা দেখবো না ওদের টিভি চ্যানেল।খুব বেশী কি কঠিন?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×