somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোর জন্য,মহান...

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তানজীদ হোসেন মহান AKA তানজীদ রহমান AKA পেপে AKA উসাই জিন্দেগী...আমাদের মহান।ওর নামটাই মহান।না ও মহান কেউ না।বিখ্যাত কেউ না যে ওকে নিয়ে নোট লিখতে হবে ।ও আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ,আমাদের বন্ধু,আমার বন্ধু।জন্ম ১৯৮৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর।মৃত্যু আনুমানিক ২রা মার্চ,২০১১ বুধবার দিবাগত রাত ১০টায়।

স্কুল ছিলো পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,শরীয়তপুর,কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ,ছিলো AIUB এর বিবিএ এর শেষ সেমিস্টারের ছাত্র।

ছোট থেকেই একসাথে ছিলাম।দুনিয়ার যত্ত ফাইজলামি আছে সব করতাম মহান আর আমি।আরো ছিল নাহিদ,রনি,শিব্বির,সজীব।ক্লাসে কিছু হইছে তো আমাদের ধরছে স্যাররা।ক্লাসে লুকাইয়া তিন গোয়েন্দা পড়া,ক্লাস না কইরা ওর বাসার সামনের দীঘিতে গোসল করা,সাইকেলে করে এলাকা টো টো করা,ক্রিকেট খেলা।বলা যায়,রাতের ঘুমটুকু বাদে আমরা কয়েকজন একসাথেই থাকতাম।কিছু কিছু কাজ,শুভর দাদার লাঠি...কত কিছু।টিফিনের সময় হয় ওর বাসায় নয়ত আমার বাসায় মহান,আমি আর শিশির।

ঠিক একদিনের ছোট ছিলি তুই আমার।যেদিন থেকে পরিচয় সেদিন থেকে কোন দিন আমাকে জন্মদিনে উইশ করা মিস করস নাই।আমিও না।সবসময় মনে পড়তো।আমি তো তোর থেকে এখন আরো বড় হয়ে গেলামরে...তুই ছোটই রইয়া গেলী।মনে আছে,বুড়ির দোকানের থেকে সিগারেট কিনে কোন দূরে গিয়ে খাওয়া??সজীবের সিগারেট খেলে মাথা ব্যাথা হয়,এইটা নিয়ে তুই আর আমি সবচেয়ে বেশী পচাইতাম ওরে।মনে আছে??মনে আছে বিজ্ঞান মেলায় কে কোন প্রোজেক্ট দেবো তা নিয়ে মারামারি কথা??আয় না দোস্ত,আবার।আবার তোর সাথে মারামারি করবো।

মনে আছে মহান,শফিক স্যারের কাছে বাংলা পড়তে গিয়া সারাদিন গল্প করা,স্যারের গল্প শোনা,মিজান স্যারের লাইসিয়ামে তুই আর আমিই শুধু পড়তাম না,সবাই পড়তো।মান্নান স্যারের ছেলের ভাইঙ্গা গেছে তাক্কা,স্যারের দেয়া চিঠি ছিড়ে ফেলা,মনে পড়ে তোর????নাহিদের বাসায় যাওয়ার সময় রিকশায় বসা নিয়া মারামারি,তোর নাক ফাইটা যাওয়া,শিবার বাসা থেকে চাচা চৌধুরীর কমিকস নিয়া আসা,কম্পিউটারে গেম খেলা নিয়া চিল্লাচিল্লি????মনে আছে??পিকনিকে গিয়া কোক চুরি,মোটা নাহিদের খাবার ফালাইয়া দেয়া???কত্ত পোংটামি করছি আমরা???ভরপুর রৌদ্রে ফুটবল খেলা,তারপর পুকুরে ডুব সাতার,কাদার মদ্ধ্যে একজন ধাক্কা দিয়া আরকেজন কে ফালানো???মনে আছে,একবার সৌরভ শুভকে ক্লাসের বারান্দা থেকে তুই আর আমি ফালাইয়া দিছিলাম???পরে স্বপন স্যারের হাতে জোড়া বেতের এর পিটানি??? ম্যাট্রিক পরিক্ষার সময় হলে বইসা গান গাওয়া??পরিক্ষার শেষে এক গ্যাঞ্জামে মারামারি??পরিক্ষা শেষের সেই কয়টা দিন টানা আড্ডা গার্লস স্কুলের সামনে,তখন আমরা বড় ভাই!!!!হা হা হা হা হা...মনে আছে তোর,দোস্ত??আয় না দোস্ত আবার।আবার ডুব দেই পুকুরে।আবার লাফ দেই ব্রিজ থেকে।মনে আছে,একবার আমার গেঞ্জি নিয়া লুকাইছিলি তুই আর সজীব??কিছুক্ষণ পর গার্লস স্কুলের ছুটির পরে মেয়েদের সামনে খালি গায়ে ওঠার লজ্জায় আমি পানিতেই ছিলাম,আর তোর সেকি হাসি! জ্বালাইতি অনেক।আইসা পর আবার।আবার পাগলামি করবো তোর উসাই জিন্দেগী নিয়া।

শিবার শিম্পাঞ্জী,সজীবরে ভাঙ্গা,সুমনরে কাউয়া,মঞ্জুররে বেজী,রিয়াজরে বান্দর,রনিররে পিচ্চি,রাসেলরে সাংবাদিক,জসিমকে কুসুম সব নাম গুলার পেছনেই তোর হাত আছে,খেয়াল হইছে?রাজীবের নামের কৌতুকটাও তোর ই করা।মনে আছে একবার সৌরভকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফালাইয়া দিছিলাম???রাজীবকে সাইকেল থেকে??শুভর সাইকেল এর বেল থাকতো না,শিশির এর সাইকেল এর চেইন লুজ করা...সব হইতো তর আর আমার মাথা থেকে।মাইরও কম খাই নাই তুই আর আমি স্বপন স্যারের কাছে।ছবি আকা নিয়া,একদিন হসপিটালের রাস্তায় তোরে আর আমারে শিল্পী স্যার দেখছিলো...সিগারেট খাইতে,তারপরে ভয়ে যাইতাম না ওনার সামনে,মনে আছে তোর??ক্লাসের পরীক্ষা গুলাতে কি পরিমান ফাইজলামী করতাম খেয়াল আছে??শফিক স্যার কে চেতাইতাম বিয়া করার জন্য তুই আর আমি।খেয়াল আছে রে?? শিশিরকে যে সব্বাই মিলে চেতাইতাম?সরোয়ারের কালকিনি টানের কথা নিয়া,সত্যজিতের সাথে তোর আর আমার মারামারি??বাসুদেব স্যার মারা গেলো পরে কারে যেন ভয় দেখাইতাম,আমার খেয়াল নাই,তোর খেয়াল আছে???হুজুর স্যার তোরে,আমারে,নাহিদরে ক্লাস থেকে বাইর কইরা দিলো একদিন??খেয়াল আছে তোর???এতদিন কিছছু মনে ছিলো না।আজ আবার সব চোখের সামনে।সবাই আছি,খালি তুই নাই।তোর এতো তাড়াতাড়ি যাওয়া লাগলো????সাইকেল র‍্যালীর মত সবাইর সাথেই থাকতি।যা হইতো সবার হইত,তোর একার কিছু হইতো না।

একবার তোরা সব কই যেনো গেলি।আমি যাই নাই।তোর বাসার ফোন নষ্ট।খালাম্মা রাতের বেলায় একা একা আসছিলো বাসায়।তোরে খুজতে।তুই কই?আমি পরে খালাম্মাকে দিয়ে আসছিলাম বাসায়।গিয়ে দেখি মুন কাদতেছে।মহান,এখন কই খুজবো আমি তোরে?খালাম্মা কই খুজবে??বল...

ঢাকায় আসার পরে ঈদের সময় সবাই কেজি স্কুলের মাঠে আড্ডা,রাতের বেলায় লুকাইয়া সিগারেট টানা,বোম ফুটানো...কত্ত কত্ত কথা রে...ঢাকায় আমার হোস্টেলের রুমে তুই আর দিনার আসার পর সারা রাত না খাইয়া,না ঘুমাইয়া কার্ড খেলা,পরের দিন আবার কলেজ,ক্লাস,তারপর মোঃপুরে রাজীবের রুমে আবার কার্ড নিয়া বসা,মনে আছে তোর?মনে আছে ঢাকায় করা প্রথম পহেলা বৈশাখে তুই আমারে ফোন কইরা বাসা থেকে ঢাকা আনাইছিলি ৩ঘন্টার মধ্যে??মহান,এখন ডাক দে।দেখ,কত্ত মানুষ আইসা পরবো আমরা।

কয়দিন আগে টিএসসিতে চা খাওয়া,বেইলী রোডে তুই,আমি,শুভ,রাশেদ,শিব্বির,ওয়ালিউল্লাহ'র আড্ডা।তারপর আরেকদিন শুভ তুই আর আমি শিবার বাসায়???তোর বাংলা র‍্যাপ গান,তোর পিনিকের সেই গান গুলা??কয়দিন আগে ফোন দিয়া কইলি,একসাথে বিয়া করবি সব্বাই!!!আমি শুইনা হাসতে হাসতে শেষ।তোর মাথায় যে কত্ত কিছু আসে আল্লাহ মালুম।আরেকদিন কইলি রি-ইউনিয়নের কথা,একদিন গেট-টুগেদারের কথা।আমাদের কারো সাথে কারো দেখা নাই।মনে আছে,তুই বলছিলি কে কবে কই চইলা যাই,ঠিক নাই তাই দেখা করা উচিত!!!!মহান,কোনদিন তো ভাবি নাইরে তুই এত্তদুরে চইলা যাবি?এখন বল দোস্ত,এক পায়ে রাজি হয়ে যাব।সবাই।আজকে সব্বাই আসছিলো রে।সব্বাই।তোরে দেখতে।কিন্তু তুই তো কারো সাথেই কোন কথা বললি না।

কেউ সিগারেট ধরাইলে,কত্ত সুন্দর কইরা প্যাকেট দেখাইয়া বলতি,সিগারেট খাওয়া ভালো না,কথাটা বইলা নিজেই নিয়া নিতি।

মহান,জানি না রে তোর কি হইছিলো।কিন্তু জানি তোর খুব কষ্ট হইছে।তুই শেষবারের মত কিছু করতে চাইছিলি???বইলা যা দোস্ত।প্লিজ।জানি না কতটুকু স্বাভাবিক,কিন্তু তুই যাইতে পারস না,তোরে নিয়া যাওয়া হইছে।কে,বল??কি হইছিলো??তোরে যেইখানে মারতাম লাল হইয়া যাইতো,মহান,এতোগুলা দাগ নিয়া গেলি তুই,দুই পা আলাদা নিয়া,তোর তো অনেক কষ্ট হইছে রে।কেমণে সহ্য করছিস তুই??তোরে নাকি ল্যাম্পপোস্টের সাথে ঝুলাইয়া মারছে,মাইরা ঘাসের উপর দিয়া টাইনা নিয়া গেছে রেল লাইনের উপর...মহান,খুব কষ্ট হইছে নারে দোস্ত???

মহান,আবার আয় দোস্ত,আমরা সব্বাই তোর জন্য বসে আছি।সব্বাই।কেউ এখন বিশ্বাস করে না তুই নাই।তোর ছবি দেখলেই চিল্লাইয়া কাইন্দা উঠি।মহান,আয় আবার দোস্ত।একবার আয়।একবার।আর একটা বার..





বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ট্রেনে কাটা লাশ উদ্ধার

পরিবারের দাবি, বন্ধুরা তাকে খুন করেছে

বিঃদ্রঃ ফেসবুকে গত ৫ই মার্চ নোটটা লিখেছিলাম।আজ খুব মহান কে মনে হচ্ছে।খুব।তাই এখানেও শেয়ার করলাম।গত ২রা মার্চ,২০১১ তারিখে মহানকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় কাকলীতে।পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায়,প্রথমে ওকে ঝুলিয়ে ধাতব কিছু দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে।এরপরে পিটিয়ে মাথার খুলি ভাঙ্গা হয়েছে।তারপর ওর মৃতদেহ রেল লাইনের উপরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।এবং পরে রেলে কাটা পড়ে ওর দুই পা।৪মার্চ রাত ৩টায় আমি খবর পাই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে অজ্ঞাত্নামা একজনের লাশ পড়ে আছে।তখনই ছুটে যাই ঢাকা মেডিকেল এ।পরে লাশ শনাক্ত করি।ও ৩দিন নিখোজ ছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৫
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×