আজ ২১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিনেমা হলে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন এর উদ্যোগে সংহতি সমাবেশ এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, দেশপ্রেমিক জনগনের মঞ্চের আহ্বায়ক ম. ইনামুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হাসান রুবেল, সংগীত শিল্পী অরূপ রাহী, চলচ্চিত্রকার মঞ্জুরুল হক পান্না। সমাবেশে জানানো হয় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হান্নান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান, লেখক, সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞ নূর মোহাম্মদ, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেন, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ বি.ডি. রহমতুল্লাহ প্রমুখ এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। এছাড়া সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রাবন্ধিক, রাজনীতিক ফিরোজ আহমেদ, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, চলচ্চিত্রকার হাসান জাফরুল, ছাত্রফ্রন্টের রাহাত আহমেদ, ব্লগার মাহবুব রশিদ, চলচ্চিত্র কর্মী নাজমুন নাকিব, চলচ্চিত্র কর্মী হাবিবুর রহমান। সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছে- গণসংহতি আন্দোলন, স্টামফোর্ড ফিল্ম স্টুডেন্ট সিনে ফোরাম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমোর্চা, ছবির লড়াই, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গন, সংস্কৃতি মঞ্চ, গানের দল লীলা, তরুনদের সংগঠন স্পর্ধা , সংস্কৃতির নয়া সেতু, জাগরণের পাঠশালা, সৃষ্টিগড় প্রভৃতি।
সমাবেশে বক্তারা দেশি চলচ্চিত্রের মানহীনতা ও সিনেমা শিল্পের মন্দার দোহাই দিয়ে সরকারী যোগসাজশে যে একদল চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর এদেশের প্রেক্ষাগৃহে বাজারসফল ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা ছবি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রতিবাদ জানান। এই ঘটনা কৃষি, নদী ও খনিজ সম্পদের মতই সংস্কৃতির উপরও ভারতীয় আগ্রাসনের নগ্ন প্রকাশ। তাই, এই আন্দোলন সংস্কৃতি ও সম্পদ রক্ষার জন্য গণমানুষের আন্দোলন। প্রতিটি সচেতন মানুষকে তারা এই আন্দোলনে শরিক হতে আহ্বান জানান। তারা ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ করে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের জন্য ফিল্ম ইন্সিটিউটসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল আকারে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা করে। পুলিশ হাইকোর্টের সামনে মিছিলকে বাধা প্রদান করে।
বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান
বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হাসান রুবেল
আরো বক্তব্য রাখেন দেশপ্রেমিক জনগনের মঞ্চের আহ্বায়ক ম. ইনামুল হক
এরপরে বক্তব্য দেন সঙ্গীতশিল্পী অরুপ রাহী
এছাড়া সংহতি বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্রকার মঞ্জুরুল হক পান্না
ফোরামের পক্ষ থেকে ৯দফা দাবী পড়ে শোনান ব্লগার ও এক্টিভিস্ট মাহবুব রশীদ
এছাড়াও সমাবেশ চলাকালীন সময়ে প্রেসক্লাবের সামনে বিলি করা হয় সচেতনতা মুলক লিফলেট।
৯দফা দাবী শোনানোর মধ্য দিয়েই শেষ হয় সমাবেশ।এর পর তথ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল শুরু করলে কিছুদুর পরেই পুলিশ বাঁধা দেয় মিছিলে।
কিছুদুর যেতে না যেতেই পুলিশ এসে দাঁড়ায় আমাদের সামনে।বাঁধা প্রদান করে।
পরে পুলিশের বাধার মুখ আর এগোতে না পেরে সেখানেই স্লোগান এবং পরবর্তী কর্মসুচীর ঘোষণা দিয়ে শেষ হয় আজকের সমাবেশ এবং ঘেরাও কর্মসুচী।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও ভারতীয় পণ্য চলচ্চিত্রের আগ্রাসন প্রতিরোধে আগামী কর্মসূচি
২৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার, যেসব প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় পণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে সেসব প্রেক্ষাগৃহের সামনে প্রতিবাদ ও অবস্থান ধর্মঘটের উদ্দেশ্যে জমায়েত- সকাল ১১ টা। জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ।
ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন এর দাবিসমূহ:
১। আমদানিকৃত ভারতীয় পণ্য চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২। দেশের চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিদেশী চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শন এ নীতিমালার অন্তর্র্ভূক্ত হবে।
৩। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে ফিল্ম ইন্সিটিউটসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
৪। বর্তমানে চালু সিনেমা হলগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তিতে উন্নীত করাসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু করা ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। টিকিটের উপর আরোপিত কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫। ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিয়ন্ত্রণ আইন’ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৬। বৃহত্তর জনগণের স্বার্থ ও মূল্যবোধের নিরীখে দেশী-বিদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৭। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। মানসম্পন্ন চলচিত্রের চাহিদা পূরণে প্রতিবছর সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। অনুদান চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত হতে হবে এবং এ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৯। চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ের উপর থেকে আমদানি কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে।
ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন
যোগাযোগ: ০১৯১৪৬৩৩২০৩, ০১৬৭৪৯৩৩৬২০, ০১৮১১৪২১৩৪৬
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




